মানুষখেকোর একটি সত্য গল্প: রাষ্ট্র বনাম ডাডলি ও স্টিভেন্স মামলা

মোঃ আব্দুর রাজ্জাক
Published : 12 April 2017, 02:23 AM
Updated : 12 April 2017, 02:23 AM

মানুষখেকো মানুষের গল্প দিয়ে রহস্য উপন্যাসগুলো ভরা। ছোটকালে মানুষখেকো মানুষদের নিয়ে গল্প পড়তে ভালই লাগত। কিন্তু আসলেই কি মানুষ মানুষের গোস্ত খায়? আর এ কাজটির কি কোন ঐতিহাসিক সত্যতা কিংবা আইনী স্বীকৃতি আছে? যে মানুষের উপর আর কোন সত্য নেই, সেই মানুষের কি তার স্বজাতিকে ভক্ষণ শোভা পায়? তাহলে মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য থাকলো কোথায়?

মানুষও যে কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষ শিকার করে কিংবা শিকার করতে বাধ্য হয়, তার একটি বাস্তব ও ঐতিহাসিক বিবরণ দিতেই আমার এ লেখার অবতারণা।

সেই ১৮৮৩ সালের কথা। জন হেনরি ওয়াট নামের একজন অস্ট্রেলিয়ান আইনজীবী  ইংল্যান্ড থেকে একটি জাহাজ কিনলেন।  জাহাজটির নাম ছিল ইয়াট মিগনোনেট। ওজন প্রায় সাড়ে ঊনিশ টন। দৈর্ঘ্য ১৬ মিটার। তৈরি হয়েছিল ১৮৬৭ সালে। কিন্তু ইংল্যান্ড থেকে ২৪ হাজার কিলোমিটার সমুদ্র পথ পাড়ি দিয়ে জাহাজটিকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বন্দরে নিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত নাবিক ও ক্রু পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই ক্রয় করার এক বছর পরেও জাহাজটি ইংল্যান্ডের সাউথ হ্যাম্পটন বন্দরেই পড়ে থাকল।

অবশেষে একজন ক্যাপ্টেনসহ চার সদস্যের ক্রু পাওয়া গেল জাহাজটি অস্ট্রেলিয়ায় নেয়ার জন্য। এ চারজনের মধ্যে ক্যাপ্টেন টম ডাডলি ছাড়াও ছিলেন এডইউন স্টিফেন, ইডওয়ার্ড ব্রুক এবং ১৯ বছর বয়সী অনভিজ্ঞ কেবিন বয় রিচার্ড পার্কার।

১৮৮৪ সালের ১৯ মে ইয়াট মিগনোনেট ইংল্যান্ডের সাউথ হেম্পটন বন্দর থেকে সিডনি বন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। প্রায় দুই মাস ধরে আটলান্টিক মহাসাগরে ভেসে চলল ক্ষুদ্রাকার এ জাহাজটি। তবে এ জাহাজটি ছিল মূলত একটি প্রমোদ নৌযান যা কেবল উপকূলের কাছাকাছিই চলতে পারত। গভীর সমুদ্র পাড়ি দেবার মতো যথেষ্ঠ সামর্থ্য এ জাহাজের ছিল না। অথচ ইংল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যেতে হলে তাকে পাড়ি দিতে হবে প্রশান্ত মহাসাগর!

৫ই জুলাই, ১৮৮৪ তারিখে জাহাজখানা একটি ঝড়ের কবলে পড়ল। তখন এটি দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ উপকূল থেকে প্রায় আড়াই হাজার উত্তর-পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থান করছিল।

ক্যাপ্টেন ডাডলি তার অভিজ্ঞ হাতে জাহাজকে ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা করলেন। ঝড় প্রায় থেমে গেছে। জাহাজ এখন নিরাপদ। তাই ক্যাপ্টেন কেবিন বয় পার্কারকে নিচ তলায় চা বানানোর জন্য প্রেরণ করলেন। কিন্তু হঠাৎ করে কোথায় যেন কি হল, জাহাজটি দ্রুত ডুবতে শুরু করল। ক্যাপ্টেন বুঝতে পারলেন, এবার আর রক্ষা নেই। তাই তিনি জাহাজ থেকে ক্ষুদ্রাকার লাইফ বোর্টটি নামানোর নির্দেশ দিলেন। মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তাদের ইয়াট মিগনোনেট সমুদ্রে তলিয়ে গেল।

