বাংলাদেশ পুলিশের ডিজিটাইজেশনঃ আমার অভিজ্ঞতা

মোঃ আব্দুর রাজ্জাক
Published : 27 March 2012, 02:29 PM
Updated : 27 March 2012, 02:29 PM

.

পূর্ব কথন
১৯৯৯ সালের প্রথম দিকে সাভারের লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মৌলিক প্রশিক্ষণে ছিলাম। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (ক্যাডার) অফিসারদের জন্য এই প্রশিক্ষণ হল বাধ্যতামূলক। প্রশিক্ষণের একটি অংশ ছিল কম্পিউটারের প্রাথমিক পাঠ। সামান্য কিছু বাস্তব প্রোগ্রাম, যেমন, এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট ইত্যাদি শিখতে হয়। তবে পরীক্ষা হতো মূলত টাইপের গতির উপর। পাশ করতে হলে প্রতি মিনিটে ইংরেজি অথবা বাংলায় ৩৩টি শব্দ টাইপ করতে হত।

আমি ইতোপূর্বে কম্পিউটারের অ, আ, ক, খ শিখেছিলাম। একটি গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করতে গিয়ে আমার উদার বসের অনুপ্রেরণায় বলতে গেলে এককভাবেই এই কাজটি শিখেছিলাম। তাই কম্পিউটার খোলা আর বন্ধ করার সাথে টাইপের গতিটাও কম ছিল না। বাংলা টাইপ শিখতে আমাকে একজন ইন্ট-ক্লার্ক বেশ সহায়তা করেছিলেন। ভদ্রলোকের নাম ভুলে গেছি। তবে তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা থাকবে চিরকাল।

কম্পিউটার ও একজন সেকেলে যুগ্ম-সচিব
যাহোক, সাভারের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কম্পিউটার ল্যাবে একদিন মধ্য দুপুরে টাইপের অতিরিক্ত অনুশীলন করছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমার পাশে গিয়ে বসলেন সরকারের একজন যুগ্ম সচিব। তিনিও একটি উচ্চতর প্রশিক্ষণে সেখানে ছিলেন। আমার পার্শ্ববর্তী গ্রামেই তার গ্রামের বাড়ি। সচিব মহোদয়ের সাথে আমার জানাশোনা ও সখ্য অনেক দিনের। আমার টাইপের গতি দেখে তিনি বেশ প্রশংসা করলেন। বললেন, তোমরা হচ্ছ নতুন প্রজন্মের ক্যাডার অফিসার। তোমরা সব কিছুই পার। প্রশিক্ষণ নিয়েও পার, প্রশিক্ষণ না নিয়েও পার। কম্পিউটারের কী বোর্ডে অনাড়ী হাত দুটো রেখে বিরক্তি সহকারে অক্ষর হাতড়াতে হাতড়াতে তিনি বললেন, আমরা হলাম, ভাই, বড়ই সেকালে। এই বুড়ো বয়সে কী আর কেরানির কাজ মানায়?

হ্যাঁ, সেই সময় টাইপ করা কেরানির কাজ ছিল বটে। এখনও আছে। কিন্তু, আজ এটা আর শুধুই কেরানির কাজ নয়। কম্পিউটারের কীবোর্ডের কাজটি এখন পিওন থেকে শুরু করে অফিসের সর্বোচ্চ কর্মকর্তারও বটে। তবে ১৯৯৯ সালের একজন যুগ্ম সচিবের কম্পিউটার কীবোর্ডের অক্ষর হাতড়ানো দৃশ্য বর্তমানের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশে কী একেবারেই চোখে পড়ে না? অবশ্যই পড়ে। এখনও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ক্যাডার অফিসারদের একটি বড় অংশ কম্পিউটারে টাইপ করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি। কেউ কেউ ইংরেজি টাইপে কাজ সারতে পারলেও বাংলা টাইপে ক-অক্ষর গোমাংশ। বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ কর্মক্ষেত্রে তারা প্রয়োগ করেন না। স্টেনো-টাইপিস্টের উপরই তাদের অগাধ ভরসা। কেউ কেউ অবশ্য মাউস ক্লিক করে ইন্টারনেটে দুই চার পাতা পড়ার অভ্যাস তৈরি করেছেন। কিন্তু, অফিসিয়াল যোগাযোগে মান্ধাতার আমলের ডাক যোগাযোগ আর ফ্যাক্স-ফোনের মধ্যেই সীমীত রয়েছেন।

