সিএনজি চালক এক বাটপাড় মফিজ

মোঃ আব্দুর রাজ্জাক
Published : 3 Nov 2014, 07:44 AM
Updated : 3 Nov 2014, 07:44 AM

দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষগুলো অতি সহজ সরল; বোকা-সোকা। এরা প্রতিনিয়তই ঠকে; কিন্তু কাউকে ঠকায় না। এরা পরিশ্রম করতে পারে। যেহেতু এদের মধ্যে শিক্ষার হার কম এবং উত্তরাঞ্চলে শিল্পায়ন হয়নি তাই এরা গায়েগতরে খেটে সামান্য পয়সা রোজগার করেই জীবন গুড়ার করে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চতুর লোকজন উত্তরাঞ্চলের এ খেটেখাওয়া মানুষগুলোকে তাচ্ছিল্যভরে বলেন, মফিজ। কিন্তু সব মফিজ সব সময়ই নির্বোধ থাকে না। হাল আমলে এরাও চতুর হয়েছে এবং শুধু চতুরই নয় রীতিমত বাটপাড়ও বনে গেছে।

তাহলে খুলেই বলি ঘটনাটি। এক সকালে ফোন দিলেন আমার নিজ থানা এলাকার এক ভদ্রলোক। আমার নিজ ইউনিয়নেরই পশ্চিম প্রান্তে ভদ্রলোকের বাড়ি।থাকেন ঢাকা শহরের মোহাম্মদ থানাধীন শনিবিলা অঞ্চলে।এ অঞ্চলটি ঢাকার খুব কাছে হলেওএখনো বস্তি এলাকা। অদূরেই কেরানিগঞ্জ থানা। পাশেই গাবতলি। তবে দ্রুতই এ অঞ্চলের উন্নয়ন হচ্ছে। এখানে আমাদের মিঠাপুকুরের বেশকিছু লোক থাকে। এরা সবাই আমার ফোন নম্বর কাছে রাখে। বিপদে-আপদে আমাকে ফোন করে। আমিও তাদের সাহায্য করা দায়িত্ব বলেই মনে করি।

সাধারণত এলাকার মানুষের সাথে ছোট খাট ঝগড়া বিবাদ, টাকা-পয়সা লেনা দেনা, ড্রাইভার হলে পুলিশ কর্তৃক গাড়ি ধরা কিংবা কোন কারণে পুলিশি ঝামেলার সম্মুখিন হয় এরা। অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশ তাদের রিকসা জব্দ করে কাঁচপুরের ডাম্পিং গ্রাউন্ডে নিয়ে যায়। অনেক সময় এদের কাছ থেকে স্থানীয় মাস্তানরা চাঁদাবাজি করে। একবার এক সিএনজি অটোরিক্সা চালক অজ্ঞতাবসত তার সিএনজি মহামান্য রাষ্ট্রপতির মোটরকেইডের মাঝে ঢুকিয়ে দিল। ভাগ্যিস এটা ছিল শুধুই মোটরকেইড; মহামান্য এতে ছিলেন না। এরপর সিএনজি ড্রাইভারের স্থান হল, রমনা থানায়। তাকে থানা থেকে ছাড়াতে পারিনি। তবে স্বল্পতেই হাজতমুক্তি ঘটেছিল।

কিন্তু এখন যে কারণে এ ভদ্রলোক ফোন করেছেন, তা সম্পূর্ণ আলাদা। এ ফোন দেয়া ভদ্রলোক রংপুরের সাদামাটা মফিজ নয়। তিনি রীতিমত বাটপাড় স্বভাবের। ভদ্রলোক সিএনজি চালান।কিন্তু তার সিএনজি নিয়ে কোন পুলিশি সমস্যা হয়নি। তিনি ফোন দিয়েছেন অন্য কারণে; অন্য অনুরোধে।

ঢাকা শহরে সিএনজির অনেক প্রকারভেদ রয়েছে। বাণিজ্যিক ভাবে ভাড়ায় চালিত সিএনজি ক্রয়ের অনুমতি সরকার দিচ্ছেনা। অন্যদিকে সিটিকর্পোরেশনের বাইরে থেকে নিবন্ধিত সিএনজিও ঢাকায় চলতে দেয়না। অধিকন্তু প্রাইভেট ক্যাটেগরিতে ক্রয়কৃত সিএনজি ভাড়ায় চালানো যায়না। তবে কিছু কিছু প্রভাবশালী ভদ্রলোক ভাড়ায় চালিত নাহলেও প্রাইভেট ও ঢাকার বাইরে নিবন্ধিত সিএনজি ঢাকায় চালায়।তারা পুলিশসহ স্থানীয় মাস্তানদের ম্যানেজ করেই তা করে। তবে স্থানীয মাস্তানদের চেয়েও পুলিশের ঝামেলাই বেশি। তবে পুলিশের পরিচয়ে এগুলো চালান হলে নাকি সাত খুন মাপ। পুলিশ তো ধরেই না, স্থানীয় মাস্তানগণও তেমন ঝামেলা করে না।

আমার আলোচিত দেশি মফিজ পুলিশের কাছ থেকে সিএনজি ছাড়ানোর জন্য নয়, বরং তার সাথে আমাকে সিএনজি ব্যবসা করার জন্য প্রস্তাব দিলেন। তিনি বললেন,তিনি শনিবিলা এলাকায় ৮/১০টি সিএনজি চালাবেন। এগুলো চোরাই নয়, তবে টেকনিক্যালি ঢাকা শহরে চলাচলের ক্ষেত্রে অবৈধ। তাই এগুলো ঢাকায় চালালে পুলিশ ঝামেলা করে। তবে এগুলোর পিছনে যদি কোন পুলিশ অফিসার জড়িত থাকে তাহলে অবস্থা হয় ভিন্ন।

তাই এ ভদ্রলোকের কৌশল, এ সিএনজিগুলো তিনি আমার নামে চালাবেন।আমার পরিচয় ব্যবহার করবেন।আমার ভিজিটিং কার্ড তার ও ড্রাইভারদের কাছে থাকবে। আর পুলিশ বা মাস্তানদের বলবে এটা এসপি রাজ্জাক সাহেবের সিএনজি। মাঝে মাঝে অবশ্য আমাকে ফোনটোন করে পুলিশ ধরলে ছাড়াতে হতে পারে। মাস্তানরা ধরলে ধমক-টমক দিতে হবে।

এর বিনিময়! বিনিময় বিরাট অংকের বখরা। প্রতি মাসে ৫০,০০০/-টাকা। আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম।ওরে বাবা! আমার নাম ব্যবহার করবে এতেই মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা? বাটপাড় বলল,এটা অনেকেই করে।এরা স্তায় অনেক এসপি/ডিসি তথা পুলিশ অফিসারদের নামে সিএনজি চলে। তাই তারা আমাকে তাদের সাথে নিয়ে ব্যবসা করতে চায়। ওদের পূঁজি হল অর্থ ও শ্রম। আমার অংশীদারিত্ব হল, শুধু আমার পুলিশের পদ মর্যাদা।

কিন্তু আমি তার এ প্রস্তাব গ্রহণ করিনি। কারণ যে অর্থ আমি রোজগার করি না, সে অর্থে আমার কোন মোহ নেই। বাটপাড়কে বললাম, দয়া করে আমার নাম ভাঙ্গাবেন না। আপনাদের একটুআধটু উপকার করি বলে আমাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে মৎস্য শিকার আমি কিছুতেই বরদাস্ত করব না।যদি ধরতে পারি,সোজা জেলে ঢুকিয়ে দিব।

(১ অক্টোবর, ২০১৪)