যৌনকর্মী! না না, তারা এই সমাজ ও সমাজপতি এবং অতিশয় ভদ্দরনোকদের দৃষ্টিতে বেশ্যা, পতিতা, বারবনিতা, দেহপসারিণি কিংবা খানকি, ছিনাল, মাগি- এর ‘চে বেশি কিছু নয়। কারণ, সে একাধিক পুরুষের সাথে বিছানায় যায়, যখন-তখন অল্প-বিস্তর টাকার জন্য নিজ দেহটাকে বিলিয়ে দেয়। যা সমাজ স্বীকৃত নয়। যা সমাজের দৃষ্টিতে বেশ্যাবৃত্তি। এরা তথাকথিত ভদ্দরনোকদের দৃষ্টিতে কুলটা, নষ্টা, পথভ্রষ্টটা নর্দমার কীট। সমাজ এদের ধুর ধুর করে তাড়িয়ে দেয়। সমাজে এদের ঠাঁই নেই। এই সমাজ তাদের জন্য নয়। এই সমাজ অতি সুশীল ভদ্দরনোকদের।
বেশ। এসব কিছুই মেনে নিচ্ছি। এদেরকে সমাজে ঠাঁই দেয়ার দরকার নেই। কী দরকার তাদের মত নষ্ট-ভ্রষ্টদের? তার ‘চে বরং এদের আস্তা-কুড়ে ফেলে দেয়া হোক। আমিও এর সাথে একমত, তবে এর আগে আমাকে কিছু উত্তর দিতে হবে। এবং তাদেরকেও সমাজচ্যুত করতে হবে। চিহ্নিত করতে হবে তাদেরও। এখন প্রশ্ন করতে পারেন, কাদের?
আজ যারা আপনাদের দৃষ্টিতে বেশ্যা বা পতিতা, তারা কি করে এমন হল? কারা যাচ্ছে তাদের কাছে? নিশ্চয় কোন নারী নয়। অবশ্যই পুরুষ? ধরা যাক, একজন যৌনকর্মী যদি পাঁচ বছর এ পেশায় থাকে, তবে তার খদ্দের প্রতিদিন কম করে হলেও ৭ থেকে ৮ জন। সে হিসেবে ১ মাস তথা ৩০ দিনে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ২ ‘শ ১০ থেকে ২ ‘শ ৪০ জনে? এ হিসেবে ১ বছর তথা ৩ ‘শ ৬৫ দিন তথা ১২ মাসে এর সংখ্যা দাঁড়াবে ২ হাজার ৫ ‘শ ২০ জন থেকে ২ হাজার ৮ ‘শ ৮০ জনে? আর আমাদের মোট হিসেব ৫ বছরে এ সংখ্যাটা দাঁড়াবে ১২ হাজার ৬ ‘শ থেকে ১৪ হাজার ৪ ‘শ জনে? অর্থাৎ, একজন যৌনকর্মীর বিপরীতে এত সংখ্যক পুরুষ! মানে নষ্ট পুরুষ। বেশ্যার বিপরীত লিঙ্গ।
এবার আসি একটু যোগ বিয়োগে। আমরা জানি, বাংলাদেশে মোট যৌনকর্মীর সংখ্যা ৭৪ হাজার ৩ ‘শ (সর্বশেষ জরিপ – নভেম্বর ২০১১) জন। তাহলে এত সংখ্যক যৌনকর্মীর বিপরীতে উপরোক্ত হিসেব মতে কতজন পুরুষ খদ্দের হয়? এ হিসেব মতে (৫ বছর) মোট সংখ্যাটা দাঁড়াবে ৯৩ কোটি ৬১ লক্ষ ৮০ হাজার! তবে এর অর্থ কী দাঁড়ালো? বাংলাদেশে যে সংখ্যক যৌনকর্মী আছে তার থেকে ১০ গুণ বেশি পুরুষ খদ্দের, তাই তো?
তাহলে একজন নারী তথা যৌনকর্মী যে দোষে দোষী সে একই দোষে কী একজন পুরুষ তথা খদ্দের পুরুষ দোষী নয়? অবশ্যই দোষী। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে এ সংখ্যক পুরুষ কী করে সমাজ-সংসারে ঠাঁই পায়? যদি তারা সমাজ-সংসারে ঠাঁই পায়, তবে যৌনকর্মীরা কেন সমাজচ্যুত হবে? ধর্মীয়ভাবে এসব নিষিদ্ধ, তাই যৌনকর্মীরা সমাজচ্যুত? সব দায় তবে নারীর একারই! পুরুষের কী কোন দায় নেই? তার জন্য কী ধর্মানুভূতি অঘাতপ্রাপ্ত হয় না?
এবার আসি একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে। লালন ফকির বলেছিলেন, ‘গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায় তাতে ধর্মের কী ক্ষতি হয়’? হ্যাঁ, গোপনে গোপনে যারা যৌনকর্মী লালন-পালন করছেন, যারা তাদের দিয়ে টাকা রোজগার করে গাড়ি-বাড়ির মালিক হচ্ছেন, তারা কিন্তু এই সমাজেরই সমাজপতি (!) হয়ে আছেন। এই সমাজ কিন্তু তাদের অঙুলি হেলনেই হেলে আর দুলে। অথচ তাদের কোন ক্ষতিই হয় না। তাদের ধর্মেরও কোন ক্ষতি হয় না। তাদের কোন দোষও নেই!
কে তারা? কেমন তারা? কী ভাবে তারা গোপনে গোপনে বেশ্যার ভাত খায়? এবার আসুন লালন ফকিরের গানে ইংগিত করা সেই গোপনে বেশ্যার ভাত খাওয়া মানুষদের সাথে একটু পরিচয় হয়ে নিই। জেনে নিই কী ভাবে কী ভাবে তারা এই সমাজে যৌনকর্মীদের মাধ্যমে নিজেদের পকেট ভরছে আর রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে?
বর্তমানে বাংলাদেশে ৮ থেকে ১০টি (সম্ভবত) যৌন-পল্লী রয়েছে (যদিও আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক যৌন-পল্লী বৈধ)। আর এসব যৌন-পল্লীগুলো এমনি এমনিই টিকে নেই। এর পিছনে ক্ষমতাসীন নেতা-কর্মী, মাস্তান, পুলিশ এমনকি জনপ্রতিনিধিদের আশীর্বাদ রয়েছে। বিনিময়ে এখান থেকে এই শ্রেণী মাসোয়ারা পেয়ে থাকেন। এসব মাসোয়ারায় এরা বিলাসিতা করে, কেউ সংসার চালায়, কেউ বাড়ি করে, কেউ আবার গাড়িও কিনে।
আবার, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে অসংখ্য আবাসিক হোটেল আছে যেখানে যৌনকর্মীদের উপর নির্ভর করেই এসব আবাসিক হোটেলগুলো দাঁড়িয়ে আছে। এখানেও চলে যৌন ব্যবসা। যদিও আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক যৌন-পল্লী বৈধ। কিন্তু, হোটেলগুলো তো একেবারেই অবৈধ! তাহলে এবার আমায় বলুন তো, এসব আবাসিক হোটেলে কী ভাবে যৌন ব্যবসা হচ্ছে? পুলিশ প্রশাসন কী এসব জানে না?