রাজশাহী আর আর এফ
২০০৫ সালে রাজশাহী আর আরএফ-এ স্বল্পকালীন কাজ করেই পুলিশ সার্ভিসে কম্পিউটার ব্যবহারের গুরুত্ব অনুভব করেছিলাম। আরআরএফ হল রেঞ্জ ডিআইজি মহোদয়ের একটি রিজার্ভ ফোর্স। তার অধীনস্ত জেলাগুলোর জরুরি প্রয়োজনে আবেদনের প্রেক্ষিতে ডিআইজি মহোদয় তার এই রিজার্ভ থেকে ফোর্স পাঠান। জরুরি প্রয়োজনে পুলিশ সুপারের ফোর্সের স্বল্পতা দূর করার জন্য এই ফোর্সের জন্ম । তাই এই ইউনিটটি মূলত পুলিশ সুপারদের প্রত্যাশা পূরণে বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সদস্য প্রেরণ, তাদের বেতন-ভাতা স্ব স্ব স্থানে পৌঁছে দেয়া এবং নির্দিষ্ট সময় সময় ক্যাম্প-ফাঁড়িতে বদলী ফোর্স পাঠাতেই ব্যস্ত থাকে।

ফোর্সের স্বল্পতা জেলার পুলিশ সুপারদের সব সময় লেগেই থাকে। তাই অনেক জেলায় আরআরএফ এর নিজস্ব ক্যাম্প রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ পাওয়া গেল যে রিজার্ভ ইন্সপেক্টর (আরআই) তার পছন্দের কনস্টেবলদের তাদের নিজনিজ জেলা বা জেলার কাছাকাছি স্থানে পোস্টিং দিচ্ছেন। আবার, তার পেয়ারের বা তাকে সন্তুষ্টকারী পুলিশ অফিসারদের বিশেষ কিছু সুবিধাজনক ক্যাম্প বা জেলায় ঘনঘন প্রেরণ করছেন। বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের জন্য এবং যাতে কোন স্থানে পোস্টিং এর জন্য আরআই বা আরও এর উপর নির্ভর করতে না হয়, তাই ইউনিটের সকল পুলিশ সদস্যদের নাম একটি ডাটা বেইজে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। এক্সেল প্রোগ্রামে কাজটি করে বিভিন্ন তথ্যের তুলনা করে আরআই এর কারচুপি ধরে ফেললাম। সুবিধাজনক ক্যাম্পগুলোতে বিশেষ শ্রেণির পুলিশ সদস্যদের পোস্টিং পাওয়া বন্ধ হল। প্রত্যেকেই পর্যায়ক্রমে সুবিধাজনক স্থানে পোস্টিং পেতে লাগল।

কম্পিউটার অপারেটর কনস্টেবলটি আমার চেয়ে কম্পিউটারে দক্ষ ছিল। সে আমাকে এই কাজে এক্সেলের পরিবর্তে এক্সেস প্রোগ্রাম ব্যবহারের পরামর্শ দিল। এর কয়েকদিন পরে আমার বদলীর আদেশ আসে। আমি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে বদলী হয়ে যাই। তবে, রাজশাহী ত্যাগ করাকালে এক্সেস প্রোগ্রামের একটি বই সাথে নিয়ে আসি। রাজশাহী থেকে খুলনায় ট্রেনে আসার সময় এই সম্পর্কে মোটামুটি তাত্ত্বিক জ্ঞানটুকু অর্জন করি।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারী কমিশনার (ফোর্স) হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন এক্সেস প্রোগ্রামে ফোর্সের একটি ডাটা বেইজ তৈরির চেষ্টা করেছিলাম। এজন্য নিজের তৈরিকৃত একটি ফর্মে কনস্টেবলদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহও শুরু করেছিলাম। কিন্তু, এটা ছিল আমার বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা। কয়েকদিন পর ক্রাইম-জোনে বদলী হলে আমার এই প্রচেষ্টার অকাল সমাপ্তি ঘটে।

