ভূমিকাঃ বিশ্বব্যাপী জামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ফেইসবুক, টুইটার, লিঙ্কড-ইন ইত্যাদি বহুবিধ নামধারী নেটওয়ার্কিং সিস্টেমগুলো মানুষকে হাজার হাজার মাইল দূরত্বকে শূন্যতে নামিয়ে এনে এক মঞ্চে একত্রিত করেছে। ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পর্যন্ত ফেইসবুক বা টুইটারে নিজস্ব পণ্যের বা সেবা প্রচার বা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারিদের জন্য আলাদা আলাদা একাউন্ট, পাতা বা গ্রুপিং চালু করেছে।
পুলিশ বিভাগে সামাজিক যোগাযোগঃ এ ক্ষেত্রে সারাবিশ্বের পুলিশ বিভাগগুলোও পিছিয়ে নেই। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, সিংগাপুর প্রভৃতি দেশের পুলিশ বিভাগগুলো তাদের সেবা প্রত্যাশি জনগণ ও স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের সাথে সাইবার যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ফেইসবুক ব্যবহার করছে। এই সব পুলিশ বিভাগ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতেই সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়াকিং ব্যবস্থাকে অন্তর্ভূক্ত করেছে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তবে ইদানীং অনেক পুলিশ ইউনিট ফেইসবুকে তাদের জন্য আলাদা পাতা বা একাউন্ট খুলছে। বিষয়টি প্রশংসার যোগ্য। ডিএমপির উত্তরা জোনের এসি পেট্রোল মাসাফি বিষয়টি নিয়ে বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন। আজ শেরপুর জেলার একটি পাতা পেলাম। তা ছাড়াও ঢাকা জেলা, ডিএমপি প্রভৃতি ইউনিটের কিছু কিছু একাউন্ট বা পাতা ফেইসবুকে লক্ষ্য করা যায়। কিছু কিছু জুনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা এই বিষয়ে বেশ আগ্রহ দেখাচেছন।
কমিউনিটি পুলিশিং ও ফেইসবুকঃ ফেইসবুক যোগাযোগের একটি ভাল মাধ্যম। এর সঠিক ব্যবহারে পুলিশ তাদের সেবা প্রত্যাশীদের সাথে একটি কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। কমিউনিটি পুলিশিং এর নীতির সাথেও এই যোগাযোগ সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফেইসবুক কমিউনিটি পুলিশিং নীতির নিম্নলিখিত বিষয়গুলো পূরণ করেঃ
১. পুলিশ ও জনগণের মধ্যে একটি দ্বিমুখি যোগাোযাগ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে;
২. জনগণ পুলিশের কাছে তাদেরর চাহিদাগুলো তুলে ধরতে পারে;
৩. তাদের এলাকার অপরাধ, বিশৃঙ্খলা ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে পুলিশকে অবহিত করতে পারে;
৪. পুলিশের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ-অনুযোগ সরাসরি পুলিশের কাছে জানাতে পারে;
৫. পুলিশ কর্তৃপক্ষ জনগণের কাছে তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে সেই সম্পর্কে জনগণের মতামত সংগ্রহ করতে পারে;
৬. পুলিশ জনগণের কাছে কি চায় ও জনগণকে জানাতে পারে;
৭. পুলিশ জনগণের মাঝে তাদের সাফল্যের ঘটনাগুলো তুলে ধরতে পারে
৮. পুলিশ জনগণের কাছে তাদের কোন বিষয়ের ব্যর্থতার কারণগুলো ব্যাখা করতে পারে;
৯. কোন তর্কিত বিষয়ে পুলিশ সঠিক ঘটনা তুলে ধরে বিতর্কের অবসার ঘটাতে পারে;
১০. কোন পুলিশ অধীক্ষেত্রে কোন গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেই সম্পর্কে সঠিক খবর জনগণের মাঝে বিতরণ করে পুলিশ গুজবের দ্রুত অবসান ঘটাতে পারে;
১১. ফেইসবুক পুলিশ ও জনগণের মাঝে একটি নিরন্তর সংলাপের জন্ম দিতে পারে যা জনগণ ও পুলিশ উভয়ের জন্য উপকারী হবে।
বাস্তব জগতে প্রচারঃ তবে বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার করা দরকার। প্রচারের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারেঃ
সতর্কতাঃ ফেইসবুকের মাধ্যমে জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ ঘটলেও এই যোগাযোগ জনগণের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে প্রত্যাশার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। সঠিকভাবে জনগণের চাহিদানুযায়ী প্রত্যাশা মতো সাড়া দেওয়া না হলে পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে ফেইসবুক ব্যাবহার কারী তরুণ –তরুণীগণ অধিকতর নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতে পারে। অন্যদিকে কোন কোন বিষয়ে পুলিশের ভাষ্য বা উত্তর বাস্তবতাবর্জিত কিংবা জনগণের প্রচলিত বিশ্বাসের অনুরূপ না হলে পুলিশের সাথে সম্পর্কের উন্নতি না হয়ে বরং তা অবনতি হতে পারে।
উপসংহারঃ বর্তমান উত্তারাধুনিক তথ্য প্রযুব্তির যুগে জনগণের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও পারস্পারিক জানাশোনার সুযোগের সদ্ব্যবহারকরে পুলিশের দক্ষতা ও উৎকর্ষ বাড়ানোর যে কোন গ্রহণযোগ্য পথকে অনুসরণকরতে হবে। কিন্তু একই সাথে তথ্যের বিকৃত বা অননুমোদিত প্রচার বিরূপ সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে জনগণকে উন্নত সেবার আশা দিয়ে তা যদি পূরণ করা না হয়, কিংবা পূরণ করার ন্যূনতম ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তবে জনগণ পুলিশের উপর আস্থা হারাতে পারে। যে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে পুলিশ তাদের সেবাদানকে সহজতর করতে তৎপর হবে, একই প্রযুব্তি ব্যবহার করে পুলিশ বিদ্বেষীগণ পুলিশের বিরুদ্ধে গুজব বা প্রথাগত বিদ্বেষ ছড়াতে পারে। তাই সব দিক বিবেচনা করেই ফেইসবুক ব্যবহার করা উচিৎ। (মূল রচনা-৩১ অক্টোবর, ২০১৩ পরিমার্জন ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪)