সহব্লগার ও পাঠকদের মন্তব্য লেখকের জন্য অবশ্য প্রত্যাশিত

মোঃ আব্দুর রাজ্জাক
Published : 15 April 2016, 07:44 PM
Updated : 15 April 2016, 07:44 PM

অনেক ব্লগার তার সহব্লগারদের লেখায় তেমন কোন মন্তব্য করেন না বলে এক ব্লগারের পো্স্টে মন্তব্য করেছেন আমাদের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত লেখক আইনরিন সুলতানা অভিযোগ করেছেন। এ অভিযোগের উত্তর দিতে গিয়ে সহব্লগার ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন মন্তব্য করেছেন তিনি ক্যাচাল পছন্দ করেন না বলেই মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। আমাদের আইরিন আপা এ নিয়ে একটু বিরূপ মন্তব্যই করেছেন, সহব্লগার ওয়াসিম সম্পর্কে। অবশ্য ওয়াসিম ভাইয়াও কম যাননি। তিনিও আইরিন অপার উপর ধানী মরিচের ঝাল ঝেড়েছেন।বলা বাহুল্য, দুই লেখকের কলম যুদ্ধের ঘটনা সাহিত্যাঙ্গনে নূতন নয়।শেলি থেকে শুরু করে নজরুল পর্যন্ত এ ধরনের যুদ্ধের ময়দানের সৈনিক ছিলেন। আমি মনে করি, এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নিবন্ধ না লিখে পারলাম না।

ব্যক্তিগতভাবে লেখকদের লেখায় মন্তব্য করার বিষয়টাকে আমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। এতে লেখক-পাঠক-সহব্লগার সবাই উপকৃত হন। একই সাথে আমরা পরিশিলীত ও শুদ্ধতর লেখা পেয়ে যাই, উপকৃত হয় আমাদের সাহিত্য।

পাঠক ও সহব্লগারদের মন্তব্যে নবীন লেখকরা বড় উৎসাহিত হয়। পুরাতন লেখকরা এর মাধ্যমে পুরাতন পথগুলোকে নূতনদের সামনে তুলে ধরতে পারে। অন্যদিকে নূতনদের কাছতে নূতন নূতন পথের সন্ধানও পেতে পারেন।

প্রতিষ্ঠিত লেখকগণ ইতোমধ্যেই একটি মতের মাধ্যমে পথের সন্ধান পেয়েছেন বলে আমি মনে করি। কিন্তু সে মত বা পথ অন্যের কাছে কিরূপ মনে হল, সেটা তো মন্তব্যের মাধ্যমেই যাচাই করা যায়। কোন চলমান আলোচিত বিষয়ে এক লেখকের লেখা যদি অন্য লেখকরা না পড়েন, তাহলে পারষ্পরিক উন্নতির পথ তো অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়। একজন লেখক অন্য লেখক কিংবা পাঠকদের মন্তব্যের মাধ্যমেই নিজের লেখনি সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন। একজন লেখক যে মত দিবেন, যেসব তথ্য তার লেখায় উল্লেখ করবেন, যে তত্ত্বের আশ্রয় তিনি নিবেন, সে সব তথ্য, তত্ত্বকে মেনে নেয়া কিংবা তার ত্রুটি বা সত্যতার বিষয়গুলো তো অন্যদের মন্তব্যের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়।

অধিকন্তু পাঠক আমার লেখা সত্যিই পড়ছেন কিনা আর পড়লেও তা উপলব্ধি করছেন কিনা সেটা তো জানা যাবে প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমেই। এ প্রতিক্রিয়া আসে পোস্টের উপর মন্তব্যের মাধ্যমে। কোন পাঠক কিংবা লেখকের মন্তব্য থেকেই বোঝা যাবে তিনি আমার লেখার পুরোটা পড়েছেন কিনা কিংবা উপলব্ধি করতে পেরেছেন কিনা।

একটি লেখার উপর পাঠক/লেখকদের মন্তব্য লেখককে নতুন লেখায় উৎসাহ যোগায়। হয়তো লেখক কোন একটি বিষয়ে লিখার কথা কোন দিন চিন্তাও করেননি। কিন্তু পাঠকের মন্তব্যের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি সে দিকটি নিয়ে বিস্তারিত জানতে বাধ্য হন যার ফলাফল আর একটি পোস্টের মাধ্যমেও আসতে পারে।

