অপরাধ তথা বিচ্যূত আচরণের বিপরীতে রয়েছে নৈতিকতা বা নীতিবোধ। কোন আচরণ আইনে দণ্ডনীয় না হলেই যে তা নৈতিকতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে এমনটি বলা যায় না। মানুষের নীতিবোধ তার চিরায়ত মানবিকতাবোধ থেকে উৎসারিত। নীতিবোধ সমাজের একটি প্রতিষ্ঠিত প্রত্যাশিত উপাদান। নৈতিকতা তার আপন গুণেই মূল্যবান।
কিন্তু আইন সংসদ বা কোন সার্বভৌম শক্তির আদেশ দ্বারা প্রণিত। আইনে থাকে সুনির্দিষ্টি শাস্তির বিধান। এই আইন ভঙ্গ করলে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। রাষ্ট্রীয় পুলিশ তো বটেই সমাজের সাধারণ মানুষও আপনাকে ছেড়ে দেবে না।
আমার এই দীর্ঘ ভূমিকার পিছনে রয়েছে একটি পত্রিকার নীতিহীন সংবাদ। একটি জাতীয় দৈনিকে ফলাও করে আজ প্রকাশিত হয়েছে ভিখারুন নিসা নুন স্কুলের এক ছাত্রীর আদালতে দেয়া জবানবন্দি। ছাত্রীটি ইতোপূর্বে একই স্কুলের পাষণ্ড শিক্ষক পরিমল কর্তৃক ধর্ষিতা হয়েছিল। বিচারে ধর্ষকের সাজা হয়েছে। সে এখন জেলে।
মামলার তদন্ত চলাকালে ধর্ষিতা ছাত্রীটি ম্যাজিস্ট্রেটের খাস কামরায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন সেই জবানবন্দিটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। একথা ঠিক যে কোন আদালতে কোন ভিকটিম জবানবন্দির মাধ্যমে তার উপর কৃত অপরাধের বিবরণ দিলে তা আর গোপন বিষয় থাকে না। ভিকটিমের জবানবন্দির অনুলিপি ন্যায় বিচারের স্বার্থেই আসামী পক্ষ পেয়ে থাকে। আদালতে যা বলা হয়েছিল, পত্রিকায় যে তাই বলা হত বা যেত এমন কোন কথা নেই। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিটি পত্রিকায় প্রকাশিত হবে এমনটি জানলে সেই ছাত্রীটি নিশ্চয় তা দিতে রাজি হত না। কারণ, ধর্ষণের ফলে সে যা হারিয়েছে, বিচারপ্রার্থী হয়ে হারিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। এখন পত্রিকায় তার ধর্ষণের বর্ণনা প্রকাশিত হলে তার নিজের কাছে আর কিছু থাকে না। অথচ আমাদের দেশের একটি জাতীয় দৈনিক সেই কাজটিই করেছে।
ধর্ষণের অপরাধটি সংঘটিত হয়েছিল ২০১১ সালে। এর মাঝে পরিমলের বিচারকার্য শেষ হয়েছে। সে এখন কয়েদখানায়। এত দিন পর এই ঘটনা নতুন করে পত্রিকায় নিয়ে আসার মধ্যে সুস্থ সাংবাদিকতার উপাদান নেই। পত্রিকার কাটতির জন্যই এমন একটি খবরের প্রয়োজন, পাঠকের চাহিদা পূরণের জন্য নয়।
২০০০ সালে প্রণিত ও ২০০৩ সালে সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটিতে ভিকটিমের সুরক্ষার বেশ কিছু উপাদান রয়েছে। নির্যাতিতা নারীকে নিরাপদ হেফাজতে রাখা থেকে শুরু করে ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া মানব সন্তানের লালন-পালনের বিষয়টিও এই আইনে স্থান পেয়েছে। এই আইনের ১৪ ধারায় বলা হয়েছে, ধর্ষিতা নারী বা শিশুর ছবি বা পরিচয় সংবাদপত্র বা অন্য কোন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না। এই বিধান লঙ্ঘণ করা হইলে শাস্তি অনধিক ২(দুই) বৎসর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ ১,০০,০০০(এক লক্ষ) টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ড।
তবে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেয়া কোন ভিকটিমের জবানবন্দি পত্রিকায় প্রকাশিত হলে কি হবে তা সুস্পষ্ট করে আইনে বলা হয় নাই। তাই এই সংবাদ আইটেমটিতে আইন লঙ্ঘিত হয় নাই। কিন্তু নৈতিকতা কি বলে? আইন লঙ্ঘিত হয়নি বলে কি নৈতিকতা রক্ষিত হয়েছে?
সূত্রাবলীঃ
http://www.mzamin.com/details.php?nid=MjU0MTA=&ty=MA==&s=MTg=&c=MQ==
http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_pdf_part.php?act_name=&vol=&id=835
http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_sections_detail.php?id=835§ions_id=32529
সেলিম আনোয়ার বলেছেনঃ
সহমত পুষণ করছি । ধন্যবাদ ।
ম, সাহিদ বলেছেনঃ
সুপ্রিয় রাজ্জাক ভাই,আপনাকে অত্যান্ত আনন্দের সহিত জানাইতেছি যে,বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর.কম ব্লগের ব্লগারদের উদ্দেগে আসছে একুশে বই মেলা-২০১৩ তে “নগর নাব্য-২০১৩” প্রকাশের সদিচ্ছায় এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছি (বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।অত এব আপনার এবং এই ব্লগে প্রকাশিত অন্য যে কোন ব্লগারের লেখার (যা আপনার কাছে ভাল লেগেছে)লিংক প্রদান করুন এবং সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আমাদের লক্ষ্যে পৌছতে উৎসাহিত করুন। আপনার মত গুনি মানুষের পরামর্শ এবং সহযোগীতা এ মুহুর্তে আমাদের জন্য অতীব জরুরী। আশা করছি আমাকে নিরাশ করবেন না………..ভাল থাকুন।।
এইচ এম মহসীন বলেছেনঃ
সম্পূর্ণ একমত। যে ঘটনার বিচার হয়েছে, অপরাধী শাস্তি পেয়েছে, সেটি ঘাঁটাঘাঁটি করে ধর্ষণের বিবরণ দেয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। মানবজমিন বরাবরই এধরনের রিপোর্ট (?) প্রকাশ করে – পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর জন্য নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে এধরনের লেখা ছাপানোর জন্য মানবজমিনকে নিন্দা জানাই।