মিনার মনসুরের দুটি কবিতা

মিনার মনসুরমিনার মনসুর
Published : 11 Nov 2016, 06:59 AM
Updated : 11 Nov 2016, 06:59 AM


হিজড়ার তবু ভাঙাচোরা একখান মন আছে

আরেকটি দিন। যথারীতি ঢাকা দাঁড়িয়ে আছে একপায়ে। ট্রয়ের সুবিশাল ঘোড়া। তার পেটের ভেতর বেমক্কা ঝুলে আছেন জনৈক মিনার মনসুর। পিঠের পুরনো ব্যথা সঙ্গ দেয় তাকে। আমি উড়ে যাই।
সে আমার শার্টের আস্তিন ধরে ঝুলে থাকে আহ্লাদী মেঘের মতো। ক্রমে ঘন হয়ে আসে। গা ঘষে পাঁজরে। ঠোঁটে পতাকার লাল। জামার জানালা গলে বেরিয়ে আছে ব্রেসিয়ারের ফিতা। তাও লাল। অগত্যা জিগাই তারে:
কে গো তুমি? ভাব দেইখ্যা মনে লয় জোয়ান ছুকরি! মাগার শইলডা তো বেডা বেডা লাগে!
-মমতাজ।
-হালাই এমন আজব শহর মাথাডা খামাখা চক্কর খায় লাটিমের মতন। এলা দিলা তো আউলাঝাউলা কইর‌্যা সব। আরে বে…মমতাজ নামে আমার তো ইয়ার বি আছে। তুমি কেডা কও!
-হাঁচা কথা কই। আমি ছুকরি না ছোকরাও না। তয় তুমার উড়াল দেইখ্যা শরীলডা ক্যান জানি করে।
-তুমার মন নাই?
-আছে আছে। আমিও ফতুর হইছি তারে ভালোবাইস্যা…
-কারে, কারে ভালোবাসছস্ তুই? মাগী, ঢাহা নামের এই বেঢপ ঘোড়া কি তোরেও করাইছে জাদু?
-কী যে কও। হিজড়ার তবু ভাঙাচোরা একখান মন আছে। হেইডার তো কোনো ছোদবোধ নাই!

একটি ষাঁড়কে দেখি

রবীন্দ্র রচনাবলী ফুঁড়ে প্রথমেই বেরিয়ে আসে বার্নিশ করা দুটি শিং। তারপর ধূলিঝড়। গোটা শান্তি নিকেতন উড়তে থাকে ছিন্নভিন্ন পাণ্ডুলিপির মতো। অতঃপর মূর্ত হয়ে ওঠে লোমশ দুই কৃষ্ণগহ্বর। সেখান থেকে নির্গত হচ্ছিল সহস্র কোবরার গর্জন। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে স্বরূপে উদিত হয় যুগল বল্লম। গোলফ্রেমের চশমাশোভিত।
ষাঁড়টি আয়নায় নিজের মুখ দেখে। একের পর এক সেলফি তোলে এবং সেগুলো পোস্ট করে ফেসবুকে। তার প্রোফাইল জুড়ে থাকে উদ্যত শিংয়ের শাসানি।
মুখটি বড়ো চেনা মনে হয়। তবে কি পিকাসো এ ষাঁড়টির কথাই বলেছিলেন গুয়েরনিকার বিষন্ন সন্ধ্যায়? ঘুমিয়ে পড়ার আগে তার দিকেই অঙ্গুলি-নির্দেশ করেছিলেন পটুয়া কামরুল হাসান? শুনে গাবতলীর লক্কড়ঝক্কড় বাসগুলো হাসে। বলে, এইডারে আপনে ষাঁড় কন! ভেড়ার জঙ্গলে আচানক গরুর দঙ্গল দেইখ্যা আউলাইয়া গেছে বুঝি সব।
হতেও তো পারে! ফের ষাঁড়টিকে দেখি। শুনি সমবেত আত্মবন্দনা গীত। আচমকা অন্তর্জাল ছিঁড়ে ষাঁড়টি তেড়েফুঁড়ে আসে। 'শালা, লাইক দে..!' ঠিক তখনই নিভে যায় সিনেপ্লেক্সের আলো। কালোর ক্যানভাসজুড়ে চলতে থাকে আন্তঃমহাদেশীয় শিংয়ের ঠোকাঠুকি আর লোমশ গর্জন।
চলুন তবে হিলারি আর ট্রাম্পের তর্কযুদ্ধের ফলাফল দেখি।