ভূস্বর্গ কাশ্মীর ভ্রমণ

সোলাইমান ইসলাম নিলয়
Published : 22 Sept 2017, 04:45 AM
Updated : 22 Sept 2017, 04:45 AM

কল্পনার কাশ্মীর মানে আপেলের দেশ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও প্রকৃতিতে জবুথবু হয়ে পড়া দুর্গম কোন গিরি পর্বতশৃঙ্গের জনপদ। কল্পনা ও বাস্তবের সঙ্গে মেলবন্ধন করতে ভোর ৫.৪০ মিনিটে গো-এয়ারে দিল্লি থেকে যাত্রা করলাম জম্মু এন্ড কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে।

ভোরের সূর্যের উদয়াগমনে প্রকৃতি অন্ধকার থেকে আলোকিত হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং ভ্রমণ পিপাসুদের আনন্দ দিতে উড়োজাহাজ পর্বত শৃঙ্গের খুব কাছ থেকে উড়ছে। সূর্যের হলুদ ও লালচে আলো যখন বরফাচ্ছাদিত পর্বতশৃঙ্গের উপর পড়লো তখন মনে হল পর্বত শৃঙ্গের ঐ অংশটুকু স্বর্ণের প্রোলেপ দেয়া। অসাধারণ এই দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য নির্ভর করে আবহাওয়া ভালো থাকার উপর। ১ ঘন্টা ২০ মিনিট যাত্রার পর সকাল ৭ টায় প্লেন অবতরণ করলো শ্রীনগর এয়ারপোর্টে। নেমেই বুঝলাম পুরো কাশ্মীর সৃষ্টিকর্তার শীতাতপে নিয়ন্ত্রিত। বিমানবন্দরের ওয়াইফাইয়ে তাপমাত্রা দেখলাম ৫ ডিঃ সেঃ।

কাশ্মীরের রূপ দেখতে হলে আপনাকে আসতে হবে কমপক্ষে তিনবার- বরফ, ফল ও ফুলের মৌসুমে। কাশ্মীর উপতক্যায় চারটি ঋতুর বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়- শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ।

১. শীত: মধ্য নভেম্বর- মধ্য মার্চ (৪ মাস), ২. বসন্ত: মধ্য মার্চ- মধ্য মে (২ মাস), ৩. গ্রীষ্মকাল: মধ্য মে – মধ্য সেপ্টেম্বর (৪ মাস), ৪. শরৎ:  মধ্য সেপ্টেম্বর – মধ্য নভেম্বর (২মাস)।

চারটি ঋতু থাকলেও প্রধানত দু'টি ঋতুই দীর্ঘ মেয়াদী শীত ও গ্রীষ্মকাল।

বরফ দেখতে হলে যেতে হবে স্নো পড়ার পর শীতকালের শেষে। এপ্রিল- মে মাসে দেখা যাবে টিউলিপ ও চেরীফুল। টিউলিপ স্বল্প মেয়াদী যা ২০-২৫ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এপ্রিলের এক তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত টিউলিপ গার্ডেন খোলা থাকে। এপ্রিলের শেষে সম্পূর্ণ ফুটন্ত টিউলিপ দেখতে পাওয়া যায়। এপ্রিল ও মে মাসে সাদা সাদা চেরীফুলও ফোটে। যা দেখে শুধু মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকবেন।

১৫ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বরে কাশ্মীর উপতক্যায় মাঠে মাঠে ছেয়ে যায় বেগুনী রঙ্গের জাফরান ফুল। জাফরান ফুলের লাল পাঁপড়ি থেকে তৈরী হয় জাফরান। যাকে বাণিজ্যিক ভাবে রেড গোল্ড বলা হয়। উন্নত জাতের জাফরান স্পেন, ইরান ও ভারতের কাশ্মীরে উৎপাদিত হয়। আর চিনার বৃক্ষের পাতার আগুন আপনার মনের ফাগুন ধরিয়ে দিতে যথেষ্ট।

দেশে তো ফুল ও ফল দেখি তাই বরফের মৌসুমকেই বেছে নিলাম ভ্রমণের জন্য। একটা সময় বরফে জনজীবনে দেখা দেয় বিপর্যয়, বন্ধ হয়ে যায় রাস্তাঘাট, ঐ সময়টাকে এড়িয়ে আসতে হবে। চারিদিকে পর্বতমালা বেষ্টিত শ্রীনগর বিমান বন্দর। মূলত পীরপাঞ্জাল পর্বতমালা কাশ্মীরকে ভারতের সমতল থেকে পৃথক করেছে।

ইমিগ্রান্ড কর্মকর্তা প্রশ্ন করলো হয়্যার ইউ কাম ফ্রম? বললাম, ফ্রম বাংলাদেশ। বাংলাদেশ শুনে আবার প্রশ্ন করলো, আর ইউ মুসলিম? হ্যাঁ উত্তর শুনে নিজেই ফর্মটা পূরণ করে দিলেন। বাংলাদেশি মুসলিম পরিচয় দিলে অন্যরকম মর্যাদা পাওয়া যায়।

মজার ব্যাপার এখানে অনেকেই বাংলাদেশকে চিনেনা। ইয়াংরা বাংলাদেশ বলতে সাকিব-তামিমদের চিনে। বৃদ্ধরা বাংলাদেশ বলতে বুঝে পাকিস্তান থেকে আজাদী লাভ করা পূর্ব পাকিস্তান।

৩০০ রুপি দিয়ে ট্রাক্সি ভাড়া করে হোটেলে চললাম। বিমানবন্দর থেকে ২৩ কিঃ মিঃ দূরের ডাললেকের মমতা চৌক। কাশ্মীরিরা মোড়কে চৌক বলে। সময় লাগলো ২৫-৩০ মিনিট।

শ্রীনগরের প্রাণ ডাললেক, ডাললেকের দক্ষিণে শঙ্করাচার্য মন্দির, পূর্বে হারিপর্বত এবং পর্বতের পাদদেশে মুঘলদের গার্ডেন, উত্তর পশ্চিমাংশে মুসলমানদের পবিত্র স্থান হযরত বাল মসজিদ ও কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়।

লাকুতিডাল, বড়াডাল, গাগরিবাল এই তিনের সমন্বয়ে শ্রীনগরের ডাললেক। এর একটি অংশকে আবার নাগিন লেক নামেও ডাকা হয় যা ভাসমান উদ্যান দ্বারা পৃথক হয়েছে। ডালের দৈর্ঘ্য ৬ কিঃ মিঃ প্রস্থ ৩ কিঃ মিঃ উচ্চতা কমবেশি ৬ মিটার পর্যন্ত।

ভূস্বর্গ কাশ্মীরে মুঘল শাসকরা দৃষ্টিনন্দন বাগান তৈরী করেন – নিশাত বাগ, শালিমার বাগ, চশমাশাহী, পরীমহল, যা শ্রীনগররের শ্রীকে আরো বৃদ্ধি করেছে। শ্রীনগরের পর্যটন শিল্প মূলত ডাললেক কেন্দ্রীক, ডালের পাড়েই বেশিরভাগ হোটেল ও মোটেলগুলো গড়ে উঠেছে। আর ডাললেকে রয়েছে ভাসমান বোট হাউজ, শিকারা ও ভাসমান বাজার।