কৃষি ও প্রাণবৈচিত্র রক্ষায় শামুক-ঝিনুক নিধন বন্ধ কর

সৈয়দ সাইফুল আলম
Published : 9 May 2012, 04:59 AM
Updated : 9 May 2012, 04:59 AM

বিভিন্ন খাল-বিল, জলাশয় থেকে নির্বিচারে পরিবেশবান্ধব শামুক-ঝিনুক নিধন হচ্ছে। নির্বিচারে শামুক-ঝিনুক নিধনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। শামুক হচ্ছে প্রাকৃতিক ফিল্টার। প্রতিবছর আষাঢ় মাস থেকে শুরু হয় শামুক আহরণ। প্রতি বছর ব্যাপকহারে শামুক-ঝিনুক নিধন করায় ইতমধ্যে সোনালি শামুকসহ বেশ কয়েক প্রজাতির জলজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জলা ভূমিগুলোতে তেমন আর শামুক-ঝিনুক পাওয়া যায় না। প্রতিবছর এভাবে নিধনের ফলে তা পরিবেশ ও কৃষিজমির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

শামুক-ঝিনুক পরিবেশের বিশেষ বন্ধু হিসেবে পরিগনিত। শামুক-ঝিনুক মরে গিয়ে তার মাংস ও খোলাস পচে জমির মাটিতে প্রাকৃতিকভাবে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশ তৈরী করে। ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ ধানগাছের শিকড় মজবুত ও ফসল অধিক হতে সাহায্য করে। অন্যদিকে জীবিত শামুক-ঝিনুক বর্ষা মৌসুমে আমণ ধানের ব্যাপক উপকারে আসে। শামুক দূষিত পানি ফিল্টারিং করে প্রকৃতিকভাবে পানি দূষণমুক্ত রাখে।

ধানের জমিতে শামুকের ডিম খেয়ে ইদুর তার পেটপূর্তি করায় ধান নষ্ট করা থেকে বিরত থাকে। প্রাকৃতিক ও দেশীয় মাছের প্রধান খাদ্য হচ্ছে শামুকের ডিম ও মাংস। বিশেষ করে কৈ, শিং, মাগুর, ট্যাংরা, টাঁকি, শৌল মাছের ডিম থেকে সদ্যজাত পোনার একমাত্র খাদ্য হচ্ছে শামুকের নরম ডিম। আর এ খাবার না পেলে ঐ পোনা মারা যায়। ফলে শামুকের অভাবে দেশীয় মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশীয় মাছসহ নানা প্রজাতির জলজ প্রাণী। অন্যদিকে ম্যাচোফেলিয়া ও মাইক্রোফেলিয়া নামে দু'ধরনের কীট শামুক থেকে খাবার সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে। ঐ দুইটি কীট ধান গাছের ক্ষতিকর পোঁকা-মাকড় খেয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কৃষি খেতের ব্যাপক উপকার করে থাকে। অপরদিকে শামুক নিঃসৃত পানির রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। প্রচলিত রয়েছে ঠান্ডা পাত্রে রক্ষিত শামুক নিঃসৃত পানি যে কোন ধরনের চোখের রোগের জন্য খুবই উপকারী।

শামুক-ঝিনুক পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পরিবেশ সহায়ক এ শামুকের অপরিকল্পিত ও অবাধে নিধন প্রতিরোধ না করলে শীঘ্রই প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ফসল উৎপাদন মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শামুকের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র তৈরী ও সংরক্ষণের এখনই পদক্ষেপ না নিলে এটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই শামুকের অভয়ারণ্য তৈরীর পাশাপাশি শামুক নিধন বন্ধে সকলের সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এই ধারাবহিকতায় নির্বিচারে শামুক নিধন হলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীবজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আসুন আমাদের এই সম্পদ রক্ষায় আমরা সকলে এগিয়ে আসি।