পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন সেরা: গবেষণা বরাদ্দের উৎস এবং প্রয়োগ (২য় পর্ব)

মোঃ আজিজুর রহমান
Published : 20 Nov 2016, 03:54 AM
Updated : 20 Nov 2016, 03:54 AM

আপনারা যারা আমার এই সম্পর্কিত প্রথম লেখাটি পড়েছেন (http://blog.bdnews24.com/shamimru/198729), মন্তব্য করেছেন এবং শেয়ার করছেন, তাদের ধন্যবাদ। প্রথম লেখাটি অসম্পূর্ণ ছিলো, কারণ আমি সেখানে শুধুমাত্র আলোচনা করেছি কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিং করা হয় এবং আমরা কিভাবে আমাদের দেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে র‍্যাঙ্কিং-এ এগিয়ে নিতে পারি। আমি দেখিয়েছিলাম র‍্যাঙ্কিং স্কোরের শতকরা ১০০ ভাগের  মধ্যে ৬০ ভাগ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে গবেষণার মান, জার্নাল সাইটেশন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। আর ভালোমানের গবেষণা করতে এবং প্রকাশ করতে এই খাতে প্রচুর বরাদ্দ দরকার।

এখন প্রশ্ন হল এই বরাদ্দের উৎস কি হতে পারে? পরের প্যারাগ্রাফগুলোতে আমি ইউকের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন ফান্ডিং সোর্স এবং এর সাথে আমাদের দেশের ফান্ডিং সোর্সগুলোর তুলনামুলক আলোচনা করব।  ইউকের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রধানত নিম্নের কয়েকটি সোর্স থেকে রিসার্চ ফান্ড পেয়ে থাকেঃ

১। সরকারী বরাদ্দঃ এটি হল গবেষণা বরাদ্দের মুল উৎস। সরকারী কিছু রিসার্চ কাউন্সিল এই বরাদ্দের কাজ গুলো করে থাকে। যেমন- Biotechnology & Biological Sciences Research Council (BBSRC) হল এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা বায়োটেকনোলজি এবং বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের বিভিন্ন গবেষণাখাতে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে বরাদ্দ দিয়ে থাকে। একি ভাবে মেডিকেল রিসার্চের জন্য আছে 'Medical Research Council (MRC)', ইকনমিক্স এবং সোশ্যাল সায়েন্সের জন্য আছে Economic & Social Research Council (ESRC)। ইউকেতে এরকম মোট সাতটা কাউন্সিল আছে, যারা বিভিন্ন ফিল্ডের গবেষণার জন্য অর্থের যোগান দেয়।

আমরা এখানে অনেক পিছিয়ে আছি। বিশ্বের সব দেশেই যেহেতু গবেষণা বরাদ্দের মুল উৎস হল সরকারী বরাদ্দ, তাই সরকারকেই এই বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আশার কথা হল গত কয়েক বছরে হেকেপ প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক বিভাগের বা অনুষদের অবকাঠামো সহ অন্যান্য অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এটা পর্যাপ্ত নয় এবং এর বাস্তবায়ন এবং প্রয়োগ নিয়ে মাঝে মাঝে বিতর্কও হতে দেখা যায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  মন্ত্রণালয় থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ছাত্রছাত্রীদের জন্য ফেলোশিপের আওতায় বাৎসরিক কিছু অনুদান দেয়া হয়। এটা ছাত্রদের অনেক উপকারে আসে।  তাছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  মন্ত্রণালয় গবেষকদের 'প্রযুক্তি উদ্ভাবন, গবেষণা ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পে' সল্প পরিসরে কিছু অনুদান দিয়ে থাকে। কিন্তু এসব এতো সামান্য যে, তা দিয়ে উন্নত গবেষণা করা অসম্ভব।

২। চ্যারিটি বা দাতব্য সংস্থাঃ গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের আরেক বড় যোগানদাতা হল অসংখ্য চ্যারিটি, ট্রাস্ট ইত্যাদি। বড় কয়েকটি চ্যারিটির মধ্যে আছে Arthritis Research Campaign, British Heart Foundation, Cancer Research UK, Wellcome Trust ইত্যাদি।তাছাড়া আরও অনেক ছোটখাটো  চ্যারিটি আছে যারা অনেক ছোট ছোট প্রজেক্টের অর্থ যোগান দিয়ে থাকে।তবে চ্যারিটি ফান্ডেড প্রজেক্ট গুলো খুবই প্রায়োগিক হতে হয়, এবং চ্যারিটিকে জানাতে হয় তাদের টাকা কিভাবে মানুষের উপকারে আসলো। এক্ষেত্রে পাবলিক এঙ্গেইজমেন্ট খুব দরকার পরে। মানুষকে এরকম চ্যারিটিতে অর্থ সহায়তা দিতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য টিভি, পত্রিকায়, বিভিন্ন প্রোগ্রামে আলোচনা করতে হয়।

