উন্নয়নবঞ্চিত বগুড়া ঐতিহাসিক নবাব বাড়িটাও হারালো!

রেজওয়ান আব্দুল্লাহ
Published : 20 April 2016, 07:36 PM
Updated : 20 April 2016, 07:36 PM

নবাব বাড়ী, সেই সাড়ে তিনশত বছরের নবাব বাড়ী! যার অবস্থান বাংলাদেশের বগুড়া জেলায়। ঠিক বগুড়া শহরের প্রান কেন্দ্রে। যেটা ছিল দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি নিদর্শন। এসবই এখন অতীত মাত্র একদিনের ব্যবধানে। দেশের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনটি বিক্রি হয়ে গেল বড্ড গোপনে। কেউ প্রতিবাদ করার কোন সুযোগ পেলনা। কারন যখন আমাদের দেশপ্রেমিক (?) মিডিয়া সবাইকে জানলো তখন সব শেষ হয়ে গেছে।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর স্মৃতিবিজড়িত প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী 'নওয়াব প্যালেস' ওয়াকফ সম্পত্তি বলেই পরিচিত। এ কারণে তা হস্তান্তরযোগ্য নয়। তুবও এটা বিক্রি হয়ে গেল?

'নবাব প্যালেস ওয়াকফ সম্পত্তি কি না, তা আমাদের জানা নেই। ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন থাকলেও তা অন্তত ১০০ বছরের পুরোনো না হলে রাষ্ট্র তার অধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। এসব মিলিয়ে একটি জটিলতা ছিল। ফলে আমরা বেশি দূর এগোতে পারিনি। তবে ক্রেতারা এই ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থাপনাটি রেখেই তাকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন। বিদেশে অনেক ঐতিহাসিক ভবন এভাবেও সংরক্ষণ করা হয়েছে।' –দৈনিক প্রথম আলো

গোপনে বিক্রি হল যেভাবে: শুক্রবার (১৫/০৪/২০১৬) বগুড়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার ঢাকায় গিয়ে নওয়াবের দুই পুত্র সৈয়দ হামদে আলী ও সৈয়দ হাম্মাদ আলীর কাছ থেকে নওয়াব প্যালেসের ১ একর ৫৫ শতাংশ সম্পত্তির দলিলে স্বাক্ষর নেন। রোববারের কার্যদিবসে তা সম্পাদন দেখানো হয়। অনিয়ম যে গোপনে করতে হয় এটা তারই উদাহরন।

ঐতিহ্যবাহী সম্পদের মূল্য: শহরের সার্কিট হাউস-সংলগ্ন ওই এলাকায় প্রতি শতাংশ সম্পত্তির বাজারমূল্য গড়ে কোটি টাকা। সেই হিসাবে নওয়াব প্যালেসের বাজারমূল্য কমপক্ষে দেড় শ (১৫০) কোটি টাকা। অথচ মাত্র ২৭ কোটি ৬০ লাখ টাকায় বিক্রি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটেছে। এত সস্তা জিনিস কি সরকার কিনে নিয়ে দেশের ঐতিহ্য রক্ষা করতে পারত না? যদিও ৩ জন ক্রেতার একজন হলেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ছেলে এবং জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মাসুদুর রহমান। যেভাবেই হোক আওয়ামীলীগইতো ক্ষমতায় আছে! একদিকে আমরা নিজেদেরকে মধ্যম আয়ের দেশ বলে গলা ফাটাচ্ছি অন্যদিকে দেশের সম্পদ রক্ষা করতে পারছিনা এটা খুবই লজ্জাজনক।

যদিও ক্রেতাদের একজন বলেছেন, সরকার চাইলে আমরা সম্পত্তি ছেড়ে দিতে রাজি আছি। সরকার চিঠি দিলেই আমরা ছেড়ে দেব।'

তাই আশা করব এরকম ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন সরকারের নিজের আয়ত্বে নিয়ে নেওয়া উচিত।

বগুড়া সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগ হওয়ার কথা অনেক আগেই ছিল। কিন্তু হয়নি কারন সুষম উন্নয়নে আমরা বিশ্বাসী না। আমার মনে পরে ১৯৯৬-২০০১ সালের মধ্যে কোন এক সময় বগুড়া আলতাফুন্নেসা খেলার মাঠে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দেশে নতুন কোন বিভাগ হলে বগুড়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বর্তমান অবস্থা দেখলে মনে হয় ঐটা ছিল রাজনৈতিক বক্তব্য! কারন তারপর দেশে অনেক নতুন বিভাগ হয়েছে কিন্তু বগুড়া জেলা এখন তার অতীত ঐতিহ্যগুলো হারাতে বসেছে কর্তৃপক্ষের অযত্ন আর অবহেলায়।

এখন মনে হয় আমাদের দেশের রাজনীতি কতটা নির্মম!