যখন কোন লেখার মন্তব্যে কোন তথ্যকে চ্যালেঞ্জ করা হয়, তখন লেখককে সে সব তথ্যকে পুনরায় বি্শ্লেষণ করতে হয়, তার সপক্ষে অন্যান্য তথ্যও সংগ্রহ করতে হয়। এতে লেখক তার জ্ঞান ও জানার পরিধিকে আরো বিস্তৃত করতে পারেন। অধিকন্তু কোন ভুল বা অসত্য কিংবা অসমর্থিত সূত্রের তথ্যকে চ্যালেঞ্জ করা সচেতন পাঠক মাত্রেরই কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। লেখকগণ কর্তব্য পালনে অগ্রগামী থাকবেন সেটাই তো কাম্য।

ব্যক্তিগতভাবে আমি সহব্লগার ও পাঠকদের মন্তব্যের জন্য তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করি। একটি লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর তো কয়েক দিন স্মার্ট ফোনে বারবার ব্লগ খুলি শুধু আমার লেখার উপর সহব্লগার ও পাঠকদের মন্তব্য দেখা/পড়ার জন্যই।বললে অত্যূক্তি হবে না, এ ব্লগে আমার অনেক উৎকৃষ্ট লিখা (আমার মতে, পাঠক কিংবা সহব্লগারদের মতে নাও হতে পারে।) সহব্লগারদের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ কিংবা তাদের দেয়া নতুন তথ্যের খোঁজ করতে গিয়েই জন্ম নিয়েছে। তাই বলব, সহব্লগরা আমাকে লেখক হতে যথেষ্ঠ সহায়তা করেছেন।আর বানান থেকে শুরু করে তথ্যের সত্যতা বা সূত্রের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি তো সহব্লগারদের আলোচনা, সমালোচনা কিংবা চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবেলা করতেই পূর্ণতা পেয়েছে।

ইদানীং ব্লগে বানানের শুদ্ধাশুদ্ধী নিয়ে বেশ লেখালেখি হচ্ছে। নূতন লেখকদের অনেকেই বানান সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন নন। এটা তাদের ভাষা জ্ঞানের দুর্বলতা থেকে আসতে পারে কিংবা কম্পিউটার কিংবা লিখন যন্ত্রের ত্রুটি বা এগুলোর সাথে স্বল্প পরিচিতির কারণেও হতে পারে। কিন্তু কারণ যাই হোক একজন পাঠক হিসেবে সে ত্রুটিসমূহ মেনে নেয়ার কোন কারণ নেই। পাঠক যদি এটার প্রতিবাদ না করেন, কিংবা এ বিষয়ে নতুন লেখকদের দৃষ্টি আকর্ষণ না করেন, তাহলে সাহিত্য তো ভাষাকে অনুসরণ করবে না। ভাষাই হল সাহিত্যের প্রাণ। এখন এ ভাষার শুদ্ধতা রক্ষিত না হলে সাহিত্যের মূল্যও কমে যায়। আর সাহিত্যের মূল্য অক্ষুণ্ন রাখার দায়িত্ব তো লেখক, পাঠক সকলেরই।

ব্লগের অনেক লেখক আছেন যারা সহব্লগারদের পোস্টের ভাষার শুদ্ধতা আনতে বেশ অবদান রাখেন। তারা বানানের শুদ্ধতা থেকে শুরু করে লেখার বিষয়বস্তু নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন। আমি এসব সহব্লগারদের কাছে নানাভাবে কৃতজ্ঞ। এসব ব্লগারের পরোপকারিতা অনলাইন সাহিত্যকে আরো সম্মৃদ্ধ করছে বলেই আমার বিশ্বাস।

তাই আসুন সহব্লগারদের লেখাগুলো সময় নিয়ে পড়ি, সেগুলোতে প্রকাশিত মত-পথকে জানার চেষ্টা করি, তাদের আইডিয়াগুলোকে যাচাই করে দেখি, তাদের ত্রুটি-বিচ্যূতিগুলো সংশোধনের জন্য উপদেশ দেই। আমার লেখা যদি পঠিতই না হয়, সেটা আমার কম্পিউটারের নিজস্ব ফাইলে কিংবা কাগজের খাতায় রেখে দেয়া আর ব্লগে প্রকাশিত হওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এ বিষয়টি আমি জানতে পারি, উপলব্ধি করতে পারি এবং আরো বেশি বেশি লেখায় উদ্বুদ্ধ হই পাঠক ও লেখকদের মন্তব্য থেকেই। ((১৪ এপ্রিল. ২০১৬, ১ লা বৈশাখ, ১৪২৩, ইউএন হাউজ, জুবা, দক্ষিণ সুদান)