ছোট্ট একটি গল্প!

মোঃ ওমর আলী সোহাগ
Published : 16 Jan 2017, 10:57 AM
Updated : 16 Jan 2017, 10:57 AM

ঝিনাইদহের ছোট্ট একটি এলাকা অামার প্রিয় গান্না। এখানে আমিই শুধু জন্মায়নি আমার বাবা মৃত ওসমান আলীও এখানেই জন্মেছিল। জন্মানোর পরে বাবাকে আওয়ামীলীগই করতে দেখেছি। বাবার জন্য সারা পরিবার এবং গ্রামের সমাজের সবাই আওয়ামীলীগ করতো।

২০০৩ সালে বাবা খুন হল। এই সময় বিএনপি দলীয় চাপে মামলা তুলে নিতে  হল। বাবা ৩ বার ও মা ২ বার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়। অনেক সময় গেল আমি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম।ছাত্রলীগের রাজনীতি করলাম  কয়েকটি বছর। বাবার মত এলাকার মানুষের সুখ দুঃখে সাথে থাকতাম। ২০১৪ সালের প্রথমেই সাংবাদিকতা শুরু করলাম এলাকার একটি ছোট্ট পত্রিকায়। সাংবাদিকতা মামার পেশা ছিল না একটি আন্দোলন ও সংগ্রাম ছিল। আমি সব সময় নির্যাতিত মানুষের জন্য ও অন্যায়ের বিপক্ষে থাকতে চেষ্টা করেছি। সাংবাদিকতা কে আমি কখনোই আমার রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করেনি। এর মধ্যে অনেক হোচট খেতে খেতে আসলাম।

আসলো ইউপি নির্বাচন। আমরা যারা দীর্ঘ কয়েকটি বছর আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতি করেছি তাদের মধ্যে থেকে প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা প্রবীন নেতা যাতে নৌকা প্রতীক পায় সেজন্য আমরা সমর্থন দিয়েছি ও আমাদের উপর মহলের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু প্রতিক বরাদ্ধ্যের সময় অজানা কারনে মাত্র দুয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগে আসা একজন কে প্রতীক দেওয়া হল। আমরা বিদ্রোহ করলাম। ভোট হল। ভোটের পর নৌকা প্রতীক পাওয়া নতুন চেয়ারম্যান আমরা যারা পুরাতন আওয়ামীলীগ করি তাদের উপর জামায়াত ও বিএনপির কিছু লোক জন নিয়ে নির্যাতন শুরু করলো।

এর মধ্যে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ১০ টাকা কেজি চাউলের রেশন কার্ড বিতরণ শুরু হলো। আমাদের ইউনিয়নে এই চাউল নিয়ে হলো চরম দুর্নীতি। সংখ্যালঘু দিনমজুর বাঘদি সম্প্রদায়, দাশ সম্প্রদায় সহ আওয়ামী লীগের প্রকৃত দুস্থলোকেরা পেলো না। পেল যাদের প্রায় ত্রিশ বিঘা জমি আছে, দুইটা ট্রাক আছে, স-মিল আছে, সারের দোকান আছে, স্বামী-স্ত্রী দুজনায় চাকরী করে এমন প্রায় ২৪০ জনকে কার্ড দেওয়া হলো।

আমি কয়েক জন সিনিয়ার সাংবাদিক সহ পত্রিকা ও টিভি প্রতিবেদন করলাম। এলাকায় আলোচনা শুরু হলো। চেয়ারম্যান আমার বিপক্ষে মরিয়া হলো। গত ২৫শে অক্টোবর সন্ধ্যার সময় ঝিনাইদহ ডিবি পুলিশের একটি দল আমাকে গ্রেফতার করলো। গাড়ির মধ্যে তুলে আমার পকেটে দেওয়া হল ইয়াবা। আমাকে ১০২ পিস ইয়াবা সহ এজাহার তৈরি করে জেলে পাঠালো। জেলে থাকা অবস্থায় গত ৯ই জানুয়ারী আমার মা আমাকে ও আমাদের পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। আমাকে প্যারোলে জামিন নিয়ে দেখতে হলো শেষবারের মত মাকে। আমার কি হলো সে কথাটা না হয় বাদই দিলাম কিন্তু এ দেশের কি হবে! আওয়ামীলীগের কি হবে! সততার কি হবে! আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন।