নীলক্ষতে রণক্ষত্রে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজ মুখোমুখি

সোহেল মাহমুদ
Published : 14 March 2012, 09:42 AM
Updated : 14 March 2012, 09:42 AM

ঢাকা, ১৩ মার্চ:
মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের সূচনা ঘটে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে রাত ১১টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দুই রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করছেন। এছাড়া তারা একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় বলেও জানা গেছে।

নীলক্ষেত এলাকায় হোটেল বিউটিতে খাবার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। ঢাকা কলেজের কিছু ছাত্র এবং স্যার এ এফ রহমান হলের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লার সমর্থিত ছাত্রলীগ কর্মীরা প্রথমে খাবারের বিল দেওয়া নিয়ে কথাকাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়ে। তাৎক্ষনিকভাবে তারা ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্রকে মারধরও করে। পরে হলে সে খবর অন্য শিক্ষার্থীরা জানতে পারলে কয়েকজন শিক্ষার্থী নীলক্ষেত এলাকায় যান। সে সময় ঢাকা কলেজের কোনো শিক্ষার্থী সেখানে ছিলেন না। পরবর্তীতে এ ব্যাপারটি ঢাকা কলেজের ছাত্রদের মধ্যে জানাজানি হলে তারা সঙ্গবদ্ধ হয়ে আক্রমণ চালায় নীলক্ষেতে অবস্থান্ররত ঢাবির ছাত্রদের পর। ঢাবির অন্যান্য হলগুলোতে বিষয়টি জানাজানি হবার পর ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে নীলক্ষেতের দিকে এগোতে থাকেন। এসময় নীলক্ষেত এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা কলেজের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ।

অন্যদিকে, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশ অবস্থান নেন কলেজের সামনের এলাকায়। রাত এগারোটা পর্যন্ত দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পালটা ধাওয়া চলতে থাকে। ঘটনার এক পর্যায়ে ঢাকা কলেজের এক ছাত্রের নিহত হবার গুজব ছড়ায়। এতে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও সেখানে উপস্থিত হন। তবে তারা শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। ঘটনাস্থলে আসেন ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ। এসময় ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে তারা ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। উত্তেজিত ঢাকা কলেজের ছাত্ররা এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লাকে লাঞ্ছিত করেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।

পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দীক ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। তবে উত্তেজিত ঢাকা কলেজের ছাত্ররা প্রক্টর সহ আইন শৃংখলা বাহিনীর ওপরও ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। নীলক্ষেত থানার মোড়ে উত্তেজিত ছাত্ররা ট্রাফিক পয়েন্ট, রোড ডিভাইডারসহ বেশ কিছু ভাংচুর চালায়। পুলিশের রমনা অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষে ওয়াহিদ নামে পুলিশের এক হাবিলদার আহত হন।

এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের লিঠু, কবির, জিয়া হলের জুয়েলসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে তাদের ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আহতদের দেখতে যান এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের কথা ঘোষণা করেন।

সংঘর্ষের প্রথম পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা পুরোপুরি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তারাও পিছু হটছেন। তবে ঘটনার শেষ পর্যায়ে পুলিশ বাধ্য হয়ে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছাত্রদের ছত্রভংগ করে দেয়। এ সময় নীলক্ষেত এলাকায় লুটপাটের আশংকায় অধিকাংশ দোকান বন্ধ ছিল এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল।

অবশেষে পুলিশি তৎপরতায় এবং ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের উয্যোগে ঘটনা সামাল দেওয়া হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঢাকা কলেজের মাষ্টার্স হলের ছাত্র মনির আশংকাজনকভাবে আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।