আমরা বাঙালি গর্বিত বাঙালি! গর্বের সাথেই বাঙলা ভাষাভাষী মানুষেরা এ কথাটি বলে থাকেন। তবে, আগে এটি বলার অর্থ আর এখনকার বলার অর্থ এক নয়। এখন এই কথাটাকে আমরা এভাবে প্রয়োগ করতে পারি, ‘আমরা বাঙালি আসনে, ভাষণে গর্বিত বাঙালি’।
এই বাঙালি কাজের থেকে বেশি কথা বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যখন, তখন জ্ঞানগর্বের কথা বলতে জুড়ি মেলা ভার। সম্প্রতি সে প্রমাণ আমরা পেয়েছি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেও। যিনি অনূর্ধ্ব ১৬ নারী ফুটবলারদের ধারাবাহিকতায় উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় মেতেছিলেন। আর সেই বীরকন্যাদেরকেই লোকাল বাসে করে ময়মনসিংহ-এ পাঠালেন!
যে বাসের মধ্যে তারা নানা ধরণের অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকারও হলেন! খবরে যতটুকু জেনেছি, ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে বাঙলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা ইতিহাস গড়া সেই নারী ফুটবলাররা। বাসে তাদের সাথে ছিলোনা কোনো অভিভাবক কিংবা বাফুফের কোনো কর্মকর্তা। আর এ সুযোগেই যাত্রা পথে তারা শিকার হন ইভ-টিজিংয়ের, বাসেই তাদের শুনতে হয় অকথ্য ভাষা।
এখন আবার খবর প্রকাশ হয়েছে এই মেয়েদের মধ্যে ৯ জনের অভিভাবককে ডেকে এনেছিলেন তাদের স্কুল শিক্ষক। এবং বন্ড সাইন দিয়ে তাদের নিয়ে যেতে বলেছেন! ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক জোবেদ আলী তাদের অভিভাবকদের বলেছেনঃ ‘বন্ড সই দিয়ে আপনাদের মেয়েদের নিয়ে যান। ওরা আর কোনদিন স্কুলে পড়া তো দূরের কথা, নাম নিলেই ওদের জুতাপেটা করে দাঁত ভেঙে দেওয়া হবে।’
আবার এ-ও শুনেছি, তাদের আরেকজন তাসলিমার বাবাকেও নাকি পেটানো হয়েছে! আর সেটি নাকি করেছেন স্কুল শিক্ষক! হায়, এরা কেন ফুটবলার হতে চাইলো! এরা কী জানে না, এরা মেয়ে? মেয়েদের এসব হতে নেই, তারা কী জানে না?
আমরা বরাবরই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি এ সমাজ কিভাবে নারী পুরুষের মধ্যে বৈষম্যে সৃষ্টি করে রেখেছে। আমরা বরাবরই দাবী তুলেছি এ বৈষম্য ঘুচিয়ে, বৈষম্যহীন একটি সমাজ ব্যবস্থার। আমরা এখনও অনড় বৈষম্যহীন সমাজ-ব্যবস্থা বিনির্মাণে। কিন্তু, এ দেশের সরকার প্রধান একজন নারী হয়েও সে দিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। থাকবার কথাও নয়। কারণ, তিনি নারী হলেও পুরুষতন্ত্রেরই তো ধারক-বাহক। যার জন্য তিনি, রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম এবং মদিনা সনদে দেশ চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
আচ্ছা, আমরা অবাক হচ্ছি কেন! এই দেশের সুনাম বয়ে আনার জন্য যে মেয়েরা ধারাবাহিক জয় ছিনিয়ে এনেছেন, তাদের অবহেলা বা তাদেরকে নিয়ে আজ যা যা হচ্ছে তা নিয়ে এতো কথা কেন বলছি? এরা তো মেয়ে। তাই না? এরা তো ছেলে নয়! তাই না?
একটি ইসলামি রাষ্ট্র তাদের নিয়ে হাসি-তামশা করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। যেহেতু তারা হাফপ্যান্ট পরে, ওড়না ছাড়া মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, এ তো ইসলামি আইনে সহি নয়! তাইলে তাদের নিয়া মানুষ আজে-বাজে বলবে না তো কী বলবে?
আর হ্যাঁ, সরকার একদম ঠিক কাজটি করেছেন মেয়েদের লোকাল বাসে পাঠিয়ে। তাদের এসি বাসে পাঠিয়ে পয়সা নষ্ট করার দরকার আছে? এরা তো মেয়ে! এরা কেন ফুটবল খেলতে আসে! তোরা মেয়ে, তাই তোরা থাকবি ঘরের ভিতরে। ফুটবল তো পুরুষেরা খেলবে! দেখিস না, আরিফ খান জয়কে? ফুটবল খেলে জীবনে কোন অর্জন না করেও আওয়ামী লীগের চাটুকারি করে দিব্যি মন্ত্রী হয়ে বসে আছে!
এখন শুনতে পাচ্ছি, আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর বাফুফের পক্ষ হতে ঢাকাতে বিশালাকারে সংবর্ধনা দিবে এই মেয়েদের! ব্যাপারটা আমার কাছে ‘জুতা মেরে গুরু দান’ করার মতোই। এখন মেয়েদের উচিৎ, এই সংবর্ধনাকেই প্রত্যাখ্যান করা।
আইরিন সুলতানা বলেছেনঃ
অনলাইনে ’চাটগাইয়া জাবেদ‘ নামে একজন একই লেখা পোস্ট করেছে, একই শিরোনামে, ৯ সেপ্টেম্বর। ওই নামের ব্যক্তি আর আর আপনি কি একই? নাকি আপনার লেখাটা কপিপেস্ট করেছে উক্ত ব্যক্তি লেখার ক্রেডিট না দিয়েই!!!
