প্রসঙ্গ রবীন্দ্র পূজা: আমাদের ভাবতে হবে

সেতু আশরাফুল হক
Published : 10 May 2012, 06:42 PM
Updated : 10 May 2012, 06:42 PM

কবি রবীন্দ্রনাথ একজন সেরা বাঙালি প্রতিভাবান। তাঁর রচিত কবিতা, গান, ছোটগল্প এবং উপন্যাস বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব মানচিত্রে পরিচিতি এনে দিয়েছে। তাঁর কর্মকে এদেশের মানুষ সযত্নে রেখে দিয়েছে। আজীবন রাখবেও।

কিন্তু কথা হলো রবীন্দ্রদর্শন নিয়ে রবীন্দ্র-পুরহিতদের অতিরঞ্জিত বাতচিৎ। এ কারনে রবীন্দ্রপুজার বিশ্বাসকে ধর্মবোধে উন্নীত হওয়ার ফলে ব্যক্তি ও কবি রবীন্দ্রনাথের ত্রুটি বা অসঙ্গতি নিয়ে কথাও হয়ে পড়ছে মহাপাপ।

রবীন্দ্রনাথ বড় প্রতিভা, সন্দেহ নাই; কেউ তা অস্বীকারও করবে না। কিন্তু ভাবমুর্তিপুজার যে চল এতোদিন হয়ে আসছে এবং হচ্ছে, তা মুক্তবুদ্ধির বিপক্ষে দাঁড়ায়। আর এ জন্যই এ রবীন্দ্র ধর্মবোধের অবসান প্রয়োজন। এ ছাড়াও রবীন্দ্রদর্শন বাংলার অভিজাত শ্রেনির স্বার্থ রক্ষা করে চলে। কেননা রবীন্দ্র দর্শন সামন্তবাদের জয়ধ্বনি করে, আবার অপরদিকে গণতন্ত্রকেও জিইয়ে রাখে নির্বিষ আকারে। রবীন্দ্রনাথ "কালান্তর" প্রবন্ধে যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন তা ঐ তথাকথিত সামন্তবাদীগণতন্ত্রের ভিত্তি। যা একদিকে বাংলার মানসপটে সৃষ্টি করে পরনির্ভরশীল স্বরাজ প্রতিষ্ঠার। এ কারণে বাংলাদেশের পারিবারিক তন্ত্র জিইয়ে রাখার জন্য রবীন্দ্রপুজা জরুরী। এর অসঙ্গতির দিকে আঙুল তুললে রবীন্দ্র পুরোহিতদের রৈ রৈ রব ওঠে, কারণ তাতে রবীন্দ্রধর্মবোধ আঘাত প্রাপ্ত হয়।

এ কথা সত্যি যে রবীন্দ্রনাথের দুটি বিপরীতমুখী স্রোত সবসময় ক্রিয়াশীল ছিল; এক, উপনিষদের বরে উর্ধ্বগত পরমাত্মার প্রতি আরাধনা এবং দুই, বৈষয়িক পৃথিবীর সফল জীবনের জন্য অহংকার। জমিদার রবীন্দ্রনাথ আর কবি রবীন্দ্রনাথ কে আমরা একত্রে রাখতে পারি না। এমনকি নোবেল প্রাইজের টাকায় যে কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন, তা নিয়ে যতই বাগাড়ম্বর করা হোক না কেন, রাজশাহীর পতিসরের জমিদারিতে দরিদ্র কৃষকের উচ্চ হারে ঋণদানের ইতিহাস বরেন্দ্র যাদুঘরেই প্রমাণসহ রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর প্রতিবার বিদেশ যাত্রার খরচও বহন করেছে পতিসরের দরিদ্র প্রজা। সংখ্যা গুরু মুসলিম অধ্যুষিত পুর্ব বঙ্গের সৌন্দর্য নিয়ে, কাহিনী নিয়ে গল্প-কবিতা রচনা করলেও তিনি তাঁর লেখায় মুসলিম চরিত্রগুলো রেখেছেন গৌণ করে। এসব একজন আত্মপ্রবঞ্চক রবীন্দ্রনাথকে তুলে ধরে।

তাই আমাদের রবীন্দ্রনাথকে শুধুমাত্র একজন প্রতিভাবান সাহিত্যিক, বিশ্বকবি বা কবিগুরু হিসেবেই শ্রদ্ধার আসনে রাখা উচিত। যেমনি আমরা অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা করি তেমনি ভাবে। হয়ত এ ক্ষেত্রে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তালিকার প্রথম বা সেরা হিসেবে রাখা উচিত, কিন্তু রবীন্দ্রপুজা বা তাঁর ভাবমুর্তিকে পুজা করার যে চল তা বন্ধের পক্ষে আমি।

[ এই ষ্ট্যাটাস সম্পুর্ণ আমার নিজস্ব চিন্তার প্রকাশ মাত্র। এতে যদি কোন রবীন্দ্র-পুরোহিত আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তবে তার দায়ভার তাঁর নিজস্ব। ]