যৌতুকের কারণে স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রীর চোখ নষ্ট করতে চেয়েছিল স্বামী

গোলাম মওলা সিরাজ
Published : 2 May 2012, 05:17 PM
Updated : 2 May 2012, 05:17 PM

মফস্বল শহর থেকে সাংবাদিকতা করি৷ খুব জটিলতা৷ তবে আগের তুলনায় আকাশ যোগাযোগ জটিলতা অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে৷ অন্তত পোষ্ট অফিসের খামে সংবাদ পাঠিয়ে অপেক্ষা করতে হয়না৷ এ ক্ষেত্রে মুল্যায়ন বৈষম্যে মফস্বলের সাংবাদিকরা এগিয়ে যেতে পারে না৷

মূল প্রসঙ্গ:
নিজের বিবেককে জাগ্রত কর৷ নিজেকে দিয়ে আরোও দশজনের কথা ভাবো৷ তা না হলে ক্রম আধূনিকতা আর ব্যস্ততার দোহাইয়ে পৃথিবীতে আমরা মরে যাবো, বিনাশ হব৷ থাকবেনা একটু পরখ করার মত৷ আমার শ্বাস আছে কি নেই৷

নাগেশ্বরী উপজেলার একটি গ্রামে একটি ঘটনা ঘটেছে৷ এক স্বামী যৌতুকের কারণে স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রীর চোখ দুটো নষ্ট করতে চেয়েছিল৷ লোহার চেইনের আঘাতে শরীরের নানা অঙ্গে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে৷ জানতে পেরে আমরা সংবাদ কর্মিরা ছুটে গিয়েছিলাম হাসপাতালে৷ দেখেছিও তাই৷ বাম চোখটা অনেকটা আঘাত প্রাপ্ত৷ উপজেলা শহরের ডাক্তাররাও বললেন, চোখের বিষয়টা বলা যাচ্ছেনা৷ চক্ষু বিশেষজ্ঞ দেখানো উচিত্‍৷ হাসপাতাল থেকে কয়েকটি ছবি তুলে ফিরলাম অফিসে৷

সংবাদটি পাঠালাম৷ শুধু আমি নই৷ এ শহরের সকল মিডিয়া কর্মীরা খুব গুরুত্ব দিয়ে সংবাদটি করল৷ নাগেশ্বরীতে হতে চলেছে আর এক রোমানা মঞ্জুর৷ কিছুদিন আগে স্বামী কর্তৃক চোখ হারানো রোমানা মঞ্জুরকে অনায়াসে এই স্কুল শিক্ষিকার ঘটনায়৷ কারণ একটাই বিষয়টির সুবিচার হওয়া উচিত্‍৷ পরদিন দেশের প্রায়ই জাতীয় দৈনিকে ছবিসহ সংবাদটি প্রকাশ হলো৷ ওইদিন নির্যাযিতার বাবা থানায় মামলা করে আমাদের জানালো৷ আবারো সংবাদ করলাম আমরা৷

মামলার ৬দিন অতিবাহিত হলেও আসামীকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ৷ আমরা কঠিনভাবে দোষারোপ করলাম থানা পুলিশকে৷ ফলো আপ করলাম কেন তারা আসামী ধরছে না৷

নির্যাযিতা সরকারী স্কুল শিক্ষিকা৷ তাই ৫ জানুয়ারী'১২ উপজেলা শিক্ষক সমিতি উপজেলার শিক্ষকদের নিয়ে নির্যাতনকারী স্বামীর দ্রুত গ্রেফতার এবং শাস্তির দাবীতে মানব বন্ধন করল৷ আাবারো ফলাও করলাম৷ প্রশাসন আমাদের জানালো নির্যাতনকারীরা স্ব-পরিবারে পলাতক ৷ গ্রেফতার করব কাকে?

নির্যাতনকারীও সরকারী চাকুরী করে৷ এত ঘটনার পরে দিনের পর দিন অফিসে অনুপস্থিত থাকছে অথচ….৷

মাসখানেক পর একটি এনজিও ভিত্তিক মিডিয়াতে এ সংবাদটি পোষ্ট করলাম৷ প্রতিবেদনের আলোকে তারা আমাকে ঘটনার সর্বশেষ অবস্থাটা জানাতে বলল৷ পরদিন প্রথমে থানায় ফোন করলাম৷ তারা জানালো এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি৷

নির্যাযিতার পরিবারে যোগাযোগ করতে গিয়ে তাদের আচরণ অনেকটা বিস্ময়কর দেখলাম৷ মিডিয়াকর্মী তাদের ঘটনার জানতে যাওয়াটা তাদের ভালো লাগেনি৷ এমনটা মনে হল৷ ভাবনার আগেই চোখে ভাসলো ঘটনার দিন তারা আমাকে কিভাবে না বললো সংবাদটি ছাপানোর জন্য৷

মিডিয়ার ধর্ম মোতাবেক সোর্সের কাছ থেকে মিলল এক দারুন কাহিনী৷

তারা এক হয়ে গেছে৷ তাদের মাঝে কিছুই ঘটেনি৷ বিষয়টি মিডিয়ায় ফলাও হওয়ার সুবাদে সরকারী চাকুরীজীবি নির্যাতনকারী অনেক বিপদমুখী হয়ে সমাজের এক শ্রেণীর দাপট ওয়ালা মাতব্বরকে নিযুক্ত করেছে৷ মাতব্বরেরা তাদের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা নিয়ে নির্যাযিতাকে ৩ লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে বাকি ৪ লাখ টাকা মাতব্বরেরা ভাগবাটোয়ারা করে ফিনিস করেছে৷ যে কারণে তারা বর্তমানে ঘটনা থেকে দূরে অবস্থান করতে ইচ্ছুক৷

কিন্তু এটাতো সমাধান নয়৷ যে বিষয়টা মিডিয়া এভাবে গুরুত্ব দিল৷ একটা উপজেলার প্রায় সকল শিক্ষক মানববন্ধন করে ঘাম ঝড়ালো৷ তাদের মূল্যায়নটা হলো কোথায়৷ বরং ন্যায়ের পক্ষের গায়ে-মুখে মাথায় চুনকালির আবরণ ঢেকে দিল তারা৷ এতে করে এমন ঘটনা বাড়বে৷ যদি চোখ দুটো নষ্ট হত, বা হয়ে যায় এই টাকায় কি জীবন পার করা সম্ভব৷ ভাবুন এতে দশের ক্ষতি বাড়ছে৷ শুধূ নিজের জন্য নয়, দশের জন্য ভাবুন৷ সবারটুকুই কিন্তু আপনার আমার৷