লোহিত রক্ত কণিকা থেকে বিলিরুবিনে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া

শরীফ হোসেন
Published : 2 April 2012, 05:30 PM
Updated : 2 April 2012, 05:30 PM

লোহিত রক্ত কনিকায় অন্যান্য কোষের মত নিওক্লিয়াস, মাইট্রোকন্ড্রিয়া ও এন্ডোপ্লাজমিজ রেটিকোলাম থাকেনা বলে এটি সেসব কোষ থেকে কিছুটা আলাদা। গ্লুকোজকে নিজেদের ব্যাবহার উপযোগী করে তোলার জন্য ঐসব অরগানেলের (organelle) পরিবর্তে তাদের সাইটোপ্লাজমে বিশেষ ধরণের এনজাইম থাকে। এসব এনজাইমের অন্যান্য কাজ হলঃ

১। নিজেদের প্লাজমা মেমব্রেনের নমনীয়তা রক্ষা করা,
২। বিভিন্ন আয়ন ট্রান্সপোর্টে সাহায্য করা,
৩। হিমোগ্লোবিনের ফেরাস আয়রনকে স্টেবিলাইজ করা (ফেরিক ফরমে রুপান্তর করতে বাধা দেয়),

৪। কোষের প্রোটিনকে অক্সিডাইজড হতে বাধা দেওয়া।

ব্লাড কেপিলারির গায়ে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফাক থাকে। লোহিত রক্ত কনিকা এসব ফাক ফোকর গলিয়ে বিভিন্ন কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে। সবসময় ব্লাড কেপিলারির ফাক গলয়ে আসা-যাওয়া করার কারনে একসময় তাদের প্লাজমা মেমব্রেন দূর্বল ও পুরোনো হয়ে যায়। তাদের নিওক্লিয়াস, মাইট্রোকন্ড্রিয়া ও এন্ডোপ্লাজমিজ রেটিকোলাম অরগানেল (organelle) না থাকার কারনে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্থ প্লাজমা মেমব্রেনকে পুনরায় রিপেয়ার ও করতে পারেনা। তাই তাদের গড় আয়ু ও হয় মাত্র ১২০ দিন। লোহিত রক্ত কনিকা হার্ট থেকে স্প্লীন (প্লীহা) হয়ে লিভারে যায়। ক্ষতিগ্রস্থ লোহিত রক্ত কনিকা প্লীহা বা স্প্লীনের সরু চ্যানেল হয়ে লিভারে যাবার সময় ফেটে যায় এবং হিমোগ্লোবিন বের হয়ে আসে। হিমোগ্লোবিন ও কোষের বাকি অংশ স্প্লীনে অবস্থিত ম্যাক্রোফাজ দ্বারা মেটাবলাইজড হয়। হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন এমিনো এসিডে ও হিম অংশ বিলিভারডিন ও আয়রনে (Fe3+) রুপান্তরিত হয়। সবুজ বিলিভারডিন পড়ে হলুদ বিলিরুবিনে রুপান্তরিত হয়। ইনসলিউবল বিলিরুবিন রক্তে প্রবেশ করে এবং এলবিউমিনের সাথে বাইন্ড করে লিভারে পৌছায়। এলবিউমিনের সাথে বাইন্ড করে থাকা সত্ত্বেও একে ফ্রী বিলিরুবিন বলা হয় (কনজুগেটেড বিলিরুবিনের সাথে পার্থক্য করার জন্য)। এক সময় বিলিরুবিন এলবিউমিন থেকে মুক্ত হয়ে লিভারে কোষে ঢুকে এবং কনজুগেটেড বিলিরুবিনে রুপান্তরিত হয়। কনজুগেটেড বিলিরুবিন বাইল ডাক্ট দিয়ে ইন্টেস্টাইনে পৌছায়।

লিভার বা যকৃত কোষ বিলিরুবিনকে পিত্ত বা বাইল'এর সাথে মিশ্রিত করে বাইল ডাক্ট নামক নালীর মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্রান্তে পাঠায়। ক্ষুদ্রান্তে গিয়ে পিত্ত বা বাইল চর্বি জাতীয় খাদ্যকে হজমে সাহায্য করে। বিলিরুবিনের হলুদ রঙই বাইলের হলুদ রঙের জন্য দায়ী। তাই কোন কারনে বাইলের মধ্যে বিলিরুবিনের পরিমান বেড়ে গেলে পায়খানা অতিরিক্ত হলুদ হয়। আবার যখন বাইল ডাক্ট-এর মধ্যে পাথর সৃষ্টি হয় তখন বাইল ডাক্ট দিয়ে পিত্ত বাহির হতে না পারলে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেরে যায়। ফলে চোখে ও শরীরের অন্যান্য যায়গায় হলুদ রঙ দেখা দেয়।

তথ্য সূত্রঃ
Tortora GJ, Derrickson B. (13 edn): Principles of Anatomy & Physiology. John Wiley & Sons, Inc. Page: 736
Guyton AC, Hall JE (11 edn): Text Book of Medical Physiology. Elsevier Saunder. Page; 180, 426, 434, 863)