চলছে মাদক বানিজ্যঃ হুমকির মুখে ঢাবি ক্যাম্পাস

সোহেল মাহমুদ
Published : 4 March 2012, 10:22 AM
Updated : 4 March 2012, 10:22 AM

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অবনতির দিকে যাচ্ছে দিন দিন। পাশাপাশি ঢাবি ক্যাম্পাস জর্জরিত নানাবিধ সমস্যায়। আবাসন সংকট, ক্লাসরুম সংকট, যাতায়াত, অবকাঠামোগত দূর্বলতাসহ অনেক সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে অতীতের ঐতিয্যময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদকের ব্যবহার, ব্যবসা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশাজনিত মাদক আসক্তির ঘটনা বেড়ে চলেছে। এ বিষয়টি একদিকে ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে, অন্যদিকে নিত্য নতুন মাদকের ক্যাম্পাসমুখী চোরাচালান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সিগারেটসহ তামাখ জাতীয় পণ্যের বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘষনা করলেও সুরাহা হচ্ছেনা মাদক বানিজ্যের বিষয়টি। বিভিন্ন সময় ছোটখাট চালান আটক করলেও সমস্যার মূল শেকড়কে আজও উপড়ে ফেলা সম্ভব হয়নি। বরং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর এবং আশেপাশেই কয়েকটি এলাকায় অবাধে চলছে মাদকসেবন ও মাদক কেনা-বেচা। ঢাবি ক্যাম্পাসে মাদকের ঝুকিপুর্ন এলাকাগুলোতে সরোজমিনে তদন্ত চালিয়ে এ বিষয়ে লেখা।

চলছে মাদক বানিজ্যঃ হুমকির মুখে ঢাবি ক্যাম্পাস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রতিবেদন বিভিন্ন গনমাধ্যমে তুলে ধরা হলেও সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত সরোজমিন তদন্ত করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টোরিয়াল দল এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সংলগ্ন শাহবাগ থানা এবং নিউমার্কেট থানার তৎপরতা সত্ত্বেও মাদকের অবাধ বিস্তার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে অবাধ যাতায়াত সুবিধা গ্রহন করে একটি চক্র নিয়ন্ত্রন করছে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সামগ্রিক মাদক বানিজ্য। ইদানিং এর সাথে যুক্ত হয়েছে ইয়াবা, হেরোইন এবং প্যাথেড্রিনের মত ভয়াবহ মাদকদ্রব্য। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে বেড়েছে মাদকের ব্যবহার এবং মাদকের সহজলভ্যতা। ক্যাম্পাসে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক দ্রব্যের সহজলভ্যতা এবং বানিজ্যের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ালীগের ছাত্রসংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার কিছু নেতা কর্মীর গোপন আতাত থাকতে পারে বলে মনে করছেন বেশ কিছু শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী বিষয়টিকে একেবারেই মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। সরোজমিনে তদন্ত চালিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে বেশ কিছু মাদক স্পট চিন্হিত করা হয়েছে। স্পটগুলোর মোটামুটি সবগুলোই ক্যাম্পাস সীমানা সংলগ্ন। এর মধ্যে বেশকিছু স্পট পুরোনো। অনেকগুলো আবার নতুন করে দেখা দিয়েছে। একই সাথে রয়েছে বেশকিছু ভ্রাম্যমান খুচরা মাদক বিক্রেতা। মাদকের ভেতর গাজা তুলনামুলক সবচেয়ে সহজলভ্য, এর পরেই রয়েছে ইয়াবা। বিক্রেতা হিসেবে তুলনামুলক কমবয়সী কিশোর, মহিলা, ভ্রাম্যমান চা বিক্রেতা এবং রিকশাচালকেরা জড়িত রয়েছে। ক্রেতাদের মধ্যে অধিকাংশ তরুন।

