ঘৃণার চেয়ে ভালোবাসা অনেক বেশি শক্তিশালী

শাহরিয়ার কবির রাসেল
Published : 6 April 2018, 01:00 AM
Updated : 6 April 2018, 01:00 AM

আসানসোলের নূরানী মসজিদের ইমাম মাওলানা ইমদাদুল্লাহ রশিদি সেদিন যা করলেন তাতে সবাই বিস্ময়ে হতবাক হয়েছে। একজন পিতা তার ১৬ বছরের পুত্রের অর্ধদগ্ধ টুকরো টুকরো করা দেহ সামনে নিয়ে ধৈর্যের এক অনন্য নজির স্থাপন করলেন।

হতবাক ইমাম শুধু বললেন, "ছেলেটার লাশটাকে ওরা আগুন দিয়ে পোড়াতে চেষ্টা করে। ওরা এটা কেন করল?" তিনি বিচারের ভার আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে বলেন, "আল্লাহ আমার পুত্রকে যতটা সময়ের জন্য বাঁচার অধিকার দিয়েছেন সে ততটাই বেঁচেছে।"

জানাজায় সমবেত বিষ্ফোরণ উন্মুখ মুসলমানদের তিনি সোজা বলে দিলেন, "আমার পুত্রের হত্যার প্রতিশোধ নেবার অধিকার আপনাদের কারো নেই। যদি এই কারণে আপনাদের দ্বারা একজন সাধারণ মানুষের জীবন যায় বা সম্পদের ক্ষতি হয় তবে আমি আসানসোল থেকে চলে যাব।" (সূত্র: এনডিটিভি)

আসানসোলকে ঠান্ডা করতে সেদিন একজন পুলিশেরও দরকার হয়নি। শুধু আসানসোল নয়, সমগ্র পশ্চিম বাংলা তথা ভারতবর্ষ সেদিন এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকে বেঁচে যায় মাওলানা রশিদির এই অবস্থানের কারণে। তিনি সেদিন যা বলেছিলেন তা অক্ষরে অক্ষরে তার নিজের পবিত্র গ্রন্থকে অনুসরণ করে বলেছিলেন।

পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদা তে আছে, "যে ব্যক্তি একজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচালো সে যেন গোটা মানবজাতিকেই বাঁচাল।"

মাওলানা রশিদি সেদিন তাই করেছিলেন যা তার পবিত্র গ্রন্থ করতে বলেছে। কিন্তু তার এই বিরল অবস্থান সুযোগ সন্ধানীদের বেকুব বানিয়ে দেয়। সাম্প্রদায়িক হিন্দুরা নিরাশ হয়। তারা রক্তের হলিখেলা মাত্র শুরু করছে। ভালো করে খেলার আগেই বেটা ইমাম সব মাটি করে দিল! তাদের সব রাগ তখন মাওলানা সাহেবের উপর। তাদের শেষ অস্ত্র হিসেবে তারা প্রচার করতে থাকে, মাওলানা বাংলাদেশের লোক! যদিও তা শতভাগ মিথ্যা।

ওরা এটা করবে তা মাওলানা সাহেব জানেন। তাই তিনি অবাক হননি। কিন্তু উনি মনে হয় বড় কষ্টটা পেলেন মুসলমানদের কাছ থেকেই। কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে ঘুরে একটা জিনিস আসছে। মাওলানা রশিদিকে নোবেল দিতে হবে। ধরে নেয়া যায়, এটা তার নিজ সাম্প্রদায়ের মানুষরাই করছে, তার প্রতি ভালোবাসা দেখানোর জন্য। ভালোবাসার প্রকাশ যে অপমানের থেকেও খারাপ হতে পারে এটা তার নজির। আরে বেকুবের দল, উনি সেদিন যা করেছিলেন তা কি কোন পুরস্কারের লোভে করেছিলেন! না-কি পৃথিবীতে এমন কোন পুরষ্কার আছে যা পুত্রশোকের দাম দিতে পারে? ইসলামের যে মহত্বের বাণী মওলানা তার বুকে ধারণ করছেন তা বুঝবার চেষ্টা কি এইসব অপদার্থের দলের আছে?

মাওলানা ধর্মকে সঠিকভাবে বুঝেছেন। শুধু ইসলাম নয়, সব ধর্মই মানবতার একই বাণীই প্রচার করে। তবুও মানুষের দ্বারা মানুষ সব থেকে বেশি অপমানিত হয় ধর্মের নামেই। মাওলানা রশিদির মত ধার্মিক মানুষ বিরল হলেও আমি জানি সব ধর্মেই এমন মানুষ আছেন। এদের থাকতেই হবে। কারণ পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন ততদিনই থাকবে যতদিন জল থাকবে। সে জল মাওলানা রশিদিদের মত বিরল আর ক্ষীণধারায় প্রবাহিত হলেও তা জীবনদায়ী জলই।