চাঁদাবাজি ও ফ্যাক্স-ফোনের দোকানের ডাটাবেইজ
খালিশপুর জোনে কর্মরত থাকাকালীন ক্রাইম সংক্রান্ত কাজে কম্পিউটার ব্যবহারে তৎপর হলাম। কিন্তু আমার অফিসে কোন কম্পিউটার ছিল না। আমার ব্যক্তিগত কম্পিউটারে কিছুটা চেষ্টা করেছি। এই সময় সারা বাংলাদেশের মতো খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ফোনে চাঁদাবাজি শুরু হয়। প্রতিদিন শতশত লোক আমাদের কাছে মোবাইল ফোনে হুমকীদান ও চাঁদা দাবীর অভিযোগ করতে থাকে। কিছু কিছু ঘটনায় আঁড়ি পেতে আমরা বুঝতে পারলাম শহরের বিভিন্ন ফ্যাক্সফোনের দোকানগুলো থেকে এই সব ফোন করা হয়। তাই, পুলিশ কমিশনার মহোদয় খুলনা শহরের সকল ফ্যাক্স-ফোনের দোকানের নম্বরগুলো সংগ্রহে রাখার পরামর্শ দিলেন। আমরা থানার অফিসারদের দিয়ে এই সব দোকানের নাম-ঠিকানা ও টেলিফোন/মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করলাম। এই সুযোগে আমি এক্সেস প্রোগ্রামে এই সব ফোনের একটি ডাটা বেইজ তৈরি করলাম। কোন সন্দেহভাজন মোবাইল নম্বর পেলেই তা ডাটাবেইজে প্রবেশ করে এর অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতা প্রমাণ করা যেত। তবে এই কার্যক্রমও সঠিকভাবে অগ্রসর হয়নি। আমি ছাড়া এই ডাটাবেইজ কেউ ব্যবহার করতে পারতো না এবং মাঠ পর্যায়ের অফিসারগণও এ সম্পর্কে ততো উৎসাহী ছিল না।

স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির অনুদানে আমার সার্কেলের খানজাহান আলী থানা ও সার্কেল অফিসে একটি করে কম্পিউটার সংগ্রহ করি। সার্কেল অফিসের কম্পিউটারে আমার সংগ্রহীত মোবাইল নম্বরের ডাটাবেইজটি ও সেই সাথে বেশ কিছ তথ্য রেখে এসেছি। আমার পরবর্তী এএসপিগণ এ সম্পর্কে তেমন কোন আগ্রহ দেখায় নি। অধিকন্তু, এই উদ্যোগটিও ছিল বিচ্ছিন্ন।

মাগুরা জেলা পুলিশ
২০০৬ সালের আগস্টে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে যোগ দিলাম মাগুরা জেলায়। পুলিশ অফিসের চিটিপত্র টাইপের কাজ তখন হস্তচালিত টাইপ মেশিনে অর্ধেক আর কম্পিউটারে টাইপ করে হত অর্ধেক। আমাদের অ-পুলিশ স্টেনো আর কেরানিগণ সাধারণত কম্পিউটার চালাতে জানত না। আমার স্টেনো সাহেবও ছিলেন কম্পিউটারে ক-অক্ষর গোমাংস। গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত তদারকির নোট, হাজারো দরখাস্তের অনুসন্ধানের প্রতিবেদন সবই তিনি হস্তচালিত মেশিনে টাইপ করতেন। টাইপে তিনি অত্যন্ত সিদ্ধহস্ত হলেও টাইপের অক্ষকগুলো সুন্দর ছিল না। মাঝে মাঝেই ভুল করতেন বানানে। বিশেষ করে ণ-ত্ব বিধান ও ষ-ত্ব বিধানের পাঠ তার ছিল না বললেই চলে। এই অবস্থা অবশ্য আমাদের অধিকাংশ স্টেনো টাইপিস্টের। তাই যখনই নতুন স্থানে বদলী হয়ে আসি, আমার প্রথম কাজ হয় আমার স্টেনোকে এই বিষয়ে একটা নাতিদীর্ঘ পাঠ দেওয়া।

স্টেনোর কম্পিউটার পাঠ
প্রত্যেক পুলিশ অফিসে অ-পুলিশ স্টেনো-কেরানিদের কম্পিউটার জ্ঞানের স্বল্পতা পূরণে এগিয়ে আসে পুলিশ কনস্টেবলগণ। একজন এইএসসি পাশ পুলিশ কনস্টেবলকে সহজেই কম্পিউটারে দক্ষ করে তোলা যায়। কিন্তু একজন স্টেনো টাইপিস্টকে নতুন করে কম্পিউটার শিক্ষা দিতে বড়ই কষ্ট হয়। আমার স্টেনোকে অনেকবার তাগিদ দিলাম কম্পিউটার শিখতে। অর্ডালী কনস্টেবলটিকে অল্প সময়ের মধ্যে কাজ সারার মতো দক্ষ করে তুললাম। কিন্তু, স্টেনো সাহেব যেমন ছিলেন, ঠিক তেমনই রয়ে গেলেন। অবশেষে কম্পিউটারে নেটওয়ার্কিঙে ডিপ্লোমাধারী একজন স্থানীয় যুবকের সাথে হৃদ্যতা হল। এই যুবককে দিয়ে সন্ধাবেলা পুলিশ অফিসের সবার জন্য বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্সের ব্যবস্থা করলাম। আমার স্টেনো সাহেব শিখলেন কম্পিউটারের এ, বি, সি এবং কয়েকজন কনস্টেবল একটু অগ্রগামী কোর্সও আয়ত্ব করে নিল। পরবর্তীতে অবশ্য স্টেনো সাব কম্পিউটারে কম্পোজের কাজটি ভাল ভাবেই আয়ত্ব করেছিলেন। কারণ, টাইপ মেশিনের চেয়ে কম্পিউটারের কী বোর্ডের যাদু যে অনেক মোহনীয়, তিনি তা সহজেই বুঝতে পেরেছিলেন।

