জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের জন্য বিশেষ পুলিশ ইউনিট প্রয়োজন

মোঃ আব্দুর রাজ্জাক
Published : 30 Oct 2014, 07:01 AM
Updated : 30 Oct 2014, 07:01 AM

২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট সারাদেশে জামেয়াতুল মোজাহেদিন বাংলাদেশ তথ্য জেএমবি এর বোমা বিস্ফোরণের পর থেকে এদেশে জঙ্গিবাদের অস্ত্মিত্ব, প্রচার, প্রসার আর অনুশীলন নিয়ে কেউ আর মিথ্যেও বলেন না, সন্দেহ পোষনও করে না। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর জঙ্গিবাদের সূচনা, উত্থান, লালন-পালন, আশ্রয়-প্রশ্রয় ও অর্থায়ন নিয়ে এখনও পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করেই চলেছে। ইতোপূর্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের দুটো প্রধানদল পালাক্রমে সরকারে ছিল এবং উভয় দলের সরকারের সময় জঙ্গিরা সমানভাবে সক্রিয় ছিল। তবে দিনের পর দিন তারা শক্তি সঞ্চয় করেছিল, তাদের নেটওয়ার্ক ও বিশেষজ্ঞতা বাড়িয়ে ছিল। তাই কোন এক দলের সরকারের সময় তারা প্রাথমিক কাজগুলো সম্পন্ন করেছে, পরের সরকারের সময় মাধ্যমিক পর্যায়ে পৌঁচেছে এবং তার পরের সরকারের সময় অগ্রগামী বা এ্যডভান্স পর্যায়ে পৌঁচেছে।

তাই ২০০৫ সালের বোমা বিস্ফোরণ ঐ তারিখে না হলেও ২০০৮ সালে হতে পারত। তবে জঙ্গিবাদের অন্তর্প্রসার যেভাবে চলেছিল তাতে জঙ্গি হামলা দেশে অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। এসব কথা ২০০৩ সালেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারের নজরে এনেছিল। কিন্তু তৎকালীন সরকার এতে গা করেনি। জঙ্গিবাদিদের এদেশের মাটিতে কার্যক্রম পরিচালনার কথা প্রকাশিত হলে দেশে-বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে, দেশে বিনিয়োগ কমবে কিংবা অন্যকোন দুর্বলতা তৎকালীন সরকারকে এ বিষয় অনেকটাই সচেতনভাবে উদাসীন রেখেছিল বলে মনে হয়।

কিন্তু ২০০৫ সালের জেএমবি যখন সারাদেশে একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটালো তখন কাল-নাগের ঝাঁপির ভিতরের অস্তিত্ব আর কেউ গোপন রাখতে পারল না। নাকে খত দিয়ে হলেও স্বীকার করতে হল, পুলিশিং এর স্বাভাবিক ধারা ব্যহত করে হলেও জঙ্গিদের গ্রেফতার, বিচার ইত্যাদি অব্যহত থাকল। যে বাংলা ভাইকে মিডিয়ার সৃষ্টি, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা 'মোসাদ' বা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র' এর প্রচারণা বলে এক সময় ব্যঙ্গ করা হত, সেই বাংলা ভাইকে গ্রেফতার করতে সরকার ও প্রশাসনকে গলদঘর্ম হতে হল।

তবুও তৎকালীন সরকারকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারা যায় না যে, তাদের জোর প্রচেষ্টার জন্যই জেএমবি এর শীর্ষ নেতাদের স্বাভাবিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফাঁসি দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু ক্যাডার ভিত্তিক সংগঠন ও আদর্শ ভিক্তিক প্রচারণার অধিকারী কোন জঙ্গি সংগঠনকে নির্মূল করা প্রায় অসম্ভব।

২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলা হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র সারাবিশ্বে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আলকায়েদা জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তারা প্রতিদিনই কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে। ইতোমধ্যে তারা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে আলকায়েদা নির্মূলে সাফল্য দাবি করছে। আলকায়েদা প্রধান ওসামা-বিন-লাদেনকে পাকিস্তানের আশ্রয় থেকে কমান্ডো অপারেশনের মাধ্যমে হত্যা করার পর অনেকে ভেবেছিলেন হয়ত আলকায়েদার বিশ্বব্যপী নেটওয়ার্কে ছেদ পড়বে, দুর্বল হয়ে পড়বে আল-কায়দা সংগঠন।

