বাংলাদেশি বংশদ্ভুত বৃটিশ অ্যাম্বাসেডর আনোয়ার চৌধুরী থেকে খালাফ আল আলীঃ বাংলাদেশ কি তাহলে কূটনৈতিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ?

সোহেল মাহমুদ
Published : 23 March 2012, 02:44 AM
Updated : 23 March 2012, 02:44 AM

(প্রথমেই বলে নেই, এই পোষ্টটি বিডি ব্লগ এবং অন্যান্য তথ্যসূত্রকে কপি পেষ্ট করে লেখা হয়েছে। সুতরাং কপিরাইটের প্রশ্ন আমার নয় এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ সেইসব একনিষ্ট ব্লগার, সংবাদকর্মী এবং প্রতিবেদকদের প্রতি। )

বাংলাদেশে কোনো ইস্যুই বেশিদিন টেকে না, টেকানো হয় না। জর্জ মিয়া নাটক এখানে হরহামেশাই হয়ে থাকে। চাপা পড়ে যাওয়া এই ইস্যুটির দিকে একটু কি আবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে, সন্মানিত ব্লগারবৃন্দ? আমি নিতান্তই অলস, নিউজপেপার হাতে গুজে দিলেও পড়তে ইচ্ছে হয় না। এই হত্যাকান্ডের পর আমাদের শিক্ষানবীশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদি আরব সফর করে এসেছেন বলে শুনেছি। তবে আমার বড় অনাস্থা চাপা পড়া ফাইল এবং পুলিশি তদন্তের প্রতি। কারন ৫৫ হাজার বর্গ মাইলের এই দেশে ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা অনেক বিষয়েই নাক গলিয়ে অভ্যস্ত এবং মিডিয়া নয়, বরং কোনো ঘটনাকে পলিটিসাইজ করতে এদের পারজ্ঞমতা লক্ষনীয়। তাই লেবু চেপা করে সাগর ভাই এবং রুণি আপার ছোট ছেলেকে রাস্তায় ভিক্ষে চাইতে হয় আপন বাবা মায়ের হত্যাকান্ডের বিচার। বড় কষ্ট চাপতে হয় বুক জুড়ে, কারণ অনিয়মই হয়েছে আজকের বাংলাদেশের নিয়ম।

যে কোন হত্যা, গুম, ছাত্র সংঘর্ষ কিংবা রাজনৈতিক হতাহত- সব কিছুর পেছনেই থাকে সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা। আর তা কখনও ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কিংবা বড় ধরনের অর্থনৈতিক লেনদেনের হিসাব নিকাশের ক্ষুব্ধতার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু কিছু ঘটনার প্রভাব দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও হয় সমান আলোচিত,আর সেই হত্যাকাণ্ডটির শিকার যদি কোন বিদেশী হন তবে তো কোন কথাই নেই। তবে এধরনের একটি খুন মানেই জনজীবনে নেমে আসে আতংক, নিয়ে আসে নানা প্রশ্ন, নিয়ে আসে যাদের উপর আমাদের জান মালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব অর্পিত তাদের কর্মদক্ষতার উপর এক ঝুড়ি প্রশ্ন।

২০০৪ সালের ২২ মে বাংলাদেশি বংশদ্ভুত বৃটিশ অ্যাম্বাসেডর আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রনেড হামলার মধ্য দিয়ে কূটনৈতিক নিরাপত্তার প্রশ্নটি প্রথমবারের মত সামনে চলে আসে। ওই হামলায় আনোয়ার চৌধুরী বেচে গেলেও নিহত হন দুজন। সাম্প্রতিক সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ আল আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়ায় কূটনৈতিক নিরাপত্তার প্রশ্নটি আবার আলোচনায় চলে আসছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কূটনৈতিক দূতাবাসের কোন কর্মকর্তা হত্যার ঘটনা এই প্রথম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে সামনে রেখে জনমনে প্রশ্ন, বাংলাদেশ কি তাহলে কূটনৈতিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ?

নিহত সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তাঃ ছিনতাই নাকি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড?

