এ কান্না ভালোবাসার…

শরফ উদ্দিন আহমদ
Published : 23 March 2012, 08:42 AM
Updated : 23 March 2012, 08:42 AM

টানটান উত্তেজনাপূর্ণ এক ক্রিকেট ম্যাচ দেখল পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। গতকালের এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের খেলাটির দিকে দৃষ্টি ছিল বাংলাদেশী কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্তদের পাশাপাশি পুরো ক্রিকেট বিশ্বের। ফাইনাল খেলা ফাইনালের মতোই হয়েছে। এ খেলাটি দেখতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন অগনিত ক্রিকেট ভক্তের পাশাপাশি বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো: জিল্লুর রহমান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক রাষ্ট্রপতিই হুসেন মুহাম্মদ এরশাদ এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ অনেকে। খেলাটি দেখতে টেলিভিশনের পর্দায় বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি নাগরিক চোখ রেখেছিল। চাকুরীজীবি মানুষেরা এদিন একটু আগে-বাগেই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে খেলা দেখতে টেলিভিশন পর্দায় অপলক দৃষ্টিতে বসেছিল। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বড় পর্দায় খেলাটি দেখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সব জয়গায়ই ক্রিকেট ভক্তের ভীড়। সবাই হইহুল্লোড় করে খেলাটি উপভোগ করছিল। বাংলাদেশ যখন ফিল্ডিং করছিল তখন একটি উইকেটের পতনে সবাই তুমুল করতালি সহকারে এটিকে উদযাপন করছিল। আবার যখন বাংলাদেশ ব্যাটিং করছিল তখন প্রতিটি রান প্রাপ্তিতেই তুমুল করতালি দিয়ে উদযাপন করছিল। মাঠে যাঁরা দেখছিল তাঁরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশী খেলোয়াড়দেরকে উৎসাহ যুগিয়েছিল। সবাই অধীর আগ্রহে আরেকটি জয় দেখার অপেক্ষায় ছিল। আরেকটি বিজয়োল্লাস করার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু হলো না। বাংলাদেশ মাত্র দুই রানের জন্য এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পারল না। কিন্তু তাতে কী? পরেরবার তো হবে। আমরা তো ভালো খেলেছি। ভালো খেললে আমাদের জয় হবেই।

সবাই দেশকে যে কত ভালোবাসে তা আরেকবার প্রমাণ হলো। এই ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে এদেশের প্রায় সকল মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল যেমনটি হয়েছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়। ব্যাটিং করার সময় যখন বাংলাদেশ দল রান নিতে পারছিল না তখন মাঠে এবং টেলিভিশনের পর্দায় মানুষের কী যে টেনশন, এ যেন ক্রিকেটের প্রতি গভীর ভালোবাসার টেনশন। আর যখন দুই রানের জন্য বাংলাদেশ দল হারল তখন সবাই যে যেখানে ছিল নিস্তব্দ হয়ে গিয়েছিল। টেলিভিশনের পর্দায় একজন ক্রিকেট ভক্ত মহিলাকে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করতে দেখা গেল। আসলে ক্রিকেট প্রিয় বাঙ্গালী অনেকেই কেঁদেছেন। বাংলাদেশী ক্রিকেটাররাও কেঁদেছেন। আমিও কেঁদেছি। এ যেন ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার কান্না। বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার কান্না। বাংলদেশের প্রতি ভালোবাসার কান্না। এ কান্না গভীর দেশ প্রেম থেকে। আসলে আমরা সবাই দেশকে গভীরভাবে ভালোবাসি। আর ভালোবাসি বলেই সবাই এতো আগ্রহ নিয়ে আরেকটি বিজয় দেখার আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম। আমাদের মহান স্বাধীনতার মাসে যদি আমরা পাকিস্তানের মতো দলকে হারিয়ে এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পারতাম তাহলে সেটি ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকত।

যাক, এবার হয়নি তো কী হয়েছে, পরের বার হবে। আমাদের ক্রিকেটাররা তো আন্তরিকতার সাথে খেলে আমাদেরকে আরেকটি বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে তো ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছেন। আমরা তো এশিয়া কাপে ২য় হলাম। সেটি কম কীসে?

এ খেলায় যে সকল ভুল হয়েছে সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে যাতে আর এরকম ভুল না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শিখতে হবে। মন খারাপ করে বসে থাকলে চলবে না। আমাদেরকে আরোও বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। আমরা তো লড়াই করে হেরেছি। আমরা যে বীরের জাতি, বীরের মতো লড়াই করতে জানি সেটি তো আরেকবার প্রমাণ করতে পেরেছি। এবারের এশিয়া কাপে আমরা তো খারাপ খেলিনি। ভালো খেলেছি। এই ভালো খেলা এবং লড়াকু মনোভাব আগামীতেও বজায় রাখতে হবে। এর ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে সেদিকে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবাই দৃষ্টি রাখবেন বলে আমি এবং আমরা সকলেই প্রত্যাশা করি।

পরিশেষে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এবং ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এবং এশিয়া কাপে ২য় হওয়ায় অভিনন্দন জানাচ্ছি। এখন আমরা এশিয়ার মধ্যে ২য় সেরা দল।

***
ফিচার ছবি: ব্লগার সুলতান মির্জা'র পোস্ট থেকে পাওয়া ইউটিউব ভিডিও'র বিশেষ বিশেষ স্ক্রিনশট [স্ক্রিনশট ইমেইজ আলাদা আলাদা ভাবে বড় আকারে দেখুন – , , , ]