হ্যাঁ, পুলিশ জানে। এদেশের কোথায় কী হচ্ছে তা সবই পুলিশ জানে। আবাসিক হোটেলগুলোতে কী হয় (?) সে খবরও পুলিশ রাখে। তবে ওভার লুক করে যায়। বিনিময়ে তারা পেয়ে থাকেন মাসোয়ারা। আর তাদের ওভার লুক করার পিছনের কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক। কেন না, এসব ব্যবসা থেকে ক্ষমতাসীন দলের (যখন যে সরকার আসে) ছিচকে নেতা থেকে ধরে হাই প্রোফাইল নেতারাও ভাগ-বাটোয়ারা পেয়ে থাকে! যার কারণে সগৌরবে আবাসিক হোটেলের অন্তরালে যৌন ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে।
এবার আসুন যে সমস্ত আবাসিক হোটেলগুলোতে এমন ব্যবসা চলে আসছে, সে হোটেলগুলোর মালিক কী কোন যৌনকর্মী? না। এরা সমাজের কোটিপতি। অঢেল সম্পদের মালিক। এদের মধ্যে কেউ হাজী কেউ আবার আলহাজ্ব। কেউ জনপ্রতিনিধি কেউ আবার মসজিদ, মন্দির কমিটির নেতা! তাহলে কী এবার জানলেন তো, লালন ফকিরের কথায় গোপনে বেশ্যার ভাত খাওয়া লোক কারা? অথচ এরা সমাজে নিষিদ্ধ নয়! এরা সমাজপতি হয়! এরা জনপ্রতিনিধি হয়! এরা সংসদে যায়! এরা আইন প্রণেতা হয়! এরাই হাজী আর আলহাজ্ব হয়ে ফতোয়া জারি করে সমাজচ্যুত করে যৌনকর্মীদের! এরাই যৌনকর্মীদের ললাটে বেশ্যা, কুলটা, খানকি, ছিনাল, মাগির তিলক এঁটে দেয়! এরা এই সমাজে নিষিদ্ধ নয়। এরাই সমাজ নিয়ন্ত্রক!
এবার কেউ কেউ বলতে পারেন, ‘আমি কী তবে যৌন ব্যবসাকে সমর্থন করি’? হ্যাঁ, আমি সমর্থন করি। সমর্থন এ জন্য করি যে, এই সমাজে আমার মত কিংবা আপনার মতো অথবা অন্য কোন পুরুষ দ্বারায় এরা যৌনকর্মী হয়, হতে বাধ্য হয়। কেন না, কোন নারীই চায় না যৌনকর্মী হতে। প্রতিটি মেয়েই শিশুকাল থেকে স্বপ্ন দেখে একটি সুন্দর ঘর আর সুন্দর বরের। তারপরও এরা এই অন্ধকার গলিতে কেন (!) সে প্রশ্ন কী কখনো আমরা আমাদের করেছি? তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে, যৌনকর্মী তৈরির কারিগর আমরা পুরুষরা অথবা এই সমাজ?
আমিও চাই এই অন্ধকার গলিতে আর কোন মেয়ে না আসুক। আর কেউ যৌনকর্মী না হোক। এটা বললে মুখের কথাই হবে। বাস্তবতা ঠুঁটোজগন্নাথ। কেন না, আমরা মুখে যত বড় বড় কথাই বলি না কেন, এই সমাজের সিস্টেম ভাঙতে পারি না। সিস্টেম ভেঙে কোন যৌনকর্মীকে সমাজ-সংসারে ঠাঁই দিতে পারি না। এতে করে আমাদের জাত যায় যায় বলে চিৎকার করি। আবার এই আমরাই বিভিন্ন সভা সেমিনারে তাদের জন্য মায়াকান্না কেঁদে বুক ভাসাই! সত্যি, বড্ড বিচিত্র সেলুকাস।
নুর ইসলাম রফিক বলেছেনঃ
মন্তব্য ০ পঠিত ৪৪১৫৪
সত্যি অবাক বিষয়।
যেখানে মন্তব্য ০ সেখানে পাঠক ৪৪১৫৪ জন।
সত্যি অবিশ্বাস। যদিও সত্য।
নিতাই বাবু বলেছেনঃ
সম্মানিত নুর ইসলাম রফিক দাদা, বর্তমান পঠিত ৬০৮০৯ ৷ এই পাঠক সংখ্যার করিকর হলো সয়ং বিডি নিউজ২৪ ৷ ফেসবুকে দেখলাম, বিডি নিউজ থেকেই এই পোস্টখানার সরাসরি সম্প্রচার ৷ তাই এত পাঠক সংখ্যা দাদা, অবাক হবার কিছুই নেই ৷ যদি পারেন ওনার মত আপনিও পতিতাবৃত্তি নিয়ে কিছু লিখুন, পাঠক পাবেন আশা করি ৷ ধন্যবাদ দাদা শুরু করে দিন তাড়াতাড়ি করে ৷
সীমান্ত প্রধান বলেছেনঃ
নিতাই বাবু, একটু রেগে গেলেন মনে হচ্ছে! বিডি নিউজ ব্লগে লিখছি গত 5 বছর ধরে। আর আমি দেখেছি, তারা ব্লগের লেখাগুলো নিয়মিতই ফেসবুক পেইজে দিয়ে থাকেন সে আমার কি আপনার, এমন বাছ বিচার তারা করেন না।
আপনার নারায়ণগঞ্জ ময়লা আর যানজট নিয়ে লেখাটাও কিন্তু ফেসবুকে দিয়েছেন। তার মানে আপনার লেকার প্রচারও তারা চালিয়েছে, সে ক্ষেত্রে আপনি এতটা পাঠক পাননি কেন?
