বই ও পাঠক

শারমিন শান্তা
Published : 4 Feb 2018, 07:13 PM
Updated : 4 Feb 2018, 07:13 PM

আমি এমন অনেকই জানি যারা অনেক বই পড়ে, বিভিন্ন লেখকের বই পড়ে, পাতার উপর পাতা পড়ে চলেছে, আবার অনেককে তো দেখি নিজের ঘরটাকে বইয়ের স্তুপে প্রদর্শনী গ্যালারি বানাতে। আমাদের সমাজে যেমন নানা বিষয়য়ের লেখক দেখা যায়, ঠিক তেমনি নানা শ্রেণির বই পড়ুয়াও  থাকে।কেউ রাজনীতি বিষয়ক বই পড়তে পছন্দ করে, কেউ অর্থনীতি, কেউবা আবার প্রেমের বই পড়ে আরও কত কি! তবুও তাদেরকে কি পাঠক বলা যায়? হয়তো তারা অনেক বই পড়েছে, বইয়ের অনেক পাতা পড়েছে…… কিন্তু যুক্তি ও তর্কের জ্ঞান কি তারা আয়ত্তে আনতে পেরেছে ? অনেকে দেখা যায় যে, কোন বইটা বা কোন শ্রেণির বই তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটা গুরুত্বহীন কিংবা কোনটা প্রয়োজন আর কোনটা অপ্রয়োজন তা পার্থক্য করার বোধ তাদের থাকে না।তখন তাদের অবস্থা এমন হয় যে তারা যতবারই পড়ে ততবারই ভুলে যায়, আবার পড়ে আবার ভোলে, তারপর আবার পড়তে শুরু করে। আবার পুরো ব্যাপারটাই অপ্রয়োজনীয় স্তূপ বানিয়ে অযথা মাথা ভারী করে।ভাবটা এরকম যে, নিজেদের অনেক জ্ঞানী মনে করে। জ্ঞান প্রাথমিক ধাপ হল পড়াশোনা করা।আর এই পড়াশোনা করার বিষয়টা কখনো শেষের জন্য হতে পারে না।বরং শেষের দিকে এগোনোর প্রথম স্তরমাত্র। যার উদেশ্য হল প্রত্যেকের মাঝে যে সুপ্ত প্রতিভা বা বিশ্বাস আছে তা জাগ্রত করা।

এই বই পড়া বিদ্যা কাজে লাগানোর বহু সুযোগ আসে। যখন সুযোগ আসে তখন এসব লোকেরা বই পড়া বিদ্যা আর কাজে লাগাতে পারে না। আমাদের জীবনে চলার পথে অভিজ্ঞতার দরকার হয়। এ অভিজ্ঞতার জন্য যে মানসিক গঠন গড়ে ওঠা উচিৎ তা কিন্তু হয় না। তাই সুযোগ এলে সে হাতরে বেড়ায় …।

অন্যের কথা বা বক্তব্য খণ্ডানোর জন্য যার কাছে যথেষ্ট যুক্তি বা তথ্য থাকে না তাহলে তার ঐ পঠিত বিদ্যার কোন মূল্যই নেই।তাতে নিজের যুক্তি যতই ধারাল হোক না কেন।তার ঐ পঠিত বিদ্যা যদি সে সম্যকরূপে অন্তরে ধারণ করত তাহলে তার বিদ্যা তাকে লজ্জায় ফেলত না।

যদি কোনো বিষয়ে কেউ আমাদের সচেতন করে আর সেখানে যদি আমরা সন্দেহ প্রকাশ করি তাহলে বলতেই হয়  বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর। এক্ষেত্রে আমরা সাধারণত তিন ধরনের মানুষ পাই যেমনএক ধরনের মানুষ কোন বিষয়ে আগেপিছে কোন কিছু না ভেবেই বিশ্বাস করে, আরেক ধরনের মানুষ আলোচ্য বিষয়য় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে যাদেরকে আমরা সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত বলি এবং আরেক ধরণের মানুষ যুক্তিতর্ক দিয়ে বিষয়টি প্রথমে বোঝার চেষ্টা করে তারপর নিজেই নিজের যুক্তি খণ্ডন করে, মূলত যুক্তির মুল, শাখাপ্রশাখা নিয়ে গবেষণা করে যাদেরকে আমরা গবেষক বলি। বিশ্বাস (সচেতন ও যুক্তিসঙ্গত), অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং মেনে চলার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। আর এজন্যই আমাদের ২য়, ৩য়, ৪র্থ অথবা ৫ম যুক্তির দরকার হয়। কারণ, হয় আমাদের যুক্তির গভীরতা নেই, না হয়তো আমরা বড় যুক্তিবাদী। যদি আমরা বড় যুক্তিবাদী হই তাহলে আমরা যুক্তি প্যাচে অন্যকে হারিয়ে নিজেদের যুক্তি প্রতিষ্ঠা করার করার চেষ্টা করি। আর এটাইতো যুক্তির লড়াই। যার যুক্তির গভীরতা যত সে তত বেশি গ্রহণযোগ্য আমাদের কাছে।

তবে যে যাই পড়ুক না কেন সবই সমাজের অন্তর্গত। পড়াটাকে সমাজের কল্যাণে ব্যবহার করা উচিৎ…।