ইবোলার ধাক্কায় বেসামাল বিশ্ব, এখনই সচেতন হোন

শেখ মেহেদী মির্জা
Published : 14 Oct 2014, 06:24 AM
Updated : 14 Oct 2014, 06:24 AM

ইবোলা ভাইরাসের আক্রমনে যখন পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তখন নড়েচড়ে বসেছে ইউরোপ-আমেরিকা সহ পৃথিবীর অন্য দেশগুলো কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের ব্যাপারে কার্যত কোন উদ্বেগ চোখে পড়ছে না। ইবোলা ভাইরাস নিয়ে সর্তকাবস্থার মাঝেই সম্প্রতি পশ্চিম আফ্রিকার লাইবেরিয়া থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ছয়জন।

বিমানবন্দরে কোন পরীক্ষা ছাড়াই তারা দেশে প্রবেশ করেছেন গণমাধ্যমের এমন খবরে এই ছয়জনের নিজেদের জেলা বরিশাল ও মাদারীপুরে এলাকার মানুষের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিমানবন্দরে যে কোনো ব্যক্তির জন্য বাংলাদেশের প্রবেশের ক্ষেত্রে কি ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে সেই প্রশ্নে সরকারের রোগতত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক মাহামুদুর রহমান বলছেন, "সেই অর্থে কোন পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই।"

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান মার্গারেট চান ইবোলাকে মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি অন্যতম ঘাতক জ্বর হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন যে, আফ্রিকায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে রক্তপ্রদাহজনিত এই জ্বর৷ তাই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক "জরুরি অবস্থা" ঘোষণা করেছেন তিনি৷

সংক্রমণের আশঙ্কা
ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর অবধারিত৷ সেজন্যই তো একে মহামারি বলে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷মূলত কোনো প্রাণী বা মানুষের রক্ত, বীর্য, যোনিরস বা দেহ নির্গত অন্য কোনো তরলের সংস্পর্শে এ রোগ ছড়ায়৷ বলা বাহুল্য, অনিয়ন্ত্রিত এবং অনিরাপদ যৌন মিলনেও এ রোগের সংক্রমণ হয়ে থাকে৷ অর্থাৎ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এইডস রোগের সঙ্গে এবোলার মিল রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷

ইবোলা সংক্রমণের লক্ষণ
ইবোলা ভাইরাস ডিজিজ (EVD) অথবা ইবোলা হেমোরেজিক ফিভার (EHF) হল ইবোলা ভাইরাস ঘটিত মনুষ্য রোগ। ইবোলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মারাত্মক জ্বর এবং কারও কারও অবিরত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে৷ সঙ্গে থাকে মাথা, পেশী এবং তলপেটে তীব্র ব্যথা৷ রোগীর একদিকে ক্ষুধা কমে যায়, অন্যদিকে শুরু হয় পাতলা পায়খানা৷ সাধারণত শরীর থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন তরল পদার্থের মাধ্যমে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে৷

পরীক্ষামূলক ওষুধ এখনই নয়
ইবোলা সংক্রমণ নিরাময়ের উপায় এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি৷ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করার সময় এখনো আসেনি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ কারণ মার্কিন দুই স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর ওষুধটি প্রয়োগে তাঁদের উন্নতির ধরণে তারতম্য দেখা গেছে৷

মারাত্মক ইবোলা ভাইরাসের আক্রমণে পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১,০০০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭১১৷ গিনিতে গত মার্চে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে এবোলা ভাইরাসের প্রকোপ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷

বলা বাহুল্য, আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচর্যাকারীর মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ লাইবেরিয়াতে যেমন ইবোলা রোগীদের পরিচর্যাকারী দুই মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর, তাঁদের চিকিৎসার জন্য সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷

অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারের এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিমান বন্দরে কমপক্ষে আফ্রিকা ফেরত প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেশে ঢুকতে দিতে হবে এবং মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে জনগনের মাঝে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।