পতিতাবৃত্তি কেবল নয়, আমি সকল বিষয় নিয়েই লিখে। আপনিও লিখুন সমাজ, সংসার, অধিকার, মানবতার পক্ষে। দেখবেন আপনার লেখাতেও এর থেকে বেশি সংখ্যক পাঠক পাবেন।
ভালো থাকুন। শুভ কামনা সতত
নিতাই বাবু বলেছেনঃ
সম্মানিত সীমান্ত দাদা, আমি’তো রেগে যাইনি ৷ আমি সম্মানিত নুর ইসলাম রফিক দাদাকে বুঝিয়ে দিলাম যে, অবাক হবার কিছু নেই ৷ কিছু কিছু লেখা বিডি নিউজ সয়ং ফেসবুকে শেয়ার করে, যেই লেখাগুলো বিডি নিউজ শেয়ার করে সেই লেখার পাঠক সংখ্যা হয় বেশি ৷ রেগে যাওয়ার মত মন-মানসিকতা আমার নেই দাদা ৷ ধন্যবাদ দাদা ভালো থাকবেন ৷
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
এত রিডিং পোষ্টে আসছে অথচ আমাকে আর ম্যাডামকে কেউ ধন্যবাদ দেয় না!
—- আফসুস!
http://blog.bdnews24.com/sukantaks/187708
জুলফিকার জুবায়ের বলেছেনঃ
আমি ফাঁকা মাঠে গোল দেবার মানসিকতা নিয়ে আপনার পোস্টে হাজির হয়েছি। ( ক্রমশ)
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
আর আমি কি গোলপোষ্টের বাইরে বসে থাকবো? [চলবে]
জুলফিকার জুবায়ের বলেছেনঃ
আপনি মিডফিল্ডার হবার জন্য উপযুক্ত। গোলপোষ্টের বাইরে বসে, দর্শক* হয়ে, নিজেকে অপচয় করার দরকার কি! এর চেয়ে ভালো ওস্তাদকে স্ট্রাইকার করেন, তারপর পিছন পিছন থাকেন। তিনি গোল বানালে, আপনি যেয়ে টোকা দিয়েন।
( * ইদানীং দর্শকের অভাব নাই।)
জুলফিকার জুবায়ের বলেছেনঃ
সীমান্ত ভাই
অনেক দিন পর আপনার সাথে বাক্য বিনিময় হচ্ছে। কেমন আছেন? আশা করি ভাল আছেন।
আপনি সমাজকে খুব সঙ্গত কিছু প্রশ্ন করেছেন, যদিও সমাজের জন্য সেগুলো বিব্রতকর। সাথে আমিও আরও কিছু প্রশ্ন যুক্ত করে সমাজকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছি। সমাজ রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে যাবে, সে প্রত্যাশা করছি না। তবে সমাজ ধীরে ধীরে কিছুটা হলেও সংশোধিত হবে, সেই আশা করছি।
জুলফিকার জুবায়ের বলেছেনঃ
এখানে যা ঘটে তা হলো ‘আনন্দের বিনিময়ে টাকার লেনদেন’। বিষয়টা দু’জনের জন্যেই অনেক সুখের। এখানে একজন আনন্দের বিনিময়ে টাকা নিচ্ছে, এবং অপর জন টাকা দিচ্ছে। যে টাকা দিচ্ছে তার কোন অপরাধ* ধরা হচ্ছে না, এবং যাকে টাকা দেয়া হচ্ছে তাকে অপরাধী করা হচ্ছে।
এবার দাতা এবং গ্রহীতার অবস্থান পরিবর্তন করা যাক। লোকমুখে শোনা কিছু কথার দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক।
