জনশক্তি রপ্তানি জাতীয়করণ, গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল

শওকত আলি
Published : 22 Sept 2012, 05:28 PM
Updated : 22 Sept 2012, 05:28 PM

অবশেষে জনশক্তি রপ্তানি ব্যবসাকে জাতীয়করণ করা হল।সরকার সব সময় বলে আসছে যে তারা কোন রকম ব্যবসা করবে না।করবে কিভাবে,স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত জাতীয়করণ করে যত ব্যবসায় সরকার হাত দিয়েছে সব ব্যবসায় লেজে গোবরে ,হাতে গোবরে, মুখে গোবরে করে ফেলেছে।সরকারি সমস্ত ব্যবসা ছিল লুটেরাদের স্বর্গরাজ্য।আমাদের প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ঘোষনা দিয়ে যাচ্ছেন, মালয়শিয়ায় তিনি কয়েক লক্ষ শ্রমিক পাঠাবেন,প্রতিজন শ্রমিক যেতে খরচ পড়বে মাত্র ৩০/৪০ হাজার টাকা।ক্ষমতার প্রায় চার বছর শেষ,পদ্মা সেতুর মত কোন্ উপদেষ্টার আছরে পড়ে আজ পর্যন্ত ওয়ান পিছ্ শ্রমিকও তিনি পাঠাতে পারেননি।এর আগে তিনি লন্ডন ও কানাডা ভ্রমন শেষে দেশে ফিরে সাংবাদিক সন্মেলনে ঘোষনা দিয়েছিলেন এই দুটো দেশে শ্রমিক পাঠানোর যথেষ্ট সম্ভবনা আছে,এ দুটো দেশের কার সাথে কথা বলে তিনি এই সম্ভাবনার কথা ঘোষনা দিয়েছিলেন সেটা আজও অপ্রকাশিত।সেই সম্ভবনার দুয়ারে এখনও তালা দেওয়া।

অল্প খরচে বিদেশে শ্রমিক পাঠানো নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় ব্যপার ।তবে শুধু মালয়শিয়া কেন,অনান্য দেশ যেমন সৌদি আরব, কুয়েত,কাতার,দুবাই,ওমান,বাহরাইন ইত্যাদি দেশে কম খরচে শ্রমিক পাঠাতে সমস্যা কোথায়। এ দেশগুলো বিশেষ করে সৌদি আরব,কুয়েত,দুবাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার।কুয়েত ও দুবাই ইতিমধ্যে বাংলাদেশী শ্রমিক নেওয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে,সৌদি আরবও প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে,অল্প সল্প যা যাচ্ছে তার জন্য গুনতে হচ্ছে বিশাল অংকের টাকা।সৌদি আরব যেতে এখন মাথাপিছু ছয় থেকে নয় লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগে,কাতার যেতে লাগে ৪/৫ লক্ষ টাকা।তারপরও যাচ্ছে,না গিয়ে উপায় কি দেশে কি কোন কর্মসংস্হান আছে ?এসব দেশ থেকে অল্প সল্প ভিসা যা আসছে তার সবই ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ফল।সরকারের বিন্দুমাত্রও ভূমিকা নেই,মন্ত্রী সাহেব যে সব দেশে জনশক্তি রপ্তানি চলমান সে সব দেশের অভিবাসন ব্যয় কমানোর চেষ্টা না করে এবং যে সব দেশে জনশক্তি রপ্তানি আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসছে সে সব দেশে জনশক্তি রপ্তানি যাতে বন্ধ না হয় তার জন্য কোন প্রচেষ্টা না নিয়ে আজকে প্রায় চার বছর নাকের ডগায় মালয়শিয়া নামক মুলাটা ঝুলিয়ে রাখার রহস্যটা কি?লন্ডন ও কানাডা বিষয়ক সেই আষাঢ়ে গল্পের খবরই বা কি!

