গুলমার্গ: কাশ্মীরের তুষার ঢাকা উপত্যকা

সোলাইমান ইসলাম নিলয়
Published : 2 Oct 2017, 10:26 AM
Updated : 2 Oct 2017, 10:26 AM

কাশ্মীরের বড় একটি অংশ ভারত শাসিত হলেও জটিল ভূ-রাজনৈতিক হিসাব নিকাশে এক সময়ের স্বাধীন কাশ্মীর এখন তিনটি দেশের অংশ। ভারত শাষিত অংশ জন্মু ও কাশ্মীর, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রীত অংশটি আজাদ কাশ্মীর আর গিলগিত, বালতিস্তান ও লাদাকের অংশ বিশেষ চীনের অধীনে। যা মোট আয়তনের ৪৫% ভারত, ৩৬% পাকিস্তান ও ১৯% চীনের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ তার মধ্যে ৬০ লাখ সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম কাশ্মীরে, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ট জম্মু এবং বিশাল আয়তন নিয়েও মোট জনসংখ্যার ২.৫% সংখ্যা লগিষ্ট বৌদ্ধদের ছোট তিব্বত খ্যাত লাদাকে বসবাস।

গুলমার্গ, জম্মু এন্ড কাশ্মীর উপত্যকার বারমুলা জেলার অন্তর্গত। যা পাকিস্তান সীমান্ত থেকে মাত্র ৮ কিঃ মিঃ দূরে। শ্রীনগর থেকে গুলমার্গের দূরত্ব ৫৬ কিঃ মিঃ। শীতল ঝর্ণা, পাহাড়ী আঁকা- বাঁকা পথ ধরে গুলমার্গ যেতে সময় লাগবে ১.৩০ ঘন্টা থেকে ২ঘন্টা।

গুলমার্গ নাম করণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যায়। হিন্দু বেদতা শিবের স্ত্রীর নামে এই পর্বতের নাম রাখা হয় গৌরিমার্গ যা কালক্রমে নাম হয়ে যায় গুলমার্গ।

অন্যদিকে কাশ্মীরের সুলতান ইউসুফ শাহ্ চক ১৫৮১ সালে আসেন এই ফুলে সাজানো পাহাড়ী উপত্যকায়। কাশ্মীরি ভাষায় গুল মানে ফুল পাহাড়ের ঢালে ফুলের বাহার দেখে তিনি এর নাম রাখেন গুলমার্গ বা ফুলের উপত্যকা।

গুলমার্গের অধিবাসীদের একমাত্র আয়ের উৎস নির্ভর করে পর্যটকদের আগমনের উপর। আবার সব সময় মৌসুম থাকে না। তাই তারা হয়তো আপনাকে তাদের সেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে পারে। আপনি চাইলে নিতে পারেন কাশ্মীর ট্যুর কর্পোরেশনের তালিকাভুক্ত কোন গাইড সে আপনাকে গন্ডোলা ক্যাবল কারে টিকিট কাটা সহ বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবে।

কাশ্মীরের গুলমার্গ পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় এক উপত্যকা। এখানের মূল আকর্ষণ দুটি একটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্যাবল কার, অন্যটি এশিয়ার চতুর্থ স্কিং অঞ্চল। ক্যাবল কার গন্ডোলার প্রথম ধাপঃ গন্ডোলা টু কুংডুরে, যা প্রায় ১০,০০০ হাজার ফিট উচুতে এবং দ্বিতীয় ধাপঃ কুংডুরে টু আফারওয়াত যা প্রায় ১৩,৭৮০ ফিট উচুতে। যাবার পথে উপভোগ করতে পারবেন বরফে ঢাকা প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য। সেখানে মনে হতে পারে স্বর্গের কোন জায়গায় আপনার বিচরণ হচ্ছে।

বরফে স্কিং করার জন্য গুলমার্গ উপযোগী জায়গা। এশিয়ার চতুর্থ স্থানে রয়েছে যার অবস্থান। শীতে এখানে বিভিন্ন ধরনের স্কিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া কাঠের তৈরী স্লিজিং এবং বিভিন্ন বরফের মটর রাইড উপভোগ করতে পারবেন।

এখানে রয়েছে বাবা ঋষির মাজার, সেন্ট মেরী চার্চ। বিশ্বের সর্বোচ্চ উচুস্থানে গলফ্ খেলার মাঠ। বসন্তে সবুজে ছেয়ে যায় সম্পুর্ণ গালফ্ ক্লাব, মে-জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিস্তৃর্ণ বাগিচায় ধরে নানান রঙ্গের ফুল। আবার শীতে বরফে ঢাকা পড়ে যায় গুলমার্গ। মধ্য ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত তীব্র শীতে পানি সরবরাহের লাইনেও বরফ জমে যায়।

একটা অন্যরকম ঘোরের মধ্যেই কেটে যাবে সারাটা দিন। পড়ন্ত বিকেলে যখন বরফ শীতল পাইন গাছের ফাকে ফাকে মিষ্টি রোদের উকি ঝুকিতে পাহাড়ী আকা বাকা পথ ধরে উচু থেকে শ্রীনগর ফিরবেন তখন আপনার মনটা পড়ে থাকবে শুভ্র শীতল গুলমার্গে।