শওকত আলি
Published : 1 Feb 2013, 12:13 PM
Updated : 1 Feb 2013, 12:13 PM

বর্তমান সরকারের গত চার বছর পদ্মা সেতু,৭১এর মানবতাবিরোধীদের এবং শেয়ার বাজার নিয়ে যত কথা আবর্তিত হয়েছে প্রমত্তা পদ্মার স্রোতও ততটা আবর্তিত হয়নি। সরকারের আর এক বছর হাতে আছে এর মধ্যে মানবতাবিরোধীদের বিচারে কিঞ্চিৎ আশার সঞ্চার হলেও পদ্মা সেতু বিশ্ব ব্যাংকের আইসিইউ'তে অবস্থান নিয়েছে।

সরকারি দলের নেতারা তাদের বাগ্মিতা আর দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সাধুবাদ।স্মার্ট সিদ্ধান্ত।দেশীয় টাকায় যদি পদ্মা সেতু তৈরি সম্ভব হয় তাহলে আমাদের আবুল ভাইদের নিয়ে এত টানাটানি কেন?বিশ্ব ব্যংকের দুয়ারে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে এত ঘোরাঘুরি কেন ? দুদককে দিয়ে এত খোঁজাখুঁজি কেন? টানাটানি-ঘোরাঘুরি-খোঁজাখুঁজি বন্ধ করে শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মান কাজ শুরু করে দিলেই তো হয়। শত্রুর মুখে ছাই মারার এমন স্মার্ট সূযোগ হাতছাড়া করা কি ঠিক হবে? সামনে পুল সেরাত পার হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে না?

এদিকে শেয়ার বাজার লাইফ সাপোর্টে বেঁচে আছে বটে তবে হার্ট-বিট প্রতিদিন কমছে। নিভছে বিনিয়োগকারিদের আশার প্রদীপ। রোড শো করে ডেকে এনে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে ডান্ডা মেরে তাড়িয়ে দেওয়া হলো। ডুবন্ত বাজারে আইপিও ছাড়ার মহা উৎসব শুরু হলো। ন্যাভ, ইপিএস, এর প্রতারনার জালে নতুন করে আটকা পড়লো কয়েক লক্ষ বিনিয়োগকারি। একটার পর একটা আইপিও । শেয়ার বাজারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ সিকিউরিটি এক্সচেন্জ কমিশন। অর্থনীতির চেয়ে অর্থপ্রীতি ভাল বুজেন। এই মরা বাজারে এক সাথে এত আই পি ও ছাড়লে বাজার যে লন্ডভন্ড হয়ে যাবে তা অনুধাবন করার যোগ্যতা কি তাদের নেই? আইপিও ছাড়, টার্নওভার বাড়াও স্মার্ট সব সিদ্ধান্ত।হউক না ক্ষূদ্র বিনিয়োগকারিদের জন্য অশ্বডিম্বপ্রসবকারি, ব্রোকার হাউজদের জন্য তো স্বর্ণডিম্বপ্রসবিনি।কত হাজার কোটি টাকা পুঁজি বাজার থেকে বেরিয়ে গেল ব্রোকার হাউজদের কমিশন হিসেবে? ডিএসসি, সিএসসি, বিনিয়োগকারি নামক সোনার হাঁসদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে সফটওয়্যার বদলায়,সূচকের হিসাব বদলায়,টেলিভিশনের টক শোতে অমৃত বচন ছড়ায় এখনি নাকি বিনিয়োগের শ্রেষ্ঠ সময়!!হেভি স্মার্ট।এই শ্রেষ্ঠ সময়ের বর্তমান বাজারে ব্রোকার হাউজ মালিকদের বিনিয়োগ কত? প্রায় বিনে পয়সার ব্রোকার লাইসেন্সের দাম এখন প্রায় শত কোটি টাকা,কত লক্ষ বিনিয়োগকারির রক্তের দাম? বিনিয়োগকারিদের নাম পর্যন্ত পরিবর্তন করা হয়েছে! তবে আকিকা ছাড়া। সারা শেয়ার বাজারে পরিবর্তনের হাওয়া,বিনিয়োগকরিদের পরিবর্তনে গর্তমুখি প্রবণতা অব্যাহত থাকলেও অন্য সবার পরিবর্তনে আকাশমুখি প্রবণতা। স্মার্ট পরিবর্তন!

পুলিশ কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করতে বিরোধী দলীয় হুইপকে বেধড়ক পিটুনির ব্যপারটাও বিবেচনায় রাখা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রির বক্তব্য!শেষ বছরের প্রথম সরকারি স্মার্ট বক্তব্য।
রাজনৈতিক দলের জোট,ভোটের জোট, অর্থ লোপাটে জোট, নিরীহ পথচারি হত্যায় জোট!

ইদানিং ধর্ষনেও জোট। বিপর্যস্ত মনুষত্য।

যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় হয়েছে। আমরা খুশীতে গদগদ অথচ আমাদের লজ্জা পাওয়ার কথা কারন দীর্ঘ ৪২ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে এমন একটি রায়ের জন্য। দীর্ঘ ৩৮ বছর একটি স্বাধীন দেশের মাটিতে স্বাধীনতা বিরোধী এই রাজাকার-আলবদরদের সদম্ভ পদচারনা আমাদের সইতে হয়েছে।জাতি হিসেবে আমরা মোটেও স্মার্ট নই।

জামাত-শিবির সারা দেশে গুপ্ত আক্রমন শুরু করেছে,হঠাৎ আক্রমন করে পুলিশ পেটায়, গাড়ী পোড়ায়।অবশ্য এসব করতে এরা সিদ্ধহস্ত। ওদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ঐ টুকুই।এরা নির্বাচনের মাঠে কল্কে পায় না, এসব চোরা-গুপ্তা আক্রমন ছাড়া এদের উপায় আছে কি?জন্মের পর থেকেই এরা পরজীবি, অন্যের কাঁধে ভর দিয়ে চলতে চলতে নিজেদের পায়ের জোর অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে। ফখরুদ্দিন,মাঈনউদ্দিনের আমলে এরা তাদের গঠনতন্ত্র থেকে "আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন" জলাঞ্জলি দিতে মোটেও কার্পন্য করেনি। ইদানিং "খোদা ভীরু"তে টান পড়েছে, তাতে অবশ্য তাদের কোন প্রকার অসুবিধা আছে বলে মনে হচ্ছে না । এদের দরকার ইসলামের নামে ব্যবসা, সেটা তাদের ভালই চলছে। তারা জিহাদের জন্য হুংকার দিতে রাজী, রক্ত দিতে রাজী না! স্মার্ট জিহাদি ব্যবসা।

জামাত-শিবির কোন রাজনৈতিক দল নয় একটি ওভার স্মার্ট ব্যবসায়ি দল!