মাদকের স্পটসমুহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের জন্য রয়েছে মোট আটটি গেট। এই গেটগুলোকে বিবেচনা করে নিচে উল্লেখ্য পয়েন্ট আকারে ভাগ করলে মোটামুটি মাদক স্পটগুলো সুস্পস্ট হয়ে ওঠে। এই পর্যায়ক্রম অনুসরন করে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।

১ নীলক্ষেত থানা সংলগ্ন গাউসুল আজম মার্কেট
ফটোকপি, প্রিন্ট, বাধাই, লেমিনেটিং, মুদি দোকান, সেলুন, ফার্ষ্ট ফুড, খাবার হোটেল, সাইবার ক্যাফে এবং অষুধের দোকান রয়েছে এ মার্কেটে। নীলক্ষেতের পাশাপাশি এ মার্কেটটি তে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত চোখে পড়ার মত। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কেটের দোতালা সম্প্রসারনের কাজ চলছে। পাশাপাশি মার্কেটটির দোতালায় সন্ধ্যার পর থেকে নিয়মিত চলছে গাজার আসর সহ অন্যান্য মাদকের আড্ডা। এখানে মাদকের পুরো সরবরাহ আসে কামরাঙ্গীর চর থেকে। কিছু যুবক সন্ধ্যা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত এখানে মাদক বিক্রি করছে প্রকাশ্যেই। এ ব্যাপারে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোতালেব সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যাপারটি স্বীকার করেন। তিনি জানান যে মালিক সমিতি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে নজরদারি আরো জোরদার করা হবে যাতে এ মার্কেটে মাদকের ব্যাবসা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়। তবে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে তার সাথে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি শারীরিক অসুস্থতার দোহাই দিয়ে সময় ক্ষ্যাপন করেন। তবে নীলক্ষেত থানার পক্ষ থেকে ব্যাপারটি পুরোপুরি অস্বীকার করা হয় এবং বলা হয় তাদের কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত আসেনি।

২ শাহনেওয়াজ হল সংলগ্ন ফুটপাথ এবং মাছ বাজার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্রদের জন্য বরাদ্দকৃত শাহনেওয়াজ হল ছাড়িয়ে কুয়েত-মৈত্রী হল এবং বেগম ফজিলাতুননেসা হলের দিকে এগোলে ভ্রাম্যমান কিছু শিশুসহ মহিলা ও টোকাই চোখে পড়ে। এরা শাড়ির ভেতর মাদক লুকিয়ে রাখে এবং প্রতিদিন বিকেল থেকে প্রায় রাত দশটা পর্যন্ত মাদক বিক্রয় করে। এ মাদক সিন্ডিকেটটি প্রায় বারো বছরের পুরোনো। এদের মধ্যে কাঞ্চনী, হাসি এবং খুশি নামে তিন মহিলা দীর্ঘদিন যাবৎ মাদকের ব্যবসা করে আসছে এবং এদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। এদের ক্রেতাদের একটি বড় অংশ স্থানীয় গারমেন্টস শ্রমিক ও নিউমার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি এই রুটে ইয়াবা ঢুকছে তার হাতেনাতে প্রমান পাওয়া গেছে। তবে নিউমার্কেট থানাধীন এ এলাকা থেকে তারা বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হলেও কেউ দীর্ঘমেয়াদি সাজা পায়নি। থানা থেকে ফেরত এসে এরা আবার তাদের মাদক ব্যবসা চালিয়ে যায়। এদের প্রত্যেকের বাসা কামরাঙ্গীর চরের মুন্সিহাটিতে।

৩ নীলক্ষেত থেকে পলাশী রোড ও পলাশী মোড়
নীলক্ষেত থেকে পলাশী পর্যন্ত রাস্তায় রাত নটার পর সাধারনত প্রাইভেট কারে করে ইয়াবার একটি চালান দক্ষিন নীলক্ষেত কর্মচারী আবাসিক এলাকা হয়ে ঢোকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। পলাশী মোড় একসময়ে মাদকের হটস্পট হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে এখানে মাদকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন শুধু পলাশী এতিমখানা মসজিদের গলিতে বুড়ি নামে এক মহিলা গাজা বিক্রি করে আসছে বেশ কিছুদিন ধরে।

