অন্য দেশে, অন্য মিশনেঃ ব্যানব্যাটের বোগোরো ক্যাম্প

মোঃ আব্দুর রাজ্জাক
Published : 17 Dec 2016, 04:02 PM
Updated : 17 Dec 2016, 04:02 PM

পূর্ব প্রকাশিতের পর
কিস্তি-১, কিস্তি-২, কিস্তি-৩
বোগারা ক্যাম্প
দুপুরের খাবার পর আমরা রওয়ানা দিলাম বুনিয়া শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে বোগারা নামক স্থানের দিকে। বোগারো নামক স্থানের একটি পাহাড়ের উপর বাংলাদেশ সেনা ব্যাটালিয়নের একটি কোম্পানি/ক্যাম্প আছে। আমাদের উদ্দেশ্য দ্বিবিধ। ক্যাম্পটি পরিদর্শন করে এই বিদেশ বিভূঁইয়ে আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যরা কিভাবে কাজ করেন ও থাকেন তা সরেজমিনে দেখা, অন্যটি হল, এ ক্যাম্প থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত হ্রদ আলবার্ট দেখা। আমাদের বলা হয়েছিল, এ ক্যাম্প থেকে দাঁড়িয়ে আলবার্ট হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।


দুটো জীপে করে আমরা রওয়ানা দিলাম। এখান থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটার। মাটির রাস্তায় অত্যন্ত ধুলা। আমাদের সাথে আছেন ব্যান-ব্যাট, বুনিয়ার ডিপুটি কন্টিনজেন্ট কমান্ডার লে. কর্নেল জাহিদ। তার জিপটি আগে আগে চলল। পিছনে পিছনে চলল আমাদের জীপটি। গোটা রাস্তায় তাই ধূলাই খেতে হল। পুরোটাই পাহাড়ী পথ। পথে মাত্র একটি ছোট ব্রিজ পড়ে। তাছাড়া গোটা পথটাই সেতুবিহীন। রাস্তার দুই ধারে ছোট ছোট বাড়ি ঘর। অত্যন্ত স্বল্প বসতির এ দেশের রাস্তার ধারে পানির উৎসের কাছাকাছি ভিন্ন অন্য কোথাও বসতি নেই। রাস্তার পাশে আমরা কাসাভা আর মিষ্টি আলুর ক্ষেত দেখতে পেলাম। মাঝে মাঝে আমের গাছ আছও চোখে পড়ল। তবে এভোকার্ডোর গাছই বেশি। এভোকার্ডো ফলকে এরা এভাকা বলে। এভোগার্ডো কোন সুস্বাদু ফল নয়। কিন্তু এতে দারুণ পুষ্টিগুণ আছে। তাই অনেকেই পছন্দ করেন। এদেশের মানুষজনও এভাকা পছন্দ করে। আফ্রিকার যত দেশেই আমি ঘুরেছি সব স্থানেই এভোগার্ডোর উপস্থিতি দেখেছি।

বোগোরো ক্যাম্পে পৌঁছিতে প্রায় দু ঘন্টার মতো সময় লাগল। সামান্য রাস্তা হলেও ঘোরানো প্যাঁচানো পাহাড়ী পথ। রাস্তায় মাটির উপর মাঝারী আকৃতির পাথর। বোগোরো ক্যাম্পটি একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। এ দিকে মানে বুনিয়া থেকে উগান্ডার সীমান্ত পর্যন্ত রাস্তায় বাংলাদেশ আর্মির ছয়টি ক্যাম্প আছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দূরে হল বুকিরিঙ্গি ক্যাম্প যা বুনিয়া থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এসবক্যাম্পে যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন নাজুক, তেমনি থাকার ব্যাস্থাও ভাল না। অনেক ক্যাম্পে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। নিকটস্থ ক্যাম্প থেকে নির্দিষ্ট দিনে সেগুলোতে খাবারের পানি পৌঁছে দিতে হয়।

