তোরা মেয়ে হয়ে কেন ফুটবল খেলতে এলি?

সীমান্ত প্রধান
Published : 8 Sept 2016, 03:45 PM
Updated : 8 Sept 2016, 03:45 PM


আমরা বাঙালি গর্বিত বাঙালি! গর্বের সাথেই বাঙলা ভাষাভাষী মানুষেরা এ কথাটি বলে থাকেন। তবে, আগে এটি বলার অর্থ আর এখনকার বলার অর্থ এক নয়। এখন এই কথাটাকে আমরা এভাবে প্রয়োগ করতে পারি, 'আমরা বাঙালি আসনে, ভাষণে গর্বিত বাঙালি'।

এই বাঙালি কাজের থেকে বেশি কথা বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যখন, তখন জ্ঞানগর্বের কথা বলতে জুড়ি মেলা ভার। সম্প্রতি সে প্রমাণ আমরা পেয়েছি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেও। যিনি অনূর্ধ্ব ১৬ নারী ফুটবলারদের ধারাবাহিকতায় উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় মেতেছিলেন। আর সেই বীরকন্যাদেরকেই লোকাল বাসে করে ময়মনসিংহ-এ পাঠালেন!


যে বাসের মধ্যে তারা নানা ধরণের অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকারও হলেন! খবরে যতটুকু জেনেছি, ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে বাঙলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা ইতিহাস গড়া সেই নারী ফুটবলাররা। বাসে তাদের সাথে ছিলোনা কোনো অভিভাবক কিংবা বাফুফের কোনো কর্মকর্তা। আর এ সুযোগেই যাত্রা পথে তারা শিকার হন ইভ-টিজিংয়ের, বাসেই তাদের শুনতে হয় অকথ্য ভাষা।

এখন আবার খবর প্রকাশ হয়েছে এই মেয়েদের মধ্যে ৯ জনের অভিভাবককে ডেকে এনেছিলেন তাদের স্কুল শিক্ষক। এবং বন্ড সাইন দিয়ে তাদের নিয়ে যেতে বলেছেন! ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক জোবেদ আলী তাদের অভিভাবকদের বলেছেনঃ 'বন্ড সই দিয়ে আপনাদের মেয়েদের নিয়ে যান। ওরা আর কোনদিন স্কুলে পড়া তো দূরের কথা, নাম নিলেই ওদের জুতাপেটা করে দাঁত ভেঙে দেওয়া হবে।'


আবার এ-ও শুনেছি, তাদের আরেকজন তাসলিমার বাবাকেও নাকি পেটানো হয়েছে! আর সেটি নাকি করেছেন স্কুল শিক্ষক! হায়, এরা কেন ফুটবলার হতে চাইলো! এরা কী জানে না, এরা মেয়ে? মেয়েদের এসব হতে নেই, তারা কী জানে না?

আমরা বরাবরই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি এ সমাজ কিভাবে নারী পুরুষের মধ্যে বৈষম্যে সৃষ্টি করে রেখেছে। আমরা বরাবরই দাবী তুলেছি এ বৈষম্য ঘুচিয়ে, বৈষম্যহীন একটি সমাজ ব্যবস্থার। আমরা এখনও অনড় বৈষম্যহীন সমাজ-ব্যবস্থা বিনির্মাণে। কিন্তু, এ দেশের সরকার প্রধান একজন নারী হয়েও সে দিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। থাকবার কথাও নয়। কারণ, তিনি নারী হলেও পুরুষতন্ত্রেরই তো ধারক-বাহক। যার জন্য তিনি, রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম এবং মদিনা সনদে দেশ চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

আচ্ছা, আমরা অবাক হচ্ছি কেন! এই দেশের সুনাম বয়ে আনার জন্য যে মেয়েরা ধারাবাহিক জয় ছিনিয়ে এনেছেন, তাদের অবহেলা বা তাদেরকে নিয়ে আজ যা যা হচ্ছে তা নিয়ে এতো কথা কেন বলছি? এরা তো মেয়ে। তাই না? এরা তো ছেলে নয়! তাই না?

একটি ইসলামি রাষ্ট্র তাদের নিয়ে হাসি-তামশা করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। যেহেতু তারা হাফপ্যান্ট পরে, ওড়না ছাড়া মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, এ তো ইসলামি আইনে সহি নয়! তাইলে তাদের নিয়া মানুষ আজে-বাজে বলবে না তো কী বলবে?


আর হ্যাঁ, সরকার একদম ঠিক কাজটি করেছেন মেয়েদের লোকাল বাসে পাঠিয়ে। তাদের এসি বাসে পাঠিয়ে পয়সা নষ্ট করার দরকার আছে? এরা তো মেয়ে! এরা কেন ফুটবল খেলতে আসে! তোরা মেয়ে, তাই তোরা থাকবি ঘরের ভিতরে। ফুটবল তো পুরুষেরা খেলবে! দেখিস না, আরিফ খান জয়কে? ফুটবল খেলে জীবনে কোন অর্জন না করেও আওয়ামী লীগের চাটুকারি করে দিব্যি মন্ত্রী হয়ে বসে আছে!

এখন শুনতে পাচ্ছি, আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর বাফুফের পক্ষ হতে ঢাকাতে বিশালাকারে সংবর্ধনা দিবে এই মেয়েদের! ব্যাপারটা আমার কাছে 'জুতা মেরে গুরু দান' করার মতোই। এখন মেয়েদের উচিৎ, এই সংবর্ধনাকেই প্রত্যাখ্যান করা।