নাগরপুরে ভাঙ্গন কবলিত মানুষ পায়নি জিআরের চাল, ইউনিয়ন পরিষদের ঘরে স্কুল-কোচিং

মমিনুল ইসলাম সবুজ
Published : 29 April 2012, 06:50 PM
Updated : 29 April 2012, 06:50 PM

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার আটাপাড়া গ্রামের অনেকের বাড়ি-ঘর একাধিক বার গ্রাস করেছে। ভিটে-মাটি হারিয়ে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। নদীভাঙন এসব অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করতে সরকার জিআর (গভমেন্ট রিলিফ সরকারি ত্রাণ) প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল দেয়ার কর্মসূচি হাতে নেয়। কিন্তু উপজেলার ভাড়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সে চাল বিতরণে চরম অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ করেন গ্রামবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জিআর প্রকল্পের মাধ্যমে ভাড়রা ইউনিয়নে এক হাজার আটশ' বিশ কেজি চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। সে চাল বিতরণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় মেম্বারদের দিয়ে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র পরিবারের তালিকা তৈরি করেন। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বরাদ্দ আসে। ২৮ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান সে চাল উত্তোলন করা হয়। এখান থেকে আটাপাড়া গ্রামের ৩৮ টি পরিবারে ২০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা। অথচ এ গ্রামের সবাইকে বঞ্চিত রেখে চেয়ারম্যান সে চাল আত্মসাৎ করেছেন বলে তাদের অভিযোগ। এ ব্যাপার তারা টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

আটাপাড়া গ্রামের মাহবুব, সোনা মিয়া, নুর ইসলাম, নজরুল ইসলাম, আবদুল আজিজ মোল্লা জানান, 'তাদের প্রত্যেক পরিবারকে বিশ কেজি করে চাল দেয়ার কথা বলে স্থানীয় মেম্বার নাম লিখে নেন। সে চাল আসছে বলে জানলেও তারা আজ পর্যন্ত কোন চাল পাননি।'

ইউপি মেম্বার আলমগীর হোসেন বলেন, চাল বরাদ্দ আসছে। কিন্তু আটাপাড়া গ্রামের কাউকে চাল দেয়া হয় নি। সংরতি নারী আসনের মেম্বার রোকেয়া বেগম বলেন, চালের বরাদ্দ এসেছে এবং উত্তোলনও হয়েছে। কিন্তু এ গ্রামের কাউকে চাল দেয়া হয়নি।

জিআরের চাল বিতরণে অনিয়ম ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের ঘর ভাড়া দেয়া এবং বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুস মিয়ার বিরুদ্ধে।

ইউপি মেম্বার খাদেমুল ইসলাম জানান, নির্বাচনের পর চেয়ারম্যান আবদুল কদ্দুস মিয়া প্রথম সভাতে একটি রেজুলেশন করে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় পরিবর্তন করে নেন। আর তখনি খাস শাহজানি গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি ঘর ভাড়া দেয়া হয় একটি স্কুল ও কোচিং-এর জন্য। আর পরিষদ নিয়ে যাওয়া হয় ভাড়রা গ্রামে তার নিজের ঘরে।

খাস শাহজানি গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের দুটি ঘরে পাঁচটি ক রয়েছে। সেখানে ব্রাইট কিন্ডার গার্টেন স্কুল ও কোচিং চলছে। ঘরের একটি ক আবাসিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তিন মাস আগে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ঘর ভাড়া নেয়া হয়েছে বলে জানান, স্কুল ও কোচিং-এর পরিচালক বিপ্লব হোসেন রিপন । তবে ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারণ হয় নি এবং এজন্য সরকারি কোন অনুমোদন নেই বলেও তিনি জানান।

ইউপি মেম্বার মঈনুল হোসেন মতিন অভিযোগ করে বলেন, ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহজানি গরুর হাট সংলগ্ন সড়ক নির্মাণ, নদীর পাড় থেকে হাট পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করার কথা থাকলেও সড়কের আংশিক নির্মাণ হয়েছে। তাছাড়া ভাড়রা থেকে শাহজানি সড়ক নির্মাণ করার কথা। কিন্তু সে কাজও আংশিক নির্মাণ হয়েছে। সরকারি কোন বরাদ্দ নিয়ে চেয়ারম্যান কোন মেম্বারের সাথে আলোচনা করেন না বলে অভিযোগ করেন সংরতি আসনের মেম্বার রোকেয়া বেগম । শাহজানি বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক করিম তালুকদার বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর শাহজানি হাটের কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। অথচ হাটের ইজারার ৩০ শতাংশ উন্নয়ন বাবদ নির্ধারণ করা থাকে।

এ ব্যাপারে ভাড়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুস মিয়া বলেন, বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্য আমাকে অসহযোগিতা করছেন। জিআরের চাল নিয়ে বিতরণ করার জন্য বারবার বলা হলেও তারা নেয়নি। বিতরণ করেননি। তিনি তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।