এখন ৪ মিটার লম্বা ও মাত্র ৬ মিলিমিটার পুরু একটি লাইফ বোটে চারটি প্রাণী। এ ক্ষুদ্রাকার লাইফবোটে করে উপকূলে আসা তো দূরের কথা একে সমুদ্রে স্থির রাখাই তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে উঠল। অধিকন্তু জাহাজ ডুবির ফলে তারা কোন খাবারই সাথে নিতে পারেননি। তাদের সাথে মাত্র দুটো টিনের কৌটায় ভরা শালগম ছিল। সাথে ছিল না কোন খাবার পানিও।

প্রথম রাতটি তাদের জন্য ছিল হাঙ্গরের উৎপাতে ভরা। তবে সাথে থাকা কয়েকটি হাল ব্যবহার করে তারা হাঙ্গরের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকল। পরদিন তারা লাইফবোট চালান অব্যহত রাখল। কিন্তু নিকটতম কোন ভূমির নাগাল পেতে তাদের অন্তত এগারশ কিলোমিটার অতিক্রম করতে হতে পারে। এ ভূমি হতে পারে সেন্ট হেলেনা কিংবা ট্রিস্টান দ্যা কুনা দ্বীপ।

ইতোমধ্যে তাদের সাথের খাবার ফুরিয়ে আসছিল। এক টিন শালগমে চলল ৭ জুলাই পর্যন্ত। ৯ই জুলাই ব্রুকস একটি কচ্ছপ দেখতে পেল। স্টিভেন সেটাকে হালের আঘাতে মেরে লাইফবোটে তুলে আনল। কচ্ছপটির ওজন ছিল প্রায় দেড় কেজি। তারা এর মাংস ও রক্ত খেল। তাদের সাথে কোন খাবার পানি ছিল না। চারিদিকে পানি। অথচ সেই পানি খাবারের উপযুক্ত নয়। সমুদ্রের লোনা পানি খেলে মৃত্যু অনিবার্য। কারণ এ পানি খেলে তৃঞ্চা নিবারণ তো হবেই না, অধিকন্ত এতে কিডনীর জটিলতা শুরু হবে দ্রুত।

তাই তারা তৃঞ্চার্ত হলেও সমুদ্রের পানি পান করত না। কিন্তু কচ্ছপের রক্তে লোনা পানি মিশ্রিত ছিল যা পান করে তাদের শারীরিক সমস্যা দেখা দিল। তাদের সাথে আছে আর একটি মাত্র শালগমের টিন। এ শালগম দিয়ে তারা আরো এক সপ্তাহ পার করে দিল। এর মাঝে তারা অনেক সময় কিছু বৃষ্টিও পেল যা থেকে পানি ধরে রেখে তারা কোন প্রকার বেঁচে থাকল।

১৩ জুলাই পর্যন্ত তারা কোন বৃষ্টিও পেল না। ক্ষুধায় তৃঞ্চায় নাবিকদের বেঁচে থাকাই ভার হল। এ সময় তারা নিজেদের মূত্র পান করে তৃঞ্চা নিবারণের চেষ্টা করল।

২০ জুলাই তারিখে কিশোর কেবিন বয় রিচার্ড পার্কার অসুস্থ হয়ে পড়ল। অনভিজ্ঞ বালক তৃঞ্চার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে কখন যে সমুদ্রের পানি খাওয়া শুরু করেছিল তা অন্য তিন বয়স্ক নাবিকের কেউই খেয়াল করেনি। কিন্তু পার্কারের অসুস্থ হওয়াই যে অন্য তিন নাবিকের সুস্থ থাকার পথ খুলে দিয়েছিল সেটা কে জানত?

