মানুষের গল্প
ক্লাস ফাইভের মুখেই ছেলেটা পশ্চিমের পুকুরে ঝাঁপ দিল
সকালে উনুনের ছাই দিয়ে দাঁত মাজতে ঘাটে গিয়ে
বাসন্তিদি দেখল তার লাশ
জলের ওপর ভাসছিল লাল শার্টের পাল
চিৎকারে ছুটে এলো বাড়ি
ছুটে এলো পাড়া
আগের দিন দুপুরে এ বাড়ির ছোট ছেলের মুসলমানি ছিল
আগের দিন দুপুরে ছেলেটার ছোট ভাইয়ের মুসলমানি ছিল
চারদিকে কত রং আনন্দ কোলাহল
মানুষে মানুষ মশগুল
ওর হয়নি মুসলমানি
ও মুসলমান হতে চেয়েছিল বাবার কাছে
বাবা বলল, মার কাছে যা
মার কাছে গেলে মা কেবলই কেঁদেছিল
বুকে জড়িয়ে ধরে
কান্নার কারণ খুঁজতে খুঁজতে
মুসলমান হতে না-পারার কারণ খুঁজতে খুঁজতে
ছেলেটা শেষতক মুখরা মালতিবুর কাছে জানতে পেরেছিল শেষবিকেলে
ও ছেলে নয়
ও মেয়ে নয়
মালতিবু হাসতে হাসতে আঙুল তুলে বলেছিল
তোর কী করে মুসলমানি হবে
তোর তো নুনুই নেই
সন্ধে হতে না হতেই উপহাসের একটা আঙুল
পরিহাসের সহস্র অঙ্গুলি হয়ে ওকে খোঁচাতে লাগল
রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ও নিজেকে হাতড়ে দেখতে চেয়েছিল
ও তাহলে কী
বুঝতে চেয়েছিল
ও তবে কেমন মানুষ
ছোট ভাইয়ের খুলে রাখা নতুন লাল জামাটা ঝুলছিল আলনায়
আলগোছে গায়ে দিয়ে
ও ঘুমন্ত ঘর থেকে বার হলো খোলা পৃথিবীতে
যেখানে মাছি আর মৌমাছি উড়ে বেড়ায়
একই বাগানে
আকাশে ভোরের রাঙা সূর্য ওঠার আগেই
বাতাসে ঝলকে উঠল ওর রক্তিম শার্ট
দুহাত বাড়িয়ে দিল পুকুর
অন্তিম জবাব দিল জল
ওরে তোরা মানুষের গল্প বল
স্বরূপের সন্ধানে
সকালের পথে বৃষ্টি কুয়াশা রোদ
নিবিড় হ্রদের জল নির্জনে কাঁপে
একটি সন্ধে অপলক নির্বোধ
আরশিনয়ন ছায়া ফেলে সন্তাপে
নোনা পিপাসায় রূপ তার বঞ্চনা
বাতাস বাদাম তুলে দেয় পুবদিকে
তিলফুল নাকে ঘামের শিশিরকণা
তার ছোঁয়া ছাড়া জীবনের রং ফিকে
তার খোঁজ পেয়ে আমি দেই পথ পাড়ি
সোনাপাখি মন মেলে চঞ্চল পাখা
কপালের লাল টিপ বড়ো বাড়াবাড়ি
তার নদী চাঁদ হাসি কথা সব বাঁকা
ঘুম ঘুম রাত শুয়ে থাকে আঙিনায়
নাজুক স্বপ্ন লাজুক ঘোমটা তোলে
ভোর কড়া নাড়ে ঠিক সাড়ে পাঁচটায়
বেহিসেবি দিন অলক্ষে সব ভোলে