পেনড্রাইভ পরিচিতি
এই সময় মাগুরা পুলিশ অফিসে কম্পিউটারের ফাইল বা ডাটা স্থানান্তর করা হত একবারমাত্র ব্যবহার্য সিডিতে করে। রিজার্ভ অফিসের কম্পিউটারের ডাটা পুলিশ অফিসে আসত সিডি রাইট করে। সিডি বিক্রি করে স্থানীয় একটি কম্পিউটারের দোকান বেশ ভাল লাভ খাচ্ছিল। তখন পর্যন্ত রি-রাইট্যাবল সিডি মাগুরায় আসেনি। সবচেয়ে বড় বিষয় হল, সিডিতে রাইট করা ছাড়াও পেন-ড্রাইভ বা ফ্ল্যাস ড্রাইভের মাধ্যমে যে ডাটা স্থানাস্তর করা যায়, পুলিশ অফিসের কেউই তা জানত না। আমি ১২৮ মেগাবাইটের পেন-ড্রাইভটি যখন কম্পিউটারের শ্লটে বসিয়ে ডাটা স্থানান্তর শুরু করলাম, আমার পুলিশ অফিসের লোকজন যেন একটি অভিনব বস্তুর সাথে পরিচিত হল। যাহোক, আমার ১৫ মাসের দায়িত্ব পালনকালীন মাগুরা পুলিশ অফিসের বেশ কয়েকজন কনস্টেবলকে কম্পিউটারে দক্ষ করে তুলেছিলাম। তারা কেবল টাইপের কাজই জানত না, ফটোশপ, ইউলিড, ইলাস্ট্রেটর ইত্যাদি প্রোগ্রামও কেউ কেউ আয়ত্ব করেছিল। ইউলিড প্রোগ্রামে ভিডিও সম্পাদনা করে তা স্থানীয় কেবল টিভির ভিডিও চ্যানেলও পরিবেশন করা হয়েছিল।

ঝালকাঠী জেলা পুলিশ
২০০৭ নভেম্বরে বদলী হয়ে আসলাম ঝালকাঠী জেলায়। ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার হিসেবে জেলার পুলিশ প্রশাসনের যাবতীয় বিষয়ের দায়িত্ব কাঁধে পড়ল। স্বভাববসত নজর দিলাম কম্পিউটার সেকশনের দিকে। এখানকার অবস্থাও তথৈবচ। দুই একজন কনস্টেবল কম্পিউটারের অ, আ, ক, খ জানে। মাগুরার মতো কম্পিউটারে কাজ চলার মতো দক্ষ কেউ নেই। তড়িৎ পদক্ষেপ নিলাম। কিন্তু এখানে ভাল প্রশিক্ষক পাওয়া গেল না। অগত্যা মাগুরা পুলিশ অফিস থেকে আমার হাতেগড়া কনস্টেবলদের মধ্যে কনস্টেবল সুলতানকে ডেকে আনলাম। তার বাড়ি ছিল বরিশাল। ছুটিতে এসে সে আমার ঝালকাঠীর কয়েকজন কনস্টেবলকে কয়েকটি প্রোগ্রাম, বিশেষ করে ইউলিড প্রোগ্রামটি শিখে দিল।