সীমান্ত প্রধান বলেছেনঃ
না। এ নামে আমি কাউকে চিনি না। এ কাজটা যিনি করেছেন, তিনি আমার লেখাটাকেই সম্ভবত কপি করেছেন। ওই লেখাটা কোথায় পোষ্ট করেছে বিস্তারিত কি জানতে পারি?
আইরিন সুলতানা বলেছেনঃ
গুগলে ’চাটগাইয়া জাবেদ‘ এবং/অথবা আপনার পোস্টের শিরোনাম লিখে সার্চ দিলে লিংক চলে আসবে।
সীমান্ত প্রধান বলেছেনঃ
হ্যাঁ দেখেছি। এর ব্যাপারে বিডিনিউজ কি পদক্ষেপ নিতে পারে?
আইরিন সুলতানা বলেছেনঃ
মন্তব্যে মজা পেলাম। এখানে বিডিনিউজের পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি এভাবে হাইলাইট হয়ে আসছে কেন? আপনার লেখা কেউ মেরে দিলে আপনার কি আক্ষেপবোধ হচ্ছে না? আপনি কি প্রতারিত বোধ করছেন না? তাহলে আপনার করণীয় কি সেটাই তো আপনার প্রধান বিষয় হওয়ার কথা। যদি আপনার এসবে আপত্তি না থাকে, তাহলে তো বেশ, করুক অন্যরা কপিপেস্ট।
আমি সচেতন হিসেবে আপনাকে জানিয়েছি। কারণ অন্যের লেখার কপিপেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়ার কাজটি যেমন আমি নিজে লেখক হিসেবে করিনা, করবো না, তেমন অন্য কেউ করলে তাকে লেখক হিসেবে গ্রহণ করবো না। বাকিটা আপনার কাছে যেভাবে গ্রহণীয় হয়।
সীমান্ত প্রধান বলেছেনঃ
সামুর ব্লগে আমার একাউন্ট ছিল। অনেকদিন হয় ঢুকতে পারছি না। তাই সে লেখাতে কোন মন্তব্য করতে পারিনি। তবে আমি আমার আইডিতে দুটো লেখার লিংক দিয়ে কিছু একটা লিখেছি। আর বাকীটা বিস্তারিতভাবেই এ ব্লগে লিখব। আপনার আন্তরিকতা আমি সত্যি মুগ্ধ
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকারঃ
১) এই খেলোয়ার মেয়েদের যেন অতিদ্রুত বিয়ে না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারণ এখন তারা সমাজের চোখে পড়েছে, কিছু টাকা পয়সাও হয়ত আসবে তাদের! পাশাপাশি তারা যেহেতু বিদেশ ভ্রমণ করছে, তাই তাদের নিজ পরিবারের মধ্য থেকেই বিয়ের প্রস্তাব আসবে বলে আমার মনে হচ্ছে। স্বামী হিসেবে বিদেশ গমনের সুবর্ণ সুযোগ বাঙালী কখনো হাত ছাড়া করে না! তাছাড়া নানা বাহানা তো আছেই!
২) তারা যেখানে আছে সেখানেই থাক। ঢাকায় এনে প্রশিক্ষনের নামে তাদের স্বাভাবিক খেলাটা যেন নষ্ট করা না হয়। সেক্ষেত্রে তাদের যিনি তৈরী করেছেন, সেই কোচকেই স্মমান দিয়ে সে যেখানে চায় সেখানেই কোচিং এর ব্যবস্থা করা হোক।
৩) বাফুফের মাধ্যমে বা অন্যকেউ যেন তাদের সংবর্ধনা দেওয়ার নামে নিজেরা পাইট নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করা।
৪) তাদের বাবা-মা’র একটা নিদিষ্ট আয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া, যাতে করে তারা ভাবতে পারে মেয়েদের কারণে তাদের উন্নতি হচ্ছে।
৫) অতিরিক্ত বাহাবা দেওয়ায় প্রয়োজন নেই (যদিও তারা তা পাওয়ার যোগ্য); এতে করে তাদের মধ্যে আলস্য এসে যেতে পারে!
আপাতত এটুকুই >>>
৫)
জুলফিকার জুবায়ের বলেছেনঃ
@ সুকান্ত দা
১) ১০০% একমত
২) (১০০-৫) % একমত
৩) ১০০% একমত
৪) ১০০% একমত (যদিও অভিলাষটা অনেক উঁচু হয়ে গেছে!)
৫) (সবগুলোতেই একমত হব? কিন্তু না, পারলাম না, এটাতেও ) ১০০% একমত ( হতেই হলো!)
৬) ( শর্ত সাপেক্ষে আগাম ১মত)
@ সীমান্ত ভাই
পর পর ২টি ৫০(০০০) হাঁকালেন! আর১টি হলে তো হ্যাট ট্রিক হয়ে যাবে!
সীমান্ত প্রধান বলেছেনঃ
জুবায়ের ভাই, ধন্য ধন্য ধন্য আপনাকে পেয়ে…. 😀
সীমান্ত প্রধান বলেছেনঃ
সুকান্ত দাদা! এটুকু বলছেন! এগুলো যদি পুরণ করা হয়, তবে কি আর কিছু দরকার পরবে বলে মনে করেন আপনি? খুব সুন্দর প্রস্তাবনা। কর্তৃপক্ষ যদি আপনার এমন প্রস্তাবনা আমলে নিয়ে এগিয়ে যান, তবে বাংলাদেশ আরও একবার চিনবে ফুটবল দিয়ে আর সেটি এই মেয়েদের হাতেই