ফেইসবুকের মাধ্যমে জানতে পারলাম। ৩০তম বিসিএস এ কাস্টম এন্ড ই্ক্সাইজ ক্যাডারে কর্মকর্তা সুশান্ত পালের নামে নাকি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে জনৈক মোতাকাব্বির খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও কুরুচিপূর্ণ লেখা প্রকাশ করা হয়েছে বলে দৈনিক প্রথম আলো মারফত জানতে পারলাম।
সুশান্ত পাল নামের ভদ্রলোকটিকে আমি আগে চিনতামই না। তবে মামলার খবরের পর তার সম্পর্কে উৎসাহী হয়ে ফেইসবুকে ঢুকে গেলাম তার প্রোফাইলে। দেখি তিনি কেরিয়ার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে নানাবিধ লেখা লিখেন, নানা স্থানে লেকচার দিয়ে বেড়ান। এক স্থানে দেখলাম জনাব সুশান্ত পাল নাকি বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। তিনি ফেইসবুকে নানা পোস্টের মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীদের উপদেশ দেন, উৎসাহ দেন।
আমি ফেইসবুকে আমার বন্ধুদের তালিকায় গিয়ে দেখি সুশান্তের সাথে আমার ৩৪ জন সাধারণ বন্ধু আছে। এ সূত্রে হয়তো আমার পোস্টগুলো সুশান্তের কাছে যায়, আর আমিও হয়তো সুশান্তের পোস্ট অনেক ক্ষেত্রেই পড়ি। কিন্তু তাকে আলাদাভাবে স্মরণ করার কোন হেতুই ইতোপূর্বে জন্মায়নি।
কিন্তু সুশান্তের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার খবরটি পড়ে আমার বেশ খারাপই লাগল। একজন বিসিএস ক্যাডারের সরকারি কর্মকর্তা। অবশ্যই মেধাবী। এর বাইরেও কথা হল, সুশান্ত তরুণ-যুবকদের উৎসাহ দেন। তার অসংখ্য ফলোয়ার বা ভক্তও রয়েছে। তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে পারা সরকারি কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি নয়। আর মেধাবী হলেই তার মাথা থেকে আইডিয়া বের হবে কিংবা কলম দিয়ে কলাম বের হবে এমন কোন কথা নেই। দেশে হাজার হাজার মেধাবী মানুষ ছিল, এখনও আছেন। কিন্তু তারা অন্যের জন্য কাগজে কলমে কিছু লিখে যেতে পারেননি। জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাসও একই সাক্ষ্য দেয়। সক্রেটিসকে সর্বকালের জ্ঞানী মানুষ বলে আমরা সবাই স্বীকার করি। কিন্তু প্লেটো নামে তার একজন লেখক ছাত্র যদি পৃথিবীতে জন্ম না নিতেন, তবে সক্রেটিসকে হয়তো কেবল গবেষকরাই জানত, আমাদের মতো আমজনতারা নয়। বলাবাহুল্য, সুশান্ত পালের লেখার অভ্যাস আছে। তিনি তার আইডিয়া লিখে সবাইকে জানাতে পারেন।
এ সুশান্ত পালের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হওয়ায় আমি যারপর নেই আশ্চর্যান্বিত হয়েছি, ব্যথিত হয়েছি এবং ব্যক্তিগতভাবে উদ্বিগ্নও হয়েছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সুশান্ত তার ফেইসবুকের দেয়ালে কি লিখেছিলেন সেটা তাজা অবস্থায় আমার পড়া হয়নি। তবে সুশান্তের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর একটু উৎসাহিত হলে নানা সূত্র থেকে তার কয়েকটি ভার্সন আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অনেক সাইটে তার চুম্বক অংশও পাওয়া গেছে। হ্যাঁ, কিছু কিছু লেখা আছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, কল্পনাপ্রসূত কিংবা কোন বিরুদ্ধসূত্র( hostile source). থেকে নেয়া। আর তার শব্দচয়নও মার্জিত নয়। আমি জানি না, এটা তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য লিখেছিলেন কিনা। যদি তাই হয়, সুশান্তের বিরুদ্ধে আমিও পুরোমাত্রাই কুপিত, বিতশ্রদ্ধ। কারণ, আমি নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাঁচ-সন্তান (diced mould)।
বলতে দ্বিধা নেই, একজন অজ পাড়াগাঁর মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে বিশেষ কিছু কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়ে আমি যদি অন্য কোথাও পড়তাম, আমার জীবনটা হয়তো ভিন্ন রকম হতো, বর্তমানের চেয়ে অনুন্নত হত। তাই আমার ব্যক্তিগত সাফল্যের জন্য আমি আমাকে যতটা প্রস্তুত করেছিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় আমাকে তার চেয়ে বেশি প্রস্তুত করেছিল।।
যদি বলি আমার বর্তমান প্রতিষ্ঠার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বতোভাবে দায়ী, সেটা কোনভাবেই অসত্য হবে না।এমতাবস্থায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কেউ যদি অবমাননাসূচক কিংবা মিথ্যা কুৎসা রটনা করে, সেই কুৎসা রটনাকারীর উপর আমি স্বাভাবিক আবেগেই রাগান্বিত হব, তাকে আচ্ছা করে চোখা চোখা শব্দে, এমনকি আমার বাল্যকালের গ্রাম্য ভাষায় দুচারটি বাক্য বলে গালিও দিব।
কিন্তু তাই বলে কলমের ডগা দিয়ে কুৎসা রটনাকারীর বিরুদ্ধে যতই বিরক্ত হইনা কেন, তাকে মামলা দিয়ে হেনস্থা করার চিন্তা কোন দিনই করব না। কেউ যদি কলমের মাধ্যমে আমাকে হেয় করতে চায়, আমি তাকে কলম দিয়েই প্রতিরোধ করব। সুশান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে যা অসত্য বা বানোয়াট কথা লিখেছেন, আমি তার তীব্র প্রতিবাদ করি, তার বিরুদ্ধে আমার কলম তরবারির চেয়েও ধারাল। তবে তার দেয়া তথ্য বা উপাত্তগুলোকে পাল্টা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে খণ্ডন করব। সুশান্ত কলম দিয়ে আমার যে ক্ষতি করেছে বা অপমান করেছে, তাকি আইনী মারপ্যাঁচ বা খড়্গ দিয়ে পুনরুদ্ধার করা যাবে?
যতটুক জানি, সুশান্ত নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।হয়তো আমাদের মতো কচি অবস্থায় অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে তার জীবনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁচে তৈরি করেননি। কিন্তু তিনি তো এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আলো বাতাসটুকু গ্রহণ করেছেন। আর তিনি তার ফেইসবুকের ওয়ালে যা লিখেছেন, সেটা একটি গল্প বৈ কিছু নয়। একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যুবকের বেঁচে থাকার সংগ্রাম লিখতে গিয়ে তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের বর্ণনা করেছেন। সুশান্তের লিখনিতে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে তার গল্পের নায়ক সায়ং সব স্থানেই লাঞ্ছিত হয়েছিল, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়/হল ক্যাম্পাসেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাঞ্ছনা বর্ণনা করতে তিনি যেসব কথা লিখেছেন সেগুলোর মধ্যে অনেক সত্যতাও রয়েছে আবার রয়েছে অতিরঞ্জনও। কিন্তু এই বর্ণনা যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বা হলের জন্য বলা হয়, তবে তার প্রায় সবটুকুই কাল্পনিক। RAG DAY বলে কোন কিছু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এখানে আছে নবীন বরণ। এই নবীন বরণগুলো অতি মার্জিত অনুষ্ঠান।
১৯৮৭ এর ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে থেকে এমন কোন খবর কোন দিক থেকে শুনিনি বা অভিযোগও শুনিনি যা সুশান্তের বর্ণনার সাথে মিলে যায়। তবে RAG DAY তে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সতীর্থগণ তাদের জুনিয়রদের নানারূপ লাঞ্ছনা দিয়ে থাকে। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যায়ের RAG DAY তো প্রতি বছরই পত্রিকার শিরোনাম হয়।কিন্তু সেখানেও সুশান্তের গল্পের অনুরূপ অশ্লীল লাঞ্ছনাদানের খবর কোন পত্রিকায় পড়িনি।