জাপানে বর্তমানে প্রচুর পরিমান জনশক্তির চাহিদা আছে ,শ্রমিকের অভাবে তাদের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে আছে,প্রতি বছর তারা বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষাধিক শ্রমিক আমদানি করে এবং জাপানে শ্রমিকদের মুজুরীর পরিমানও অন্যান্য দেশের তুলনায় আকাশ ছোঁয়া।মাসে কমপক্ষে দুই লক্ষ টাকা।জাপান আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ এবং আমাদের দাতা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ অথচ জাপানে শ্রমিক রপ্তানির ব্যপারে তার কোন উৎসাহ নাই,চেষ্টাও নাই। বেসরকরিভাবে কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি উদ্যোগ নিলেও মন্ত্রী সাহেবের অসহযোগিতার কারনে তারা সফল হতে পারেনি।

ইদানিং জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সমিতি "বায়রা"র সাথে মালয়শিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ে মন্ত্রী সাহেব ও বায়রা মুখোমুখি অবস্থানে।বায়রা সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা আর জনশক্তি রপ্তানি করবে না।তারা তা বলতেই পারে,কারন মালয়শিয়ার শ্রম বাজার তাদের প্রচেষ্টার ফল,কোন সরকারেরই এতে কোন ভূমিকা ছিল না।তাছাড়া এর আগে সরকারিভাবে দক্ষিন কোরিয়ায় লোক পাঠাতে গিয়ে একেবারে এমন লেজে-গোবরে অবস্হা হলো যে ঐ দেশের শ্রম বাজারটাই হারাতে হল,কোরিয়ার মুজুরিও ছিল মালয়শিয়া থেকে অনেক বেশী। কোরিয়ার এই শ্রম বাজারটাও ছিল বায়রার চেষ্টার ফল।

মন্ত্রি সাহেব একবার বলেছিলেন ওনাকে নাকি লোকে আদম ব্যপারীর মন্ত্রী বলে তাতে তিনি খুবই লজ্জা বোধ করেন এখন যে নিজেই আদম ব্যাপারী হতে চান এখনকার বোধটা কেমন হবে।
জনশক্তি রপ্তানিতে বর্তমানে যে সব চলমান সমস্যা আছে সে সব সমস্যার সমাধান না খুঁজে শুধু মালয়শিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ে বায়রার সাথে মুখোমুখি কেন,সব দেশেই সরকারি ভাবে লোক পাঠানো উচিত, এটা একটা মহতী উদ্যোগ এবং অবশ্যই প্রসংশনীয়,বায়রা টায়রা বাদ।কিন্তু জনগন বিভ্রান্ত,মন্ত্রী সাহেব শুধু মালয়শিয়ার কথা বলে অন্য কোন দেশের কথা বলে না। অন্য দেশে সরকার নাই?

তবু এদেশের বিদেশ গমনেচ্ছু জনতা খুশী যে আগামি ২/১ মাসের মধ্যে তারা খুব অল্প খরচে মালয়শিয়া যেতে পারবে,চার বছর অপেক্ষা করেছে আর মাত্র ২/১ মাস পারবে না ?
তানজানিয়ায় দীর্ঘ দিন জেল খেটে দেশে ফিরেছ বিশ জন যাত্রী।তাদের গন্তব্য ছিল দক্ষিন আফ্রিকা,দুর্ভাগ্য তানজানিয়ায় আটকে গেল তারা, কিন্তু বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন কি ভাবে পার হলো।তানজানিয়ার কারাগারে আটক বিশজন যাত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য মন্ত্রী সাহেবের কোন মাথাব্যথা ছিল বলে মনে হয় না,সরকারি নয় বেসরকারি সাহায্যে তারা ফিরে আসলো।হাজার হাজার লোক এভাবে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে দক্ষিন আফ্রিকায় পৌছায় আর এদের পাঠানো ডলারে দেশ চলে।দক্ষিন আফ্রিকাতে শ্রমিকের চাহিদা আছে অথচ মন্ত্রী ইংল্যান্ড যান কানাডা যান সেখানে যান না। কর্মসংস্থানের জন্য মানুষ কতটা বেপরোয়া এই বিশ জন কর্মি একটি সামান্য উদাহরন মাত্র।

পাদটীকা: চারটি বছর চলে গেল,এই চার বছরে তিনি দেশকে কি দিলেন,দলকে কি দিলেন এই হিসাব যদি করেন,ফলাফল শুন্য হবে না,মাইনাস হবে।