বোগোরো ক্যাম্পে এ মুহূর্তে দুজন মেজর আছেন। ক্যাম্পের লোকবল বদল হচ্ছে। নতুন এক দল এসেছে পুরাতনদের বদলি দিতে। ক্যাম্পের সেনা অফিসারদের গোটা বছর ধরে এটাই বাসস্থান।তাই ক্যাম্পটিকে তারা নিজেদের বাড়ির মতো করেই সাজিয়ে নিয়েছেন। ক্যাম্পের উঠানে কবুতর চরে বেড়াচ্ছে। এমন কবুতর পোষা আমি আমাদের চট্টগ্রামের পুলিশ ও সেনা ক্যাম্পগুলোতেও দেখেছি। সামান্য কিছু পরিশ্রমে তারা একটি কবুতরের খোপ তৈরি করেছেন। পুষতে শুরু করেছেন স্থানীয় বাজার থেকে কেনা কবুতর। ক্যাম্পের সাথে তারা একটা ছোটখাট সবজির বাগানও করে ফেলেছেন। আমাদের সেই বাগান থেকে তোলা কলমি শাক খাওয়ানো হল। আসার পথে আমি দেখি ক্যাম্পের এক দিকে হলুদ হয়ে বোম্বাই মরিচ পেকে রয়েছে। মরিচকে এখানে পিলি পিলি বলে। শখ করে কয়েকটি মরিচ ছিঁড়ে নিলাম যদিও এগুলোর সদ্ব্যবহার করার মতো কোন সুযোগ হয়তো কঙ্গোভ্রমণের কোন পর্যায়েই পাব না।


আমরা অফিসারদের মেসে উঠে খাওয়া দাওয়া করলাম। খাবারের মেনুতে ছিল মাছ, দুই প্রকারের মুরগী, ও গরুর মাংস। ক্যাম্পের জন্য কোন বাবুর্চি বরাদ্দ নেই। সৈনিকরাই রান্না করেন। তবে আমাদের হোস্ট মেজর মাসকুর সাহেবও নাকি কিছু কিছু রান্না জানেন। স্থানীয় মুরগী রান্নাটা নাকি তিনিই করেছেন। এর সাথে ছিল আলবার্ট হ্রদের ক্যাপ্টেন মাছ। সুস্বাদু এ মাছের যে বর্ণনা মেজর মাশকুর দিলেন তাতে এটাকে নাইলো পার্চ বলেই মনে হল। এ জাতীয় মাছ ওজনে ২০০ কেজিও হতে পারে। চাপে পড়ে বাবুর্চির পাঠ নেয়া অনভিজ্ঞ হাতের রান্নাও যে এত সুস্বাদু হয়, সেটা না খেলে বোঝা যেত না। বোগোরো ক্যাম্পের অফিসার-ফোর্স তাদের মনের সবটুকু মমত্ব দিয়েই এ রান্নার কাজটুকু করেছিলেন বলেই অনুমান করি।

বোগোরা গণহত্যা
বোগোরো অঞ্চলটি একটি গণহত্যার জন্য কুখ্যাত হয়ে আছে। ২০০৩ সালে স্থানীয় দুইটি মিলিশিয়া বাহিনীর দখল-বেদখল, শোধ-প্রতিশোধের জের ধরে এখানে একটি গ্রুপ অন্য গ্রুপের প্রায় ২০০ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের পরে যাদের তারা গ্রেফতার বা আটক করেছিল তাদের বন্দি করে রাখা হয়েছিল সে লাশ ভর্তি ঘরে। মেয়েদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। যুদ্ধ কবলিত ভূখণ্ডগুলোতে জাতিসংঘের নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করণের জন্য নিয়োগকৃত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি ২০১০ সালে তার প্রতিবেদনে কঙ্গোর যে এলাকাগুলোকে পৃথিবীর ধর্ষণের রাজধানী বলে উল্লেখ করেছিলেন, বোগোরো অঞ্চল ছিল তার অন্তর্ভুক্ত। এ গণহত্যার জন্য শেষ পর্যন্ত ঐ হোতাদের আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্টে বিচারও হয়েছিল।

নয় বাংলাদেশির আত্মদানের কাহিনী
খাওয়া দাওয়া সেরে আমরা ক্যাম্পের উত্তরের কর্নারে বসে গল্প করার ফাঁকে ক্যাম্পের ইনচার্জ মেজর মাশকুর জানালেন এ ক্যাম্প থেকে সামান্য দূরে ২০০৫ সালে ক্যাপ্টেন শহীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি টহল পার্টির্কে এমবুশ করে স্থানীয় গেরিলারা ৯ জনকে হত্যা করেছিল। এ ঘটনাটিও নাকি ছিল নানা সমীকরণের জটিলতার কুফল। অনেকে বলেন, এ ঘটনা স্থানীয় মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে শান্তিরক্ষা মিশন( MONUSCO) এর বিরুদ্ধে একটা প্রতিশোধ। মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তারা শান্তিরক্ষীদের হত্যা করে তার প্রতিশোধ নিয়েছিল। তবে প্রতিশোধ, প্রতিরোধ বা ভুল বোঝাবুঝি যাই হোক না কেন, এটা যে বাংলাদেশিদের জন্য একটা মর্মান্তিক পরিণতি বয়ে নিয়ে এসেছিল তা বলাই বাহুল্য। জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কফি আনানের ভাষায় শান্তিরক্ষা করা সশস্ত্রবাহিনীর কাজ নয়, কিন্তু যেখানে অশান্তি সেখানেই তাদের ছুটে যেতে হয় । বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলেও যখন অস্ত্রের ঝনঝনানী স্তব্ধ হয় না, তখনও সৈনিকরাই শান্তির বার্তাবাহকোর দায়িত্ব পালন করে। ভঙ্গুর শান্তিকে কম্পিত হস্তে ধারণ করার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকেই সর্বাগ্রে অগ্রসর হতে হয়। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, যত দিন জাতিসংঘ থাকবে ততোদিনই ক্যাপ্টেন শহীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশি সেনাদের আত্মদান ততোদিনই বিশ্বশান্তিরক্ষার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আমরা সময়ের অভাবে বাংলাদেশি নয় সেনার শহীদ হওয়ার স্থানটি পরিদর্শন করতে পারিনি। কিন্তু তাদের আত্মদানের কাহিনী শুনে আমাদের মন বেদনায় আর্দ্র হবার পাশাপাশি আমাদের গৌরবও বোধ হয়েছিল। হয়তো কোন দিন সেই স্থানে নির্মিত হবে কোন স্মৃতিস্তম্ভ্য। আমাদের অনাগত বংশধরগণ ভবিষ্যতে সেই স্থান ভ্রমণ করবে, তাদের স্বদেশি বীর সেনাদের শ্রদ্ধার সাতে স্মরণ করবে।

বলাবাহুল্য, ১৯৮৮ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত শান্তিরক্ষা করতে গিযে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর মোট ১৩০ জন সদস্য শহীদ হয়েছেন যাদের মধ্যে ৮৪ জন বাংলাদেশ আর্মির, ৩ জন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ও একজন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর। তাছাড়া এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশেরও ১৮ জন সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্বপালনকালীন মৃত্যুবরণ করেছেন। ১৯৮৯ সালে ন্যামেবিয়া মিশনের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার লে. কর্নেল ফয়জুল করিম সর্ব প্রথম শহীদ হয়েছিলেন। শহীদদের আত্মদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এ পর্যন্ত ১২৮ জনকে মরনোত্তর দ্যাগ হ্যামারশোল্ড পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

হ্রদ আর্লবার্ট
বোগারা ক্যাম্প হতে হ্রদ আর্লবার্ট এর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ক্যাম্পের পাহাড়ের সর্ব উত্তরের বিন্দুতে দাঁড়ালে পূর্বপাড়ের উগান্ডা সীমান্তের পাহাড় শ্রেণি দেখা যায়। আমরা হ্রদের পূর্ব প্রান্তটা পুরোটাই দেখলাম। হ্রদের মধ্য দিয়ে উগান্ডা ও ডিআর কঙ্গোর সীমানা নির্ধারণ করা আছে। এ হ্রদের পাশে যারা বসবাস করেন, তাদের জীবন-জীবীকা এর উপরই নির্ভরশীল। তাই হয়তো দু পাড়ের মানুষগুলো এটা ভাগাভাগি করে নিয়েছে।

১৮৬৪ সালে স্যামুয়েল বেইকার ও সাস ফ্লোরা নামে দুই ব্রিটিশ অভিযাত্রী এ হ্রদটি আবিষ্কার করে ব্রিটিশ রানি ভিক্টোরিয়ার স্বামী প্রিন্স আর্লবার্টের নামানুসারেই এর নামকরণ করেন। তবে ডিআর কঙ্গোর পূর্ববর্তী একনায়ক সেনা শাসক এ হ্রদের নাম পাল্টিয়ে তার নিজের নামে নাম করেন ' হ্রদ মোবুতো সেসে সেকু'। কিন্তু ১৯৯৭ সালে তার পতনের পর হ্রদটি তার পূর্বের নাম ফিরে পায়।

পৃথিবীর ইতিহাসের সব দেশের সব স্বৈরশাসকগণ অবশ্য এমন ধরনের তুঘলকিপনা করে থাকেন। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন, দেশের শরীরে তার অপবিত্র নামটা স্থায়ীভাবে রেখে যেতে। কিন্তু তাদের অসম্মানজনক প্রশ্চাদপসারণের পর দ্রুতই তাদের বলপ্রয়োগের আঁচড়গুলো দেশের সব প্রতিষ্ঠান থেকে মুছে যায়। আমাদের দেশের স্বাধীনতা স্কোয়ারের নাম করা হয়েছিল এরশাদ স্কোয়ার, আর্মি স্টেডিয়ামের নাম দেয়া হয়েছিল 'এরশাদ আর্মি স্টেডিয়াম'। এরশাদের পতনের পর এখন এরশাদ ভুষণ্ডির কাকের আয়ূ নিয়ে বেঁচে থাকলেও জাতীয় স্থাপনাগুলোতে আর তার নামের অস্তিত্ব নেই।

