সমাজের অন্ধকার দিকের গল্প ‘মহানগর’

পাভেল হাসান
Published : 26 Nov 2021, 08:44 PM
Updated : 26 Nov 2021, 08:44 PM

এসভিএফ এন্টারটেইনমেন্টের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই থেকে মুক্তি প্রাপ্ত ওয়েব সিরিজ 'মহানগর' নিয়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই বেশ সরব ছিল। নাটক কিংবা সিনেমাপ্রেমীরা বেশ প্রশংসা করেছে সবক্ষেত্রেই। এত হইচই যখন হচ্ছেই তখন আমিই বা নিরব থাকি কেন? তাই আজকে মহানগর নিয়ে কিছুটা  নিজের মত হইচই করতে হাজির হয়েছি।

ওয়েব সিরিজ দেখা নিয়ে আমার আগে থেকেই কিছুটা তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল যা আমি তকদীর ওয়েব সিরিজ নিয়ে লেখার সময়ও বলেছিলাম। সব সময় ভালো কিছু নির্মাণ হবে এমনটা আমি কখনই ভেবে নেই না। চেষ্টা করতে করতে ভালো কিছু হবে এমনটাই আমি ভেবে থাকি। মহানগর নির্মাতার তেমনই একটা প্রচেষ্টা বলা যেতে পারে।

কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পুরো মহানগর সিরিজ নির্মাণের নির্মাতা ছিলেন আশফাক নিপুন। নির্মাতার ভালো কাজে সবাই প্রশংসা করবে এটা নাটক সিনেমার জন্য বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার। আমাদের দেশে  অতি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে যাওয়া ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করে নির্মাতা আশফাক নিপুন নিজেকে বেশ ভালো ভাবেই উপস্থাপন করেছেন। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য মহানগরই তার প্রথম প্রচেষ্টা কিনা সেটা আমার ব্যক্তিগত ভাবে জানা নেই। এই কথা বলার মানেটা হচ্ছে, মহানগর নির্মাণে তার মাঝে আমি তার কাজের পেশাদারিত্বের ছাপ দেখেছি।   

অন্ধকার রাত সব সময়ের জন্যই অনেক রহস্যময়, তাও যদি সেটি আবার কোনো মহানগরের রাত হয়। ঘটন ও অঘটন নিয়েই ঢাকার এক রাতের গল্পই বলা হয়েছে মহানগর সিরিজে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার অন্তরজালে আটকে পড়া কতগুলো চরিত্রের গল্প নিয়ে মহানগর এগিয়ে যায় ভিন্ন নামকরণের আট পর্বের সিরিজে। মাত্র একটি রাতেই সমাজের উঁচু শ্রেণি থেকে নিচু শ্রেণির মানুষের গল্পই হচ্ছে মহানগর গল্পের মূল বিষয়বস্তু; অন্তত এটা আমি মনে করছি।

কাহিনীর শুরুতেই চোর-পুলিশের দৃশ্য দিয়ে মহানগর গল্পের শুরু। মাঝে আমাদের ঘূণে ধরা সমাজের কিছুটা  বাস্তব চিত্রের প্রতিচ্ছবি এবং একজন কর্তব্যপরায়ণ পুলিশ অফিসারের বিবেকের আক্ষেপ দিয়ে মহানগর প্রথম সিজনের গল্প শেষ হয়ে যায়। কাহিনীর বাকি অংশ ওটিটি প্ল্যাটফর্মেই বিদ্যমান।

মহানগর সিরিজে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম, জাকিয়া বারি মম, লুৎফুর রহমান জর্জ, শ্যামল মাওলা, মোস্তাফিযুর নুর ইমরান, খাইরুল বাশার, শাহেদ আলী, রুকাইয়া জাহান, নাসির উদ্দিন, নিশাত প্রিয়ম সহ আরও অনেকেই।