নিহত খালাফ আল আলী সৌদি দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব (হেড অব সৌদি সিটিজেনস অ্যাফেয়ার্স) ছিলেন। তিনি সৌদি নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি দেখতেন।

খালাফ গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ২২/এ নম্বর বাড়ির চার তলায় একাই থাকতেন। তিনি যে বাড়িতে থাকতেন ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী তাপস রেমা বলেন, তিনি খালাফের কাছে কোনো বাংলাদেশিকে আসতে দেখেননি। বাড়ির অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সঙ্গেও তিনি মিশতেন না। তাঁর কাছে শুধু তাঁর সৌদি বন্ধুরাই আসতেন। মাঝেমধ্যে বৃহস্পতিবার তাঁরা পার্টি করতেন। খালাফ প্রায়সময়ই নৈশভ্রমণে বের হতেন। আবার রাতেই ফিরে আসতেন।।৫ মার্চ ২০১২, ঘটনার দিন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে খালাফ বাসা থেকে বের হন। এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি।

সেদিন যা ঘটেছিল?
পুলিশের ভাষ্যমতে, খালাফ রাত একটার দিকে হেটে ১১৭ নম্বর সড়কের দিকে যাচ্ছিলেন। কিছু দূরে একটি একটি সাদা প্রাইভেট কার এসে তার পথরোধ করে। গাড়ি থেকে নেমে দুই যুবক তার সঙ্গে কথা বলার পর গুলি করে গাড়িতে করেই পালিয়ে যায়। গুলির শব্দ পেয়ে গুলশান ১৯/বি বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী জুলফিকার থানায় ফোন করে জানায়, এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পাচ মিনিটের মাথায় গুলশান থানার উপপরিদর্শক(এসআই) মোশারফের নেতৃত্বে একটি দল গিয়ে ঘটনাস্থলে নিস্তেজ অবস্থায় খালাফকে পড়ে থাকতে দেখেন। আহত অবস্থায় খালাফকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় ইউনাইটেড হাসপাতালে। চিকিৎসকরা তাকে ভোর পাচটার দিকে মৃত ঘোষনা করেন। তখনো তার পরিচয় জানা যায়নি। উল্লেখ্য, মৃত খালাফের কাছে মুঠোফোন, ম্যানিব্যাগ বা অন্যকিছু পাওয়া যায়নি। মজার ব্যাপার, ঘটনাস্থলে রক্তের কোনো ছাপও মেলেনি!!!

তারা যা বলেনঃ
দূতাবাস কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সরকারে পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন-
''আমাদের দেশে এই ধরনের একটি ঘটনা অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক। সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন-
"বিদেশিরাও আজ বাংলাদেশে নিরাপদ নয় এই সরকার বেডরুমে নিরাপত্তা দিতে পারছে না, রাস্তাঘাটে নিরাপত্তা দিতে পারছে না, এমনকি বিদেশিদেরও নিরাপত্তা দিতে পারছে না। এই সরকার বোবা, কালা, অপদার্থ তাদের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো নৈতিক অধিকার নেই।''
৮ মার্চ তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার লুৎফুল কবীর বলেন,
"বলার মতো কিছু নেই।''

তদন্ত তদারককারী কর্মকর্তা পুলিশের গুলশান বিভাগের সহকারী কমিশনার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, "তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। হত্যাকারী বা হত্যার কোনো সূত্র এখনো মেলেনি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে গুলিবিদ্ধ হয়ে খালাফের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।"

কূটনৈতিক ময়দানে যা ঘটে চলেছেঃ
সৌদি আরবের রাষ্ট্রাচার বিষয়ক উপমন্ত্রী আলাদ্দিন এ আল আশকারি ঢাকায় সে দেশের দূতাবাসের প্রশাসনিক সহকারী খালাফ আল আলী হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে গত মঙ্গলবার রিয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা করেন। উপমন্ত্রী ঘটনাটির নিবিড় তদন্তের অনুরোধ জানান।