বিপর্যয়ের প্রথম থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল যে কিশোর পার্কার হয়তো বাঁচতে পারবে না। এরপর সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার ভাগ্য সম্পর্কে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। ১৬ ও ১৭ জুলাই পর্যন্ত আলোচনা হল। ২০ এ জুলাই পার্কার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সে আলোচনা আরো তুঙ্গে উঠল। পার্কারকে হত্যা করে তার রক্ত খেয়ে তৃঞ্চা নিবারণ ও মাংস খেয়ে ক্ষুধা নিবারণের পক্ষে ক্যাপ্টেন ডাডলি বরাবরই যুক্তি তুলে ধরল। কিন্তু এতে স্টিভেন সায় দিলেও ব্রুকস জোর আপত্তি জানাল। ২০ জুলাই রাতে কোন সিদ্ধান্ত হল না। বলা হল, আগামীকাল সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। কিন্তু পরদিনও তার মীমাংসা হল না।

সেই লাইফ বোটটি

২৫ জুলাই ভোর হল। অুসুস্থ পার্কার পূর্বেই বেহুস হয়ে পড়েছিল। এখন তার শরীরে রক্ত চলাচল থাকলেও ব্রেন কাজ করছে না। ডাক্তারি ভাষা মতে পার্কার এখন কোমায় চলে গেছে। ক্যাপ্টেনের অভিমত ছিল যে পার্কারের যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়, তখন তার মাংস খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করা যাবে। কিন্তু এতে তৃঞ্চা মিটবে না। এর চেয়ে যদি তাকে মৃত্যুর পূর্বেই হত্যা করা হয় তাহলে তার তরল রক্ত পান করে পানির পিপাসা মেটান যাবে।

ডাডলি এবার স্টিভেনের দিকে ইশারা করল। শুরু হল পার্কারকে হত্যা করার পালা। ক্যাপ্টেন ডাডলি এবার ঈশ্বরের উদ্দ্যেশে প্রার্থণা করল। স্টিভেন পার্কারের পা চেপে ধরল যাতে হত্যার সময় নড়াচড়া করে লাইফবোট উল্টে না যায়। এরপর ডাডলি তার ছুরি দিয়ে পার্কারের গলার প্রধান ধমনী কেটে দিল। কোমায় থাকা পার্কার অস্ফুট স্বরে বলে উঠল, আমার কি হল? (What me?)

দ্রুত বেগে বের হতে লাগল তাজা রক্ত। এ রক্ত শালগমের টিনে সংগ্রহ করা হল। এরপর চলল ক্ষুধার্ত তিন নাবিকের মনুষ্যভোজ।

পার্কারকে হত্যা করার পর ক্ষুদপিপাসায় পাগলপ্রায় তিন নাবিক যেন আর মানুষ থাকল না। কে কার আগে কত বেশি মাংস ও রক্ত খাবে তাই নিয়ে ক্ষুধার্ত নেকড়ের আদলে চলল কাড়াকাড়ি। সবচেয়ে বেশি খেলেন ক্যাপ্টেন টম ডাডলি। তারপর  এডউইন স্টিভেন। আর সবচেয়ে কম খেলেন এডউউন ব্রুকস।

কেটে গেল আরো পাঁচটি দিন। কেবিন বয় রিচার্ড পার্কারের রক্ত মাংস খেয়ে তিন নাকিব কোন প্রকারে বেঁচে আছেন। এর  মাঝে একটু বৃষ্টিও হয়েছিল যা থেকে তারা খাবার পানি সংগ্রহ করেছিল। ২৯ জুলাই তারা একটি জাহাজ দেখতে পেল। এটি ছিল তিনস্তরে পাল টাঙ্গানো জার্মান জাহাজ মন্টেজাম। জাহাজের দিকে ইশারা করলে সেটা তাদের লাইফ বোটের কাছে এসে থামল ও তাদের উদ্ধার করে জাহাজে তুলে নিল।

জার্মান জাহাজে তাদের কাটল আরো একটি মাস। ৬ই সেপ্টেম্বর ১৮৮৪ তারিখে জার্মান জাহাজ মন্টেজেম তাদের ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলের ফ্যালমাউথ বন্দরে নামিয়ে দিল। প্রায় পাঁচ মাসের মাথায় ব্যর্থ ক্যাপ্টেন টম ডাডলি তার কেবিন বয় রিচার্ড পার্কারকে উদরস্থ করে অন্য দুই সহকর্মীসহ কোন প্রকারে প্রাণ নিয়ে নিজ ভূমিতে ফিরে এলেন বটে, কিন্তু বাড়ির কাছে এসেও তাদের আর বাড়ি যাওয়া হল না। এমনকি তারা আর মুক্ত মানুষও থাকল না। পার্কারকে হত্যার জন্য তাদের বিরুদ্ধে শুরু হল নিয়মিত ফৌজদারি কার্যক্রম।