ধরে নেয়া যাক, নারীদের প্রচেষ্টায়, উপরের ঘটনাটি সমাজে বহুল প্রচলিত হয়ে গেছে! আর তখনও যদি দেখা যায়,ঘটনাটিতে টাকার যোগানদাত্রী হওয়া সত্ত্বেও নারীদের অপরাধী করা হচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে সমাজ আসলেই বিভ্রান্তিকর। আর যদি দেখা যায়, নারীকে না, সেক্ষেত্রে পুরুষকেই অপরাধী করা হচ্ছে, তবে বুঝতে হবে, এটাই (পরিবার, রাষ্ট্র এবং ) সমাজের ধারা, ‘যার যত টাকা, যার যত ক্ষমতা, তার তত কম অপরাধ’।
(তখন) প্রশ্ন আসতে পারে,
জুলফিকার জুবায়ের বলেছেনঃ
১ম তথ্যটিকে ভিত্তি করলে বলা যায়, ‘কাম’ নামক সেবাটির বিনিময়ে টাকা লেনদেন করা অপরাধ, এবং অবশ্যই তা নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্য সমান অপরাধ।
(সমাজকে বিবেচনায় না নিয়ে) ২য় তথ্যটিকে ভিত্তি করলে বলা যায়, ‘কাম’ বিক্রয়যোগ্য, এবং নারী কিংবা পুরুষ যে-ই এটি ক্রয়-বিক্রয় করুক না কেন, তা কোন অপরাধ নয়।
সীমান্ত ভাই
উপরের তথ্য দু’টি সাংঘর্ষিক। এ বিষয়ে আপনার সদয় মতামত প্রত্যাশা করছি।
সীমান্ত প্রধান বলেছেনঃ
জুলফিকার জুবায়ের ভাই, অনেকদিন পর আসলাম। ভালো লাগছে আপনার বিশ্লষণধর্মী ও প্রশ্নবোধক অতি চমৎকার একটি মন্তব্য পেয়ে। যা সত্যি আমার জন্য বিশেষ কিছু প্রাপ্তি। এমন আলোচনা বা সমালোচনাই একটি লেখার সার্থক উপাদান। এর থেকে অনেক কিছু জানা যায়, বোঝা যায় সর্বপোরি অনেক কিছু আদান-প্রদান ও শিক্ষা গ্রহণ করা যায়। আমি বরাবর এমন কিছুই আশা করি, হোক তা আমার লেখার বিরুদ্ধে। গঠনমূলক আলোচনা আমরা সবাই করতে পারি না। দায়সারাভাবে এক চোক্ষা হরিণের মতোই কিছু বলে বাহবা আদায় করতে চাই, সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আপনি। যাহোক, এবার আপনার মন্তব্যের জবাবে আসা যাকঃ
প্রথমত সমাজ কখনোই এগিয়ে আসতে পারে না। আমরা সমাজের দোষ দিই। আসলে সমাজ কী? কারা এর নিয়ন্ত্রক? নিশ্চয় আপনার মতো, আমার মতো কেউ? তাহলে ব্যক্তি এগিয়ে আসলেই সমাজ পরিবর্তন সম্ভব, নয় তো আমরা যা-ই লিখি, বলি তার কোন কাজ হবে না।
কেউ টাকা দিচ্ছে আর কেউ টাকার বিনময়ে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হচ্ছে। এটা হচ্ছে প্রয়োজন, জৈবিক প্রয়োজন। ভাত, ডাল, চা সিগারেট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়াদির মতো যৌনতাও একটা চাহিদা। এ ক্ষেত্রে উভয়ের সিদ্ধান্তে কিছু হলে (যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়) আমি এখানে পাপ বা দোষনীয় কিছু দেখি না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এক পক্ষ কেন দোষী হবে? দোষী যদি করা হয়, তবে উভয় পক্ষকেই করা হোক। সমাজচ্যুত করতে হলে উভয়কে করা হোক। নয় তো খদ্দেরের মতো যৌনকর্মীদেরও সমাজ সংসার, আইন, আদালত, পার্লামেন্ট দেয়া হোক।
