৭০টি বৃক্ষ এবং একদল ‘বোকা’ মানুষ

শাহরিয়ার কবির রাসেল
Published : 4 May 2018, 11:36 AM
Updated : 4 May 2018, 11:36 AM


সিরাজগঞ্জ পৌরসভা অনেক পুরাতন একটি পৌরসভা। পাট ব্যবসাকেন্দ্র আর নদীবন্দর হওয়াতে ব্রিটিশদের কাছে আলাদা কদর ছিল এ মহকুমা শহরের। পরবর্তীকালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হয়েছে এবং সরকারের মাঝারি শহর প্রকল্পেরও অংশ। এসব কিছুর পরও এ শহরের নাগরিক সুবিধা যে কোনো বিবেচনায় তৃতীয় শ্রেণির।

যিনিই নগরপ্রধান হন কি এক বিচিত্র কারণে যেন তার উন্নয়ন পরিকল্পনা হয় শুধুমাত্র কবরস্হান কেন্দ্রিক। অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র হন কিন্তু ক্ষমতায় গেলে মনে থাকে শুধু কবরস্হান উন্নয়নের কথা। নিজের শেষ ঠিকানা সুন্দর করে রাখা অবশ্যই দূরদর্শী কাজ । তবে বৈষয়িক ব্যাপারগুলোও অবহেলা করার মত নয় । ঠিকাদার মাত্রই জানেন মাটি ভরাটের কাজ কতটা লাভজনক। গর্তে ভরাট হয়ে গেলে কতটা মাটি পড়েছে আর বোঝা যায় না। নতুন মাটি পুরাতন মাটি একাকার হয়ে যায়। সমঝোতার মাধ্যমে যে কোনো আকারের বিল করতে কোনো সমস্যা হয় না। এর সাথে আরো অনেক উপরি যোগ আছে। কবরস্হান মানে বড় বড় বৃক্ষরাজির সমাহার থাকবেই। সাধারণত কবরকে চিন্হিত করবার জন্য মৃত ব্যক্তির নিকট আত্মীয়রা সেগুলো লাগান এবং দীর্ঘদিন যত্ন নিয়ে বড় করে তোলেন। ভূমির উন্নয়নের জন্য এগুলো কিছু কিছু করে সাফ করা হয় প্রতিবার। সেখানেও আমদানি খারাপ হয় না ।

সবখানেই একদল 'বোকা' মানুষ থাকে। এরা শুধুমাত্র নিজের ধান্দা না করে 'আমাদের শহর, আমাদের শহর 'বলে মাথা খারাপ করে দেয় । তেমন কিছু বোকা মানুষ গত ২৭ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ মালশাপাডা কবরস্হানের সামনে মানববন্ধন করল।  এদের উদ্দেশ্য কী?

মেয়র সাহেব কবরস্হানের উন্নয়নে হাত দিয়েছেন। তাই কিছু মেহগনি গাছ (৭০টি) কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন। সেটা এদের ভাল লাগছে না । তারা বলছেন, গাছ কাটা যাবে না। যদিও এর মধ্যে বেশ কিছু গাছ কাটা হয়ে গেছে । আর তাতে মিলেছে দপ্তরের অনুমতিও। এখন তাহলে এসব ঝামেলা কেন? কবরস্হানের চারদিকে অতি সুন্দর দেয়াল হবে। এই গাছগুলো থাকলে সে দেয়ালের জন্য ঝুঁকি থেকে যাবে। যদি কোনো একটা গাছ ঝড়ে ভেঙ্গে পড়ে তবে মূল্যবান দেয়ালের কি ক্ষতি হবে না? আর গাছ কাটা হচ্ছে তো কী হয়েছে, নতুন গাছ লাগিয়ে দিলেই হলো।

আসলেই এই মানুষগুলো গোয়ার টাইপের। এরা চায় কবরস্হানের উন্নয়ন হোক তবে গাছগুলো বাঁচিয়ে। এই শহরের এমন একটা প্রাকৃতিক সুবিধা আছে যা যে কোনো নগর পরিকল্পনার জন্য আশীর্বাদ। শহরের ঠিক মাঝখান দিয়ে চলে গেছে প্রমত্তা যমুনার শাখানদী কাটাখালি। ফলে সামান্য কিছু ব্যবস্হাপনার মাধ্যমে এ শহরের পানি নিষ্কাষনের অতি সুন্দর ব্যবস্হা করা যায়। কিন্তু তা আর হয় কই? একটু ভারী বৃষ্টি হলেই শহরের বেশিরভাগ রাস্তা ডুবে যায়। এছাড়া রয়েছে ভাঙা রাস্তা। এসব দিকে পৌরসভার নজর নেই কেন সেটা এদের ভাবায়।

এরা হল একদল 'বোকা' মানুষ।  নগরপ্রধান আর নগরবিদগণ কি কম বোঝেন? জীবনে যত কিছুই কর না কেন তোমার শেষ আশ্রয় হল ঐ কবরস্হানে। তাই ওই জায়গার গাছপালা সাফ করে, উঁচু করে মাটি ফেলে, সুন্দর দেয়াল দিলে তো আখেরে তোমাদেরই লাভ। ভেবে দেখ, এই এক জায়গায় কত মানুষ শুয়ে আছেন। এরা সবাই এই পৌরবাসী। এখানে স্বল্প পরিসরে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেক সহজ আর দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য। একটি মাত্র প্রকল্প দিয়ে এত বেশি নগরবাসীকে উন্নয়নের ছোঁয়া দেয়া কি আর কোনভাবে সম্ভব?