৪ বকশীবাজার মোড় থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
বকশীবাজার মোড়ে রাতের বেলা কিছু ঘোড়ার গাড়ি (টমটম) রাখা থাকে। এছাড়া রাস্তার দুপাশ ব্যবহৃত হয়ে থাকে অস্থায়ী রিকসার গ্যারেজ হিসেবে। রিকসার এই অস্থায়ী গ্যারেজকে কেন্দ্র করেই মূলত পরিচালিত হয় গাজার ব্যবসা। রিকসা চালকেরা রিকসার ছদ্মবেশে গাজা বিক্রি করতে থাকে সন্ধ্যা থেকেই। এই এলাকায় গাজার ব্যবসা চলে লাইনম্যান সুমনের নিয়ন্ত্রনে। লাইনম্যান সুমনের দ্বায়িত্ব রাস্তার ফুটপাথ দেখাশোনা করা হলেও সেখানে সরোজমিনে গিয়ে অবৈধ টং দোকান এবং গাজা বিক্রি ও সেবন করতে দেখা যায়। টং দোকানদারেরা জানায় যে দোকান চালু রাখতে হলে দিনপ্রতি ত্রিশ এবং প্রতি শুক্রবারে আলাদা একশো টাকা করে দিতে হয় লাইনম্যান সুমনকে। এ ব্যাপারে সুমনের সাথে কথা বললে সে জানায় তার 'এলাকায়' কিছু রিকসা চালক গাজা খেলেও এখানে গাজা বিক্রি হয় না। আর দোকান থেকে টাকা তোলার কথা জিজ্ঞেস করলে সে জানায় যে রাতে টহলরত পুলিশদের চা পানি আপ্যায়ন, শাহবাগ থানা এবং জগন্নাথ হলের কিছু ছাত্রকে তার টাকা দিয়ে 'ম্যানেজ' করতে হয়। এছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং এর আশেপাশের এলাকায় ভ্রাম্যমান চা বিক্রেতাদের অনেকেই গাজা বিক্রির সাথে জড়িত।

৫ চানখারপুল মোড়
চানখারপুর মোড় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের গেটটিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাষনের কোনো পাহারা বক্স নেই। অথচ পুরান ঢাকা সংলগ্ন এই গেটটি মাদক প্রবেশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ন পয়েন্ট। চানখারপুল মোড় এবং আশেপাশের এলাকা প্রধানত ইয়াবা ঝুকির মুখে রয়েছে। চকবাজার সহ সাতরোজা ঢাল থেকে এ পথে গাজা, হেরোইন, ইয়াবা, ফেন্সিডিল সহ অন্যান্য মাদকের বেচা কেনার জন্য এ রুটটি তুলনামূলক রমরমা। চানখারপুল এলাকায় রাতের বেলা ঢুকতে থাকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ট্রাক এবং ভারি যানবাহন। পরিবহন শ্রমিক, সংলগ্ন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটাল থেকে আগত রোগীর আত্মীয় স্বজন এবং পুরান ঢাকার স্থানীয় যুবকদের আড্ডা চলে বেশ কয়েকটি খাবার হোটেল ও তেহারী ঘর কেন্দ্র করে। একসময়ের কাটাবন কেন্দ্রিক মাদক সম্রাজ্ঞী বেগম সম্প্রতি চানখারপুল রুটে মাদকের ব্যবসা পরিচালনা করছে বলে একাধিক সুত্র থেকে জানা গেছে। এ রুটের পুরো মাদকের সাপ্লাইটি সোয়ারীঘাট থেকে সাতরোজা মাজারের ঢাল হয়ে আসে।