আমাদের দেশে এটার অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। চ্যারিটি নেই সেটা বলছিনা। কোন চ্যারিটি গবেষণায় বরাদ্দ দেয় এমন নজির আছে কিনা জানা নাই। সরকার ইচ্ছা করলে এরকম চ্যারিটি তৈরিতে উৎসাহ দিতে পারে এবং সচ্ছল ব্যাক্তিদের এ সকল চ্যারিটিতে দান করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। চ্যারিটি ফান্ডিং আমাদের একটা বড় সহায়ক হতে পারে, কারণ, আমাদের দেশের মানুষ দানশীল এবং অনেকে দান করে সেটা মানুষকে দেখাতে পছন্দ করে (অন্য ভাবে না নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি)।

৩। প্রাইভেট কোম্পানিঃ এখানে অ্যাপ্লাইড রিসার্চের অনেক প্রজেক্ট ফান্ড করে থাকে বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি। এটা তারা তাদের কিছু গবেষণার কাজ ইউনিগুলোতে করানোর জন্য দিয়ে থাকে অথবা পি এইচ ডি ছাত্রদের ফান্ডিং করে থাকে। এক্ষেত্রে কোম্পানি এবং বিশ্ববিদ্যালয় দুই পক্ষই লাভবান হয়। এর একটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে। কোম্পানিগুলোর জনগণের নিকট ইমেজ বাড়ে এবং পাশ করা গ্রাজুয়েইটরা সেই কোম্পানিতে কাজের সুযোগ পায়।

আমাদের দেশে এটারও অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। কিন্তু, এটা করা অনেক সহজ বলে আমি মনে করি। সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে এটার জন্য কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ আমি দেশের ফার্মা কোম্পানিগুলোর সাথে কিভাবে কাজ করা যেতে পারে তা দেখাতে পারি (ফার্মেসীর শিক্ষক বলে এটা আমার জন্য সুবিধাজনক)।দেশের প্রায় সব ওষুধ কোম্পানির রিসার্চ এবং প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্টের জন্য একটা শাখা থাকে যেখানে তারা বিভিন্ন ওষুধের ফর্মুলা বানানো, সেগুলোর স্ট্যাবিলিটি টেস্ট ইত্যাদি করে থাকে। কোম্পানিগুলোর সাথে চুক্তি থাকলে আমাদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগগুলো এই কাজগুলো কন্ট্রাক্টের বিনিময়ে করতে পারে। ওষুধ কোম্পানিগুলো এই শাখায় যত টাকা খরচ করে, তার অনেক কম খরচে শিক্ষকরা তাদের ছাত্রদের পি এইচ ডি বা মাস্টারস গবেষণার অংশ হিসেবে এই কাজগুলো করে দিতে পারে। এর জন্য যে যন্ত্রপাতি দরকার তা সরকার বা কোম্পানিগুলো অনুদানের মাধ্যমে দিতে পারে। এর সুবিধা হল, বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করবে বাস্তব জ্ঞানে সমৃদ্ধ জনশক্তি, আর কোম্পানিগুলো পাবে ইন্ডেপেন্ডেন্টলি ভেরিফাইড কার্যকরী ফর্মুলা।

বুয়েটসহ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের বিভিন্ন কোম্পানিকে, বা ব্যাক্তিকে এক্সপার্ট সার্ভিস প্রদানের মাধ্যমে অনেক টাকা উপার্জন করে বলে শুনেছি। কিন্তু এ সার্ভিসগুলো গবেষণায় কতটা সাহায্য করে আমার জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারে ইন্ডাস্ট্রি কলাবরেশনের কাজে।বিসিএসআইআরও এরকম অনেক সেবা দিয়ে থাকে। ধীরে ধীরে এই সার্ভিসগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক করা যায় কিনা তা ভেবে দেখা যেতে পারে। উপার্জনের টাকাগুলো বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প এবং জার্নাল প্রকাশে কাজে লাগানো গেলে ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেকটাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।