মহিলা কনস্টেবলদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ
এই সময় বেশ কিছু মহিলা কনস্টেবলকে পুলিশ অফিসে সংযুক্ত করে তাদের কম্পিউটার শিক্ষার আয়োজন করলাম। আমার উদ্দেশ্য হল, মহিলাদের কম্পিউটার তথা অফিসিয়াল কাজে দক্ষ করে তুলতে পারলে বাইরের পুলিশি অভিযানের জন্য পুরুষ কনস্টেবলদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যাবে। কারণ, পুলিশি জনবলের একটি বিরাট অংশ পুলিশ অফিসসহ অন্যান্য সেকশনে রুটিন দায়িত্ব পালন করে। এদের বলা হয় ফান্ড। এই ফান্ডের জন্য সরকারি লোকবলের বরাদ্ধ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হল, একটি তৃতীয় শ্রেণির জেলাতেও কমপক্ষে ২০ জন পুলিশ কনস্টেবল সার্বক্ষণিক কাজ করেন যাদের মূলত মাঠে মোতায়েন হওয়ার কথা। যাহোক, ঝালকাঠি পুলিশ অফিসে মহিলা কনস্টেবলদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সফল হয়নি। কারণ, স্বল্প মেধার এই মহিলা পুলিশ সদস্যরা ছিল বড়ই উদাসিন।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন
২০০৮ সালের এপ্রিলে গেলাম সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে। মিশনে যাওয়ার আগে একটি ল্যাপটপ কিনে নিলাম। জাতিসংঘ মিশন হল একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাইজড বিউরোক্র্যাসি। যে পুলিশ অফিসারগণ কম্পিউটার জানেন না, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তারা থাকেন বেশ অসহায়। নিজের বেতন-ভাতা থেকে শুরু করে প্রাত্যহিক প্রতিবেদন লেখার কাজটির জন্যও তাদের অন্যদের উপর নির্ভর করতে হয়। যদি দেশের কোন সহকর্মীর সাথে তার কাজ পড়ে তো বেঁচে গেলেন। কিন্তু অন্যদেশের পুলিশ অফিসারদের সাথে কাজ পড়লে তাকে বড়ই লজ্জার মধ্যে পড়তে হয়। এখানে সবাই সবার প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু, কেউ কারো কাজটি করে দিবেন না। তারা একদিন, দুই দিন বা এক দুই সপ্তাহ আপনাকে সহায়তা করবেন। কিন্তু, তার পরেই বলে দিবে, তুমি কী আমাকে তোমার চাকর পেয়েছ? যাহোক, অফুরন্ত অবসর পেয়ে আমাদের কম্পিউটারে অনভিজ্ঞ পুলিশ অফিসারগণ শেষ পর্যন্ত কম্পিউটারটি শিখে নেন।

.

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ডিজিটাল সুবিধা ছিল আমার জন্য একটি বড় উপহার। কাজের সুবাদে ও নিজস্ব আগ্রহের কারণে কমিউনিটি পুলিশিং এর উপর আমি এখানে ব্যাপক পড়াশোনা করেছি। আর নিজস্ব ল্যাপটপটি থাকায় কমিউনিটি পুলিশিং এর উপর লেখা প্রথম বইটির কম্পোজের কাজ আমি এখানেই সম্পন্ন করেছি।

নোয়াখালী জেলা পুলিশ
মিশন থেকে এসে পোস্টিং পেলাম নোয়াখালী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে। আমার তৎকালীন পুলিশ সুপার তখন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে বিশেষ কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আমাকে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কাজ করতে হয়েছিল। এখানে যোগ দেওয়ার পর আমি যথারীতি জেলার কম্পিউটারগুলোর ব্যবহারের দিকে নজর দিলাম। এই জেলার প্রতিটি থানায় পুলিশ সুপার মহোদয় কমপক্ষে একটি করে কম্পিউটার সরবরাহ করেছিলেন। এই সব কম্পিউটার ব্যবহার করে সামান্য কিছু চিঠিপত্র বা প্রতিবেদন কম্পোজের কাজ চলত। প্রত্যেকটি থানায় একজন করে পুলিশ কনস্টেবলকে কম্পিউটার অপারেটরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই সব কনস্টেবল সামান্য কিছু টাইপিং এর কাজ ছাড়া অন্য কিছু করতো না। অনেকে কম্পিউটারে টাইপ করা ছাড়া অন্যকিছু করতেও পারত না।

গ্রেফতারী পরোয়ানার ডাটাবেইজ
আমি প্রথমেই পুলিশ অফিসে আমার অফিস সহকারী হিসেবে একজন কম্পিউটার জানা কনস্টেবলকে স্থান দিলাম। পুলিশ অফিস, কোর্ট ও থানার মধ্যে গ্রেফতারী পরোয়ানার সংখ্যায় ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষ্যিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে থানার অফিসারগণ ওয়ারেন্টের সঠিক হিসাব রাখেন না। অন্যদিকে জেলার গোয়েন্দা বিভাগ ওয়ারেন্ট তামিলের সুযোগ পায় না। কারণ, তাদের নামে কোন ওয়ারেন্ট হাওলা হয় না। তাই পুলিশ সুপার অফিসে প্রাপ্ত সকল গ্রেফতারী পরোয়ানার একটি ডাটাবেইজ তৈরি করা শুরু করলাম। আমার সাথের কনস্টেবলটি এমএস একসেস প্রোগামটি জানত না। তাকে অল্প সময়ের মধ্যে তা শিখিয়ে দিলাম। প্রতিদিন প্রাপ্ত ওয়ারেন্ট সমূহ কম্পিউটারের ফাইলে রাখার ফলে থানার সাথে পুলিশ অফিসের একটি যোগাযোগ তৈরি হল। প্রতি সপ্তাহে থানায় ওয়ারেন্টের হাল নাগাধ তালিকা পাঠানো শুরু করলাম। একসেস প্রোগ্রামের সুবিধা কাজে লাগিয়ে মাত্র একটি ফাইল হতে সটিং এর মাধ্যম প্রত্যেক থানার জন্য তালিকা পাঠাতে সুবিধা হল। অনেক সময় ওয়ারেন্টগুলোকে গ্রাম বা ইউনিয়ন দিয়ে সটিং করে প্রত্যেক ইউনিয়নের জন্য আলাদা তালিকা তৈরি করা হল। এর ফলে জেলার গোয়েন্দা বিভাগের হাতে গ্রেফতারযোগ্য শতশত ব্যক্তির তালিকা থাকল। তারা অভিযানে বের হলেই তা সাথে নিত এবং নাম ঠিকানা ধরে ওয়ারেন্টধারীদের বাসায় হানা দিত। এর ফলে গ্রেফতারের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেল তেমনি ওয়ারেন্ট খারিজের হারও বৃদ্ধি পেল। অনেক ওয়ারেন্টধারী জানতই না যে তাদের নামে ওয়ারেন্ট রয়েছে। কিন্তু তাদের বাসায় পুলিশ যাওয়ার ফলে তারা দ্রুত আদালতে হাজিরা দিল। কিন্তু, এটাও ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগ। আমি বদলী হয়ে আসার পর সবকিছুই আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।