ব্রিটেন এর মার্চেন্ট শিপিং আইনের আওতায় কোন অভিযানকারীর সমুদ্রে জাহাজ ডুবি হলে সেই বিবরণ দিয়ে ক্যাপ্টেন কিংবা যারা বেঁচে থাকেন তাদের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে একটি বিবৃতি বা স্বীকারোক্তি দিতে হয়। একই ধারাবাহিকতায় ক্যাপ্টেন টম ডাডলিও তার সকল বিষয় কোন প্রকার গোপনীয়তা ছাড়াই কোর্টের কাছে বর্ণনা করেন। কিন্তু তার জাহাজ ডুবি যে নিছকই জাহাজ ডুবি ছিল না, এর সাথে জড়িত ছিল একটি হত্যাকাণ্ড সেটা তিনি সম্মকরূপে উপলব্ধি করতে পারেননি। তার ধারণা ছিল যে জীবন রক্ষার তাগিদে মৃতপ্রায় রিচার্ড পার্কারকে হত্যা করে রক্তমাংস খাওয়ার বিষয় সমুদ্র ভ্রমণের সাধারণ প্রথার আওতায় তিনি দায়মুক্তি পাবেন। কিন্তু তার ধারণা ছিল নিতান্তই ভ্রান্ত।

স্বীকারোক্তি দেয়ার সময় কাস্টমস অফিসার ও হারবার পুলিশের সার্জেন্ট জেমস ল্যাভাটি একটু দূরেই ছিলেন। তিনি বিষয়টিকে সাধারণভাবে গ্রহণ করলেন না। সার্জেন্ট জেমস ক্যাপ্টেন ও ক্রুদের আরো জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে কৌশলে পার্কারের গলার শিরা কাটার কাজে ব্যবহৃত চাকুটি জব্দ করলেন। তার বিবৃতি পাঠিয়ে দেয়া হল বোর্ড অব ট্রেড ও শিপিং নিবন্ধনের মহাপরিদর্শকের বরাবর। তারা ক্যাপ্টেন ও ক্রুদের ফ্যালমাউথেই আটক রাখার পরামর্শ দিলেন।

ইতোমধ্যে সার্জেন্ট ল্যাভার্টি ক্যাপ্টেন ও অন্য দুই ক্রুর বিরুদ্ধে গভীর সমুদ্রে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার অপাধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানার জন্য আবেদন করল। ৮ সেপ্টেম্বর তাদের স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলা হলে আদালত ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের পুলিশের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিয়ে দিল।

বিষয়টি চলে গেল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব স্যার উইলিয়াম হারকোর্ট অ্যাটোরনি জেনারেল ও সলিসিটর জেনারেলের সাথে আলোচনা করে এ তিন নাবিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা চালানোর সিদ্ধান্ত দিলেন।

কিন্তু বাধ সাধল ব্রিটিশ জনমত। আইনী নির্দেশনা যাই হোক নৌ পেশায় নিয়োজিত ব্রিটিশ জনগোষ্ঠীর একটি বড় গোষ্ঠী নাবিকদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণের বিপক্ষে ছিল। চলল বিক্ষোভ, বিবৃতি, সাংবাদিক সম্মেলন কত কি! এ সময় নাবিকদের পক্ষে অবস্থান জানান দিলেন নিহত রিচার্ড পার্কারের বড় ভাই ডেনিয়েল পার্কার। কিন্তু তারপরও বিচার শুরু হল।

দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় নানান কথা উঠল। জীবন রক্ষার জন্য জীবনহরণ সঠিক বলেও অনেকে মত দিল। কিন্তু কোন কৈফিয়তই খাটল না আদালতের কাছে। তিন অপরাধীর একজনের অপরাধ ছিল অতি সামান্য তাই তাকে মাফ করে দিয়ে রাজসাক্ষী বানানো হল। আর ক্যাপ্টেন ডাডলি ও স্টিভেনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হল। তবে বিজ্ঞ বিচারকগণ রায়ে এও লিখলেন যে মমতাময়ী রানী চাইলে তাদের মাফও করে দিতে পারেন। এরপরও চলল অনেক আলোচনা, সমালোচনা। শেষ পর্যন্ত মহারানী ভিক্টোরিয়া তাদের ছয় মাসের কারাবাস দিয়ে মৃত্যুদণ্ড মাফ করে দিলেন।