শিক্ষকের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন: আবারো শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীর শ্লীলতাহানী ও ধর্ম অবমাননা

রেজওয়ান আব্দুল্লাহ
Published : 31 May 2016, 08:10 PM
Updated : 31 May 2016, 08:10 PM

কি শুরু হলো এসব। শিক্ষক শ্যামল কান্তির ঘটনা শেষ হতে না হতেই আরো দুটি ঘটনা ঘটে গেল। একটি ঘটেছে দিনাজপুরে অন্যটি বগুড়া জেলার শেরপুরে । আমরাও ছোট বেলায় পড়াশুনা করেছি কখনো শিক্ষকদের সম্পর্কে কোন খারাপ কথা শুনিনি। কিন্তু বর্তমানে কিছু শিক্ষক এত উৎশৃঙ্খল আচরন করছেন যার কারনে সমগ্র শিক্ষক সমাজের উপর তার বিরুপ প্রভাব পড়ছে।

এখন ঘটনা দুটিতে যা ঘটেছে-

দিনাজপুরের ঘটনায় জানা যায়,

দিনাজপুরে শ্লীলতাহানির পর ৭ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে কান ধরে স্কুল ক্যাম্পাস ঘুরিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে রিজ স্কুলের শিক্ষক তপু রায়ের বিরুদ্ধে। স্কুলের চেয়ারম্যানের নির্দেশে অন্যায়ভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে তার অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন। ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে দিনাজপুর শহর। জড়িত ওই শিক্ষকসহ তার অপকর্মকে আড়ালের চেষ্টাকারীদের গ্রেফতার ও উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে শহরে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

ছাত্রীর অভিভাবকসহ বক্তারা জানান, শহরের মুন্সীপাড়া এলাকায় সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত রিজ স্কুলে সকাল ৮টা থেকে ১টা পর্যন্ত এবং বিকাল ৪টা থেকে ৮টা পর্যন্ত দুই শিফটে ক্লাস হয়। গত ২৫ এপ্রিল রাতে ওই ছাত্রীকে শ্রেণিকক্ষে একা পেয়ে বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা-বিষয়ক শিক্ষক তপু রায় তার শ্লীলতাহানি ঘটান। ওই ছাত্রী বাড়িতে এসে অভিভাবককে জানালে অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে। পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমৃত সাহা সেতু ওই ছাত্রীকে বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করেন এবং ঢাকা থেকে চেয়ারম্যান এলে বিষয়টি নিয়ে বসা হবে বলে জানান। ক'দিন পর বিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান ওলিউর রহমান নয়ন ঢাকা থেকে দিনাজপুরে এলে ওই ছাত্রী ও তার অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে যান। কিন্তু চেয়ারম্যান অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করার অভিযোগে ওই ছাত্রীকে কান ধরে পুরো বিদ্যালয় ঘোরার আদেশ দেয়। অন্যথায় ওই ছাত্রীকে বিদ্যালয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলে জানিয়ে দেন। পরে ওই ছাত্রী বাড়িতে এসে অস্বাভাবিক আচরণ করে এবং আত্মহত্যার চেষ্টা করে। –নয়াদিগন্ত

অন্যদিকে বগুড়ার ঘটনায় জানা যায়, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কল্যানী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক বিপ্লব কুমার ওরফে কৃষ্ণ কৃমার তার ফেসবুক পেজে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে কটূক্তি, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য সহ ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন অশালীন লেখা প্রকাশ করে। এই কথা প্রকাশ হলে গতকাল সোমবার সকালে স্থানীয় জনতা স্কুল মাঠে জড়ো হয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ করে। এ সময় স্কুল পরিচালনা কমিটির জরুরী মিটিংয়ে প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ওই শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার, ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ও থানায় অভিযোগ দায়েরের সিদ্ধান্ত নিলে স্থানীয় জনতা শান্ত হয়।

এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের কল্যানী উচ্চবিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক বিপ্লব কুমার ওরফে কৃষ্ণ কৃমার তার ফেসবুক আইডির পেজে ইসলাম ধর্ম ও রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে নানা বাজে মন্তব্য প্রকাশ করে। বিষয়টি ২৯ মে ওই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র নাজমুল ইসলামসহ কয়েকজন ছাত্র বিএসসি শিক্ষককে জানিয়ে বলে আপনার ফেসবুক আইডিতে আমাদের ধর্ম নিয়ে বাজে মন্তব্য লেখা আছে। আপনি এগুলো মুছে ফেলেন কিন্তু ওই শিক্ষক সে বিষয়ে কোনই কর্ণপাত করেনি। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এলাকায় মুখে মুখে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার মানুষ বিষয়টি নিশ্চিত হতে কৃষ্ণ কুমার আইডির ফেসবুক পেজ ওপেন করে ঘটনার সত্যতা জানতে পারে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে রোববার সন্ধ্যা হতেই কল্যানীসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। তারা ওই শিক্ষককে স্কুল থেকে বহিষ্কার, গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে গতকাল সোমবার সকাল হতেই স্কুল মাঠে জড়ো হতে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে স্কুল মাঠে লোক সমাগম বাড়তে বাড়তে এক সময় জনসমাবেশে পরিণত হয়। তাদের মুখে তখন একটাই কথা ধর্মের অবমাননাকারী শিক্ষককে গ্রেফতার করে উপযুক্ত বিচার করতে হবে। কল্যানী গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব, হিটলারসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি, রাসুল (সাঃ) নিয়ে অবমাননাকারী কোন ব্যক্তিকে এখানে আসতে দেয়া হবে না। তাকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ওই স্কুলের ইসলাম ধর্ম শিক্ষক মাওঃ নজির উদ্দিন জানান, যা শুনেছি ওই ধরনের লেখা কোন মুসলমানের পক্ষেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। তিনি কি উদ্দেশে এই জঘন্য কাজ করেছেন তা আমরা বলতে পারবো না। এ ব্যাপারে শিক্ষক বিপ্লব কুমার ওরফে কৃষ্ণ কৃমার বলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বীর যুবসংঘের ফেসবুক আইডি থেকে আমার ফেসবুক আইডিতে এসেছে। ভুল করেই শেয়ার হয়েছে। তা আমি জানি না। –ইনকিলাব

উপরোক্ত ঘটনা দুটি শিক্ষক সমাজকে নি:সন্দেহে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবে। অন্য কোন পেশা হলে হয়তো এত সমালোচনা হতো না কিন্তু শিক্ষকরায় কেন ঘুড়ে ঘুড়ে এসব অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে! যে শিক্ষক দিনাজপুরে ছাত্রীর শ্লীলতাহানী করেছে তার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি। এরকম শিক্ষক সমাজে না থাকায় ভাল। এরাই কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে নষ্ট করছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তারপরও কেন জেনে শুনে কিছু মানুষ ধর্ম নিয়ে সমালোচনা করে সমাজে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে তা বোধগোম্য নয়।

পরিশেষে আশাকরি শিক্ষক তপু রায়, শিক্ষক বিপ্লব কুমার ওরফে কৃষ্ণ কৃমার ও যে ব্যক্তি শ্লীলতাহানীর পর ছা্ত্রীর কান ধরে ঘুড়িয়েছেন তাদের সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। যেন ভবিষ্যতে এরকম কাজ করার কোন সাহস কোন ব্যক্তি না পায়। যদিও পরিমলদের বিচার নাহওয়ায় এসবরে মূল কারন।