থানায় ইন্টারনেট
জেলার পুলিশ ইউনিট গুলোকে ইন্টারনেটে অভ্যস্ত করার জন্য একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করলাম। মাসিক অপরাধ সভায় থানার অফিসার-ইন-চার্জদের সবাইকে থানায় ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়ার জন্য বলা হল। যেসব থানায় বিটিসিএল বা ল্যান্ডফোনের সুবিধা ছিল তারা সহজেই ইন্টারনেট সংযোগ গ্রহণ করল। ল্যান্ডফোনের সংযোগবিহীন থানাগুলো গ্রামীণ ফোনের মডেম কিনে নিল। এদিকে পুলিশ অফিসে ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে স্থানীয় একটি প্রোভাইডারের কাছ থেকে অল্প খরচে ব্রডব্যান্ড সংযোগ গ্রহণ করা হল। অনেকে বলে থাকেন, এই ব্রডব্যান্ডের খরচ কে বহন করবেন। কিন্তু তারা জানেন না যে প্রতি বছর পুলিশ অফিসে কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ একটি বাজেট আসে। জেলা পুলিশ অতি সহজেই এই বাজেট থেকে ব্রডব্যান্ড সংযোগের খরচ বহন করতে পারে। অধিকন্তু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ সদস্যগণ তাদের অফিসে টেলিফোনের মতোই ইন্টারনেট সুবিধাভোগের অধিকারী।

ইন্টারনেটের ব্যবহারবিধি প্রশিক্ষণের জন্য একদিন সব থানার কম্পিউটার অপারেটর কনস্টেবলদের পুলিশ অফিসে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হল। দিন ব্যাপী এই প্রশিক্ষণে তাদের ইন্টারনেটে একাউন্ট খোলা, ফাইল ডাউনলোড-আপলোড করা, ফাইল প্রেরণ ও গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হল।

এর পর থেকে শুরু হল ইন্টারনেটে প্রতিবেদন আদান প্রদানের পালা। কয়েকটি থানা থেকে নিয়মিত আমার কাছে প্রতিবেদন সমূহ আসতে শুরু হল। তবে সমস্যা হল, পুলিশ অফিসে প্রতিবেদন একত্রিত করার দায়িত্ব হল পুলিশ সুপারের রিডারের। কিন্তু, তিনি নিজেই কম্পিউটারে অভ্যস্ত নন। অপরাধ প্রতিবেদন সফট কপিতে তিনি নিলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তা গ্রহণে তার সমস্যা হল। তাই তাকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হল। এ ব্যাপারে আমার হাতে গড়া কম্পিউটার অভিজ্ঞ কয়েকজন কনস্টেবল বিশেষ ভূমিকা পালন করল।

..

অধীক সংখ্যক অপারেটর তৈরি
জেলায় কম্পিউটার জ্ঞান সম্পন্ন পুলিশ কনস্টেবলের সংখ্যা কম হওয়ায় হাতেগোনা কয়েকজন কনস্টেবল এই ব্যাপারে প্রায় মনোপলি শুরু করে দিল। কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে পদায়িত হলে তাকে বাইরের হল্লা ডিউটি করতে হয় না। তাই তার পোয়াবারো। তাই আমি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণে পুলিশ কনস্টেবলদের উৎসাহিত করতে শুরু করলাম। অধিকন্তু, আমার অফিসকেও একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মতো তৈরি করলাম। আমার কম্পিউটার অপারেটরের সাথে একজন সহকারী কনস্টেবল রাখলাম। সে প্রতিমাসেই অন্তত একজন পুলিশ কনস্টেবলকে মোটামুটি কাজ সারার মতো প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম হল। অন্যদিকে আগ্রহী কনস্টেবলদের টেলিভিশন গার্ড, ডিএসবি গার্ড বা ট্রেঝারিগার্ডে পোস্টিং দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ) এর ই-মেইল
একদিন পুলিশ সুপারের সরকারি মেইল একাউন্টটি খুলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ) এর একটি মেইল পেলাম। মেইলে তিনি এসপিদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, 'এই মেইলটি আপনাদের প্রতি আমার পরীক্ষামূলক দ্বিতীয় মেইল। প্রথম মেইলের উত্তর দিয়েছিলেন মাত্র তিনজন। এবার দেখি আপনাদের কয়জন উত্তর দেন্তু। অর্থাৎ তিনি জানতেন জেলার পুলিশ সুপারগণ তাদের সরকারি ইমেইল নম্বর খোলেন না। তাই উত্তরও দেন না। আমি রেঞ্জ কনফারেন্সে গিয়ে কুমিল্লার এসপিকে বিষয়টি জানালাম। তিনি তড়িঘড়ি করে তার স্টেনোকে ফোন করে মেইল খুলে মেইলের উত্তর দেওয়ার জন্য বললেন। আমি জানি না, অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ) এর দ্বিতীয় মেইলের উত্তর কয়জন পুলিশ সুপার দিয়েছিলেন। তবে আমার বিশ্বাস এই সংখ্যা পূর্বের মতোই হতাশাব্যঞ্জক ছিল।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বার্তা
কিছু দিন পর জেলার এসপিদের কাছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে একটি বার্তা আসল। বার্তায় বলা হল, এখন থেকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সকল পোস্টিং অর্ডার ই-মেইলের মাধ্যমে প্রেরণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সকলকে তাই ই-মেইল থেকেই তা সংগ্রহ করতে হবে। কোন ফ্যাক্স করা হইবে না। কিন্তু, এই ব্যবস্থা চালু হলেও, ফ্যাক্সের যোগাযোগ বন্ধ হয় নাই। বরং ই-মেইল নয়, ফ্যাক্সেই এখন পর্যন্ত দলিলপত্রাদি প্রেরণ-গ্রহণের একমাত্র মাধ্যম।

পাঁচ বছর চাকরি পূর্ণ হয়েছে ব্যতিক্রমক্ষেত্র ছাড় বাংলাদেশ পুলিশের এমন সকল অফিসারই কোন না কোন ভাবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। মিশনে তাদের নিয়মিত ই-মেইল গ্রহণ-প্রেরণ করতে হত। কিন্তু, দেশে এসে এঁদের অধিকাংশই আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যান। নিতান্ত সৌখিন অফিসারগণ ছাড়া ই-মেইলের বা ইন্টারনেটের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ অন্যদের থাকে না বললেই চলে।

স্ক্যানার কাহিনী
পুলিশ অফিসে সরকারি ভাবে কম্পিউটার স্ক্যানার সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশ অফিসারগণ চিঠিপত্র আদান প্রদানে ইন্টারনেট সার্ভিসের সুবিধা নিতে পারেন নাই। নোয়াখালী জেলায় এক ডাকাতের ছবি স্ক্যান করতে গিয়ে আমি আমার অফিসের লোকজনকে স্ক্যান মেশিনটি দিতে বলি। তারা প্রথমে এমন কোন যন্ত্রের অস্তিত্বের কথা জানে না বলে দাবী করলেন। পরে অবশ্য স্টোর রূম থেকে তা আবিষ্কার করা হল। কিন্তু, ব্যবহার না করার কারণে স্ক্যানিং কাঁচের মধ্যে দাগ পড়ে গেছে। চালু করার জন্য চেষ্টা করলাম। কিন্তু এটার জন্য নির্ধারিত সফ্‌টওয়ারটি খুঁজে পাওয়া গেল না। আমার অফিসের কেউই এটা চালু করতে পারলেন না। এক দোকান থেকে এক্সপার্ট আনালাম। তারা বললেন, এটা আসলে নষ্ট হয়ে গেছে। হায়, আমাদের কপাল! সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দুই বছরের ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা চার/পাঁচ বছর হল এর ব্যবহারই শুরু করি নাই। বাংলাদেশ পুলিশের প্রায় সব ইউনিটেই অন্তত একটি করে স্ক্যানার রয়েছে। কিন্তু এটা ব্যবহার করা তো দূরের কথা, অনেক ইউনিট প্রধানই এটার অস্তিত্ব সম্পর্কে অবহিত নন।