৬ দোয়েল চত্তর, চার নেতার মাজার এবং সংলগ্ন সোহরার্দী উদ্যান
চার নেতার মাজারের পাশে সোহরার্দী উদ্যানের প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে রমনা কালী মন্দির পর্যন্ত চলছে অবাধ গাজা বিক্রি। ভর দুপুর থেকে শুরু করে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত এ এলাকাটি গাজার গন্ধে ভরপুর থাকে। এখানে গাজা বিক্রি করে মূলত বাচ্চাসহ কিছু মহিলা, ভ্রাম্যমান চা বিক্রেতা এবং টং দোকানগুলো। ক্যাম্পাসের ভেতরের এবং বাইরের অনেকেই এখানে প্রকাশ্যেই গাজা সেবন করে থাকেন। সন্ধ্যার পর এখানে প্রায়শই ছোটখাটো ছিনতাই সহ অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে থাকে। তাছাড়া এখানে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যেই ঘোরাফেরা করে নানান বয়সী যৌনকর্মী। শহরের কর্মব্যস্ত এলাকা পেরিয়ে এখানে যারা বেড়াতে আসেন, তাদের অধিকাংশই উদ্যানের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রকাশেই গাজা বিক্রিয় এবং সেবন, যৌনকর্মীদের অবাধ বিচরন এবং বখাটেদের কারনে উদ্যানে হাটাও মুশকিল বলে তারা অভিযোগ করেন।

৭ শাহবাগ থানা সংলগ্ন ছবির হাট
গাজার এ স্পটটি এতো প্রকাশ্য যে স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করাও মুশকিল। ছবির হাট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের রাস্তার ঠিক অপর পাশেই অবস্থিত। ছবির হাট থেকে শুরু করে সোহরার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনী পর্যন্ত এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে গঞ্জিকা গঞ্জনা। এখানে গাজার প্রধান ক্রেতা তরুন যুবকেরা। চারুকলার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মিডিয়া কেন্দ্রিক লোকজনের আড্ডায় সবসময় মুখর থাকে ছবির হাট। শিল্পী, লেখক, গায়ক, কবি থেকে শুরু করে ভবঘুরে- সবাই এখানে প্রকাশ্যেই গাজা সেবন করে থাকেন। অনেকে ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে আসেন এখানের টং দোকানের আড্ডায়। গাজা এখানে প্রকাশ্য এবং কেউ এটা নিয়ে তেমন কিছুই আপত্তি করেন না। তবে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ছবির হাটে ইয়বার কেনা বেচা শুরু হয় এবং একটি ইয়াবা চক্র এ স্পটে শক্ত অবস্থান তৈরী করে যাচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সুত্র থেকে জানা যায়। মজার ব্যাপার হোলো পাশেই রয়েছে শাহবাগ থানা। তবে শাহবাগ থানায় এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে ছবির হাট নিয়ে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি।

এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে যোগাযোগ করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী'র সাথে।
'সবার সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই ক্যাম্পাস থেকে মাদকের পুরোপুরি উচ্ছেদ সম্ভব'

প্রশ্ন ১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এবং আবাসিক হলগুলোতে মাদকের বর্তমান সহজলভ্যতা এখন যে কোনো সময়ের চাইতে বেশি- কি বলবেন?

আমি একথার সাথে একমত নই। বরং আমি বলবো যে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গঠনে সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা শতভাগ সফল বলে দাবি করবোনা। তবে পরিস্থিতি আগের চাইতে ভাল এবং প্রক্টরীয়াল টিম তাদের সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

প্রশ্ন ২ ধারনা করা হচ্ছে যে মাদকের, বিশেষ করে ইয়াবার বিস্তার রোধ করতেই ঢাবি ক্যাম্পাসে হঠাৎ করেই তামাখজাত পণ্যের বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

