স্বপ্ন দেখেন বিশ্বকাপ জয়ের আর শিশুদের খেলার মাঠ, পার্কগুলো দখল হয়ে আছে বছরের পর বছর

সৈয়দ সাইফুল আলম
Published : 2 March 2011, 06:37 AM
Updated : 2 March 2011, 06:37 AM

বড্ড বেশি অর্থনীতি বুঝতে শিখেছি আমরা। খেলার মাঠের অর্থনৈতিক মূল কী? মাঠগুলো ভাড়া দিলে টাকা আসে। তাই পালা করে কতৃপক্ষ মাঠ ভাড়া দেওয়ার উৎসবে নেমেছে। কিন্তু এই টাকা কার স্বার্থে? জনগণের? নাকি ব্যক্তি বিশেষের উন্নয়ণে?

আমরা মাঠ চাই, খেলতে চাই, খেলার মাঠে মেলায় নয়, আমার মাঠ আমাকে খেলতে দাও কত যে শ্লোগান ছিল আজ তাদের কন্ঠে । আমরা অপারগ শুধু নিরব সর্মথ ছাড়া আর কিছুই করতে পারছি না। একে একে সব মাঠ, পার্ক ইজরা দেওয়া হচ্ছে উন্নয়নের নামে, মাল্টিন্যাশন কোম্পানীগুলোর বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে রাস্তার ধারের মাঠ, পার্ক, ছোট উমুক্তস্থানগুলো। আসুন একটু সোচ্ছার হই।

শিশুদের আগামী প্রজন্ম বলে স্বীকার করা হলেও, তাদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশের সুযোগ এই নগরে অপর্যাপ্ত। নগর পরিকল্পনায় যান্ত্রিক যানবহন অপেক্ষা মানবশিশু অনেকাংশে উপেক্ষিত। পরিকল্পনার এই দুর্বলতার কারণে দিন দিন নগরে পার্ক, মাঠ তথা শারিরীক ও মানসিক বিকাশের স্থান হ্রাস পাচ্ছে পার্ক, মাঠ তথা শারিরীক ও মানসিক বিকাশের স্থান। মানুষের পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধূলা এবং শরীরচর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। ঢাকাসহ অন্যান্য শহরগুলোতে সুস্থ নির্মল বিনোদনের সুযোগ ক্রমশ সীমিত হয়ে পড়ছে। পর্যাপ্ত মাঠ, পার্কের অভাবে শিশু কিশোররা বাইরে খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা তাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে।

বাইরে পর্যাপ্ত বিনোদনের সুযোগ কমে যাওয়ায মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়ছে এবং ব্যয়ামের অভাবে মুটিয়ে যাওয়া, ডায়বেটিস, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে শিশুরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এই সংকট মোকাবিলায় শৈশবকাল থেকেই উন্মুক্তস্থানে খেলাধুলার সুযোগ থাকা প্রয়োজন। শিশু-কিশোরদের খেলাধূলার সুবিধা প্রদান, নগরবাসীর বিনোদনের জন্য শহরগুলোতে পর্যাপ্ত পার্ক, খেলার মাঠ গড়ে তোলা এবং পুরোনোগুলোর সংস্কার অত্যাবশ্যকীয়। একই সাথে নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার কথা চিন্তা করে পায়ে হেঁটে চলাচল ও শরীরচর্চার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শহরের অবকাঠামো নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। এক্ষেত্রে নগর পরিকল্পাপনায় নগরবাসীর জন্য বিনোদনের সুযোগ সুবিধা প্রদানের বিষয়টি বিশেষভাবে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। নগর পরিকল্পনায় যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল, পার্কিংকে পরিকল্পনাবিদ ও সরকারী সংস্থাগুলো অগ্রাধিকার দিলেও মানুষকে সুস্থ্যভাবে বাঁচাকে অগ্রাধিকার দেয় না। গাড়ী না থাকলেও প্রতিটি বাড়ীতে পার্কিং থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ প্রতিটি বাড়ী ও এলাকায় শিশু থাকা স্বত্বেও খেলা ধূলা ও বিনোদনের কোন স্থান নেই। এই নগরে গাড়ী অপেক্ষা মানব শিশু উপেক্ষিত। সবুজ চত্তর, পার্ক বলা হয় শহরের ফুসফুুস। শহরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পার্ক, সবুজ চত্ত্বর গড়ে তোলার মাধ্যমে নগরবাসী যেমন সুস্থ থাকবে তেমনি শহরের বেশি গরম অনুভূত হবে না।

খেলার মাঠ, পার্ক, উন্মুক্তস্থানের ইজারা প্রথা বাতিল করা, রক্ষাবেক্ষণে স্থানীয় প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ এর সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন ।

—————————————————————————————————————————————-
ফিচার ছবিঃ Frames from the Sweeper Colony, By DrikNEWS, August 5, 2008 থেকে সংগৃহিত