গুলশানের যে কথাটা আপনি উদহারণ হিসেবে তুলে এনেছেন, তা গুজব বৈ বাস্তবতা নয়। এর কোন ভিত্তি আপনি পাবেন না। আমি একজন সংবাদকর্মী হিসেবে এটুকু আপনাকে নিশ্চিত করছি। এবার আপনি বলুন তো ভাই, কোন নারী যদি চায় সে এক বা একাধীক পুরুষকে একদিনে বিছানাতে নিয়ে আসবে, সে কি তার পক্ষে সম্ভব কি না? সম্ভব। কারণ, এই সমাজে অনেক পুরুষ আছে নারীর এক ইশারায় সাত পাচ না ভেবে ছুটে আসে। তুলনা মূলকভাবে এমন পুরুষের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। সম্ভবত আমিও এর থেকে বাদ যাব না। সুতরাং গুলশানের কথার কোন ভিত্তি নেই।
আর হ্যাঁ, যৌন ব্যবসা এটা পুরো বিশ্বেই প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে। এটা চাহিদা। আর চাহিদা যেখানে আছে, সেখানে সরবারহ থাকবেই। তাই এটাকে কোনক্রমেই বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে এর পরিবর্তন আনা সম্ভব। যেমন, যৌনকর্মীরা একসময়, জুতো পায়ে হাঁটতে পারত না, মারা গেলে কবর পেত না। কিন্তু এখন তারা এগুলো পায়, পারে। আর সেটি হয়েছে আপনার আমার মতো কিছু ব্যক্তির আন্দোলনের ফলে। একই রকমনভাবে আগে তাদের বলা হত পতিতা বা বেশ্যা। এখন কিন্তু কিছুটা পরিবর্ত হয়ে এর নামকরণ করা হয়েছে যৌনকর্মী। অর্থাৎ কর্মী যুক্ত করা হয়েছে। অর্থ হচ্ছে, এটা অন্য আট দশটি পেশার মত একটি পেশা। এখন দরকার শুধু আইনী স্বীকৃতি। আর তা হলে এরাও খদ্দেরদের মতই কিছুটা হলেও স্বাধীনতা বা সম্মানিত হতে পারে।
ভালো থাকবেন ভাই। ধন্যবাদ
জুলফিকার জুবায়ের বলেছেনঃ
সীমান্ত ভাই, প্রশ্নগুলো ছিল সমাজের জন্য। কিন্তু সমাজের হয়ে উত্তর দিলেন আপনি — আমার জন্য বড় একটি প্রতিমন্তব্য হয়ে গেল! অবশ্যই ধন্যবাদ জানবেন।
পুনশ্চঃ প্রিয় নিতাই দা এবং নুর ভাইয়ের কারণে আমার ফাঁকা মাঠে গোল দেয়া হলো না¡
রোদেলা নীলা বলেছেনঃ
পতিতা বৃত্তি বহু যুগ আগ থেকেই একটা পেশা। কেন এটাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি রকম ন্যাকামো করা হয় তা আমি বুঝিনা।যে মেয়েগুলো ভাগ্যের দোষে এখানে চলে এসেছে রাষ্ট্র কি তাদের জন্য কাজের কোন সুযোগ দেবে ?দেবে না।বেশ্যা বলে তাদের গালি দেই আমারা,কিন্তু যারা বেশ্যালয়ে যায় তাদের কোন নাম নেই।সেই সব ভদ্দরনোক ওখানে আয়েশ না করলে মেয়েগুলার পেটে ভাত্টাও জুটবে না ,এটাও নির্মম সত্য।
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
জুবায়ের ভাই, গুলশানে ছেলেরা বিক্রি হয়, তাদের আলিশান গাড়ীতে ‘ইশারা করে’ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, ‘মাল’ খরিদ করণে কে লিয়ে!- এ বাত ঝুঠ হ্যাঁয়! হাম নেহী মানতা!
আমি সেই ২০০২ সাল থেকে এই গুলশানে দিনে-রাতে কত ঘুরেছি, হকারী করে কত ফ্যান, টিউব লাইট, টিভি বিক্রী করেছি কিন্তু কৈ; আমাকে তো আজ পর্যন্ত কেউ ইশারা করলো না? এমনকি একটা চোখও টিপলো না কেউ? নাকি আমার কোন বিক্রয় মূল্য নেই অথবা আমি বিক্রয়যোগ্য নই?
একটা গল্প বলি-
আমার এক বায়ার কাম বন্ধু আছে মুম্বাইয়ের। বয়সে সে আমার চেয়ে এক-দুই বছরের বড় হবে। কিন্তু চাকুরী ও ব্যবসা সূত্রে ইতিমধ্যেই সে প্রায় ৭০টা দেশ ভ্রমণ করেছে।
একদিন গল্প ছলে ওকে জিগাইলাম, আচ্ছা বিপুল, ব্যবসার জন্য তুমি যে এতো এতো দেশ ভ্রমণ করো, এতো মানুষের সাথে মেশো, ভাষা নিয়ে তোমার কোন সমস্যা হয় না?
উত্তরে সে বললো, “ভাষাতে যদি ব্যবসা আঁটকে থাকতো তাহলে পৃথিবীতে বেশ্যাবৃত্তি চলতো না! সেই প্রাচীনকাল থেকেই দেশে দেশে এই ব্যবসা চলছে, কৈ আজ পর্যন্ত তো শুনলাম না ভাষাগত কারণে এই ব্যবসাতে কোথাও সমস্যা হয়েছে? বরঞ্চ তোমার মালের ‘মান’ ও ‘দাম’ যদি ঠিক থাকে তাহলে ব্যবসা হবেই! আর ইশারা ভাষা আছে কি করতে?”
বেশ্যাবৃত্তির মত ইশারা ভাষাও আদি ও অলঙ্ঘনীয়। 😛
[অফটপিকঃ গুলশানের বিষয়টা আমিও শুনেছি, কিন্তু দেখেনি! তাই এটাকে সত্য বা মিথ্যা বলার অবস্থায় আমি নেই। তবে ঢাকার একটা ফাইভস্টার হোটেলে সেদিন প্রায় মধ্যরাতে বায়ার মিটিং সেরে নামতে যেয়ে লিফটের মধ্যে ‘পুনরায়’ ক্লায়েন্ট সার্ভিসে গমনরত ‘সদ্য স্নান’ করা এক ললনা আমাকে বার দুয়েক ‘চুলের ঝাঁপটা’ দিতে চেয়েছিল বলে মনে হয়েছিল! আমি কিন্তু ইশারা বুজি নাইক্ক্যা! অবশ্য ইহা আমার মতিভ্রমও হইতে পারে!]
জুলফিকার জুবায়ের বলেছেনঃ
সুকান্ত দা, গুলশানে গেলে ছেলেরা মেয়েদের কাছে বিক্রি হয়ে যায়, এ রকম কথা আমি নিশ্চিত করিনি। লোকে বলে, তাই, বক্তব্য প্রকাশের প্রয়োজনে, তথ্যটুকু শুধু তুলে ধরেছিলাম। । এখন আপনারা যদি বলেন ‘লোকের কথা ঠিক না’, তবে অবশ্যই আমি লোকের কথায় কান দেব না।
প্রসঙ্গঃ ‘চুলের ঝাঁপটা’ওয়ালিনী
লিফটে, চার দেয়ালের মাঝখানে, দাঁড়িয়ে চুলের ঝাঁপটা! খুব সম্ভব সে ইশারাই করেছিল। আপনি মনে হয়, মনে মনে ব্লগিঙের প্লট সাজাচ্ছিলেন, তাই খেয়াল করতে পারেননি। হতাশ(!) হবার কিছু নাই, পরের বারের অপেক্ষায় থাকুন …
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
আর অপেক্ষা! জীবনটা অপেক্ষাতেই গেল! 😛
মোঃ গালিব মেহেদী খান বলেছেনঃ
সমাজ যৌনকর্মী তৈরীর কারিগর, নিঃসন্দেহে।
শাহানূর ইসলাম সৈকত বলেছেনঃ
আমাদের দেশের আইনে পতিতাবৃত্তি করাটা সরাসরি কোন অপরাধ নয়। যদিও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৪০ নং অনুচ্ছেদে প্রত্যেক নাগরিকের পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে। উক্ত অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, আইনের দ্বারা আরোপিত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে কোন পেশা বা বৃত্তি-গ্রহণের কিংবা কারবার বা ব্যবসায়-পরিচালনার জন্য আইনের দ্বারা কোন যোগ্যতা নির্ধারিত হইয়া থাকিলে অনুরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি-গ্রহণের এবং যে কোন আইনসঙ্গত কারবার বা ব্যবসায়-পরিচালনার অধিকার থাকিবে। কিন্তু সংবিধানের ১৮ (২) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রকে গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ম্যান্ডেট প্রদান করা হয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে রাষ্ট্র প্রকাশ্যে গনিকাবৃত্তি ও অশ্লীল কর্মকান্ডকে অপরাধ হিসাবে গন্য করে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছে।