কিন্তু বিষয়টি ইতোমধ্যে তার উল্টো প্রকল্প সমর্থন করেছে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের আল-কায়েদা গোষ্ঠী এখন তাদের নেটওয়ার্কের কেন্দ্র হাজার স্থানে সরিয়ে নিয়ে এক সংগঠনকে বহু সংগঠনে বিস্তারিত করছে। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল সরকারকে উৎখাত করে যেখানে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিযান শুরু করে ইসলামিক স্টেট বা আইএস নামের একটি উগ্রপন্থি সংগঠন যারা মূলত আল-কায়দারই নেতাকর্মী, সাগরেদ ও ওস্তাদ। এইতো কিছুদিন পূর্বেও ইরাক সরকার প্রায় পতনের মুখে এসেই পড়েছিল। কিন্তু ওবামা প্রশাসনের প্রণান্ত প্রচেষ্টায় তারা কোন প্রকারে এবারের মতো রক্ষা পেয়েছে।

কে ধারণা করতে পেরেছিল যে আলকায়েদা প্রধান ওসামা-বিন লাদেনের হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সিরিয়া অঞ্চলে আল-কয়েদা উচ্ছেদের জন্য আফগানিস্তান স্টাইলে আর একটি সর্বগ্রাসী, আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক হামলা বা অপারেশন চালাতে হবে? কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে মধ্য প্রাচ্যের আই এস আই এখন আলকায়েদার স্থান দখল করেছ কিংবা আল-কায়েদা এখন আই এস আইতে রূপ নিয়েছে। যে বহুজাতিক অভিযান যুক্তরাষ্ট্র আই এস এর বিরুদ্ধে শুরু করেছে তাতে তারা হয় তো আফগানিস্তানের মতো সীমিত সফল হবে কিন্তু ইতোমধ্যেই আলকায়েদা দক্ষিণ এশিয়াসহ অন্যান্য স্থানে নতুন করে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের যে ঘোষণা বা নজর দিয়েছে তাতে পূর্ণ সাফল্য সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোর আলকায়েদা সম্পৃক্ততা সুপ্রতিষ্ঠিত নয়। হরকাতুল জিহাদ, বাংলাদেশ বা হুজিবির পাকিস্তান সম্পৃক্ততা থাকলেও তা পূর্ণ প্রকাশিত নয়। অন্যদিকে জেএমবির সাথে আলকয়েদা বা আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততার কথা সেই সময় এর শীর্ষ নেতারাই অস্বীকার করেছিলেন এবং পুলিশ তদন্তকারী কিংবা গোয়েন্দারাও সেটা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি।

কিন্তু ২০০৫ সালের পরে পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে জঙ্গিরা ক্রমেই আলকায়েদাসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সাথে যোগাযোগ শুরু করে ও গাঁটছাড়া বাঁধতে থাকে। এই প্রকল্পেরই প্রমাণ পাওয়া যায় সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে আটক হওয়া কয়েকজন জঙ্গির স্বীকারোক্তিতে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ তারিখে রাজধানীর তুরাগ /উত্তরা এলাকা থেকে ৮ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তাদের স্বীকারোক্তি মতে ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরো ৫ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের কাছ থেকে বোমা তৈরি সরঞ্জাম, বিস্ফোরক ও রিমোর্ট কন্ট্রোল ডিভাইস পাওয়া যায়। এসব জঙ্গি বর্তমানে সীমিত আকারে ক্রিয়াশীল প্রধান তিন সংগঠন -জেএমবি, হুজি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একটি মোর্চ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। তারা কতিপয় উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকতাকে হত্যার মাধ্যমে তাদের নব অর্জিত শক্তি সম্পর্কে দেশবাসিকে জনান দেয়ার পরিকল্পনাও করেছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এসব জঙ্গিদের প্রায় সবাই পূর্বে পুলিশের কাছে অপরিচিত ছিল। কিন্তু তারা তাদের জঙ্গি আদর্শের প্রতি আনুগত্য ও শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ইতোমধ্যেই নেতৃত্ব পর্যায়ে চলে এসেছে।

