হাওরবাসী দুর্গতজনের হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত নিবেদন

শামসুর রহমান
Published : 2 May 2017, 04:29 PM
Updated : 2 May 2017, 04:29 PM

উজানের ঢলে তলিয়ে গেছে হাওরের উঠতি ফসল। গত পরশু রাতে মাথার ওপরের চালটুকুও উড়িয়ে নিয়ে কালবৈশাখী ঝড়। শুদ্ধার্থেই হাওরবাসী এখন উপোসী আর আশ্রয়হীন এক জনগোষ্ঠী। দুর্ভাগ্য যেন তাদের পিছু ছাড়তে চাইছে না। সরকারী ত্রাণ কার্যক্রম চলছে পুরোদমে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করে এসেছেন। তিনি যেদিন ওই এলাকা পরিদর্শন করে এলেন সেদিন রাতেই কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে হাওরবাসীর ঘরবাড়ি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্গত হাওরবাসীর কল্যাণার্থে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র উপজেলা সদর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্প্রসারণ। কৃষি ঋণের সুদ কমিয়ে অর্ধেক করা এবং তার আদায় স্থগিত করার নির্দেশ প্রদান। উল্লেখ্য যে, এ নির্দেশ কেবল সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি নয়, এনজিওগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাছাড়া, সামনে ফসল চাষ করার মৌসুমে সরকারি তরফে কৃষকদের সার-বীজ-কীটনাশক এবং কৃষি উপকরণ বিনামুল্যে সরবরাহ করার কর্মসূচি ঘোষণা। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট লোকজন এবং ঠিকাদার যারা পাহাড় সমান দুর্নীতি করেছে বলে গণ-মানুষের বিশ্বাস এবং সেই দুর্নীতির নেট ফল ফসলডুবি, তাদের ব্যাপারেও যথাযথ তদন্তের নির্দেশ প্রদান।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উল্লিখিত উদ্যোগগুলো প্রশংসনীয়। তবে সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের বিনীত নিবেদন এই যে, দুর্গত হাওরবাসীদের জন্য হাওরের জলমহাল অন্তত এক বছর ইজারা না দেওয়া। কৃষি ঋণ অর্ধেক নয়, পুরোপুরি মওকুফ করে ওই বকেয়া ঋণ সামনে তিন বছর মেয়াদে পরিশোধ করার সুযোগ প্রদান। পাশাপাশি সামনে মৌসুমে বিনা সুদে তাদের ঋণদান।

এই আবেদন না জানিয়ে পারছি না। কারণ, একটি নিউজ চ্যানেলের একজন মহিলা সাংবাদিক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাওর এলাকা পরিদর্শনসূচি কাভার করার জন্য ঢাকা থেকে গিয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিদর্শন শেষে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করলেও ওই মহিলা সাংবাদিক সুনামগঞ্জেই ছিলেন। কালবৈশাখী ঝড়ে ওই দিন রাতে হাওরবাসী দুর্গত মানুষজনের বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। তো তাঁর সেই সচিত্র প্রতিবেদন গত রাতে টেলিভিশনে দেখে চোখের পানি বাঁধ মানছিল না। এখন যখন এই লেখাটি লিখছি, এই এখনও বার বার চোখের পাতা ভিজে যাচ্ছে।

ঔপনিবেশিক শাসনামলে ১৭৭০ সালে একবার এবং ১৯৪১-৪২ আরেকবার সেই রক্তচোষা হায়েনা সরকার কীভাবে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষে নিঃশেষ করা দিয়েছিল তৎকালীন বাংলার জনগণকে তার ইতিহাস পড়ে রাগে-দুঃখে-ঘৃণায় গা রি রি করে উঠেছে, এখনও ওই কথা মনে হলে প্রবল আক্রোশ জেগে ওঠে। স্বাধীন দেশের মানুষ ওরকম অসহায়ভাবে দিনাতিপাত করবে তা তো হতে পারে না।