আমার ছেলে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। আমি তাকে প্রায়ই শাহবাগ নিয়ে যাই । সে খুব উৎসাহ নিয়েই যায় , স্লোগান দেয়, রাজাকারের ফাঁসি চায় তারপর আমি আর সে যখন বাড়ি ফিরি তখন নানা ধরনের প্রশ্ন করে স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা জানতে চায় , এক একটা স্লোগানের মানে বিশদ ভাবে জানতে চায় , কত রকম যে প্রশ্ন তার মনে । বাসার মধ্যেই সে আর তার ছোট বোন সারাক্ষণ বলছে "ক তে কাদের মোল্লা , তুই রাজাকার, তুই রাজাকার " । আজকে সে স্কুল থেকে এসেই আমাকে প্রশ্ন করল " মা কালকে নাকি একটা রাজাকারের ফাঁসি হবে ? আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম যে কালকেই ফাঁসি হবে না ,কালকে তার মামলার রায় হবে । প্রথমে রায় হয় তারপর তা কার্যকর হয় । সে কিছুখ্যন চুপ করে থেকে বলল, তাহলে মা আমাদের দেশতো স্বাধীন হয়েছে অনেক বছর হোল, তাহলে এতদিন এই সব কিছু হোল না কেন ? কি জবাব দেবো , আমার কাছে তো কোন উত্তর নাই ( কার কাছে কি আছে?) তারপর সে বলল, মা আমি ইন্টার নেট থেকে মুক্তি যুদ্ধের ছবি দেখেছি, জানো কি কষ্ট । সব গুলা মানুষদের হাতবেধে মেরে ফেলেছে ।' আমি বললাম উনারা বীর , শহীদ , উনাদের জন্যই আমাদের এই স্বাধীন দেশ। সে বলল , এই রাজাকারেরাই কি তাঁদের মেরে ফেলেছে ? রাজাকার গুলা কি পারিস্তানিদের হেল্প করেছে ? আমি বললাম , হ্যাঁ । সে অবাক হয়ে বলল আচ্ছা মা " কাদের মোল্লা কি বাঙালি ? রাজাকার রা কি বাঙালি ? আমি বললাম , না ওরা বাঙালি না , ওরা বিশ্বাস ঘাতক, ওরা খুনি, ওরা পাকিস্তানের দালাল, ওরা রাজাকার, আল্বদর,আলশামস ।
আমার ১০ বছরের ছেলের সামনে আমার লজ্জা লাগছিলো ,নিজেকে অপরাধী লাগছিলো কারন এতগুলো বছরেও আমরা এই সব ঘৃণ্য পশু গুলার বিচার তো করতে পারলামই না উপরন্ত তাদেরকে আমরা আমাদের কোলে বসিয়ে রেখেছি । রাজাকার দিয়ে দেশ চালাচ্ছি । ধিক । আমরা এখন শাহবাগ নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছি ।শাহবাগ আন্দোলনের ফলে কার সুবিধা, কার অসুবিধা এই সব ।শাহবাগের আন্দোলনের সুবিধা যদি কেউ নিয়ে থাকে নিক না , তাতে অসুবিধা কি । আমাদের যা দাবী (অর্থাৎ রাজাকারদের ফাঁসি আর জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করন ) তা আমাদের দিতে হবে। আমরা আমাদের এই দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বনা । আমার ছেলের মতো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে , অপেক্ষ্যা করছে রাজাকার মুক্ত , সুন্দর একটা দেশের জন্য । আমাদের তা দিতে হবে এবং এখনই উপযুক্ত সময় ।