আজকাল প্রায়ই আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হচ্ছি যেগুলোর জন্য আমরা প্রস্তুত নই। সিদ্ধান্তগুলো পূর্বে কোন আলোচনা বা মতামত বিশ্লেষণ ছাড়াই নেয়া হচ্ছে। তারপর শুরু হচ্ছে এগুলো নিয়ে তোলপাড়। এরকম কয়েকটা বিষয় আমি আলোকপাত করতে চাই।
ক্রমাণুসারে, প্রথমেই যেটা বলতে চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়।এ বছরভর্তি পরীক্ষায় পাশের হার খুবই কম। ইংরেজি বিষয়ে পড়ার যোগ্যতা আছে মাত্র দুইজন শিক্ষার্থীর। এর আগের কোন বছর ভর্তি পরীক্ষায় যেহেতু এরকম বিপর্যয় ঘটেনি, তাহলে বুঝতে হবে এর পিছনে নিশ্চয় কারণ আছে। এর জন্য দায়ী আমাদের শিক্ষহাব্যবস্থা এবং পরীক্ষার খাতায় নম্বর দেয়ায় মাত্রারিক্ত উদারতা। আর উপরি হিসেবা এখন যুক্ত হয়েছে প্রশ্নফাঁস। আমাদের পাঠ্যবইয়ের সিলেবাস বছর বছর পরিবর্তিত হয়। এখন সহজেই জিপিএ ৫ পাওয়া যায় দেখে শিক্ষার্থীরা বেশি পড়াশোনায় আগ্রহী না। এর সাথে যুক্ত হয়েছে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন পাওয়া। এতে করে শিকশার্থীরা কোন বিষয়ের গভীরে জানার অনুপ্রেরণা পায় না। এর প্রভাব পড়ছে ভর্তি পরীক্ষায়। ফলে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল হচ্ছে খারাপ। এই অবস্থায় আভাস পাওয়া যায়, ভর্তি পরীক্ষাই বন্ধ করে দেয়া হবে পিছনের ত্রুটিগুলোর সংশোধন ছাড়াই।
এরপরই জনসমক্ষে আসে মাথায় রীতিমর বাজ পড়ার মত একটা বিষয়। মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ করা যায় কিনা – এই বিষয়ে মতামত। বাংলাদেশের মত একটা উন্নয়নশীল দেশে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা মাথায় আসাই তো অবান্তর! অনেক উন্নত দেশে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ হলেও তাদের প্রেক্ষাপট আমাদের মত না। যে দেশে প্রতি ৫১ জনে একজন মা মাতৃত্বকালীন সময়ে অথবা সন্তান জন্মদেয়ার সময় মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকে (আয়ারল্যান্ডে ৪৭,৬০০ জনে একজন) এবং প্রতিবছর ১২০০ জন মহিলা গর্ভাবস্থা থেকে সন্তান জন্ম দেয়ার সময় মৃত্যুবরণ করে, সে দেশে বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করার অর্থ কি তা আর বলার অবকাশ রাখে না।
(সূত্রঃ http://www.unicef.org/bangladesh/Women_and_girls_in_Bangladesh.pdf)
তবে আশার কথা এই যে, মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছরই রাখা হবে। আমরা বিশ্বাস করতে ভালোবাসি যে, তারা তাদের কথা রাখবেন।
আরেকটা যে স্পর্শকাতর সিদ্ধান্তের কথা আজকাল শুনছি, তা হলো – সামনের বছর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তিপরীক্ষা দেয়া যাবে না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও একই পথ অনুসরণ করছে। হঠাতই এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাদের বাস্তব প্রেক্ষাপট নিয়ে একটু ভাবা উচিত ছিল। প্রথমত, এবার এইচএসসি পরীক্ষার দুই মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। ফলে যারা প্রথমবার পরীক্ষা দিল তাদের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় কম ছিল। দ্বিতীয়ত, আগে থেকে জানানো হয় নি। আগে থেকে জানা থাকলে শিক্ষার্থীরা আরো বেশি সচেতন থাকতে পারতো। তৃতীয়ত, এরাই ছিল প্রথম ব্যাচ যারা সৃজনশীল পদ্ধতিতে এইচএসসি পরীক্ষা দিল। আগে থেকে প্রশ্নের পদ্ধতি সম্পর্কে পরিচিত না থাকায় এক্ষেত্রেও তাদের নতুন অভিজ্ঞতা। চতুর্থত, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য শুধুমাত্র তাদের বছরের বইয়ের সিলেবাস ছিল অনেক বেশি যা পরবর্তী ব্যাচের জন্য পরিবর্তিত করে কিছুটা হলেও সংক্ষেপ করা হয়েছে। কাজেই একটা বছরের শিক্ষার্থীদের উপর এতোকরম গবেষণা না চালালেও হতো। আমার ব্যক্তিগত মতামত, ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কিত যেকোন সিদ্ধান্ত এমনভাবে নেয়া উচিত যাতে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অন্তত এক বছর আগে থেকে জানতে পারে।
আগের কোন পূর্বাভাস ছাড়াই এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া হলে কি বলা উচিত বুঝতে পারিনা। যারা এইসব সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক তারা আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের দলেই পড়েন। কোন রকম মতামত বিশ্লেষণ ছাড়াই এমন গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত আমাদের মত সাধারণ মানুষদেরকে সত্যিই ভাবায়।