মোশাররফ করিম তার ওসি হারুন চরিত্রে বরাবরের মতোই মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। তার অভিনয়ের চেষ্টাটুকু বুঝতে পারবেন প্রত্যেকটি দর্শক এবং এই চরিত্রটি ভালোভাবে তুলে ধরার জন্য অবশ্যই তার পরিশ্রমও রয়েছে বলে উনি নিজেও স্বীকার করবেন।

এস আই মলয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুর ইমরান। পুরো মহানগর সিরিজে উনার অভিনয় ছিল বেশ দৃঢ় ও চমৎকার। উনার কাজ আমার আগে দেখা হয়নি। কিন্তু এস আই চরিত্রে ভালোভাবেই নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছেন।

ভালোলাগা আরও একটি চরিত্রের কথা বলবো। চরিত্রের ব্যপ্তিকাল ছোট হলেও বেশ প্রশংসনীয় ছিল। থানাতে একজন ছিঁচকে চোর বা পকেটমার হিসাবে ধরে আনা হয় একজনকে। এই একজনই পুরো মহানগর সিরিজের মুগ্ধতা বাড়িয়ে তুলেছেন তার নানা ভঙ্গির অভিনয়ের কারিশমাতে। নাসির উদ্দিন ছিলেন এই অভিনয়ে মুগ্ধতা ছড়ানো চরিত্রে। উনাকে এর আগে তকদীর সিরিজে দেখেছিলাম। সেখানেও উনি যথার্থই অভিনয় করেছিলেন। সিরিয়াস গল্পের মহানগর সিরিজে দর্শকের মুখে কিছুটা হাসির যোগান বেশ ভালো ভাবেই পাকাপোক্ত করে রেখেছেন অভিনেতা নাসির উদ্দিন। অনেক সংলাপ ও চরিত্রের দীর্ঘ ব্যপ্তিই সব সময় প্রয়োজন হয় না চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার জন্য। অভিনয় দক্ষতাই সবচেয়ে মূল বিষয়, উনি বোধহয় আবারো প্রমাণ করলেন।

মহানগর সিরিজে অভিনেত্রী মম কিছুটা হতাশ করেছেন তার অভিনীত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার চরিত্রটিতে। ভালো কিছু করার বেশ সুযোগ ছিল কিন্তু তেমনটা তিনি জমিয়ে দিতে পারেননি। এক ঘেয়ে সংলাপ বলার ধরন আমাকে কিছুটা বিরক্তি এনে দিয়েছে। অবশ্য এটা আমার অভিমত, এটা অন্য কোন দর্শকের ক্ষেত্রে নাও হতে পারে। সিরিজের অন্যান্য চরিত্রে শ্যামল মাওলা ও লুৎফুর রহমান জর্জ বেশ প্রাণবন্ত ছিলেন। খাইরুল বাশার, শাহেদ আলী, রুকাইয়া জাহান, নিশাত প্রিয়ম তাদের চরিত্রে ভালো মানিয়েছিল।

মহানগর সিরিজে সাউন্ড ডিজাইনে ছিলেন রিপন নাথ ও আবহ সঙ্গীতের কাজটি বেশ ভালভাবেই করেছেন জাহিদ নিরব। চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন বরকত হোসেন পলাশ। আমি যদিও বোদ্ধা নই, তবু এই সিরিজে ক্যামেরার কাজ আমার ভালো লেগেছে। শিল্প নির্দেশনার কাজে ছিলেন কাজী তানভির রশিদ অপু, পোশাক পরিকল্পনায় ছিলেন ফারজানা সান। পর্দার পেছনের যারাই ছিলেন এই মানুষগুলোকে আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি মহানগর সিরিজের সাফল্যের জন্য। সবার প্রচেষ্টায় মহানগর সিরিজ হয়তো আজকে সবার কাছেই ভালো লেগেছে।

ধন্যবাদ জানাচ্ছি মহনগর সিরিজের নির্বাহী প্রযোজক পারভেজ আমিন ও প্রোডাকশন হাউস স্বপ্ন ঘুড়ি প্রোডাকশনকে। মহানগরের দ্বিতীয় সিজনের অপেক্ষায় থাকছি।