ডিজিটাল ক্যামেরার দুর্গতি
অধিকাংশ থানায় একটি করে ডিজিটাল ক্যামেরা সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু, থানার অফিসারগণ জানেই না যে তাদের এই জিনিসটি আছে। বেওয়ারিশ লাশের ছবি তোলা বা অন্যকোন কাজে তারা ক্যামেরাম্যান ভাড়া করেন। নোয়াখালী জেলায় আমি সব থানা থেকে খুঁজে খুঁজে সেই সব ক্যামেরা বের করলাম। কিন্তু এটা কেউ আর ব্যবহার করেন না। ফাঁসিতে ঝুলে মৃত্যুর এক ঘটনাস্তুলে গিয়ে আমি সুরত হাল করার জন্য দারোগাকে ডাকলাম। সে তার বাপ-দাদার আমলের মানসিকতা নিয়ে ঘটনাস্তুলে গিয়ে হাজির। তাকে সাথে ক্যামেরা না আনার কারণ জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ক্যামেরা কোথায় পাব, স্যার? অর্থাৎ থানায় যে একটি ডিজিটাল ক্যামেরা আছে তা তিনি জানেনই না।

সাম্প্রতিক অবস্থা
সম্প্রতি এক জেলার পুলিশ সুপার পিআরপির এক কর্মকর্তাকে একটি আমন্ত্রণপত্র প্রেরণ করতে চাইলেন। তিনি আমার কাছ থেকে পিআরপি এর ফ্যাক্স নম্বর জানতে চাইলেন। কিন্তু সেই মুহূর্তে আমাদের ফ্যাক্স মেশিনটি নষ্ট ছিল। তাকে ই-মেইলে দাওয়াত পত্র পাঠানোর অনুরোধ করলাম। তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন, এতে বড় ঝামেলা। স্ক্যান কর, তার পর ইমেইল খোল ইত্যাদি ইত্যাদি। আর স্ক্যান মেশিনের কি অবস্থা তাও বা কে জানে।

একটি জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশের অধঃস্তন অফিসগুলোর সাথে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হয়। প্রতিনিয়ত জেলা বা অন্যান্য পুলিশ ইউনিটগুলো থেকে পুলিশ হেডকোয়াটার্সে বা ঊর্ধ্বতন অফিসগুলোতে ডাক আদান-প্রদান করা হয়। এই সব ডাক আদান প্রদানে পুলিশ সদস্যগণ সরেজমিনে অফিসগুলোতে যাতায়াত করেন। মাসের প্রথম দিকে বিভিন্ন প্রকারের মাসিক বা পাক্ষিক প্রতিবেদন নিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে হাজির হন শতশত পুলিশ সদস্য। মাঠ পর্যায় থেকে রাজধানীতে এসে তারা বিভিন্ন অফিসে ডাক বিলি করেন। এতে পুলিশের শতশত সদস্য আইন-শৃঙখলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ কাজের বাইরে থাকেন। যে কাজ কম্পিউটার নেটওয়ার্কীং হলে একটি মাত্র ক্লিকে হাজার হাজার স্থানে বিলি করা যেত, সেই কাজ করার জন্য হাজার হাজার পুলিশ সদস্য ব্যস্ত থাকেন। এর ফলে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা, শত শত কর্ম-ঘন্টা, বিপুল পরিমাণ জনশক্তি ও কর্মশক্তি নষ্ট হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অবস্থা
শুধু পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সাথে তার অধঃস্তন অফিসের যোগাযোগের ক্ষেত্রেই নয়, বরং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথেও আজ পর্যন্ত ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কয়েকমাস আগে আমার লিয়েনের আদেশটি মন্ত্রণালয়ে বের হলে আমি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে এটি আমার ই-মেইলে পাঠানোর অনুরোধ করলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এই মহিলা কর্মকর্তা সরল স্বীকারোক্তি দিলেন। স্যার, আমরা আসলে ই-মেইল ব্যবহার করতে জানি না।

শেষ কথা ও পরামর্শ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ অবশ্যই অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু, সরকারি কর্মকর্তাদের এনালগ মানসিকতা পরিবর্তন না হলে হয়তো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক সরকারি অফিসের কাজকর্মে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণের একটি সময়সীমা বেঁধে দেওয়া দরকার। আধুনিক প্রযুক্তি বা ডিজিটাল মানসিকসম্পন্ন কর্মকর্তাদের এমন সব স্থানে পদায়ন করা দরকার যেসব স্থান থেকে ডিজিটাইজেশন মানসিকতা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।