আগামী ১৪ মার্চ হামবুর্গের সমুদ্রসীমা আইন-বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে (ইটলস) যোগদানের পর দেশে ফেরার পথে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ আল আলীর হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য রিয়াদে যাবার কথা থাকলেও অজ্ঞাত(?)কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি হাম্বুর্গ সফর শেষে দেশে ফিরে আসেন। দুষ্টু লোকে বলে(?) যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সে দফায় সৌদি আরব সফরের অনুমতি প্রদান করেননি সৌদি কতৃপক্ষ।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল-বিষয়ক ডেপুটি মিনিস্টার আলাউদ্দীন আল-আসকারির বরাত দিয়ে ১০ মার্চ সে দেশের ইংরেজি দৈনিক আরব নিউজ পত্রিকার এক খবরে বলা হয়, খালাফ আলী হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে সহায়তা করতে সৌদি আরবের একটি তদন্ত দল বাংলাদেশে পৌঁছেছে। দলে মূলত সৌদি পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন। তবে এ হত্যা মামলার তদন্তে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, গতকাল পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে সৌদি কোনো কর্মকর্তা তদন্তে যোগ দেননি।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে খালাফ হত্যাকান্ডঃ
ময়না তদন্তে জানা যায়, একটি মাত্র গুলিতেই খালাফ আল আলীর মৃত্যু হয়েছে। গুলিটি তার বুকের বাম পাশ দিয়ে ঢুকে কিডনিতে লেগেছিলো। তার মানে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে এই দূতবাস কর্মকর্তাকে। তাছাড়া কনস্যুলেট অব পর্তুগাল প্রধানের বাসভবনের নিরাপত্তাকর্মী জুলফিকার যদি মিথ্যা না বলে থাকেন, তাহলে বলা যায় এটি পূর্ব পরিকল্পিত। কারণ জুলফিকার ঘটনার পর সাদা রঙের একটি গাড়ি দ্রুতবেগে পশ্চিম দিকে চলে যেতে দেখেছেন। তার মানে খালাফ আল আলী আগে থেকেই একটি গোষ্ঠীর ল্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন!

প্রশ্ন হলো- এই গোষ্ঠীটা কারা? কীসের স্বার্থে সৌদি নাগরিককেই বেছে নেওয়া হলো?
আমাদের সবার জানা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধী হিসেবে প্রথম যে দেশকে বিবেচনা করা হয়- সেটি সৌদি আরব। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী সব সময়ই এই দেশটির আশির্বাদপুষ্ট। অন্যদিকে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে কারাগারে বন্দি। ক্ষমতার লোভেই হোক, বা অন্যকোনো কারণে- বিএনপিও চায় না এই বিচার হোক। বিএনপি যতোটা সহজে সমীকরণ দাড়া করাতে চাচ্ছে, জামায়াত ততোটা সহজ পথে ভাবতে পারছে না। কারণ নির্মূল হওয়ার ভয় রয়েছে দলটির। তাই তারা এগোচ্ছে অন্যপথে।

এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে চাপ সৃষ্টির কৌশলটাকেই তারা বেছে নিয়েছে। সেক্ষেত্রে সৌদি আরবের মতো দেশকে যদি কোনোভাবে বশ করা যায়, সেটি হবে তাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এ ঘটনার পর সন্দেহজনকভাবে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিবাদ বা বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আবার সৌদি আরবের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের রয়েছে দীর্ঘ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এদিকে জামায়াত ইসলামী তার দলের স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী নেতাদের বাঁচাতে ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৮২ কোটি টাকার চুক্তি করেছে এবং গতবছর সে অর্থ প্রেরণও করেছে। জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী এবং যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান ও বর্তমান ওবামা সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র জেরাল্ড এস জে কেসিডি'র লবিং প্রতিষ্ঠান CASSIDY & ASSOCIATES, INC -এর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই প্রতিষ্ঠানকে মীর কাসেম আলীর পাঠানো ১৮২ কোটি টাকার রেমিটেন্স স্লিপ থেকে জানা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো এর আসল উদ্দেশ্য। মীর কাসেম আলী ও CASSIDY & ASSOCIATES, INC -এর মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে যে সব বিষয় উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে মূল বিষয় যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করা হলেও সরকারের ওপর মার্কিন কর্তৃপক্ষের চাপ প্রয়োগ উল্লেখযোগ্য। মীর কাসেম আলী এবং CASSIDY & ASSOCIATES, আইএনসি এর মধ্যকার চুক্তি, লেনদেন এবং বিস্তারিত নিচের লিঙ্কে পাবেন।

