কলকাতা-জয়পুর-আগ্রা ভ্রমণ

সোলাইমান ইসলাম নিলয়
Published : 6 Sept 2017, 07:39 PM
Updated : 6 Sept 2017, 07:39 PM


রানী ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পার্ক যা নির্মাণ শুরু হয় ১৯০৬ সালে, ১৯২১ সালে হয় উদ্বোধন।

সকাল ১০.৩০ মিনিটে রিজেন্ট এয়ারে যাত্রা করলাম কলকাতার উদ্দ্যেশে। এয়ারের নাস্তা খেতে খেতে দেখি কলকাতা নেতাজি সুভাস চন্দ্র বোস আন্তজার্তিক বিমান বন্দরে পৌছে গেলাম সকাল ১১ টায়। পরবর্তী গন্তব্য জয়পুর, ফ্লাইট রাত ১০টায়, এই সময়টাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে এয়ারপোর্ট থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে বাস ধরলাম।। ধর্মতলায় এসেই নচিকেতার সেই বিখ্যাত গানের কথা মনে পড়লো – যদি হঠাৎ আবার দেখা হয় … সেদিনের রাজপথ, পথভোলা জেনে বুঝে, অবিরাম হেঁটে যাওয়া নির্জনতার খোঁজে – সেই ধর্মতলা, ধুলো আর ধোঁয়ামাখা। গুনগুন করতে করতে চলে এলাম কলকাতা নিউ মার্কেট, তখন সুর্য্য মাথার উপর থেকে পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে, নিউ মার্কেটের পাশে আমানিয়া রেষ্টেুরেন্টে দুপুরের আহার শেরে নিলাম।

এবার পার্কষ্ট্রিট হয়ে, মেট্রোরেলে ময়দান ইষ্ট্রিশন, হেটে কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ রানী ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পার্ক যা নির্মাণ শুরু হয় ১৯০৬ সালে, ১৯২১ সালে হয় উদ্বোধন।

ভিক্টোরিয়া পার্কে ছবি তুলতে তুলতে কখন যে বিকাল গড়িয়ে সন্ধা হয়ে গেল। মেট্রোরেলে ময়দান ষ্টেশন থেকে দমদম ষ্ট্রেশনের দিকে। দমদম ষ্টেশনে নেমে আমি সেই বিখ্যাত বাঙ্গালী জমিদার কালী বাবুর ১৭শ শতকে কলকাতা থেকে খুলনা পর্যন্ত নির্মাণ করা পুরান যশোর রোড ধরে এগোচ্ছি দমদম এয়ারপোর্টের দিকে।


আগ্রাফোর্ট বা লালকেল্লায় প্রবেশ পথের দৃশ্য।

এয়ারপোর্টে যখন পৌঁছলাম ততক্ষনে রাত সাড়ে আটটা। এয়ারপোর্টের সেন্টাল এসিতেও খামছি সফর সঙ্গীর না আসা দেখে। অবশেষে আসলো রাত নটায়। প্লেনে উঠার পর, প্লেন কিভাবে ভাষা ও সংস্কৃতিকে বদলে দেয় তা দেখলাম। ঠিক রাত ১২টায় প্লেন ল্যান্ড করলো রাজকীয় রাজস্থানের জয়পুর বিমান বন্দরে।


দিল্লির দরবার, যেখানে মোগল শাসকগন দরবার করতেন।

জয়পুর এয়ারপোর্টটি সিমসাম, মধ্যরাত লোকজনও কম, যাত্রীরা যার যার মত করে চলে যাচ্ছে, বেরিয়ে দেখি আমরা দু'চারজন ছাড়া কেউ নেই, রাস্তায় বের হয়ে মধ্যরাতে জয়পুরের আকাশ হাল্কা ঝিরিঝিরি বাতাস কি এক অসম্ভব ভালোলাগাক্ষন। চারশত রুপি দিয়ে ট্যাক্সি ভাড়া করলাম ১৩ কিলোমিটার দূরের জয়পুর রেল ষ্টেশনের জন্য, জয়পুর থেকে আগ্রার ট্রেন রাত আড়াইটায়, ফরেন-কোটায়ই টিকিট কেটে যথা সময়ে ট্রেনে উঠলাম। ভোরে এসে পৌছলো আগ্রা ষ্ট্রেশন, বিশ্রাম ও নাস্তা সেরে বের হলাম আগ্রাফোট দেখতে-


শিশ মহল, আগ্রাফোট, আগ্রা, দিল্লি।

আগ্রা ফোর্ট বা আগ্রা লালকেল্লা মোগলদের রাজকীয় আবাসস্থল ছিল। দুর্গটির অভ্যন্তরে অনেক প্রাসাদ, মিনার এবং মসজিদ আছে, যা আমাদের একে একে ঘুরে দেখাচ্ছে গাইড, এসব ষোড়শ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের মধ্যবর্তী সময়ে নির্মিত হয়।


