দানিউব নদীতে ভেসে বুদাপেস্ট দেখা

সৌমেন রুদ্র
Published : 23 April 2019, 03:30 PM
Updated : 23 April 2019, 03:30 PM

কথা ছিল উত্তর নরওয়ে ঘুরতে যাওয়ার। যেমন ভাবনা ছিল তা থেকে নব্বই ডিগ্রি ঘুরে পূর্ব ইউরোপই হয়ে গেল নির্ধারিত গন্তব্য । ইস্টারের লম্বা ছুটির আগে  দুই বন্ধু মিলে ঠিক হলো এই পরিকল্পনা। ঠিক হল প্রথমে আমরা হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট যাবো। সেখান থেকে ট্রেনে চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগে।

আমরা দুইদিন আগেই ওসলোতে চলে গেলাম। রুবেলের বাসায় প্রথমবার। রসিক বন্ধু তার রান্নার হাতের যশ দেখিয়ে দিল। হাসিঠাট্টায় দুইদিন কাটিয়ে ভোর বেলা  বুদাপেস্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আমরা। সাথে ছিলো আমাদের পরিবারও।

হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে পৌঁছেই পেটপূজো সারতে শুরু হলো দুপুরের খাবারের খোঁজ। খাবারের দাম দেখে আমরা আনন্দিত। ওখানে খাবারের দাম অনেক সস্তা। রুবেল বলল, এমনকি ঢাকা শহরের থেকেও কম।  সস্তা খাবারের জন্য মাঝে মাঝে বুদাপেস্টে যাওয়া যায়।

বুদাপেস্টকে বেশ জনবহুল মনে হলো আমার কাছে। এই পুরো শহরে রয়েছে নানান আকর্ষণীয় স্থান  যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। দানিউব, হিরোজ স্কয়ার, বুদা ক্যাসেলসহ বুদাপেস্ট শহরটিতে রয়েছে ইউনেস্কোর বেশ কয়েকটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ।

যেহেতু এই শহরে দেখার আছে অনেক কিছ, তাই আমরা ৪৮ ঘন্টার টুরিস্ট বাস টিকেট কিনেছিলাম। বাসে বসে বসে এদিক ওদিক ঘুরেছি আর পছন্দনীয় স্থানে নেমে তা খুঁটিয়ে দেখেছি।

বুদাপেস্ট নামটি বুদা এবং পেস্ট দুটো শহরকে একত্রিত করে এসেছে। ১৮৭৩ সালে এই দুটো শহরকে একটি শহরে রূপান্তরিত করা হয়। বুদা নামটি এর প্রতিষ্ঠাতা বুদা থেকে এসেছে যিনি ছিলেন হানক শাসক আত্তিলার ভাই। হানরা ছিল মধ্য এশিয়া, ককেশাস এবং পূর্ব ইউরোপের যাযাবর জাতি। আর পেস্ট নামটি এসেছে প্যাশন থেকে; যা আসলে রোমান সময়কালীন একটি দূর্গ ছিল।

আমরা যে বাসায় ছিলাম, তার পাশেই ছিলো ইউরোপের সবচাইতে বড় সিনাগগ বা ইহুদি ধর্মীয় মতাবলম্বীদের ধর্মস্থান। টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকতে হয়। যদিও আমরা ভিতরে যাইনি, তবে জানতে পেরেছি সেখানে পুরো সেখানকার দোহানি স্ট্রিট সিনাগগটিতে ২৯৬৪টি আসন ব্যবস্থা রয়েছে।

বুদাপেস্টে অবস্থিত হাঙ্গেরীয় সংসদ ভবন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সংসদ ভবন। এই স্থাপনাটি অনেক পুরানোও বটে।  সংসদ ভবনের কাজ শেষ হয়েছিল ১৯০৪ সালে।

বুদাপেস্টেকে ভ্যাম্পায়ারের শহরও বলা হয়। বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক রোমান পোলান্সকির সফল সিনেমাগুলোর মধ্যে একটি  'দ্য ফিয়ারলেস ভ্যাম্পায়ার কিলারস'। একে  'ড্যান্স অফ দ্য ভ্যাম্পায়ার' নামে এর মিউজিকাল রূপান্তর হয়েছিল।

পৃথিবীর সবচাইতে পুরাতন সাবওয়ে লাইনগুলোও কিন্তু বুদাপেস্টেরই। হাঙ্গেরির এক হাজারতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের সময় ১৮৯৬ সালে এই লাইনগুলো চালু করা হয়েছিল। আমাদের অবশ্য  সাবওয়েতে চড়া হয়নি।

বুদাপেস্ট ভ্রমণে সবচেয়ে আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা ছিল চাঁদের আলোতে দানিউব নদীতে বোট ট্রিপ। শহর কর্তৃপক্ষ নদীর আশেপাশের সব দর্শনীয় জায়গাগুলোকে বিভিন্ন রঙের আলো দিয়ে সুসজ্জিত করে রেখেছে। বিশেষ করে যখন বুদা ক্যাসেল ও হাঙ্গেরির পার্লামেন্ট ভবনের সামনে দিয়ে আমাদের বোট যাচ্ছিল তখনকার দৃশ্যটা অতুলনীয়।

সৌমিতার ইচ্ছে ছিলো চিড়িয়াখানা দেখার। সময়ের অভাবে যাওয়া হয়নি। পরে জানতে পারলাম পৃথিবীতে সবচাইতে পুরাতন যতগুলো চিড়িয়াখানা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বুদাপেস্টের চিড়িয়াখানা একটি। এই চিড়িয়াখানাটি চালু করা হয়েছিল ১৮৬৫ সালে। এখানে নানান ধরনের পশু পাখি তো আছেই। এর সাথে আরও আছে কয়েকটি কলা ভবন এবং দালান যেমন- এলিফ্যান্ট হাউজ, দ্য পাম ইত্যাদি।

আমাদের ট্রিপে আরো একটি দর্শনীয় স্থান বাদ পরে গিয়েছিল। সেটা হল পৃথিবীর সবচাইতে বড় থার্মাল ওয়াটার কেভ। আর স্যাশেইনি মেডিকেল বাথে যাওয়াটাও আছে এই বাদের তালিকায়। পরে জেনেছি, মানুষের মাঝে প্রচলিত আছে এই হট বাথ নিয়ে মানুষ অসুস্থতাকে ভুলে যেতে পারে। তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হল এই ঝরনার পানিতে অনেক ধরনের প্রাকৃতিক মিনারেল যুক্ত আছে, যা শরীরের ব্যাথা নিরাময়ে কাজ করে।

অনেকের ছোটবেলার জনপ্রিয় খেলা হল রুবিকস কিউব। হাঙ্গেরিয়ান প্রফেসর আরনো রুবিকস হল এই রুবিকস কিউবের আবিষ্কারক। তার জন্ম হয়েছিল এই বুদাপেস্ট শহরেই।