উপমহাদেশের রাজনীতি এবং একটি বাঘের গল্প

শুভাশীষ চৌধুরী
Published : 27 May 2012, 03:32 PM
Updated : 27 May 2012, 03:32 PM

উপমহাদেশের রাজনীতি নিয়ে প্রায়ই তর্কে মেতে উঠতে দেখা যায় বিজ্ঞজনদের। উঠে আসে সীমানা, করিডোর, জঙ্গী, আল কায়েদা, কাশ্মীর ইস্যু ইত্যাদি। একদিন আমাকে একজন একটি গল্প বললো। শুনে খুবই মনপুতঃ হলো। ছোট্টো একটা গল্প কত সুন্দর করে একটি বিশাল সমস্যা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

একবার এক বাঘের দল একটি বন দখল করে নিল। সেই বনে কুকুর, শিয়াল, বিড়ালসহ অন্নান্য প্রানীকুল বসবাস করতো। দীর্ঘদিন পার হওয়ার পর একসময় ওই বনের প্রানীকুল বাঘের দুঃশাসনের প্রতি ধিক্কার জানাতে লাগলো। এবং তাদের বন ছেড়ে চলে যেতে বললো। বাঘের রাজা শেষ পর্যন্ত চলে যেতে রাজী হলো। একদিন বাঘেরদল কুকুরশেয়ালদেরকে নিমন্ত্রন করে একসাথে বসিয়ে যারপরনাই আদর অভ্যর্থনা করলো এবং বিদায়সূচক কথাবার্তা বলতে লাগলো। ওই বনের প্রাণিকুলের সবাই তাদের বিদায়ী শুভেচ্ছাও জানালো।

বন ত্যাগ করার পূর্বে বাঘের রাজা গোপনে শিয়াল সম্প্রদায়কে ডেকে আনলো। এবং বললো "দেখো শিয়াল এই বন শাসন করার আমার আর বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই। শাসনভার আমি তোমাদের হাতে সঁপে যেতে চাই কারন কুকুরের উপর আমি কোনো আস্থা নাই। কিন্তু সমস্যা হলো তোমার লেজ কুকুরের মতো বাঁকা না, সোজা। লেজ বাঁকা না থাকলে রাজত্ব করতে অসুবিধা হবে। শিয়াল চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, "মহারাজ! তাহলে উপায়?"। ……… "উপায় আছে। সেটা হলো লেজ বাঁকা করার জন্য প্রতিদিন কচি কুকুরের চর্বি সকাল-বিকাল লেজে মাখতে হবে। শিয়ালরা ব্যস্ত হয়ে বললো, "মহারাজ আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, লেজ বাঁকা করার ব্যবস্থা আমরা করছি। কিন্তু একটি অনুরোধ, আমাদের লেজ বাঁকা না হওয়া পর্যন্ত আপনি রাজত্ব ছাড়বেন না। "বাঘেরা শিয়ালের প্রস্তাব নাকচ করলো এবং বললো সবার চক্ষুসুল হয়ে তারা আর থাকতে চায় না। কিন্তু শিয়াল এর পীড়াপিড়িতে বাঘেরদল পরে রাজী হলো। শিয়ালদল খুশী হয়ে চলে গেলো।

পরদিন বাঘেরা গোপনে কুকুর সম্প্রদায়কে ডেকে আনলো এবং বললো, " দেখো কুকুর এই বন শাসন করার আমার আর বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই। শাসনভার আমি তোমাদের হাতে সঁপে যেতে চাই কারন শিয়ালের উপর আমার বিন্দুমাত্র ভরসা নাই। কিন্তু সমস্যা হলো তোমার লেজ বাঁকা। লেজ সোজা না হলে শাসন করতে অসুবিধা হবে। কুকুরদল চিন্তিত হয়ে বললো, "মহারাজ তাহলে উপায়?" বাঘরাজা উৎসাহী হয়ে বললেন, "উপায় আছে। সেটা হলো লেজ সোজা করার জন্য প্রতিদিন কচি শিয়ালের চর্বি সকাল-বিকাল লেজে মাখতে হবে। কুকুরেরা ব্যস্ত হয়ে বললো, "মহারাজ আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, লেজ সোজা করার ব্যবস্থা আমরা করছি। কিন্তু একটি অনুরোধ, আমাদের লেজ সোজা না হওয়া পর্যন্ত আপনি রাজত্ব ছাড়বেন না।" বাঘেরা কুকুরের প্রস্তাব নাকচ করলো এবং বললো সবার চক্ষুসুল হয়ে তারা আর থাকতে চায় না। কিন্তু কুকুরদের পীড়াপিড়িতে বাঘেরদল পরে রাজী হলো। কুকুরদল খুশী হয়ে চলে গেলো।

এরপর ক্ষমতার লোভে কুকুরদল আর শিয়ালদল পরস্পর যুদ্ধে জরিয়ে পরলো। প্রতিদিন শত শত কুকুর শিয়ালের বাচ্চা মরতে লাগলো। উভয়েই উভয়ের চর্বি লেজে লাগাতে লাগলো। কিন্তু কুকুরের লেজও সোজা হয়না, শিয়ালের লেজও বাঁকা হয়না।

এদিকে কুকুর শিয়ালের মারামারির সুযোগ নিয়ে দাঙ্গা বন্ধের উসিলায় বাঘেরা তাদের চেলাচামুন্ডাসহ বনটিকে আলাদা কয়েকটি ভাগে ভাগ করে কুকুরের শিয়ালের দীর্ঘদিনের সহাবস্থান ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতি টানলো এবং প্রভু হিসাবে নিজেদের অবস্থান আরো পাকাপোক্ত করলো। এখন বাঘদলের পোয়াবারো, সে পূর্বের চেয়ে আরও শান্তিতে রাজত্ব করছে।

উপমহাদেশে কখনো জাতপাতের বিচার ছিলনা, হিন্দু-মুসলমান সবাই ছিলো সমান। একথা সবাই জানে। ব্রিটিশ আমল থেকেই কেনো এই ধর্ম বিদ্বেষ এর সুত্রপাত তা আমরা উপরের গল্প থেকেই বুঝতে পারি। ব্রিটিশ কি আদৌ এই উপমহাদেশ ছেড়ে চলে গেছে? কে দেবে এই উত্তর?