তাজ মহলের পাথর দেখেছ, দেখেছ কি তার প্রান? অন্তরে তার মমতাজ নারী, বাহিরে শাহজাহান।

দুর্গ অভ্যন্তরে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান সমুহ যা দেখলাম তা হল – খাস মহল, শীশ মহল, মুহাম্মান বুর্জ, দেওয়ান-ই-খাস, দেওয়ান-ই-আম, মোতি মসজিদ এবং নাগিনা মসজিদ।

সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজ এর ভালোবাসর স্মৃতি তাজমহল।

আগ্রা ফোট থেকে ২.৫ কিলোমিটার দুরে অবস্থান তাজমহলের, তাজমহল দেখতে জনপ্রতি দর্শনী ৫২০ রুপি (সার্কভুক্ত), স্থানীয়দের জন্য ২০ রুটি। মুঘল বাদশাহ শাহজাহানের দ্বিতীয় স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মমতাজ মহল নামে পরিচিত, তাদের চতুর্দশ কন্যা গৌহর বেগমের জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বাদশাহ স্ত্রীকে অত্যান্ত ভালোবাসতেন তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। একটু সময় নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলাম ভালবাসার এক অপূর্ব নিদর্শন পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য্যের এই স্থাপনাটি। তবে তাজমহলের দিনের রুপ এক রকম আবার চাঁদের আলোয় রাতের তাজ ধারণ করে অন্য এক অসাধারণ রুপ।


১৫৫৭ সালে গুজরাট জয়ের প্রতীক হিসাবে তৈরী এই বুলন্দ দরওয়াজা।

আগ্রা থেকে ৩৬ কিমি দূরে বাদশাহ আকবরের একসময়ের রাজধানী ফতেপুর সিক্রিতে বাসে করে যাত্রা করলাম । মাইল ছয়েক দীর্ঘ পাহাড় চুড়ায় আকবর ১৫৭১ খ্রি আগ্রা থেকে এখানে তাঁর নতুন রাজধানীর গড়ে তোলেন।


ফতেপুর সিক্রিতে প্রবেশ পথে ঢুকেই সোজা চোখে পড়ল আকবরের ধর্মীয় গুরু সেলিম চিস্তির শ্বেতপাথরের সমাধি সৌধ।

কথিত আছে, নিঃসন্তান আকবর সন্তান কামনায় ফকির শেখ সেলিম চিস্তির দ্বারস্থ হলে পীরবাবার আর্শীবাদে বাদশাহর হিন্দু মহিষী যোধাবাই এর গর্ভে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তান। গভীর কৃতজ্ঞতায় বাদশাহ সেই সন্তানের নাম রাখেন সেলিম, যিনি ইতিহাসে বাদশাহ জাহাঙ্গীর নামে পরিচিতি পান। আর খাজা সেলিম চিস্তির সাধনভূমি ফতেপুরে আকবর হিন্দু ও মুসলিম স্থাপত্যশৈলীতে দুর্গ ও একাধিক প্রাসাদ নিয়ে গড়ে তোলেন এক অনুপম নগরী যা ইতিহাসে ফতেপুর সিক্রি নামে খাত।


বুলন্দ দরওয়াজার ভিতরের দৃশ্য, ফতেপুর সিক্রি, উত্তর প্রদেশ।

অনেক উঁচুতে হওয়ায় বড় বড় সিঁড়ি বেয়ে প্রধান ফটকে উঠতে বেশ কষ্ট হল ভরদুপুরে। ১৫৫৭ সালে গুজরাট জয়ের প্রতীক হিসাবে তৈরী এই বুলন্দ দরওয়াজা। প্রবেশ পথে ঢুকেই সোজা চোখে পড়ল আকবরের ধর্মীয় গুরু সেলিম চিস্তির শ্বেতপাথরের সমাধি সৌধ, এর পরে একে একে দেখলাম দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস, যোধাবাই প্রাসাদ, মারিয়ামের প্রাসাদ, পচিশি কোট, হাওয়ামহল, বীরবলের প্রাসাদ, পঞ্চমহল, জামা মসজিদ, কারাভানসরাই, হাথি পো, হামাম, হিরণ মিনার, আকবরের প্রাসাদ। ফতেপুর সিক্রি পাহাড়ের উপরে হওয়ায় অনেক দূরের জনপথও দেখা যায় যা অনুর্ভর এক মরুময় জনপথ। ১৫৮৫ খ্রিষ্টাব্দে পানির প্রচণ্ড অভাবের জন্য ফতেপুর সিক্রি পরিত্যক্ত হয়।

নিজাম উদ্দিন আউলিয়া দ্রুতযান ট্রেন ধরে যাত্রা করলাম দিল্লিতে উদ্দেশ্যে শ্রীনগরের ফ্লাইট ধরা।