তাছাড়া, দণ্ডবিধির ২৯০, ২৯২ ও ২৯৪ ধারায় পতিতাবৃত্তিকে গনউৎপাত বলে আইনগতভাবে অপরাধ হিসাবে গন্য করে অপরাধীর জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান করেছে। তাছাড়া, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ এর ৭৪ ধারায় পতিতা বৃত্তির জন্য আহবান করাকে অপরাধ হিসাবে গন্য করে অপরাধীর কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান করেছে।
পাশাপাশি, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ১১, ১২ এবং ১৩ নং ধারা কল গার্ল ঢাকা কর্তৃক সম্পাদিত কার্যক্রমসমূহকে শাস্তি যোগ্য অপরাধ হিসাবে ঘোষণা করেছে। উক্ত আইনের ১১ ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি জবরদস্তি বা প্রতারণা করিয়া বা প্রলোভন দেখাইয়া কোন ব্যক্তিকে পতিতাবৃত্তি অথবা অন্য কোন প্রকারের যৌন শোষণ বা নিপীড়নমূলক কাজে নিয়োগ করিবার উদ্দেশ্যে বিদেশ হইতে বাংলাদেশে আনয়ন করিলে বা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্থানান্তরিত করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে এবং অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থ দন্ডে দন্ডিত হইবেন।
১২ নং ধারায় বলা হয়েছে, (১) কোন ব্যক্তি পতিতালয় স্থাপন বা পরিচালনা করিলে অথবা তাহা স্থাপন বা পরিচালনা করিতে সক্রিয়ভাবে সহায়তা বা অংশগ্রহণ করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর এবং অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে এবং ইহার অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড দন্ডিত হইবেন। (২) কোন ব্যক্তি, যিনি⎯ (ক) ভাড়াটিয়া, ইজারাদার, দখলদার বা কোন স্থান দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি, জানিয়া-শুনিয়া উক্ত স্থান বা এর কোনো অংশবিশেষ পতিতালয় হিসাবে ব্যবহার করিবার অনুমতি প্রদান করিলে; অথবা (খ) কোন বাড়ির মালিক, ইজারা-দাতা অথবা জমির মালিক অথবা উক্ত মালিক বা ইজারা-দাতার কোন প্রতিনিধি উক্ত বাড়ি অথবা উহার কোন অংশবিশেষ পতিতালয় হিসাবে ব্যবহৃত হইবে তাহা জানা সত্ত্বেও উক্ত বাড়ি বা জমি ভাড়া প্রদান করিলে; তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর এবং অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে এবং অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবেন। এবং
উক্ত আইনের ১৩ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি রাস্তায় বা জনসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে অথবা গৃহ অভ্যন্তরে বা গৃহের বাহিরে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে মুখের ভাষায় বা অংগভঙ্গি করিয়া বা অশালীন ভাব-ভঙ্গি দেখাইয়া অন্য কোন ব্যক্তিকে আহবান করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর সশ্রম কারাদন্ড অথবা অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদন্ডে অথবা উভয় দন্ডে হইবেন।