না, ব্যাপারটি ঠিক এমন নয়। ক্যাম্পাসে সিগারেট বিক্রয়ের সিদ্ধান্তটি হঠাৎ করে নেওয়া হয়নি। এ সিদ্ধান্তটি অনেক আগে থেকেই আলোচনায় ছিল। বরং তা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি কতৃক অনুমোদিত হয়ে ঘোষনা আকারে যেতে সময়ক্ষেপন করেছে। এক্ষেত্রে সন্মানিত উপাচার্য অধ্যাপক আ. আ. ম. স. আরেফিন সিদ্দিক স্যার দ্বায়িত্ব পাবার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে ধুমপানমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষনায় তার সদিচ্ছার কথা জানান। এই সিদ্ধান্তের সাথে শুধুমাত্র ইয়াবার বিস্তার রোধ সংক্রান্ত কোনো বিষয় জড়িত আছে বলে আমার জানা নেই।

প্রশ্ন ৩ অনেকেই মনে করছেন ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে বাইরের যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করা উচিত। এতে ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা সহ মাদকের অনুপ্রবেশ রোধ করা সম্ভব হবে। আপনার মতামত কি এ বিষয়ে?

যেহেতু অনেকদিন যাবত সারা ঢাকা শহরের সড়ক স্বল্পতার কারনে উল্লেখযোগ্য যানবাহন ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলো ব্যবহার করে থাকে, সেহেতু মানবতার খাতিরে, বিশেষ করে উৎসবের দিনগুলোতে বাইরের যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় আমরা দিয়ে থাকি। আবার অন্য সড়কগুলো কোনো কারনে বন্ধ থাকলে ডিএমপির বিশেষ অনুরোধে আমরা হয়তো হাইকোর্ট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কটি সীমিত সময়ের জন্য ব্যাবহার করার অনুমতি দিয়ে থাকি। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর বাইরের যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করা অথবা নিয়ন্ত্রিত চলাচল নিশ্চিত করতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের আটটি গেটে বক্স অ্যান্ড ব্যারিয়ারের স্থাপনের প্রস্তাব করেছি। আশা করছি এটি শীঘ্রই শেষ করতে পারব।

প্রশ্ন ৪ বিগত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাত্রলীগ নেতা প্রণব কুমার দাস বাবলু'র আত্মহত্যার ঘটনার জের ধরে অনেকেই মাদকের রাজনৈতিক বানিজ্যের অভিযোগ তুলছেন। আপনি কি মনে করেন ক্যাম্পাসে মাদক অনুপ্রবেশ এবং মাদক বানিজ্যের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ঠতা আছে?

বিষয়টি আমি আগেও শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক মদদের কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে সুস্পষ্ট করে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। আবার এ সম্ভবনাকে একেবারে উড়িয়েও দিচ্ছি না আমি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান মাদকের বিপক্ষে। এ ধরনের সুনির্দিষ্ট প্রমান সহ অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষনিক ব্যাবস্থা নেব।

প্রশ্ন ৫ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ক্যাম্পাসকে শতভাগ মাদকমুক্ত করতে সামনে কি কি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা চিন্তা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন?

প্রথমেই আমি বলব আমাদের লোকবলের স্বল্পতার কথা। একটি মাত্র গাড়ি ব্যাবহার করে সারারাত সম্পুর্ন ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা দেওয়া অথবা মাদক রোধে কাজ করা কঠিন। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কোথাও কোনো অভিযোগ পেলেই ছুটে যাচ্ছি। আমাদের সাথে সমন্বিতভাবে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপুর্ন পয়েন্টগুলোতে পুলিশ প্রহরার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। লক্ষ করলে দেখবেন ক্যাম্পাসের ভেতর কোনো মাদক স্পট নেই। কিছু জায়গা আছে ক্যাম্পাসের বাইরে যেখানে এগুলোর কেনাবেচা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে এটা পুলিশের দায়িত্ব। তারপরও আমরাও চোখকান খোলা রাখছি। আমরা আমাদের জনবল বাড়াতে প্রস্তাব করেছি। তবে আসল কথা হোলো সবার সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই ক্যাম্পাস থেকে মাদকের পুরোপুরি উচ্ছেদ সম্ভব।