আমর মনে হয়, সুশান্ত তার ফেইসবুকের ওয়ালের গল্পটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে যা লিখেছিলেন, তা হয়তো বিশেষ কোন কারণে বিরক্ত হয়েই লিখেছিলেন। কারণ তার ওয়ালের পোস্টটি তিনি ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত করেছেন। আর এ জন্য প্রতিবাদের মুখে নাকি ক্ষমাও চেয়েছেন। তাই তাকে মামলা দিয়ে নতুন করে হেনস্থা করা অপ্রয়োজনীয়।
বড় কথা হল, সুশান্ত পাল এমন কেউ নয় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কয়েকটি মনগড়া কথা লিখলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার শত বছরের গৌরব ও ঐতিহ্যহারা হয়ে পথে বসবে। আমি তো মনে করি দেশে যদি আরো এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়, সেগুলোর কোনটিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান দখল করতে পারবে না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের দেয়াল নিরেট কংক্রিটে তৈরি। তাই এর গায়ে সুশান্ত কেন, বারাক ওবামার আঁচড়ও কোন দাগ ফেলতে পারবে না। তাই সুশান্তের বিরুদ্ধে মামলা করে অযথা সময়-শ্রম নষ্ট করার দরকার কী?
তবে একটি বিষয় জেনে বেশ স্বস্তি পাচ্ছি যে সুশান্তের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন মামলা করেনি। মামলা করেছে জনৈক ছাত্র। এখন কোন প্রতিষ্ঠানের মানহানীর জন্য কোন ছাত্র মামলা করতে পারবে কি না, সেটা আইনবিধগণ বলতে পারবেন। আমার মতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নানা পথ, মত আর ধর্মীয় সহনশীলতার পীঠস্থান। তাই তার বিরুদ্ধে কয়েকটি কথা লিখে ফেইসবুকে পোস্ট দিলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু হবার কথা নয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে ইতোমধ্যেই নাগরিকদের মধ্যে একটি বিরূপ ধারনার জন্ম হয়েছে। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অবমাননার জন্যও যদি এই আইনের প্রয়োগ শুরু হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশালত্ব কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করি।
সুকান্ত সাহা বলেছেনঃ
সুশান্ত যেমন বাড়াবাড়ি করেছে তেমনি বাড়াবাড়ি করেছে ঢাবি ও এনবিআর! সুশান্ত শধু নিজেকেই কলংকিত করেছে অপরদিকে উক্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানদ্বয় নিজেরা আরও বেশী কলঙ্কিত হয়েছে! ইতিহাসে লেখা থাকবে- একজন ব্যক্তির কাছে দেশের সবচেয়ে পাওয়ারফুল দুটো আরগানাইজেশন হেরে গিয়েছিল।
সুশান্তকে হয়ত পাগল বানিয়ে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হবে- সেক্ষেত্রে সে হয়ে উঠবে আরও বেপরোয়া। যেহেতু তার মেধা আছে তাই তাকে সহজে আঁটকে ফেলা যাবে না! আপনি সক্রেটিসের উধাহরণ দিয়েছেন তাকেও কিন্তু কেউ আটাকাতে পারেনি।
আমি ব্যক্তিগতভাবে সুশান্তকে পছন্দ করি না তার বিভিন্ন বিতর্কিত লেখার কারণে। কিন্তু আমার লেখাও তো কেউ না কেউ পছন্দ করে না! তাহলে কি আমার লেখাও আগামীতে কেউ চাইলেই বন্ধ করতে পারবে? যেমন পারবে আপনার লেখা?
সবশেষে সেই গ্রাম বাংলার প্রবাদটা উৎসর্গ করলাম সবার উদ্দ্যেশে, “ঝাঁজরে বলে সুঁইকে, দ্যাখ তোর পাছায় কত বড় ফুঁটা!
মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেনঃ
ধন্যবাদ, সুকান্ত দা। আমাদের হাতে কোন অস্ত্র থাকলেই তা আমরা যা্চেছ তাই ব্যবহার করতে চাই। অবশ্যই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা আমাদের জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু কোন অস্ত্র প্রয়োজনীয় হলেই কি তা যত্রতত্র, যখন তখন প্রয়োগ করব? ফেইসবুক, ইন্টারনেট ইত্যাদি মাধ্যম বর্তমানে এতটাই সর্বব্যাপী হয়েছে যে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা বড়ই দুষ্কর। আমি ইউটিউবে মাঝে মাঝে এমন সব ভিডিও দেখি যেগুলোর জন্য ৫৭ ধারা প্রয়োগ করা হলে, আমাদের থানাগুলো এই ধারার মামলাগুলোর ভারেই নুব্জ হয়ে পড়ত। কিন্তু সেটা তো করা হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ইতোপূর্বেও মানুষ না কত কিছুই বলেছে। সম্প্রতি মাননীয় ভিসি একটি তথ্যের প্রতিবাদও করেছেন। ইমরান এইচ সরকার নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ফকিন্নির পোলাও বলেছিলেন। তারও প্রতিবাদ হয়েছিল। কিন্তু তাই বলে তার বিরুদ্ধে কেউ মারণাস্ত্র ব্যবহার করার চিন্তাও করেনি। এবং সেটা সঠিকই ছিল। আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের ভাষাও বিশ্বমানের ও বিশাল হওয়া উচিৎ।
দিব্যেন্দু দ্বীপ বলেছেনঃ
সাবলীলভাবে খুব প্যাসিফিক লেখা। তবে পালের পক্ষটা একটু বেশি নিয়ে ফেলেছেন।
উৎপল চক্রবর্ত্তী বলেছেনঃ
সন্জিদা খাতুন বলেছিলেন –‘মাদ্রাসাগুলো রগ কাটা শিক্ষা দেওয়া হয়’। প্রত্যুত্তরে আল-মাহমুদ বলেছিলেন- ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিনতাই কারী/ডাকাত তৈরী করে’ । হুমায়ূন আজাদ –‘আগে কাননবালারা আসতো পতিতালয় থেকে, এখন আসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে’ । তাহলে সেই সব অপরাধ সমূহের কী বিচার? মনে করি , বাইরের কারো গালাগালে যতটুকু মান-সম্মান যায় , প্রতিউত্তরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা যখন অশ্রাব্য গালি গালাজে লিপ্ত হন , তখন বিশ্ববিদ্যালয় মান সম্মান হারায় বেশী । সত্যেন বোস , মোতাহার হোসেন, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, আবদুর রাজ্জাক , বুদ্ধদেব বসু’রা পাঠ নিয়েছেন যেখানে , সেখানে সুশান্ত’র মতো এক আবালস্য’র বয়ানে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের সকল সুনাম ভুলন্ঠিত হয়ে যায় এমনটি যারা মনে করেন , তারাও নিজেরাও বোঝেন না , এই অনর্থক উন্মাদনায় আল্টিমেটলি ‘সুশান্ত’র বাজার টাই গরম করে দেন তিনি। কিন্তু সবচাইতে দুঃখজনক হচ্ছে এই ঘটনায় ৫৭ ধারার মামলার পরবর্তী কার্যক্রম । এই পর্যন্ত যতটুকু দেখেছি মামলা হওয়ার পর -সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিবেচনায় প্রয়োজনে আসামীকে এরেস্ট করে বিচার মুখোমুখি করা দপ্তরের প্রধান দায়িত্ব। এই প্রথম দেখলাম , মামলা হলো থানায় অথচ দ্রুত একশানে গেলো সুশান্ত’র ডিপার্টমেন্ট , মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন লিখে তাকে ওএসডি করা হলো এবং দপ্তরের সেই গোপন নোটিশটি চলে আসলো মিডিয়ায় । যেহেতু সে ভুল/অন্যায় করেছে , এবং সেই ভুল/ অন্যায় স্বীকার করেছে , তাই আইন দ্বারা তার শাস্তি নির্দিষ্ট হলেই তা সঠিক হোত মনে করি।
আমার ফেসবুক নিউজ ফিডে দেখলাম, লেখাটি সুশান্ত’র ওয়ালে শেয়ার দেয়া হয়েছে । একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আপনি আলটিমেটলি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষেই বলতে চেয়েছেন , আমি সেটাই বুঝেছি – আপনারা সহপাঠিরাও যেন এই ভুলটি না বোঝেন তাই নিজ দায়িত্বে লিখলাম (মাই ফার্স্ট ইন্টারেকশন ওইথ ইয়ু)।
সুপ্রিয় রাজ্জাক ভাই , আপনাকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ , ভালো থাকুন।
মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেনঃ
ধন্যবাদ, উৎপল দা। মানুষ যতটুকু দোষ করে, তার ততোটুকুই ভোগান্তি হয়। সুশান্ত তার ভোগান্তির হিস্যা পাচ্ছেন। আমি মনে করি উচ্চ শিক্ষিত মানুষ তার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তথা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিযে যার পর নেই গর্ব করেন। কারণ তার পরিণত বয়সের প্রতিষ্ঠার মূলে থাকে তার বিশ্ববিদ্যালয়। বিষয়টি আমার ক্ষেত্রেও তাই।
অন্যদিকে সুশান্তর বিষয়টিকে আমি ভিন্ন আঙ্গিকে দেখি। সে যা প্রকাশ করেছে তার জন্য তার শিক্ষা হয়েছে। আইন মানুষকে যে সাজা দিতে পারে না, সমাজ তাখে অবলিলায় সেই সাজা দিতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারসহ দেশের আপামর মানুষ মিলে যে একটি আবেগীয় সমাজ তৈরি করেছে, সুশান্ত তার কাছ থেকে ইতোমধ্যেই সাজা দিয়েছে। অধিকন্তু একজন লেখকের জন্য তার লেখা প্রত্যাহার ও সে জন্য ক্ষমতা চাওয়ার চেয়ে বড় কিছু সাজা হতে পারে না।
এ দেশের অনেক লেখক তাদের লেখার জন্য দেশ ছাড়া হয়েছেন। কিন্তু তারা সেগুলো প্রত্যাহার করেননি। তাই লেখা প্রত্যাহার অনেক বড় সাজা।
অন্যদিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করেও আমি মনে করি মসির উত্তর মসির মাধ্যমেই হওয়া উচিৎ। এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তার ঐতিহ্যের মতোই বিশাল হোক, উদার হোক এটাই আমি কামনা করি। ছুঁচো মেরে হাতে গন্ধ করা যেমন আমাদের শোভা পায় না, তেমনি কলাম আর কলম বাদ দিয়ে আমাদের অস্ত্র হাতে ধাওয়া করাও শোভা পায় না।
মু: গোলাম মোর্শেদ উজ্জ্বল বলেছেনঃ
ভালো লিখেছেন এবং ব্যাখ্যা করেছেন,তবে আমি একটু অন্য প্রসঙ্গে বলার চেষ্টা করছি,….. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের মধ্যে গর্বের ধন হলেও এখন আন্তর্জাতিক ভাবে গর্ব করার মত কিছুই নেই।এখান থেকে পাশ করা কিছু ছাত্র ব্যতিত অধিকাংশ ছাত্রই দেশের বাইরে গিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করার অনুপযুক্ত।এখানে এখন শিক্ষার থেকে ছাত্র শিক্ষকেরা বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতি বেশী চর্চা করে। ফলোশ্রুতিতে এক সময়ের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই বিদ্যাপীঠটিকে বিশ্বের হাজার হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যখন র্যাংকিং হয় তখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম অসংখ্যের শেষ কাতারেও খুঁজে পাওয়া যায় না।অবকাঠামোগত দিক থেকে সমৃদ্ধ হওয়ার সত্বেও শিক্ষার মানের কারণে এই দুর্দশা। এখান থেকে পড়ে বিসিএস ক্যাডার বা পিস্তল চালনায় দক্ষতা অর্জন করে দেশের মন্ত্রী হওয়ার মধ্যে গর্বের কিছুই নাই।এখন দেশের মধ্যে দেশী বিদেশী অনেক প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণই পদের শূন্যতা পূরণ করতে হয় দেশের বাইরে থেকে কর্মকর্তা এনে।দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার্থী বা মানব সম্পদ তৈরী করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে।আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় এমন অনেক মানুষের সাক্ষাৎ ঘটেছে যারা ব্যক্তি ও কর্ম জীবনে ব্যর্থ হলেও শুধু এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের অহংকারে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা ও মেধাবী ভেবে থাকেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও সংগ্রামের প্রতীক। আমাদের সম্পদ।