ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের সম্ভাবনা কতটুকু?

সেতু আশরাফুল হক
Published : 29 April 2012, 05:10 AM
Updated : 29 April 2012, 05:10 AM

কি হয়েছে ইলিয়াস আলীর? এর সঠিক উত্তর দিতে পারেন হয়ত ইলিয়াস আলী নিজেই। কিন্তু তাঁকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত এ কল্পনা অসম্ভব। আমরা যদি তিনটি পক্ষকে কল্পনা করে নেই; ধরুন, একটি পক্ষ ইলিয়াস আলী নিজেই, দ্বিতীয় পক্ষ বিরোধী দল এবং তৃতীয় পক্ষ সরকার বা সরকারি এজেন্সি সমূহ। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে কি হতে পারে?

ইলিয়াস আলী নিজেই যদি আত্মগোপন করেন, তবে পক্ষে এখন মঞ্চে হাজির হওয়া সম্ভব কী? আর বিএনপি যদি কোন নাটক সাজায় তবে তাঁদের পক্ষেও ইলিয়াস আলীকে মঞ্চে হাজির করা সম্ভব কি না? অথবা সরকারের পক্ষে সম্ভব কতটুকু?

সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে জীবিত ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের সম্ভবনা আছে কি না? এ প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ। তিনি নিখোঁজ হবার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন মুহূর্তে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া দাবী করেছেন, 'সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেছেন'। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'বিএনপি তাঁকে লুকিয়ে রেখে নাটক তৈরি করছে'। অন্যদিকে আরও একটি ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ। তিনি চট্টগ্রামে এক বক্তব্যে বলেছেন, ইলিয়াস আলী এর আগেও একবার নিখোঁজ হয়েছিলেন। এবং পরে তিনি নিজেই এসে হাজির হন। এরই সাথে আদালত ইলিয়াস আলীকে আদালতের সামনে হাজির কারার জন্য সরকারকে নির্দেশ প্রদান করেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জনগণ এমন এক বিশেষ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় যার জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিল না।

ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের দাবীতে বিএনপি দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল পালনের ঘোষনা দেয়। গত ২২ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল তিনদিন ব্যাপী ছিল সেই হরতাল। মাঝে চারদিন বিরতি দিযে আজ থেকে আবার দুদিন ব্যাপী হরতাল বর্ধিত করা হয়েছে। আমরা যারা দেশের সাধারণ মানুষ তাদের কাছে এ পর্যন্ত ঘটনাটি যেমনই মনে হোক না কেন, আমরা মনে করেছিলাম হয়তো এর মধ্যেই ইলিয়াস আলী মঞ্চে আবির্ভূত হবেন। আজ আবার বর্ধিত হরতাল এবং সরকারের উদ্ধার তৎপরতার অগ্রগতি না হওয়ায় জনগণের উদ্বেগ নেতিবাচক দিকেই যাচ্ছে।

এই মুহুর্তে আমরা ইলিয়াস আলীর পরিবারের দিকে তাকিয়ে দেখি, তাঁর স্ত্রী কী ভীষন মানষিক যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন। গত ১৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর স্ত্রী তাহসিনা রুপালী স্বামীকে আদালতে হাজির করার বিষয়ে যখন হাইকোর্টে রিট করতে যাচ্ছেন সে সময়ের ছবি প্রকাশিত হয়েছে পত্র-পত্রিকায়। আমরা দেখেছি তাঁর শুণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাঁর দেয়া সাক্ষাতকারগুলিতেও আমরা তাঁর উদ্বিগ্ন মুখ দেখেছি। তিনি এখনো তাঁর স্বামীকে ফিরে পাবার আশায় একবার বিরোধী দলীয় নেতা আর একবার সরকার দলীয় শীর্ষ নেতাদের নিকটে ধর্ণা দিচ্ছেন। আবার তাঁকে নিয়ে র‌্যাব যাচ্ছে বিভিন্ন স্থনে অভিযান চালাতে। বিভিন্ন উৎকন্ঠার মধ্যদিয়ে তিনি যাচ্ছেন তা সহজেই অনুমেয়।

গত ২১ এপ্রিল শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে আমরা জানতে পারছিলাম যে, বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দ একটা সবুজ সংকেত পাবেন। এমন আশা থেকে তাঁরা এটাও বলেছেন যে, ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেলে হরতাল উঠিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু না পরদিন রবিবার সারাদিন হরতাল চলাকালে বিভিন্ন স্থানে পিকেটিঙ এবং পুলিশ-হরতালকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এছাড়াও এই হরতালের বলি হন দুইজন নিরাপরাধ পরিবহন শ্রমিক (ড্রাইভার)। তাঁদের মধ্যে একজন গাড়ির ভেতরে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে নিহত হন। এই মৃত্যুর দায় কে বহন করবে? পরিবহন শ্রমিকের স্ত্রীর আহাজারি আমরা পত্রিকার পাতায় দেখেছি। অনেকেই অশ্রু সংবরন করতে পারেনি সেই দৃশ্যে। এটাও এক প্রশ্ন, দেশের সাধারণ নাগরিক তাঁর জীবনের নিরাপত্তা হারাচ্ছে কেন? এখানে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সাথে ঐ পরিবহন শ্রমিক দুজনের পার্থক্য কী? কেন এই পার্থক্য?

এদিকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি'র হত্যাকাণ্ডের ঘটনার উম্মোচন হয়নি। খুনি ধরা পরেনি। এ বিষয়ে তদন্তকারী সংস্থা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুমান নির্ভর তথ্য প্রদান করে জনতাকে বিভ্রান্ত করেছে। আর বর্তমানে সেটা যেন কোন এক ইশারায় ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। আর সংবাদ কর্মীরাও যেন ভুলে যায় পেছনের ঘটনা। কিন্তু ঘটনার পরম্পরা ঠিকই ঘটে চলেছে। গণমাধ্যম বিশেষ মুহুর্তের সংবাদগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরার ফলে আমরা হারিয়ে ফেলি পূর্বে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা গুলি। তাই জনগণকে ধোকা দেয়া সহজ হয়ে যায়।
আজ ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ রহস্যের সাথে সাথে যে নিরীহ মানুষ খুন হলো, তাদের কথা কিন্তু সংবাদ মাধ্যমে তেমন ভাবে উঠে আসছে না। এ দায় তাদের।

আমরা আশা করবো ইলিয়াস আলী নিরাপদে ও সুস্থ্য অবস্থায় উদ্ধার পাবেন। এবং সেই সাথে শুধু ইলিয়াস আলী নয়, প্রত্যেক সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আমরা দেখেছি, ইলিয়াস আলী নেতা হওয়ার কল্যাণে যেমন সারাদেশব্যাপী হরতাল হয়েছে, তেমনি তাঁকে উদ্ধার করার অজুহাতে দু দুজন পরিবহন শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সাধারণ জনতা এই ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত হয়ে পড়েছি। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকার ছাড়াও আমাদের কোন গতান্তর নেই।