এসব নতুন জঙ্গির পারিবারিক ঐতিহ্যও উল্লেখ করার মতো। আসিফ আদনান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি আব্দুস সালামের ছেলে। সে আল-কয়েদা নেতা জাওয়াহিরির প্রকাশিত ভিডিওবার্তার মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রমে যোগদানে উদ্বুদ্ধ হয়। তার পরিকল্পনাও ছিল সুদূর প্রসারি। তাবলিগ জামাতের মাধ্যমে তুরস্ক হয়ে সে সিরিয়া গিয়ে বর্তমানের আলোচিত আইএস এর নুসরা ব্রিগেডে প্রশিক্ষণ শেষে সে বাংলাদেশে আলকায়েদা-ইন -ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (একিউআইএস)এর নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছিল।

অন্যদিকে গ্রেফতারকৃত ফজলে এলাহি তানজিল একজন মহিলা যুগ্মসচিব উম্মে ফাতিমার ছেলে। সে কওমী মাদ্‌রাসা তো নয়ই এমনকি বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীও ছিল না। সে রাজধানীর নামকরা ইংরেজি মাধ্যম প্রতিষ্ঠন থেকে 'ও' লেভেল এবং 'এ' লেভেল পাশ করা। গ্রেফতারকৃত খায়রুল গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনলোজির ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর শেষ বর্ষের ছাত্র, আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছেন। সে একজন বোমা বিশেষজ্ঞ। ২০০ গজ দূর থেকে রিমোর্টের মাধ্যমে কাজ করার মতো সার্কিট সে আবিষ্কার করেছে যা পুলিশ তাদের গ্রেফতারের সময় উদ্ধার করেছে।

জেএমবি আর হুজির বোমা বিস্ফোরণসহ সন্ত্রাসী কর্মকা- সম্পর্কে দেশবাসির পূর্ব ধারণা রয়েছে। কিন্তু আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ধ্বংস ক্ষমতা এখনো আমাদের অজানা, এ দলের প্রধান বরগুনা থেকে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেল হাজতে আছে। তারা আলকায়েদার বাংলা টিম বলেই নিজেদের পরিচয় দেয়। তাই তাদের ধ্বংস ক্ষমতা ও সহিংসতা সহজেই অনুমান করা যায়। এখন এসব জঙ্গি সংগঠন যদি সত্যিই কোন গোপন মোর্চা তৈরি করে এবং একই সাথে তাদের সাথে অন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর আদর্শিক কারিগরী ও আর্থিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় তবে এরা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, এদের দেশিয় জনসমর্থন যত নগণ্যই হোক না কেন তারা বাংলাদেশের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠবে।

যে জেএমবি সারা দেশে একসাথে সাড়ে পাঁচশত বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে তাদের প্রতি মাসে অন্তত পাঁচটি বোমার বিস্ফোরণ কিংবা ৫ জন টার্গেটেড ব্যক্তিকে হত্যা করা সম্ভব বলেই আমার মনে হয়। সম্প্রতি গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ আদালতে যাওয়ার সময় পুলিশ এসকোর্টে সফল হামলা চালিয়ে সহকর্মীদের ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা প্রমাণ করে যে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা ও সার্বক্ষণিক নজরদারীর পরেও তারা কতটা সংঘবদ্ধ, কতটা নিখুঁত পরিকল্পনাকারী এবং কত বেশি ভয়ংকর।

দেশে জঙ্গিবাদ এখন একটি অনিবার্য বাস্তবতা। জঙ্গিদের ক্ষমতার উৎকর্ষও প্রশ্নাতীত। তাদের সাথে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর যোগাযোগও প্রমাণিত। যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের অস্তিত্বই শুধু বজায় রাখছে না, বরং তারা সাংগাঠনিক কার্যক্রম সম্প্রসারিত করছে, তাদের অভিযান ভিন্ন আঙ্গিকে নিরন্তর চালিয়েও যাচ্ছে। একা নেতার গ্রেফতার অন্য নেতাদের সামনের সারিতে নিয়ে আসছে। উত্তরসূরিগণ পূর্বসূরিদের চেয়ে আরো বেশি ভয়ংকর, শিক্ষিত, অভিজাত পবিারের ও বিশেষজ্ঞরূপে আবির্ভূত হচ্ছে।

