মা-বাবার কল্যাণেই তো এ পৃথিবীর আলো দেখা, তাহলে কেন তাঁদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবেন?

শরফ উদ্দিন আহমদ
Published : 28 Feb 2012, 11:39 AM
Updated : 28 Feb 2012, 11:39 AM

আমরা যখন শিশু ছিলাম তখন মা-বাবা আমাদেরকে কত কষ্ট করে লালন-পালন করেছেন তা বুঝার জন্যে তো আমাদেরকে আইনস্টাইন হওয়ার দরকার নেই। ছোট শিশুদের প্রতি মা-বাবার যত্ন দেখেই বুঝা যায়। অথবা নিজেদের সন্তানের মা-বাবা হওয়ার মাধ্যমে সেটি উপলব্দি করা যায়। প্রত্যেক মা-বাবাই তাঁদের সন্তানদেরকে নিজেদের চাইতেও বেশী ভালোবাসেন। আর ভালোবাসেন বলেই একটি শিশু যখন রাত দু'টা কিংবা তিনটার সময়ও প্রশাব বা পায়খানা করে বিছানা নষ্ট করে দেয়, পেঠের ক্ষুধায় কান্না করে উঠে তখন ঐ মা-বাবারাই তাঁদের নিজেদের আরাম-আয়েশকে বিসর্জন দিয়ে ঘুম থেকে উঠে তা পরিষ্কার করেন। সন্তানদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেন। পৃথিবীর কোন মা-বাবাই তাঁদের সন্তানদেরকে নিজেদের উপর বাড়তি বোঝা মনে করেন না। যখন শিশু ছিলাম তখন আমরা নিতান্তই অসহায় ছিলাম। নাওয়া, খাওয়া, পরা কিছুই নিজেরা করতে পারতাম না। সবকিছু মা-বাবারাই করাতেন। তাঁরা কখনই কোন সন্তানকেই অসহায়ত্ববোধ করতে দেননি। প্রয়োজনের আগেই সন্তানদের জন্যে সবকিছু হাজির রাখতেন। কোন উৎসবে কিংবা বিশেষ দিনে নিজেদের জন্যে কিছু না কিনলেও সন্তানদের জন্যে ঠিকই কিনতেন। সন্তানদের প্রতি তাঁদের আদরের সীমা পরিসীমা ছিলনা, এখনও নেই। সন্তানদের জন্যে মা-বাবাদের সবসময় একটাই চাওয়া থাকে- 'তাঁর সন্তান যেন থাকে সুখে-শান্তিতে, সবসময় যেন থাকে দুধে-ভাতে'।

মা-বাবারা যখন বয়স্ক হন, বৃদ্ধ হন তখন তাঁরাও শিশুদের মতোই অসহায় হয়ে পড়েন। বয়সের ভারে তখন তাঁরা অনেক কিছু চাইলেও পারেন না। যদিও কোন সময় সন্তানদের কাছে তাঁদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে চান না, সন্তানদের কাছে কিছু চান না। কিন্তু বৃদ্ধ মা-বাবার জন্যে সন্তানদের কি কোন কর্তব্য নেই? মা-বাবা যখন বৃদ্ধ হন তখন তাঁদেরকে বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, এটা আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হওয়া কি উচিত নয়? যুগ-যুগ ধরে মানুষ তাঁর বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি বিশেষ যত্নবান ছিল এবং অদ্যাবধিও হয়ে আছে বলে আমার বিশ্বাস। কেননা, মা-বাবার ঋণ কখনই তাঁর সন্তানরা শোধ করতে পারবেনা। মা-বাবার কল্যাণেই তো এ পৃথিবীর আলো দেখা।

তাহলে বৃদ্ধ মা-বাবার বিশেষ যত্ন- এ প্রশ্ন উঠছে কেন? কাল একটা বেসরকারী টিভি চ্যানেলে কৌতুক বিষয়ক হাসির অনুষ্ঠান দেখছিলাম। সে অনুষ্ঠানে কয়েকজন নব্বই উর্ধ্ব বৃদ্ধকে নিয়ে এসেছিল- তাঁদেরকে একটু হাসি-আনন্দ দেবার জন্যে, যারা প্রত্যেকেই একটা বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। আমরা জানি বৃদ্ধাশ্রমে তাঁরা তাঁদের আদরের সন্তানদের ছেড়ে নি:সঙ্গ জীবন-যাপন করেন। যে সন্তানেরা তাঁদের মা-বাবাদের বাড়তি বোঝা মনে করেন, আপদ মনে করেন- তারাই কেবল তাদের মা-বাবাদের একটা বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসেন। বৃদ্ধাশ্রমে বৃদ্ধ মা-বাবা সুখে-শান্তিতে থাকবেন কিনা সেদিকে খেয়াল করেন না, শুধু নিজেদের আরাম-আয়েশের কথাই চিন্তা করেন।

যারা নিজেদের আরাম-আয়েশের কথা চিন্তা করে বৃদ্ধ মা-বাবাদের বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসেন তাঁরা কি চিন্তা করেননা তারাও একদিন বৃদ্ধ হবেন। তাঁদের সন্তানও হয়তো তাঁদেরকে একদিন বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসবে। তখন কেমন লাগবে? কাজেই সময় থাকতে ভাবুন। গানই তো আছে- "সময় গেলে সাধন হয় না"।

মা-বাবারা যদি সন্তানদেরকে বাড়তি বোঝা মনে না করে আদরে-সোহাগে লালন-পালন করে বড় করতে পারেন, অসহায় শিশু সন্তানদের দূরে ঠেলে না দিতে পারেন তাহলে সন্তানরা কেন বড় হয়ে বৃদ্ধ মা-বাবাদের বাড়তি বোঝা মনে করবেন? দূরে ঠেলে দিবেন? কেনইবা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবেন?

কোন মা-বাবা বৃদ্ধাশ্রমে থাকুক, সেটা আমরা কখনই চাইনা। মা-বাবাসহ সকলেই একসাথে বসবাস করুক, এটা আমরা সকলেই চাই। বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি সকলেই বিশেষ যত্নবান থাকুক, ভালোবাসা থাকুক। মা-বাবাসহ সকলের পারিবারিক মায়ার বন্ধন অটুট থাকুক, এটাই হউক আমাদের কামনা।