খালাফ হত্যাকান্ড এবং সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমবাজারঃ
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ ভাবে সৌদি আরবে গেছেন ২৫ লাখ ৮০ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশী। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তা সমাধানে অগ্রগতি নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফরকালে সৌদি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর ওয়ার্ক পারমিট পরিবর্তন ও নবায়ন জটিলতা দূর হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই সমস্যার শতভাগ সমাধান হয়নি। ঢাকায় সৌদি কূটনীতিক খুনের কারণে শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাতে দেশের অর্থনীতিতে এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই অতিদ্রুত খুনীদের শনাক্ত করে প্রবাসী শ্রমবাজার টিকিয়ে রাখার জোর দাবী জানাচ্ছে সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিরা।যদিও এ ঘটনায় সৌদি আরবে কোন নেতিবাচক প্রভাব এখনও পড়েনি তবে রিয়াদ, জেদ্দা, মক্কা, মদিনা, দাম্মামসহ সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রবাসীরা দেশে টেলিফোন করে স্বজনদের কাছে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশীরা আশঙ্কা করছেন এ ঘটনার রেশ ধরে নতুন করে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি সৌদি আরবে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং সেই সঙ্গে বর্তমানে যারা রয়েছে তাদেরও সমস্যায় পড়তে হতে পারে। এমন কি বাংলাদেশীদের উপর আক্রমন হতে পারে।
তবে এখন পর্যন্ত কোথায় কোন অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি।

বর্তমানে কি অবস্থায় আছে অন্যান্য দূতাবাস?
আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষনা না করলেও খালাফ আল আলী হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশে অবস্থিত অন্যান্য দূতাবাসের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী। প্রয়োজন ছাড়া দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউই তেমন বাইরে বেরোচ্ছেন না দূতাবাস ছেড়ে। অন্যান্য দূতাবাস থেকে, বিশেষ করে যুক্তরাস্ট্রের তরফ থেকে কোন অফিসিয়াল সতর্কতা জারি করা হয়নি। তবে পরিশিতির ওপর তারা গুরুত্বসহকারে নজর রাখছে বলে জানা যায়। তবে সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা নিহত হবার পর থেকে সৌদি সরকার অন্যান্য দেশে অবস্থিত তাদের দূতাবাসগুলোতে এক বিশেষ বার্তা পাঠিয়ে একান্ত বিশেষ কোন অনুষ্ঠান ছাড়া সৌদি রাজকীয় পোষাক না পরার পরামর্শ দিয়েছে।

পরিশেষঃ
বাংলাদেশে ২০০৪ সালের ২২ মে বৃটিশ অ্যামাবাসেডর আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রনেড হামলার তদন্তে জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃত্ত্বতার প্রমান মিলেছিল। তবে এবারের সৌদি কূটনৈতিক কর্মকর্তা নিহত হবার ঘটনা জাতীয় পর্যায়ে এত সহজভাবে মিলবে বলে আশা করা দূরহ হয়ে দাড়িয়েছে। বাংলাদেশের সাথে সৌদি আরবের কূটনৈতিক সম্পর্ক পূরোন এবং মুসলিম প্রধান দেশ দুটির রয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ বন্ধুত্ব। এ বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে তৃতীয় পক্ষ থেকে কোন ধরণের ষড়যন্ত্র করা হলে তার ফল হবে নেতিবাচক এবং সুদূরপ্রসারী। অপরদিকে হুমকিতে পড়ে যাবে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের জনশক্তি বাজার। তাই কালক্ষেপণ না করে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তের পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝির দ্রুত অবসান কাম্য। যেহেতু বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে প্রথমবারের মত কোন কূটনৈতিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটল, সেহেতু মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে দাবিকারী এ দলটির পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তের স্বার্থে সর্বোচ্চ ব্যাবস্থা আশা করে জাতি। পাশাপাশি সকল ধরণের জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করে আওয়ামীলীগকে তাদের নির্বাচনী ওয়াদা রক্ষা করতে হবে। একই সাথে বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তিতে ওয়াদাবদ্ধ হতে হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে আরো দ্রুত, সুষ্ঠু এবং কার্যকর করে তোলবার জন্য। সরকারকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আরো সাবধান থাকতে হবে এবং এ ধরণের ঘটনাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করার মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আরো উজ্জ্বল করে তুলতে হবে। বাঙ্গালি বরাবরই অথিতিপরায়ন। তাই বাংলার মাটিতে বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী সকলের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যাপারটি কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করে দেখাতে হবে।