কিন্তু জঙ্গিদের সম্পর্কে গবেষণা, তথ্য সংগ্রহ সংরক্ষণ ও অভিযান পরিচালনার জন্য বাংলাদেশে কোন পেশায়ার আলাদা ইউনিট তৈরি হয় নি। জঙ্গি দমনের ব্যাপারে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নস কিছুটা ভিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে র‌্যারের কোন নিজস্ব স্থায়ী জনবল নেই। র‌্যারের জনবল, বিশেষ করে, অফিসারদের সিংহভাগই আসেন সশস্ত্র বাহিনী থেকে। এদের নিজস্ব পেশার দায়িত্বের সাথে পুলিশ পেশার দায়িত্ব সামান্যই সম্পর্কযুক্ত। অধিকন্ত তারা দুই/তিন বছর পর তাদের মাতৃ পেশায় ফিরে যান। তাই জঙ্গি দমনের মতো একটি নিরবিচ্ছিন্ন পেশাদার কাজের কাঙ্খিত সাফল্য তাদের কাছ থেকে আশা করা যায় না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ মূলত প্রচলিত ফৌজদারি মামলা তদন্ত ও নিয়ন্ত্রণে পারঙ্গম। তারপরও জঙ্গিদমন, জঙ্গিদের গ্রেফতার ও তাদের নিয়ত পরিবর্তিত নেটওয়ার্কগুলো উদ্ঘাটনে তারা যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে তাদের পেশাদারিত্বের উৎকর্ষের জন্য। যেহেতু জঙ্গি দমন, সংশ্লিষ্ট অপরাধের তদন্ত ইত্যাদি মূলত পুলিশের কাজ, তাই মেট্রোপলিটন গোয়েন্দাদের পেশাদারিত্ব প্রয়োজনে কাজে আসছে। কিন্তু সমস্যা হলো, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের অধিক্ষেত্র শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধীক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ। যদিও তারা প্রয়োজনে আইন অনুসারেই দেশের যে কোন স্থানে অভিযান পরিচালনা করতে পারে, তবুও তাদের অধীক্ষেত্র সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

পুলিশের সিআইডি মূলত জঙ্গির মামলাগুলো তদন্ত করে ও তদন্ত মনিটর করে। কিন্তু সিআইডিও প্রচলিত অপরাধের তদন্ত করতে অভ্যস্থ। প্রতিনিয়তই ক্রমবর্ধমান অপরাধ ঘটনার তদন্ত করতে সিআইডি ইতোমধ্যেই মামলার ভারে ন্যূব্জ হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায়, জঙ্গি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের জন্য একটি বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট গঠন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ইউনিটের কাজই হবে জঙ্গি কার্যক্রম দমন, নিয়ন্ত্রণ জঙ্গি মামলা তদন্ত, জঙ্গিদের গতি প্রকৃতি, দেশি-বিদেশি জঙ্গিদের নিয়ে গবেষণা করা এবং তৃণমূল পর্যায়ের পুলিশ ইউনিটগুলোকে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রাথমিক কৌশল শিক্ষা দেয়া। আর যেহেতু এরা পুলিশেরই সদস্য হবেন, তাই তাদের পেশাগত দায়িত্ব পুলিশের যে কোন পর্যায়েই প্রাসঙ্গিক হবে। জঙ্গিপ্রবণ প্রত্যেক দেশেই পুলিশে বিশেষ ইউনিট রয়েছে। তাই বাংলাদেশে এদিক দিয়ে পিছিয়ে থাকতে পারে না। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন অধীক্ষেত্রে যে সব জঙ্গি ধরা পড়েছে, তাদের কাছে যে সব অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দব্য পাওয়া গেছে এবং তাদের বর্তমান প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে যা জানা গেছে তাতে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কার্যকারী প্রতিরোধের জন্য একটি বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট গঠনের বিকল্প নেই।

সূত্রাবলীঃ

১. http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2014/09/30/135088/print

২.http://www.jugantor.com/current-news/2014/09/19/149772