৪। আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সংস্থাঃ ইউরোপে গবেষষণা বরাদ্দের আরেকটা বড় উৎস হল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। এই সংস্থাটি বড় বড় ইউরোপের বড় বড় অনেক রিসার্চ প্রজেক্টের অর্থ যোগানদাতা। ইউরোপিয়ান কমিশনের অধিকাংশ গ্রান্ট ইউরোপিয়ান দেশ গুলোর জন্য বরাদ্দ থাকে। কিন্তু কিছু গ্রান্ট আছে যেগুলো সারা বিশ্বের জন্য বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উন্মুক্ত। এর মধ্যে, হোরাইজন ২০২০ (https://ec.europa.eu/programmes/horizon2020/), ডিসিআই (https://ec.europa.eu/europeaid/how/finance/dci_en.htm_en) অন্যতম।

আমাদের আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ যেমন সার্ক কিছু প্রকল্পের অর্থ যোগান দেয়। এর মধ্যে এইডস, যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস নিয়ে ১০ হাজার ডলারের একটা গ্রান্ট দেয়া হয়।কৃষি বিষয়ে সার্কের কিছু ফেলোশিপ আছে। সার্কের দেশগুলো উদ্যোগ নিলে এরকম আরো রিসার্চ গ্রান্ট চালু করার উদ্যোগ নিতে পারে। দ্য ওয়ার্ল্ড একাডেমী অফ সায়েন্সেস (TWAS) (http://twas.org/opportunities/research-grants)এর কথা আমরা হয়ত অনেকেই জানি। এই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিজ্ঞান গবেষণার জন্য এককভাবে বা গ্রুপে বিভিন্ন খাতে বেশ কিছু বরাদ্দ দিয়ে থাকে  যার পরিমাণ ১৫,০০০ ডলার থেকে ৩০,০০০ হাজার ডলার হয়ে থাকে। এটা যেহেতু খুব কম্পেটিটিভ গ্রান্ট, তাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে গবেষকদের প্রয়োজনীয় ট্রেনিং এবং উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করা যেতে পারে। এগুলো ছাড়াও আরও অনেক সংস্থা আছে যারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অনেক বরাদ্দ দিয়ে থাকে। যেমন- আইডিআরসি (https://www.idrc.ca/en/funding) কিন্তু আমাদের সচেতনতার অভাবে এরকম গ্রান্টের জন্য আমরা আবেদন করিনা। এর মূল কারণ হল সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য হাতে না আসা এবং কিভাবে এসব গ্রান্টের জন্য আব্দন করতে হবে তার যথাযথ প্রশিক্ষন না থাকা। তাহলে দেখি ইউসিএলের মত সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিভাবে এই কাজটি করে এবং প্রতি বছর কয়েকশ মিলিয়ন পাউন্ড গ্রান্ট নিয়ে আসে তা দেখে নেই।

ইউসিএলে বেশ কিছু প্রশাসনিক বিভাগ আছে যারা শিক্ষক এবং গবেষকদের সাথে ফান্ডিং এবং সেগুলোর প্রয়োগ, আন্তঃবিভাগ, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক কলাবোরেইশন, প্যাটেন্ট এবং বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, কনসালটেন্সি, আউটরিচ,  ইত্যাদি অনেক বিষয়ে সহায়তা দিয়ে থাকে। এর জন্য এদের প্রচুর স্টাফ আছে, যারা শিক্ষক, গবেষক এদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করেন, তাদের সাথে দেখা করে বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ দিয়ে থাকেন ইত্যাদি। এ শাখা গুলোর স্টাফরা অধিকাংশই হল পিএইচডি ডিগ্রিধারী। তাদের কাজ গবেষণা করা নয়, শিক্ষক, ছাত্র অন্যান্য গবেষক এদের বিভিন্ন রিসার্চ প্রজেক্ট পাইয়ে দেবার জন্য সব ধরণের ট্রেনিং এবং কৌশলগত সহায়তা দেয়া।

এবার ভেবে দেখুন এ কাজটি করা কত সহজ আমাদের জন্য। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর  বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য অপ্রয়োজনীয় স্টাফ নিয়োগ দেয়ার নজির আছে। সেগুলো না করে যদি গবেষণা, ফান্ডিং, কলাবরেইশন ইত্যাদি কাজে শিক্ষকদের সহায়তা এবং ট্রেনিং দেয়ার জন্য পাঁচজনও দক্ষ স্টাফ নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে কয়েকবছরেই আমরা অনেক প্রতিগোগিতামূলক বড় বড় গ্রান্ট বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সংস্থাগুলো থেকে নিয়ে আসতে পারবো। এখন দরকার শুধু উদ্যোগ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন। 

