আমার শখের রাজনীতির ১৫ দিন

মোঃ সাইফুল ইসলাম সোহেল
Published : 15 Sept 2017, 05:13 PM
Updated : 15 Sept 2017, 05:13 PM

.

এইচএসসি পাশের পর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ভর্তি হয়েছিলাম। ৮-১০ দিন ক্লাস করার পর চলে যাই চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

হাবিপ্রবিতে থাকার সময় ১৫ দিনের মত রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। সেই সময়ের কথা আজও ভর্তি পরীক্ষার সময় আসলে মনে পড়ে। কারণ আজও অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় পাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে, তারাও আমার মত ইচ্ছার বিরুদ্ধেই রাজনীতিতে যোগ দিবে।

ভর্তির কয়েকদিন আগেই পরিচিত একজন আমার জন্য হলে একটা সিট ম্যানেজ করে দেয়। যিনি করে দেন তিনি ছিলেন খ দলের সাপোর্টার। ক দলের এক নেতার সাথে বন্ধুত্বের সুবাদে সিটটা নিয়েছিলেন।

যেদিন হলে উঠব সেদিন ক দলের বড় ভাই বললেন হলের গেটে এসে ফোন দিও। আমিও তাই করলাম। কিছুক্ষণ পর কয়েকজনকে পাঠালেন। তারা এসে এক প্রকার ইন্টারভিউ নিলেন। আমাকে বললেন পরীক্ষার সময় কোথায় ছিলে? আমি বলেছিলাম ২– নাম্বার রুমে। তারা সাথে সাথে কাকে যেন ফোন দিল। তারপর আমাকে নিয়ে যাওয়া হল এবং বলা হল ঐ রুমের ভাইয়ের নাম বলার দরকার নাই। কারণ ঐ রুমের সবাই খ দলের।

হাবিপ্রবি'র রাজনীতির পূর্বে আমার রাজনীতির কোনো ইতিহাস নাই। তবে কিছুটা সাপোর্ট করতাম খ দলকে। কিন্তু হলে একটা সিটের জন্য আজ আমায় ক দলের সাথে ঘুরতে হবে! শুধু তাই নয় কোথাও যেন ঐ রুমের ভাইয়ের পরিচয় না দেই। তাহলে রুম ও মানও দুটাই যাবে। বাধ্য হয়ে আমার অতি পরিচিতের পরিচয় দেয়া থেকে বিরত থাকলাম।

আমাকে রাজনীতির কিছু ট্রেনিং দেয়া হয়েছিল। বোঝানো হয়েছিল সবাই গ্রুপ করে চলবে। গ্রুপের বাইরে চলা মানেই র্যাগ দিবে! আর সিনিয়র ভাইরা যা বলে মেনে চলবে। না মানলে ভার্সিটিও ছাড়া লাগতে পারে! অবাক হয়ে ভাবছিলাম, কার ভার্সিটি কে ছাড়ায়।

একদিন আমাকে যিনি সিট দিয়েছিলেন তিনি বলেছিলেন "রাতে একটা মিছিল হবে, তুমি সামনে সামনে থাকবা। অন্যথায় আমার সিনিয়ররা বলবে তোমার দেয়া সিটের ছেলেটা কোথায়?"

রাত ৮ টার দিকে একটা মিছিল শুরু হল। আমি যথারীতি সামনে সামনে হাঁটছি। আর সেই ভাইকে খুঁজছি। কিন্তু ভাইকে কোথাও দেখলাম না। হয়তো ভীড়ের ভিতর কোথাও আছেন।

আমার গলাও ভালই চলল। ওমুকের (এক শিক্ষক, নাম মনে নেই) কালো হাত ভাঙ্গার মিছিল হল, ক্লাস বর্জনের ডাক এল, চামড়াও তোলার কথা বলা হল। কিছুক্ষণ পর দেখি পুলিশও আসছে। আমি বড় ভাই বাদ দিয়ে ক্লাসমেটদের খুঁজতে লাগলাম। তাদেরকেও খুব একটা দেখলাম না! পরদিন শুনলাম তাদের অনেকেই সেই মিছিলে যায়নি।

এবার ভাবলাম আচ্ছা, আমি যার হাত ভাঙ্গতে চাই, চামড়া তুলে, গালে জুতা মারতে চাইতেছি তিনি কে? তাকেতো আমি দেখিইনি। চিনিও না! ভাবতে ভাবতে আস্তে আস্তে ভীড় থেকে হালকা আঁধারের দিকে গেলাম। অতঃপর পলায়ন….

সত্যিকথা কি! হলের সংকটটাই বোধহয় রাজনীতিতে প্রবেশ করানোর প্রথম মাধ্যম। তাই ভার্সিটি গুলোতে এই সংকট থাকবেই। একটা সিটের বিনিময়ে রাজনীতি! মিছিল থেকে ফেরার পরই বাবার ফোন পেয়েছিলাম।

বাবা বলছিলেন রাজনীতিতে যাসনা, মিছিল মিটিংয়ে যাসনা। ভালভাবে পড়াশোনা করিস। সেদিন শুধু শুকনো-মলিন মুখে বলেছিলাম, না বাবা আমি মিছিলে যাই না। যাব কেন?