অন্য দেশে, অন্য মিশনেঃ ম্যাডাম রিকোর প্যালেস

মোঃ আব্দুর রাজ্জাক
Published : 14 Feb 2017, 01:57 AM
Updated : 14 Feb 2017, 01:57 AM

ম্যাডাম রিকো সম্পর্কে ইতোপূর্বে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সদর দফতরটি যে পাহাড়ের উপর অবস্থিত তার মালিকা হলেন ম্যাডার রিকো। স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি আছে যে ম্যাডাম রিকো ডিআর কঙ্গোর বর্তমান রাষ্ট্রপতি জোসেফ কাবিলার শ্যালিকা, তাই তার প্রতিপত্তিও ব্যাপক। বিষয়টির প্রতি সন্দিহান হলেও এটা অসম্ভব কিছু না। কারণ আফ্রিকান রীতি অনুসারে প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তিরা ইচ্ছে মতো যে কোন সংখ্যক বিয়ে করতে পারেন। সেই অনুসারে এই গোমা অঞ্চলেও তার যে দু একটা বিয়ে থাকতে পারে সেটা অসম্ভব নয়।

যা হোক, ম্যাডার রিকো এ মুশিকি এলাকার একজন বড়সড় জমিদারনীই বটে। ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির হেডকোয়ার্টার্স গোটাটাই ম্যাডাম রিকোর জমিদারির উপর স্থাপিত। ম্যাডাম রিকোর নিজস্ব সাপ্লাইয়ের পানি আমাদের সেনা সদস্যগণ ব্যবহার করেন। আর বিনিময়ে তারা ম্যাডাম রিকোকে দেন বিদ্যুৎ। এমতাবস্থায় ম্যাডাম রিকোর সাথে আমাদের সেনা কর্মকর্তাদের একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

মুশিকি বাজার থেকে ফিরে আমরা পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ম্যাডাম রিকোর বাসভবন দেখতে গেলাম। আমাদের সাথে থাকলেন মেজরের ব্যাজ পরা নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাম্মেল সাহেব। প্রথমে মনে হচ্ছিল এ গাড়ি পাহাড়ে উঠবে কি করে। কিন্তু পাহাড়ের গা বেয়ে ঘুরে ঘুরে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে যা আমাদের প্রাসাদের আঙ্গিনায় নিয়ে গেল। যতই উপরে উঠি ততোই মুগ্ধ হতে থাকি। এ পাহাড়সহ আশেপাশের দুটো পাহাড়ের অর্ধেকটা জুড়ে ম্যাডাম রিকোর জমিদারি। এখানে রয়েছে তার গরু, ছাগল, দুম্বা এমন কি রাজ হাঁসেরও খামার। পাহাড়গুলো আগাগোড়া তৃণাচ্ছাদিত। গরুগুলো সবই উন্নত জাতের। এগুলো দেখা শোনার জন্য তিনি বেশ কিছু রাখাল রেখেছেন।

ম্যাডাম রিকোর বাড়িটি মূলত একটি রিসোর্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তার মূল ভবনের আশেপাশে অনেক কটেজ রয়েছে। বর্তমানে নাকি অফ-সিজন চলছে। তাই পর্যটকের ভিড় নেই। কিছু কিছু কটেজ মেরামত করা হচ্ছে। কর্মচারীদের কাছ থেকে জানলাম, এখানে এক রাত থাকার জন্য জনপ্রতি ম্যাডাম রিকো একশত ডলার ভাড়া নিয়ে থাকেন। পর্যটকদের অধিকাংশই ইউরোপ থেকে আসে। শীতকালে ইউরোপের তাপমাত্র যখন হিমাঙ্কের নিচে থাকে তখন এ অঞ্চলে তারা ছুটি কাটাতে আসেন। ইউরোপের প্রকৃতির মতো সুন্দর অথচ নাতিশীতোঞ্চ আবহাওয়া এ আবহাওয়াটিই তাদের কাছে বেশ উপভোগ্য। আমরা পাহাড়ের চূড়া থেকে অন্যান্য পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। এখানে ম্যাডাম রিকো সত্যিই স্বর্গ গড়ে তুলেছেন। ম্যাডাম রিকোর রিসোর্ট থেকে কিভু হ্রদের একাংশ দৃষ্টিগোচর হয়। সবুজ পাহাড়ের সীমান্তে স্বচ্ছ জল মিলে গোটা প্রকৃতিকেই একটি স্বর্গীয় আবহদান করেছে।

আমাদের দুর্ভাগ্য যে ম্যাডাম রিকো বর্তমানে বাইরে আছেন। নইলে তার সাথে দেখা করে তার এ স্বর্গের জমিদারীসহ স্থানীয় রাজনীতি, অর্থনীতির অনেক খবর জানতে পারতাম।