আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে যাদের সামাজিক কোনো সমস্যা নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। আবার কিছু মানুষ আছে যারা সমাজের সমস্যাগুলো বোঝে কিন্তু সমাধান নিয়ে কোন কথা বলে না। আবার কিছু মানুষ যারা সমাজের সমস্যাগুলো বোঝে, সমাধান নিয়ে কথা বলে অর্থাৎ শুধু চায়ের কাপেই ঝড় তুলে নিজেদের অনেক বড় সমাজ সংস্কারক মনে করে। আর কিছু মানুষ সামাজিক সমস্যা কী তাই বোঝে না, সমাধানতো দূরের কথা । সমাজে এত না বোঝা, না বলা, না পারা মানুষদের মাঝেই বলতে পারা, করতে পারা, বুঝতে পারা কিছু মানুষ বাস করে তারা সমাজ ও মানুষের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান নিয়ে কথা বলে, সমাজের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নামে, স্লোগান দেয়, মানুষকে সচেতন করে, করার চেষ্টা করে। আর এই মানুষদেরই সহ্য করতে হয় নিদারুণ কষ্ট। অথচ সমাজের সাধারণ মানুষ এই সকল অসাধারণ মানুষদের কষ্টের ফলশ্রুতিতে আসা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু আমাদের সমাজ এই মানুষদের কীভাবে মূল্যায়ন করে …?
আমাদের সমাজে যখন কেউ চুরি করে তখন আমাদের উচিৎ সেই চোরের বিচার করা। কিন্তু আমরা কি তাই করি? যদি করেই থাকি তাহলে চোরের এত বংশ বৃদ্ধি হয় কীভাবে ? চুরি হচ্ছে না কোথায় ? সমাজ কাঠামোর এমন কোনো স্তর আছে যেখানে চুরি হয় না বা হচ্ছে না? আসুন, এই চোরের বিচার করি…। যে চুরি করে তাকে আমরা বলি চোর। আর এই চোর অবশ্যই কারও মা-বাবা, কারও ভাই-বোন বা আরও অনেক কিছুই।
এখন আপনাকে বলা হল এই চোরের বিচার করতে যেহেতু আপনি সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত ও সচেতন ব্যক্তি। আর ঘটনাক্রমে এই চোর আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন (মনে করুন)। আপনি চোর নামক উক্ত ব্যক্তিকে বিচার করলেন আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন হিসাবে কিন্তু চোর হিসাবে নয়। তাহলে চোরের বিচার কিন্তু এখানে হল না। বরং বলা হল – যে ব্যক্তির চুরি হয়েছে সে মিথ্যা বলছে এবং তার দরুন তাকে ভিটে থেকে উচ্ছেদ করা হল । কেন এমন করা হয় জানেন ? আমি কিন্তু জানি। আর তা হল আমাদের নিজেরদের আত্মসমালোচনা (self criticism) শোনার মত উন্নত মস্তিষ্ক এখনও গড়ে উঠেনি। নিজের সমালোচনা(দোষ) সম্পর্কে শুনলেই "ধর বেটাকে, মার বেটাকে" । নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা করি না। এরকম একটা অসুস্থ পরিবেশে আমাদের প্রজন্ম বেড়ে উঠছে। কী শেখাচ্ছি আমরা তাদের? প্রশ্ন রইল সমাজের গুণীজনদের নিকট…।
সমাজে চোর তার কাজ চালিয়ে যেতে থাকে আর যার চুরি হয় সে কোনঠাসা হয়ে বসে থাকে। এমন হীন পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমদের প্রজন্ম বেড়ে ওঠে । আর এই কোনঠাসা ব্যক্তিদের জন্যই কিছু মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। সেই মানুষদেরকেও আমরা ছেড়ে দিচ্ছি না। কখনো অস্ত্র দিয়ে , কখনো গুম করে , কখনো ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ করে, সব কিছু কেড়ে নিয়ে আমরা তাদের বোবা বানিয়ে রাখি। সমাজের অসহায় -দিনমজুরের মাথা আমরা কেউ গুনিনা। তখনই গুনি যখন শুনি নিজের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন অর্থাৎ তাঁরা আমদের ভোট ব্যাংক !!!