ঘুষের দৌরাত্ম্য কমাতে সরকারি কর্মচারিদের ডেস্ক ড্রয়ার বিহীন করা হোক

শাহরিয়ার কবির রাসেল
Published : 29 March 2018, 04:15 AM
Updated : 29 March 2018, 04:15 AM

কথাটা আমার মনে হল আড়াইহাজার থানার ডেপুটি সাব-রেজিস্টারের প্রকাশ্যে ঘুষ নেয়ার ভিডিওটি দেখার পর। আমি একবার অফিসের কাজে এয়ারপোর্ট কাস্টমসে গিয়েছিলাম। একটা কক্ষে দুই সারিতে আটজন কাস্টমস ইন্সপেক্টর বসেন। কোন রাখঢাক নেই। ডকুমেন্ট নিট এন্ড ক্লিন থাকলে প্রতি ডকুমেন্টে ওনাকে পাঁচশত টাকা দিতে হয়। এটা সব ক্লিয়ারিং এজেন্ট জানে, তাই যার ডকুমেন্ট সামনে আসছে সে পাঁচশত টাকার নোট বাড়িয়ে দিচ্ছে। উনি সে টাকাটা ড্রয়ারে রেখে ডকুমেন্ট সই করছেন।

আমি অফিসের শেষ সময়ে গেছিলাম তাই নাটকের শেষ দৃশ্যটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। ভদ্র মহোদয় বের হওয়ার আগে পিয়নকে ডেকে কাগজের ব্যাগ চাইলেন। পিয়ন ব্যাগ দিলে তাকে দুইশত টাকা বকশিশ দিলেন। তারপর ড্রয়ার থেকে সারাদিনের জমানো টাকা বের করে কাগজের ব্যাগে ঢুকালেন, ব্যাগটা পেচিয়ে নিয়ে বের হয়ে গেলেন। আমি দেখলাম সারা দিনে উনি যে পরিমাণ টাকা জমিয়েছেন, তা আসলেই শার্ট বা প্যান্টের পকেটে বহন করা সম্ভব নয়।

ঘুষ আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এমনভাবে ঢুকে গেছে যে একে পুরোপুরি নির্মুল করা সত্যিই কঠিন। আমাদের নগর জীবনে মশার উপদ্রব যেমন পুরোপুরি নির্মুল করা সম্ভব নয়, সারা বছর পেস্টিসাইট দিয়ে কন্ট্রোলে রাখা হয়। ঘুষের ক্ষেত্রেও মনে হয় তাই করতে হবে। ঘুষ যাতে বিপজ্জনক মাত্রায় ছড়িয়ে না পরে সে চেষ্টা করা যেতে পারে। এই যেমন, সরকারি অফিসের ডেক্সগুলোর কোন ড্রয়ার রাখা যাবে না। কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য নির্দিষ্ট ড্রেস রাখা যেতে পারে। সে ড্রেস হবে হিমুর পাঞ্জাবির মতো, তাতে কোন পকেট থাকবে না। কেউ ব্রিফকেস বা এ্যাটাচি বহন করতে পারবে না। জরুরি কাগজপত্র ট্রান্সপারেন্ট ফাইলে বহন করতে হবে।

সরকার রাস্তা-ঘাট এমনকি ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবনে সিসি ক্যামেরা লাগাতে উৎসাহ দেন। এখন প্রায় সব বেসরকারি অফিস বিল্ডিংয়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা দিয়ে চব্বিশ ঘন্টা মনিটর করা হয়। অথচ কোন সরকারি অফিসে এ ক্যামেরা লাগনো হয়নি, এমনকি আজ পর্যন্ত কেউ এ বিষয়ে কিছু বলেছে বলেও শুনিনি। বিষয়টা সত্যিই রহস্যজনক।

পরিশেষে এটা বলতে পারি যে, আমরা নিজেদেরকে সভ্য মনে করলে সরকারি অফিসে ঘুষের এই প্রকাশ্য হাট চলতে দিতে পারি না। ঘুষখোর ঘুষ খাবে গোপনে, চোরের মত। সে যে সমাজবিরোধী এটা যেন প্রতিনিয়ত তার মনে পড়ে। সমাজের এই অপরাধীরা নিশ্চিন্তে দিনের পর দিন একই কাজ করে যাচ্ছ কোন অনুশোচনা ছাড়াই, এটা কোন কাজের কথা নয়।