রাউধা আথিফ হত্যাকাণ্ড: বিশ্ব দরবারে বাঙালির লজ্জা!

শেখ মিজানুর রহমান
Published : 1 May 2017, 03:08 AM
Updated : 1 May 2017, 03:08 AM

রাউধা আথিফ, মালদীপের কিশোরী মেয়েটি সবেমাত্র এমবিবিএস পড়ছিলেন, রাজশাহী ইসলামি মেডিকেল কলেজের ছাত্র রাউধা ছিল অসাধারণ প্রতিভাবান একজন তরুণী। প্রতিযোগিতাপূরণ বিশ্বে সর্ববৃহৎ ফ্যাশন কোম্পানী 'ভোগ' (vogue) এর সেরা মডেল।


আর্জাতিক গণমাধ্য বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিলেও দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশের প্রচার মাধ্যমগুলি বিষয়টিকে সুকৌশলে গা ছাড়া ভাবে প্রচার করেন। বাংলাদেশের উগ্র মৌলবাদীদের হাতেই রাউধা হত্যাকান্ড ঘটে, এটি বলার মত যথেষ্ট প্রমাণও হাজির করেছে বিশ্ব মিডিয়াগুলি। হত্যাকান্ড ঘটানোর পূর্বে রাউধাকে ইসলামি রাষ্ট্র এবং ইসলামি মেডিকেলে অসভ্য 'জিন্স প্যান্ট' পরা থেকে বিরত থাকতে হুমকিও দেয়া হয়েছিল, কিন্তু রাউধা তা বারবারই অগ্রাহ্য করেছিল। তথ্যগুলি তার বন্ধুর, যিনি ভারতে অধ্যয়নরত।

.
রাউধার পিতা যৌক্তিক দাবী তুলেছেন, তিনি বলেন-

"সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করলে যেসব চিহ্ন চোখে-মুখে ও শরীরে ফুটে ওঠে তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি রাউধার লাশে। কিন্তু শ্বাসরোধ করে হত্যা করলে যেসব আলামত ফুটে ওঠে তার সবগুলোই রয়েছে তার শরীরে।"

তিনি বলেন, "মেয়ে যে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে তার কোনো প্রমাণই নেই। একজন মানুষ ফ্যানের সঙ্গে ঝুললে সেই ফ্যানে দাগ পড়বে বা বাঁকা হয়ে যাবে। কিন্তু তার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।"

আমরা বাঙ্গালি, আমরা কি রাউধাদের পাশে থাকবো না? কেন রাউধা জিন্স প্যান্ট পরার অপরাধে খুন হবে? তাহলে কি বুঝে নেব, হুমায়ুন স্যার যে বলেছিলেন, 'সব নষ্টদের দখলে চলে যাবে'। সেটি আবারো রাউধা হত্যার মাধ্যমে প্রমাণ হল? এদেশে ঘাপটি মেরে থাকা উগ্র জঙ্গিবাদ ঠেকাতে প্রশাসনের উদ্যোগ কি যথার্থ নয়?

না, আমি তা মনে করতে চাই না। ধর্মীয় বিশ্লেষণে বিশ্বাসী ধর্মিক জ্ঞানীগুনিরা অবশ্য উগ্র ধর্মান্ধতাকে ধর্মের সাথে নিতে নারাজ বা ইগনোর করেছেন। তারপরেও যারা এসব ঘটনার সাথে জড়িত হন, তাদের মানসিকতার পরিবর্তনের জন্য আদৌ কোন নতুন ব্যবস্থা লক্ষ্য করা গেছে?

.

বিশ্ব রাজনীতি ধর্মকে ব্যবহার করবে, এটা তাদের ক্ষমতার হাতিয়ার, তাই বলে খুন হত্যাকেও ধর্মীয় দৃষ্টিতে বৈধতা দিবেন? বিশ্ব মিডিয়ার কিছু স্ক্রিনশর্ট দিলে বিষয়টি সহজে অনুমান করা যেতে পারে।

.

.

.

.

উল্লেখ্য, গত ২৯ মার্চ দুপুরে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর ৩১ মার্চ তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।

পরদিন রাউধা আত্মহত্যা করেছে বলে উল্লেখ করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় মেডিকেল বোর্ড। তবে গত ১০ এপ্রিল রাউধার সহপাঠী ভারতের কাশ্মিরের নাগরিক সিরাত পারভীন মাহমুদকে আসামি করে রাউধার বাবা ডা. আথিফ রাজশাহীর আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত ১৩ এপ্রিল মামলাটি শাহ মুখদুম থানা থেকে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। ১৫ এপ্রিল থেকে সিআইডি মামলাটি তদন্ত শুরু করে। মালদ্বীপের নাগরিক রাউধা আথিফের জন্ম ১৯৯৬ সালে ১৮ মে। তিনি রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। রাউধা পড়ালেখার পাশাপাশি মডেলিং করতেন।