শুধু গবেষণা নয়, শিক্ষকদের পড়ানোর মান উন্নত করার জন্য ইউসিএলে "ইউসিএল এরেনা" (https://www.ucl.ac.uk/teaching-learning/arena) নামে একটা শাখা আছে যারা প্রায় প্রতিদিন পড়ানোর পদ্ধতি, উত্তরপত্র যাচাই পদ্ধতি ইত্যাদি নিয়ে সেমিনার, আলোচনার আয়োজন করে থাকে। আমারও সুযোগ হয়েছে তাদের বেশ কিছু ট্রেনিং এবং ওয়ার্কশপে অংশ নেয়ার এবং নিজের পড়ানোর দক্ষতা বাড়ানোর কৌশলগুলো জেনে নেয়ার। তাছাড়া এখানে পিএইচডি ছাত্রদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য ফ্রি প্রশিক্ষনের  ব্যাবস্থা (https://courses.grad.ucl.ac.uk/list-training.pht)। এসব প্রশিক্ষন নিয়ে একজন পিএইচডি ছাত্রকে তিন বছরে কমপক্ষে ৮০ পয়েন্ট অর্জন করা বাধ্যতামূলক। 

ইউসিএল লাইব্রেরীর একটা শাখা আছে যারা জার্নালের সাইটেশন নিয়ে কাজ করে (https://www.ucl.ac.uk/library/open-access)। এদের কাজ হল শিক্ষক-গবেষকদের ওপেন এক্সেস আর্টিকেল  পাবলিকেশনের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া।অনেক ভালো মানের জার্নাল প্রচুর টাকা দিয়ে সাবস্ক্রাইব করতে হয়, যা অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কুলোতে পারেনা, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ইউসিএল ওপেন এক্সেস আর্টিকেল প্রকাশের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয় তার কারণ, আর্টিকেল ওপেন এক্সেস হলে সাইটেশন বাড়বে এবং ফলশ্রুতিতে র‍্যাঙ্কিং বাড়বে। ভেবে দেখুন র‍্যাঙ্কিং বাড়ানোর জন্য এরা কত সচেতন! তাছাড়া অনেক ফান্ডিং বডিরও ওপেন এক্সেস আর্টিকেল প্রকাশের শর্ত থাকে।

এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বা সরকারের লিগ টেবিলে বা র‍্যাঙ্কিং-এ এগিয়ে আসার সদিচ্ছা আছে কিনা? থাকলেও সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটাকে কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে? কারণ, আমার জানামতে দেশী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই রকম কোন মিশন এবং ভিশন নেই (না জানা থাকলে দুঃখিত)। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেমন অক্সফোর্ড, কেইমব্রিজ, হার্ভার্ড, এমআইটি, ইউসিএল, ইমপেরিয়াল, কিংস, এডিনবোরা ইত্যাদি সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে। তারা আজ থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে বিশ্ববিদ্যালয়কে কোথায় নিয়ে যেতে চান তার একটা পরিকল্পনা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ইউসিএল গত ২০১৪ সালে "UCL 2034: a new 20-year strategy for UCL" (https://www.ucl.ac.uk/2034) নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে যাতে তারা আজ থেকে আগামী বিশ বছরে ইউসিএলকে কি পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান, কিভাবে নিয়ে যেতে চান তার একটা পরিকল্পনা করেছেন এবং বাস্তবায়নের জন্য সে অনুযায়ী কাজ করছেন। এটা নিয়ে তারা এতো বেশী সিরিয়াস যে ইউসিএলের প্রভোস্টকে (আমাদের ভিসির সমপর্যায়ের পদ)সহ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে এটা নিয়ে বারবার উল্লেখ করতে দেখি। আমাদের দেশে এটা চালু করা এখনই দরকার। এতে করে শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং ছাত্রছাত্রীদের মাঝে এক ধরনের শক্তি এনে দিবে এবং এর সঠিক প্রচারণা  এবং বাস্তবায়ন ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সফলতার দিকে নিয়ে যাবে।

মোঃ আজিজুর রহমান

পিএইচডি গবেষক এবং কমনওয়েলথ স্কলার, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল)

(সহকারী অধ্যাপক, ফার্মেসী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়)

ইমেইলঃ  ajijur.rubd@gmail.com