সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে আগুন, সিলেটবাসী ব্যথিত

শরফ উদ্দিন আহমদ
Published : 9 July 2012, 05:49 AM
Updated : 9 July 2012, 05:49 AM

দু'টি ছাত্র সংগঠনের দ্বন্দ্বের জের ধরে সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে কে বা কারা। আগুনে ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী পুরাতন এই ছাত্রাবাসটি প্রায় পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গেছে। ছাত্রলীগ এবং ছাত্র শিবির উভয় পক্ষই একে অন্যকে দোষারূপ করছে। তবে এ সংগঠন দ্বয়ের কেউ না কেউ তো আগুন ধরিয়ে দিয়ে আমাদের মহামূল্যবান সম্পদ ধ্বংস করে দিয়েছে। এরা তো আমাদের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজেরই ছাত্র। তারা কিভাবে নিজেদের সম্পদকে ধ্বংস করতে পারল?

যতটুকু জানি এরকম একটি ভিন্নধর্মী ছাত্রাবাস আমাদের দেশে আর একটি তো নেই-ই, এই উপমহাদেশেও খোঁজে পাওয়া দুস্কর। এই ছাত্রাবাসের সামনে বিশাল বড় খেলার মাঠ এবং খোলা মেলা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ ছাত্রাবাসের সৌন্দর্যকে আরো বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে। ছাত্রাবাসের পাশ দিয়ে যাবার সময় এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করত। আমি যখন এই কলেজের ছাত্র ছিলাম তখন বহুবার ঐ ছাত্রাবাসে গিয়েছি। আমার অনেক স্মৃতি সেখানে জড়িয়ে আছে। এই ছাত্রাবাসে বহু জ্ঞানী-গুনী লোকেরও স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্রদের আবেগ জড়িয়ে আছে। কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরও সিলেট সফরকালে এ ছাত্রাবাসে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছিলেন বলে শুনা যায়।

ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রাবাসটি ভস্মীভূত হওয়ায় আমি ব্যথিত, মর্মাহত। যতটুকু জেনেছি এই ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসটি পুড়ে যাওয়ায় আমার মতো এ কলেজের বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীও ব্যথিত, মর্মাহত। শুধু ছাত্র-ছাত্রী কেন, পুরো সিলেটবাসীই তো ব্যথিত, মর্মাহত। কেননা চোখের সামনে এরকম একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য শৈলির ধ্বংস দেখতে কারো ভালো লাগবে না। আর যারা এ কাণ্ডটি ঘটিয়েছে তারা তো আমাদেরই কারো-না-কারো ভাই অথবা কারো-না-কারো সন্তান। আমরা নিজেই নিজের মহামূল্যবান সম্পদ ধ্বংস করলাম?

কেউ কেউ বলছেন- বিশ্ববাসীর কাছে ঠিকমত উপস্থাপন করা গেলে হয়তো বহু আগেই ইউনেস্কো এই স্থাপনাটিকে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' বা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করতো। তখন সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের গুরুত্ব অনেকগুন বেড়ে যেত। কেউ কেউ বলছেন কোটি টাকা খরচ করে হয়তো আরেকটি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা যাবে কিন্তু হাজার কোটি টাকা খরচ করেও আমরা আর ফিরে পাবো না আমাদের সকলের আবেগ মিশ্রিত এ ঐতিহ্যের স্মারক।

আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে অবহিত হয়েছেন বলে খবরের কাগজ পড়ে জানতে পারলাম। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে হবে বলে জানিয়েছেন। আমরা তার কথায় আশ্বস্ত হতে চাই, তিনি দ্রুতই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এটা বিশ্বাস করতে চাই। এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাঁদের কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা, অপরাধীরা শাস্তি না পেলে তারা আরো বেশী করে অপরাধ করবে।

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, এমসি কলেজ ছাত্রাবাস আগুনে পুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। ঐতিহ্যবাহী এ স্থাপনাটি ধ্বংস করার পেছনে কোন ষড়যন্ত্র আছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখুন। দায়ীদেরকে শাস্তি দিন। অপরাধীদের শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করলে হয়তো এমসি কলেজের প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী তথা সিলেটবাসীর ব্যথা কিছুটা হলেও দূর হবে।