এই প্রতিষ্ঠানে যারা অধ্যায়ন করে বা করেছেন, এই প্রতিষ্ঠান শুধু তাদেরই ভাবনার বিষয় ও গর্ব করার সম্পদ নয়।এটা সমগ্র দেশের মানুষেরই গর্বের ধন।কারণ এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে আমরাও গর্ববোধ করি এবং ব্যর্থতায় আমরাও চিন্তিত হই। তাই গঠনমূলক সমালোচনার অধিকার সবারই রয়েছে এবং সেই সমালোচনায় নিজেকে অসম্মানবোধ না করে, বরং সমালোচনার বাস্তবতা আমলে নিয়ে নিরবে গ্রহণ বা পরিত্যাগ করাই শ্রেয়। তবে এ কথা মানি কারো অবাস্তব বা অমূলক সমালোচনায় এত বড় প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ সময়ের অর্জিত সম্মানের তেমন কিবা ক্ষতি সাধন হতে পারে।…………ধন্যবাদ প্রিয় মোঃ আব্দুর রাজ্জাক ভাই……
মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেনঃ
জনাব উজ্জ্বল, যদিও বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক তারপরও আমি নিজ গরজেই এর উত্তর দিব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান বিশ্বের প্রথম শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হল না বলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে অতলে তলিয়ে গেল, সেটা ভাবাও বিজ্ঞচিত নয়। ১৯৯১ সালের পর যখন দেশে বেসরকারি খাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়া শুরু করে, তখন থেকেই কিন্তু দেশের উচ্চ শিক্ষা বিশেষত সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় কেন সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একচ্ছত্র আধিপত্তে আঘাত পেড়েছে। বলা চলে শিক্ষা জগতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো কাগজে কলমে হলেও প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়েছে। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাণিজ্যিক মনোভাব এখনও তাদের সেসরকারি খাতের মতো দক্ষ করে তুলতে পারেনি। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের কর্ণধার, বিশেষত নেতা ও আমলা নির্মাণের ক্ষেত্রে যে অনন্য অবস্থান ছিল সেটা বলতে কি এখনও অক্ষুণ্নই রয়েছে। আমি যে বিসিএস এর মাধ্যমে আমার ক্যাডারে যোগদান করেছি, সেই সময় আমার ১১০ জন ব্যাচমেইটের মধ্যে ৭৮ জন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার পরবর্তীতে বিষয়টির কতটুকু অবনতি বা উন্নতি ঘটেছে আমার জানা নেই।
যাহোক, বিসিএস অফিসার তৈরি করা, কিংবা মন্ত্রী মিনিস্টার তৈরি করা কি জাতিকে নেতৃত্ব দেবার পক্ষে কিছুই নয়? বিদেশের মাটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রগণ প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। তাহলে কি একই বিল্ডিং এ তিনটি ক্যাম্পাস সম্পন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাই কি তার জন্য বেশি যোগ্য হচ্ছে? যারা জাতিকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না, মূলত তারাই বাইরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন- এমন কথা কিভাবে বিশ্বাস করব?
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্য্যালয়ের ভাবমূর্তিও একদিন সংকটের মুখে পড়বে, এটা তো সাধারণ জ্ঞানের বিষয়, বিশেষ জ্ঞানের নয়।
যাহোক, আপনার মন্তব্যে যে তীর্যক কথাগুলো লিখেছেন আমি সেগুলোতে গেলাম না। কারণ আপনার প্রসঙ্গটি এর চেয়ে বেশি কি-বোর্ডের চাপা দেয়ার উপযুক্ত নয়।
রোদেলা নীলা বলেছেনঃ
এই অসুস্থ লোক ভুয়া আই ডি দিয়ে আমাকেও ইনবক্স করে উৎসাহ দিয়ে আসছেন ,প্রকাশ্যে সে ভাষা নাইবা উল্লেখ করলাম ।ও একটা মানসিক বিকারগ্রস্থ লোক।
নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেনঃ
কোন লোকটা আপু? সুশান্ত পাল????