হ্রদ এলবার্ট আফ্রিকার ঠিক কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। এটা এলবার্ট রিফটের সর্ব উত্তরের হ্রদ । আলবার্ট থেকে শুরু করে দক্ষিণের তানজানিয়ার টাঙানিকা হ্রদ পর্যন্ত এর মধ্যকার পাঁচটি হ্রদকে একত্রে গ্রেইট লেইকস বা 'বৃহত্তর হ্রদাঞ্চল' বলা হয়। আলবার্ট হ্রদের প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দক্ষিণে হ্রদ এডওয়ার্ড। এডওয়ার্ড থেকে সিমিলিকি নামে একটি নদীর মাধ্যমে পানি এসে এলবার্টে পড়ে। আর এলবার্টের পানি উত্তর দিকে দক্ষিণ সুদানের ভিতরে গিয়ে হোয়াইট নীল নদের মূল ধারায় মিলিত হয়।

সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে হ্রদ আলবার্ট ৬১৯ মিটার উঁচুতে। উত্তর দক্ষিণে লম্বা এ হ্রদটির দৈর্ঘ প্রায় ১৬০ কিমি। আর সর্বোচ্চ প্রস্থ ৩০ কিমি। হ্রদের গড় গভীরতা ২৫ মিটার। আফ্রিকার হ্রদগুলোর মধ্যে বিশালত্বে এর অবস্থান সপ্তম। এখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। বোগোরো ক্যাম্পে আমরা যে মাছ খেলাম তা এ হ্রদ থেকেই সংগ্রহ করা। ক্যাম্পের ইনচার্জ মেজর মাশরুক কাদির জানালেন ঐ মাছটিকে স্থানীয়রা 'ক্যাপ্টেন মাছ' বলে। বুনিয়া বাজারগুলোতে যে মাছ আসে তার সবই আসে হ্রদ আলবার্ট থেকে।

বুনিয়া শহর
বোগোরা ক্যাম্প থেকে ফিরতে ফিরতে আমাদের সন্ধ্যার আলো মিলিয়ে গেল। আফ্রিকার রাস্তায় রাতের বেলায় মানুষজন থাকেনা বললে্ই চলে। এখানে দিনের বেলাতেই সবাই প্রাত্যহিক কর্ম সম্পাদন করে। এমনকি ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার পড়াও দিনের আলোতেই সারতে হয়। তবু শহরে ঢুকে আমরা মোটামুটি জনসমাগম পেলাম। ইদ্রোমো ক্যাম্পে আসার আগেই লে. কর্নেল জাহিদ আমাদের বুনিয়া শহরটা ঘুরে দেখালেন। শহরটা বাস্তবে কত বড় তা আমাদের সরেজমিনে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে এটুকু বুঝলাম এ শহরে পাকা রাস্তা একটাই যার দৈর্ঘ হয়তো কিলো দেড়েক হবে। শহরের রাস্তায় লাইট সামান্যই আছে। এগুলো সোলার শক্তিতে চলছে। সামান্য কিছু দোকানে বিজলিবাতি দেখলাম। ইতোপূর্বৈ যে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দেখতে গিয়েছিলাম তার তৈরি বিদ্যুৎ দিয়েই এ শহর আলোকিত করার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। হতে পারে লোড শেডিং চলছে। কিন্তু রাস্তার সৌরশক্তি চালিত বাতির ব্যবহার দেখে বোঝা যায়, আসলে এ শহর তার প্রয়োজন মতো বিজলিবাতি পায় না। শহরে তেমন কোন চার চাকার গাড়ি বা মোটর যান নেই। তবে মোটর সাইকেলের আধিক্য আছে। বলাবাহুল্য, এসব মোটর সাইকেল হয় ভারতের, নয়তো চায়নার তৈরি। আফ্রিকা মহাদেশের বাজার ভারত ও চিনের শিল্পজাত পণ্য দিয়ে ভরা। আর চিনও এদের খনিজ দ্রব্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ডিআর কঙ্গোর বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় অর্ধেক অংশীদার হল চিন।

রাতের খাবার খেয়ে লে. কর্নেল জাহিদের সাথে অনেকক্ষণ গল্প হল। গল্পে উঠে আসল উভয় সংগঠনের সাধারণ সমস্যাগুলো। এরপর ঘুমাতে গেলাম। আগামী কাল তো অতি ভোরেই উঠতে হবে। জানা গেছে, বুনিয়া থেকে গোমা যাওয়ার বিমান ছাড়বে দশটায়। তাই আমাদের আটটার মধ্যেই বিমানবন্দরে যাওয়া উচিৎ। চলবে–